London ০৯:৪৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সিলেট সীমান্তে ভারতের কারফিউ জারি

অনলাইন ডেস্ক:

সিলেট সীমান্তঘেঁষা ভারতের মেঘালয় রাজ্যে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে রাত্রিকালীন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ভারতীয় প্রশাসন। ৮ মে থেকে কার্যকর হওয়া এই নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী প্রতিদিন রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ওইসব এলাকায় সাধারণ মানুষের চলাচল সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ থাকবে।

ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, মেঘালয়ের পূর্ব ও পশ্চিম জয়ন্তিয়া হিলস, পূর্ব খাসি হিলস, দক্ষিণ গারো হিলস এবং পশ্চিম গারো হিলস জেলার সীমান্তসংলগ্ন অঞ্চলগুলোতে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে। সীমান্তের শূন্যরেখার ২০০ মিটার থেকে ১ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকাকে ‘নিরাপত্তা সংবেদনশীল’ ঘোষণা করে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

প্রশাসনের জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কারফিউ চলাকালীন নিচের কার্যকলাপ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ থাকবে—পাঁচ বা ততোধিক ব্যক্তির জমায়েত, কোনো ধরনের অস্ত্র বা লাঠিসোঁটা বহন, গবাদিপশু ও পণ্য পরিবহন (বিশেষ করে চা পাতা, সুপারি, পানের পাতা, শুকনা মাছ), সীমান্ত পারাপার বা অবৈধ অনুপ্রবেশ।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত বৃহস্পতিবার সিলেটের তামাবিল সীমান্তে উভয় দেশের যৌথ জরিপ কার্যক্রম চলাকালে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) বাধার মুখে পড়ে। স্থানীয় লোকজনের আপত্তিতে জরিপ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছে, এই ঘটনার পরই ভারতীয় প্রশাসন সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়।

সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার বাসিন্দা তাওহীদুল ইসলাম (৪০) বলেন, আমরা যারা বৈধভাবে চলাফেরা করি, তাদের জন্য এটা বড় সমস্যা নয়। তবে যারা অবৈধ কাজ করে, যেমন চোরাচালান বা সীমান্ত অতিক্রম করে, তাদের জন্য এটা কঠিন হবে। আইন মেনে চললে আমাদের কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না।

জৈন্তাপুর উপজেলার বাসিন্দা মো. সাজু হোসেন বলেন, সীমান্তে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অবশ্যই প্রয়োজন, তবে এতে সাধারণ মানুষের চলাচলে সমস্যা যেন না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এখানে অনেকেই ভোরবেলায় মাঠে কাজ করতে যান। এমন অবস্থায় যদি সীমান্তে কারফিউ থাকে, তাহলে তাদের জন্য এটা কিছুটা সমস্যার হতে পারে। আশা করি, কর্তৃপক্ষ সেই বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সিদ্ধান্ত নেবে, যাতে স্থানীয় বাসিন্দাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা বাধাগ্রস্ত না হয়।

সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, ভারতের এই সিদ্ধান্ত তাদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাবিষয়ক। আমরা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছি। সীমান্তে যাতে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে এবং বাংলাদেশি নাগরিকরা যেন নিরাপদে থাকতে পারে, সে জন্য আমাদের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বর্ডার এলাকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় মাইকিং করানো হয়েছে। স্থানীয় মেম্বার, চেয়ারম্যানরা যাতে সামাজিক সচেতনতা তৈরি করেন সে বিষয়েও জানানো হয়েছে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ১০:৩০:১৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১০ মে ২০২৫
Translate »

সিলেট সীমান্তে ভারতের কারফিউ জারি

আপডেট : ১০:৩০:১৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১০ মে ২০২৫

সিলেট সীমান্তঘেঁষা ভারতের মেঘালয় রাজ্যে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে রাত্রিকালীন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ভারতীয় প্রশাসন। ৮ মে থেকে কার্যকর হওয়া এই নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী প্রতিদিন রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ওইসব এলাকায় সাধারণ মানুষের চলাচল সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ থাকবে।

ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, মেঘালয়ের পূর্ব ও পশ্চিম জয়ন্তিয়া হিলস, পূর্ব খাসি হিলস, দক্ষিণ গারো হিলস এবং পশ্চিম গারো হিলস জেলার সীমান্তসংলগ্ন অঞ্চলগুলোতে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে। সীমান্তের শূন্যরেখার ২০০ মিটার থেকে ১ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকাকে ‘নিরাপত্তা সংবেদনশীল’ ঘোষণা করে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

প্রশাসনের জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কারফিউ চলাকালীন নিচের কার্যকলাপ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ থাকবে—পাঁচ বা ততোধিক ব্যক্তির জমায়েত, কোনো ধরনের অস্ত্র বা লাঠিসোঁটা বহন, গবাদিপশু ও পণ্য পরিবহন (বিশেষ করে চা পাতা, সুপারি, পানের পাতা, শুকনা মাছ), সীমান্ত পারাপার বা অবৈধ অনুপ্রবেশ।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত বৃহস্পতিবার সিলেটের তামাবিল সীমান্তে উভয় দেশের যৌথ জরিপ কার্যক্রম চলাকালে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) বাধার মুখে পড়ে। স্থানীয় লোকজনের আপত্তিতে জরিপ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছে, এই ঘটনার পরই ভারতীয় প্রশাসন সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়।

সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার বাসিন্দা তাওহীদুল ইসলাম (৪০) বলেন, আমরা যারা বৈধভাবে চলাফেরা করি, তাদের জন্য এটা বড় সমস্যা নয়। তবে যারা অবৈধ কাজ করে, যেমন চোরাচালান বা সীমান্ত অতিক্রম করে, তাদের জন্য এটা কঠিন হবে। আইন মেনে চললে আমাদের কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না।

জৈন্তাপুর উপজেলার বাসিন্দা মো. সাজু হোসেন বলেন, সীমান্তে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অবশ্যই প্রয়োজন, তবে এতে সাধারণ মানুষের চলাচলে সমস্যা যেন না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এখানে অনেকেই ভোরবেলায় মাঠে কাজ করতে যান। এমন অবস্থায় যদি সীমান্তে কারফিউ থাকে, তাহলে তাদের জন্য এটা কিছুটা সমস্যার হতে পারে। আশা করি, কর্তৃপক্ষ সেই বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সিদ্ধান্ত নেবে, যাতে স্থানীয় বাসিন্দাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা বাধাগ্রস্ত না হয়।

সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, ভারতের এই সিদ্ধান্ত তাদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাবিষয়ক। আমরা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছি। সীমান্তে যাতে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে এবং বাংলাদেশি নাগরিকরা যেন নিরাপদে থাকতে পারে, সে জন্য আমাদের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বর্ডার এলাকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় মাইকিং করানো হয়েছে। স্থানীয় মেম্বার, চেয়ারম্যানরা যাতে সামাজিক সচেতনতা তৈরি করেন সে বিষয়েও জানানো হয়েছে।