সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুর্নীতির অভিযোগ: ডাক্তার ও ওয়ার্ডবয়ের সিন্ডিকেটে জিম্মি রোগীরা

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে এসে দুর্নীতি, প্রতারণা ও চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছেন সাধারণ রোগীরা। অভিযোগ উঠেছে—একটি সংঘবদ্ধ চক্র দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালের ওষুধ ও চিকিৎসা ব্যবস্থাকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে চলেছে। এর পেছনে রয়েছে ওয়ার্ডবয়, দালাল এবং কিছু অসাধু চিকিৎসকের যৌথ সিন্ডিকেট।
সরকারি হাসপাতালের ওষুধ বাইরে বিক্রি হচ্ছে এবং এতে জড়িত রয়েছে একটি বড় চক্র। অনুসন্ধানে জানা যায়, এই চক্রের মূল হোতা হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় শাহীন হোসেন। জানা যায়, তিনি আওয়ামী লীগের সময় আওয়ামী লীগ করতেন, আর বর্তমানে জামায়াত-শিবিরের ছত্রছায়ায় থেকে নিজের প্রভাব বিস্তার করে রোগীদের কাছ থেকে ওষুধ সংগ্রহ করে সেগুলো বাইরে বিক্রি করেন। এছাড়া, ওয়ার্ডবয় শাহীন তার দালাল চক্রের মাধ্যমে রোগীদের সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে স্থানান্তর করে বিভিন্ন ক্লিনিকে পাঠান তাদের মধ্যে অন্যতম আনোয়ারা ক্লিনিক,ফাতেমা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, জয়া ডায়গনস্টিক, ন্যাশনাল হসপিটাল, ডিজিটাল, ডক্টর ল্যাব,হার্ট ফাউন্ডেশন সহ আশপাশের ক্লিনিকে পাঠান এবং সেখান থেকেও মোটা অঙ্কের মুনাফা ঘুষ আকারে আদায় করেন।

সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন নামে এক ভুক্তভোগী জানান, “আমার পাইলসের চিকিৎসার জন্য মেডিকেলের ২৩৫ নম্বর কক্ষে যাই। সেখানে ডাক্তারের পরামর্শে পাশের ফার্মেসি থেকে একটি বড় জেল টিউব ও চারটি গ্লোভসসহ ২৫০ টাকার ওষুধ কিনে আনি। কিন্তু লক্ষ্য করি, একই ধরনের স্লিপ অনেক রোগীকেই দেওয়া হচ্ছে এবং তাতে অপ্রয়োজনীয় ও অতিরিক্ত ওষুধের নাম লেখা থাকে।” তিনি অভিযোগ করেন, এসব ওষুধ অনেক সময় ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। অথচ এসব ওষুধ বাইরে থেকে কিনে আনতে বাধ্য করা হয়।
তিনি আরও বলেন, “ওষুধগুলো ডাক্তার বা ওয়ার্ডবয় শাহীন হোসেনের কাছে জমা দেওয়া হয়, যা পরে বিক্রি করে দেওয়া হয় বলে মনে হচ্ছে। শাহীনকে জিজ্ঞেস করলে তিনি স্বীকার করেন, ‘আমি মাঝে মাঝে ওষুধ নিয়ে থাকি।’ তবে তিনি অন্য কাউকে জড়ানোর কথা অস্বীকার করেন।”
আরও অভিযোগ রয়েছে, ডাক্তার শশাঙ্ক কুমার মূলত রোগী দেখেন, কিন্তু প্রেসক্রিপশনে সিল মারেন ডাক্তার সুজিত রায়, যিনি বর্তমানে মেডিকেলের রেজিস্ট্রার তার কাছে মুঠোফোনে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন ঐদিন আমি কোন রোগী দেখি নাই আমার বিনা অনুমতিতে প্রেসক্রিপশনে এই সিল গুলা মারা হচ্ছে,এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না, সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. মো. শরিফুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,এ ব্যাপারে আমি কিছু মন্তব্য করতে পারবোনা আপনারা পরিচালক মহোদয়ের সাথে কথা বলেন। অনুসন্ধানে জানা যায় এই শাহীন ডাক্তার শরিফুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে কর্মরত। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার বক্তব্যের মোবাইল রেকর্ড সংরক্ষিত আছে বলে জানা গেছে।
রোগীরা বলছেন, সরকারি হাসপাতাল হয়েও এখানে সঠিকভাবে ওষুধ সরবরাহ ও চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে না। উপরন্তু অতিরিক্ত ও অপ্রয়োজনীয় ওষুধ লিখে দিয়ে রোগীদের কাছ থেকে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে একটি চক্র।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার মোহাম্মদ ফারুক হোসেন দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, “এই অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর।শাহিনের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আমরা আগেও শুনেছি,আপনারা অভিযোগ দেন আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখব এবং সত্যতা পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
জনস্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করতে দ্রুত এই চক্রের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী রোগী ও সচেতন নাগরিক সমাজ।