London ০১:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম:
দেশের সব পলিটেকনিক শাটডাউন ঘোষণা জুলাই আন্দোলনের মামলা ঢালাও আসামি ন্যায়বিচারের অন্তরায় কানাডায় সাধারণ নির্বাচনে জয় পেল ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সদস্যদের বৈঠক পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেমের মতো গাজাও ফিলিস্তিনিদের: এরদোয়ান কাশ্মির সীমান্তে ভারত-পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে ফের গোলাগুলি জুলাই বিপ্লবে সামনে থাকা নারীরাও আজ অনিরাপদ বোধ করেন: ফরহাদ মজহার রাষ্ট্র সংস্কারে ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্ততায় কালিয়াকৈরে ক্যাম্পেইন ও লিফলেট বিতরণ টিউলিপ সিদ্দিকের আইনি স্বচ্ছতার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টা নির্বিঘ্নে ধর্ম পালনে ‘লাব্বাইক’ অ্যাপ বড় ভূমিকা রাখবে

জুলাই আন্দোলনের মামলা ঢালাও আসামি ন্যায়বিচারের অন্তরায়

অনলাইন ডেস্ক:

গত বছরের জুলাই–আগস্টে রাষ্ট্রীয় বাহিনী কিংবা তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা যে গুলি করে মানুষ হত্যা করেছেন, তাঁদের বিচারের মুখোমুখি করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কিন্তু মামলার নামে যখন ঢালাও আসামি করা হয়, ব্যক্তিস্বার্থে নিরীহ মানুষকে ফাঁসানোর চেষ্টা থাকে, তখন বিচার হয়ে পড়ে অনিশ্চিত।

২৭ এপ্রিল প্রথম আলোয় জুলাই আন্দোলনের মামলা নিয়ে প্রকাশিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে ৪০টি মামলার যে চিত্র উঠে এসেছে, তা অত্যন্ত হতাশাজনক। এসব মামলার ক্ষেত্রে দেখা গেছে, বাদী হিসেবে যাঁদের নাম দেওয়া হয়েছে, তাঁরা মামলা সম্পর্কে কিছু জানেন না। আবার মামলা থেকে নাম বাদ দেওয়ার কথা বলেও অর্থ আদায় করা হয়েছে। এমনকি স্ট্রোকে মারা যাওয়া ব্যক্তির ঘটনাকে হত্যা মামলা সাজিয়ে ৭৬৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। এটা কেবল অনৈতিক নয়, অমার্জনীয়ও।

২১টি মামলার ক্ষেত্রে আগে বা পরে কোনো কোনো আসামির কাছ থেকে অর্থ দাবি ও অর্থ লেনদেনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাকি ১৯ মামলায় রাজনৈতিক, ব্যবসায়িক, পেশাগত ও পারিবারিক দ্বন্দ্ব থেকে অনেককে আসামি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ব্যক্তি ও তাঁদের স্বজনেরা। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই অভ্যুত্থানে হতাহতসহ বিভিন্ন ঘটনায় অন্তত ১ হাজার ৪৯৯টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে হত্যা মামলা ৫৯৯টি, অন্যান্য ৯০০টি।

গত বছরের ১৪ অক্টোবর ঢালাও মামলা সম্পর্কে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, এ ধরনের মামলা করার মাধ্যমে যাঁরা অপতৎপরতা চালাচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হয়রানিমূলকভাবে যাঁদের আসামি করা হয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না বলে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল।

এরপরও পরিস্থিতির ইতরবিশেষ ঘটেনি। আইজিপি বাহারুল আলম স্বীকার করেছেন, অপরাধ হয়তো করেছে ৫-১০ জন, তার সঙ্গে আরও ৩০০ জনের নাম দিয়ে মামলা করা হয়েছে। অন্যদিকে সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী অভিনেতা ইরেশ যাকেরের বিরুদ্ধে হত্যা মামলাকে ‘ডিপলি ডিস্টার্বিং’ বলে অভিহিত করেছেন। কিন্তু এত সব সতর্কতার পরও হয়রানিমূলক মামলার নামে গ্রেপ্তার ও হয়রানি থেমে নেই। আরও উদ্বেগজনক ঘটনা হলো অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃত আসামির চেয়ে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে করা মামলার বিষয়ে পুলিশ বেশি তৎপরতা দেখিয়ে থাকে।

যে ৪০টি মামলা নিয়ে প্রথম আলো অনুসন্ধান করেছে, সেগুলোর এজাহারে উল্লেখ করা ১১ বাদীর মুঠোফোন নম্বরে কল করে সেগুলো বন্ধ পাওয়া গেছে। কেউ কেউ ঠিকানা পরিবর্তন করেছেন অথবা ভুয়া ঠিকানা দিয়েছেন। ফলে আসামি ও তাঁদের স্বজনেরা বাদীকে খুঁজে পাচ্ছেন না। ১৪ জন বাদী জানিয়েছেন, অন্য কেউ তাঁদের দিয়ে মামলা করিয়েছেন। এর মধ্যে চারজন জানিয়েছেন, মামলার কাগজে তাঁদের কাছ থেকে কেবল সই নেওয়া হয়েছে। আসামির নাম দিয়েছেন অন্যরা।

একই ঘটনায় শত শত আসামি দেওয়ার ঘটনা আওয়ামী লীগ আমলের গায়েবি মামলার কথাই মনে করিয়ে দেয়। সেসব মামলার উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা এবং নিজেদের অপকর্ম আড়াল করা। এখনো যদি সেই ধারায় মামলা চলে, তাহলে কখনোই বিচারিক প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ধারায় এগোবে না। সরকার যদি সত্যি সত্যি জুলাই–আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার চায়, তাহলে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার ও নিরীহ মানুষকে হয়রানি বন্ধ করতেই হবে। কেননা, এসব ঢালাও মামলা ন্যায়বিচার ও আইনের শাসনের পরিপন্থী।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৩:২৭:০৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫
Translate »

জুলাই আন্দোলনের মামলা ঢালাও আসামি ন্যায়বিচারের অন্তরায়

আপডেট : ০৩:২৭:০৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

গত বছরের জুলাই–আগস্টে রাষ্ট্রীয় বাহিনী কিংবা তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা যে গুলি করে মানুষ হত্যা করেছেন, তাঁদের বিচারের মুখোমুখি করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কিন্তু মামলার নামে যখন ঢালাও আসামি করা হয়, ব্যক্তিস্বার্থে নিরীহ মানুষকে ফাঁসানোর চেষ্টা থাকে, তখন বিচার হয়ে পড়ে অনিশ্চিত।

২৭ এপ্রিল প্রথম আলোয় জুলাই আন্দোলনের মামলা নিয়ে প্রকাশিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে ৪০টি মামলার যে চিত্র উঠে এসেছে, তা অত্যন্ত হতাশাজনক। এসব মামলার ক্ষেত্রে দেখা গেছে, বাদী হিসেবে যাঁদের নাম দেওয়া হয়েছে, তাঁরা মামলা সম্পর্কে কিছু জানেন না। আবার মামলা থেকে নাম বাদ দেওয়ার কথা বলেও অর্থ আদায় করা হয়েছে। এমনকি স্ট্রোকে মারা যাওয়া ব্যক্তির ঘটনাকে হত্যা মামলা সাজিয়ে ৭৬৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। এটা কেবল অনৈতিক নয়, অমার্জনীয়ও।

২১টি মামলার ক্ষেত্রে আগে বা পরে কোনো কোনো আসামির কাছ থেকে অর্থ দাবি ও অর্থ লেনদেনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাকি ১৯ মামলায় রাজনৈতিক, ব্যবসায়িক, পেশাগত ও পারিবারিক দ্বন্দ্ব থেকে অনেককে আসামি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ব্যক্তি ও তাঁদের স্বজনেরা। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই অভ্যুত্থানে হতাহতসহ বিভিন্ন ঘটনায় অন্তত ১ হাজার ৪৯৯টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে হত্যা মামলা ৫৯৯টি, অন্যান্য ৯০০টি।

গত বছরের ১৪ অক্টোবর ঢালাও মামলা সম্পর্কে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, এ ধরনের মামলা করার মাধ্যমে যাঁরা অপতৎপরতা চালাচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হয়রানিমূলকভাবে যাঁদের আসামি করা হয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না বলে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল।

এরপরও পরিস্থিতির ইতরবিশেষ ঘটেনি। আইজিপি বাহারুল আলম স্বীকার করেছেন, অপরাধ হয়তো করেছে ৫-১০ জন, তার সঙ্গে আরও ৩০০ জনের নাম দিয়ে মামলা করা হয়েছে। অন্যদিকে সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী অভিনেতা ইরেশ যাকেরের বিরুদ্ধে হত্যা মামলাকে ‘ডিপলি ডিস্টার্বিং’ বলে অভিহিত করেছেন। কিন্তু এত সব সতর্কতার পরও হয়রানিমূলক মামলার নামে গ্রেপ্তার ও হয়রানি থেমে নেই। আরও উদ্বেগজনক ঘটনা হলো অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃত আসামির চেয়ে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে করা মামলার বিষয়ে পুলিশ বেশি তৎপরতা দেখিয়ে থাকে।

যে ৪০টি মামলা নিয়ে প্রথম আলো অনুসন্ধান করেছে, সেগুলোর এজাহারে উল্লেখ করা ১১ বাদীর মুঠোফোন নম্বরে কল করে সেগুলো বন্ধ পাওয়া গেছে। কেউ কেউ ঠিকানা পরিবর্তন করেছেন অথবা ভুয়া ঠিকানা দিয়েছেন। ফলে আসামি ও তাঁদের স্বজনেরা বাদীকে খুঁজে পাচ্ছেন না। ১৪ জন বাদী জানিয়েছেন, অন্য কেউ তাঁদের দিয়ে মামলা করিয়েছেন। এর মধ্যে চারজন জানিয়েছেন, মামলার কাগজে তাঁদের কাছ থেকে কেবল সই নেওয়া হয়েছে। আসামির নাম দিয়েছেন অন্যরা।

একই ঘটনায় শত শত আসামি দেওয়ার ঘটনা আওয়ামী লীগ আমলের গায়েবি মামলার কথাই মনে করিয়ে দেয়। সেসব মামলার উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা এবং নিজেদের অপকর্ম আড়াল করা। এখনো যদি সেই ধারায় মামলা চলে, তাহলে কখনোই বিচারিক প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ধারায় এগোবে না। সরকার যদি সত্যি সত্যি জুলাই–আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার চায়, তাহলে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার ও নিরীহ মানুষকে হয়রানি বন্ধ করতেই হবে। কেননা, এসব ঢালাও মামলা ন্যায়বিচার ও আইনের শাসনের পরিপন্থী।