London ১২:১২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম:
কালিয়াকৈর চন্দ্রা এি মোড়ে তাকওয়া পরিবহন মহাসড়কে জ্যাম সৃষ্টির কারণ তানোরে বিনামূল্যে সার বীজ বিতরণ সিরাজগঞ্জে মাদকদ্রব্য অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার বিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে উৎসব বন্ধন র‍্যালী ও আলোচনা সভা। কালিয়াকৈর চন্দ্রা এিমোড়ে ঢাকা -টাংগাইল মহাসড়কে ফুটপাতে ও যাত্রী ছাউনিতে দোকান বসিয়ে রমরমাট ব্যবসা বিজিবির অভিযানে দুর্গাপুরের সীমান্ত এলাকা থেকে ভারতীয় মদ জব্দ উৎসবমুখর পরিবেশে সিপিবি দুর্গাপুর শহর শাখার দ্বিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত কালিয়াকৈর চন্দ্রা সরকারি কলেজে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা ২০২৫ এ পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে পানি ও স্যালাইন বিতরন করেন চন্দ্রা কলেজের সকল ছাএ নেতৃবৃন্দ পটুয়াখালীতে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, মহিলাসহ আহত অন্তত ১০ জন এইচএসসি ২০২৫ পরীক্ষার্থীদের পাশে জেলা ছাত্র অধিকার পরিষদ —এর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় অনুপ্রেরণামূলক শুভেচ্ছা ও সহায়তা কর্মসূচি বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২৫ উপলক্ষে কসবায় সময়োপযোগী পরিবেশ সচেতনতা সভা অনুষ্ঠিত

“প্লাস্টিক দূষণ আর নয়, বন্ধ করার এখনই সময়” উপজেলা প্রশাসন ও তরী বাংলাদেশের যৌথ আয়োজন

বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২৫ উপলক্ষে কসবায় সময়োপযোগী পরিবেশ সচেতনতা সভা অনুষ্ঠিত

মো: বিল্লাল সরকার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি

বিশ্বজুড়ে যখন জলবায়ু পরিবর্তন, জলদূষণ ও প্লাস্টিকের ভয়াবহতা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে, তখন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায় বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২৫ উপলক্ষে একটি সময়োপযোগী ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। “প্লাস্টিক দূষণ আর নয়, বন্ধ করার এখনই সময়”—এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে কসবা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় এই সভা। আয়োজন করে “তরী বাংলাদেশ”—নদী ও প্রকৃতি সংরক্ষণে নিবেদিত একটি সামাজিক আন্দোলন।

সভায় সভাপতিত্ব করেন কসবা প্রেসক্লাব সভাপতি আবুল খায়ের স্বপন এবং প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ছামিউল ইসলাম। তিনি বলেন, “পরিবেশ রক্ষায় কেবল আইন নয়, প্রয়োজন একটি সংস্কৃতি গড়ে তোলা—যেখানে মানুষ প্লাস্টিক না ছুঁড়েও সচেতন হবে, যেখানে নদীর খাল ভরাট দেখলে প্রতিবাদ করবে, এবং যেখানে ভবিষ্যতের জন্য ভালো কিছু রেখে যাওয়ার দায় অনুভব করবে। পরিবেশ আমাদের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, এটি শুধু গাছ-পাহাড় নয়, আমাদের স্বাস্থ্য, খাদ্য, নিরাপত্তা, এমনকি নৈতিকতার বিষয়ও।”

উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাঁর বক্তব্যে পরিবেশ রক্ষায় প্রশাসনিক পরিকল্পনার পাশাপাশি সামাজিক সংগঠনের অংশগ্রহণকে গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “আমরা একটি ‘Bioplant’ প্রকল্প চালু করার পরিকল্পনায় আছি, যেখানে বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ করে জৈব সার উৎপাদন করা হবে। একদিকে পরিবেশ রক্ষা হবে, অন্যদিকে কৃষিতে টেকসই সমাধান আসবে।”

কৃষি কর্মকর্তা হাজেরা বেগম বলেন, “আমাদের কৃষি এখন পরিবেশ নির্ভর। যদি পানি ও মাটির মান ঠিক না থাকে, তবে ফসল নষ্ট হবে, খাদ্যে বিষ ঢুকবে, পুষ্টি সংকট দেখা দেবে। প্লাস্টিকের ব্যবহারে জলাবদ্ধতা, পানি শোষণ ব্যাহত, এমনকি মৃত্তিকা দূষণ হচ্ছে। এর ফলে আমাদের কৃষিজ অর্থনীতিও হুমকিতে।”

কসবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল কাদের বলেন, “পরিবেশ নিয়ে যে সমস্যা তা কেবল একজনের নয়—এটি আমাদের সবার। প্রশাসন, সাংবাদিক, শিক্ষক, রাজনীতিবিদ, ধর্মীয় নেতাসহ সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষ যদি নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন হয়, তাহলেই পরিবেশ রক্ষা সম্ভব।”

মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রুওনক ফারজানা রুবা বলেন, “নারীদের অন্তর্ভুক্তি ছাড়া কোনো টেকসই পরিবেশ আন্দোলন সম্ভব নয়। পরিবারের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, খাদ্য সচেতনতা, শিশুদের শিক্ষায় পরিবেশ ভাবনা—সবকিছুতেই নারীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

আলোচনায় অংশ নিয়ে সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি মোঃ সবুজ খান জয়, সাধারণ সম্পাদক মোঃ আশরাফ উজ্জল, দপ্তর সম্পাদক মোঃ বিল্লাল সরকারসহ গণমাধ্যমকর্মীরা বলেন— মিডিয়ার দায়িত্ব শুধু প্রতিবেদন নয়, সচেতনতা তৈরি করাও। এই আয়োজনগুলোকে গণমানুষের আন্দোলনে রূপ দিতে হলে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে। তারা তরী বাংলাদেশের এই উদ্যোগকে একটি সময়োপযোগী গণপরিবেশ আন্দোলনের সূচনা হিসেবে দেখছেন।

বক্তারা বলেন, কসবা উপজেলার সালদা, বিজনা ও তিতাস নদী এখন অবৈধ দখল, দূষণ ও ভরাটের কারণে প্রায় নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। নদী হারালে হারিয়ে যাবে কৃষি, হারাবে পানির প্রবাহ, এবং একটি প্রজন্ম হারাবে বাসযোগ্য সমাজ। বক্তারা অনুরোধ জানান—যেকোনো উন্নয়ন পরিকল্পনার আগে প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও পরিবেশগত মূল্যায়ন বাধ্যতামূলক করা হোক।

তরী বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা প্রতি মাসে একটি করে নদী-খাল-পরিবেশ বিষয়ক আলোচনা সভা ও ফিল্ড পর্যবেক্ষণ চালাবে। তারা কসবা পৌরসভা ও ইউনিয়নগুলোতে জনসচেতনতা বাড়াতে কর্মশালা, পোস্টার ক্যাম্পেইন, নদী র‌্যালি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিবেশ বিষয়ক শিক্ষাদান কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে।

অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনায় ছিলেন সাংবাদিক সাইদুল ইসলাম (এনটিভি অনলাইন, কসবা-আখাউড়া)। সভা শেষে তরী বাংলাদেশ, কসবা উপজেলা প্রশাসন, এবং অংশগ্রহণকারী সকল অতিথিদের পক্ষ থেকে একটি সম্মিলিত পরিবেশ প্রতিজ্ঞা পাঠ করা হয়—“আমরা কসবা উপজেলাকে নদী-প্রকৃতি-পরিবেশবান্ধব একটি জনপদে রূপান্তর করতে সচেষ্ট থাকব।”

এই আলোচনা সভা শেষে অনেকেই অনুভব করেন, একটি অনুষ্ঠান তখনই সফল হয়—যখন তা থেকে বাস্তব পরিবর্তনের পথে কিছু মানুষ এগিয়ে যায়।

 

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০১:১৫:৫২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
Translate »

“প্লাস্টিক দূষণ আর নয়, বন্ধ করার এখনই সময়” উপজেলা প্রশাসন ও তরী বাংলাদেশের যৌথ আয়োজন

বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২৫ উপলক্ষে কসবায় সময়োপযোগী পরিবেশ সচেতনতা সভা অনুষ্ঠিত

আপডেট : ০১:১৫:৫২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

বিশ্বজুড়ে যখন জলবায়ু পরিবর্তন, জলদূষণ ও প্লাস্টিকের ভয়াবহতা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে, তখন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায় বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২৫ উপলক্ষে একটি সময়োপযোগী ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। “প্লাস্টিক দূষণ আর নয়, বন্ধ করার এখনই সময়”—এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে কসবা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় এই সভা। আয়োজন করে “তরী বাংলাদেশ”—নদী ও প্রকৃতি সংরক্ষণে নিবেদিত একটি সামাজিক আন্দোলন।

সভায় সভাপতিত্ব করেন কসবা প্রেসক্লাব সভাপতি আবুল খায়ের স্বপন এবং প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ছামিউল ইসলাম। তিনি বলেন, “পরিবেশ রক্ষায় কেবল আইন নয়, প্রয়োজন একটি সংস্কৃতি গড়ে তোলা—যেখানে মানুষ প্লাস্টিক না ছুঁড়েও সচেতন হবে, যেখানে নদীর খাল ভরাট দেখলে প্রতিবাদ করবে, এবং যেখানে ভবিষ্যতের জন্য ভালো কিছু রেখে যাওয়ার দায় অনুভব করবে। পরিবেশ আমাদের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, এটি শুধু গাছ-পাহাড় নয়, আমাদের স্বাস্থ্য, খাদ্য, নিরাপত্তা, এমনকি নৈতিকতার বিষয়ও।”

উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাঁর বক্তব্যে পরিবেশ রক্ষায় প্রশাসনিক পরিকল্পনার পাশাপাশি সামাজিক সংগঠনের অংশগ্রহণকে গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “আমরা একটি ‘Bioplant’ প্রকল্প চালু করার পরিকল্পনায় আছি, যেখানে বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ করে জৈব সার উৎপাদন করা হবে। একদিকে পরিবেশ রক্ষা হবে, অন্যদিকে কৃষিতে টেকসই সমাধান আসবে।”

কৃষি কর্মকর্তা হাজেরা বেগম বলেন, “আমাদের কৃষি এখন পরিবেশ নির্ভর। যদি পানি ও মাটির মান ঠিক না থাকে, তবে ফসল নষ্ট হবে, খাদ্যে বিষ ঢুকবে, পুষ্টি সংকট দেখা দেবে। প্লাস্টিকের ব্যবহারে জলাবদ্ধতা, পানি শোষণ ব্যাহত, এমনকি মৃত্তিকা দূষণ হচ্ছে। এর ফলে আমাদের কৃষিজ অর্থনীতিও হুমকিতে।”

কসবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল কাদের বলেন, “পরিবেশ নিয়ে যে সমস্যা তা কেবল একজনের নয়—এটি আমাদের সবার। প্রশাসন, সাংবাদিক, শিক্ষক, রাজনীতিবিদ, ধর্মীয় নেতাসহ সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষ যদি নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন হয়, তাহলেই পরিবেশ রক্ষা সম্ভব।”

মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রুওনক ফারজানা রুবা বলেন, “নারীদের অন্তর্ভুক্তি ছাড়া কোনো টেকসই পরিবেশ আন্দোলন সম্ভব নয়। পরিবারের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, খাদ্য সচেতনতা, শিশুদের শিক্ষায় পরিবেশ ভাবনা—সবকিছুতেই নারীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

আলোচনায় অংশ নিয়ে সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি মোঃ সবুজ খান জয়, সাধারণ সম্পাদক মোঃ আশরাফ উজ্জল, দপ্তর সম্পাদক মোঃ বিল্লাল সরকারসহ গণমাধ্যমকর্মীরা বলেন— মিডিয়ার দায়িত্ব শুধু প্রতিবেদন নয়, সচেতনতা তৈরি করাও। এই আয়োজনগুলোকে গণমানুষের আন্দোলনে রূপ দিতে হলে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে। তারা তরী বাংলাদেশের এই উদ্যোগকে একটি সময়োপযোগী গণপরিবেশ আন্দোলনের সূচনা হিসেবে দেখছেন।

বক্তারা বলেন, কসবা উপজেলার সালদা, বিজনা ও তিতাস নদী এখন অবৈধ দখল, দূষণ ও ভরাটের কারণে প্রায় নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। নদী হারালে হারিয়ে যাবে কৃষি, হারাবে পানির প্রবাহ, এবং একটি প্রজন্ম হারাবে বাসযোগ্য সমাজ। বক্তারা অনুরোধ জানান—যেকোনো উন্নয়ন পরিকল্পনার আগে প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও পরিবেশগত মূল্যায়ন বাধ্যতামূলক করা হোক।

তরী বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা প্রতি মাসে একটি করে নদী-খাল-পরিবেশ বিষয়ক আলোচনা সভা ও ফিল্ড পর্যবেক্ষণ চালাবে। তারা কসবা পৌরসভা ও ইউনিয়নগুলোতে জনসচেতনতা বাড়াতে কর্মশালা, পোস্টার ক্যাম্পেইন, নদী র‌্যালি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিবেশ বিষয়ক শিক্ষাদান কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে।

অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনায় ছিলেন সাংবাদিক সাইদুল ইসলাম (এনটিভি অনলাইন, কসবা-আখাউড়া)। সভা শেষে তরী বাংলাদেশ, কসবা উপজেলা প্রশাসন, এবং অংশগ্রহণকারী সকল অতিথিদের পক্ষ থেকে একটি সম্মিলিত পরিবেশ প্রতিজ্ঞা পাঠ করা হয়—“আমরা কসবা উপজেলাকে নদী-প্রকৃতি-পরিবেশবান্ধব একটি জনপদে রূপান্তর করতে সচেষ্ট থাকব।”

এই আলোচনা সভা শেষে অনেকেই অনুভব করেন, একটি অনুষ্ঠান তখনই সফল হয়—যখন তা থেকে বাস্তব পরিবর্তনের পথে কিছু মানুষ এগিয়ে যায়।