London ০৭:২১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ১৩৫ শিক্ষার্থীর প্রাণক্ষয়

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশে অন্তত ৯৬ শিক্ষার্থী প্রাণ দিয়েছেন। অন্য জেলায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৩৯ জন। কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে হাসিনা সরকারের পতনের অভ্যুত্থানে ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত হত্যাযজ্ঞে এসব শিক্ষার্থী জীবন দেন। নিহত শিক্ষার্থীর প্রতিষ্ঠান ও তাদের স্বজন-সহপাঠীর সঙ্গে যোগাযোগ এবং তথ্য বিশ্লেষণ করে ১৩৫ শিক্ষার্থীকে হত্যার তথ্য নিশ্চিত করতে পেরেছে সমকাল। তবে এ সংখ্যা পূর্ণাঙ্গ নয়। এর বাইরেও প্রাণ হারানো শিক্ষার্থী থাকতে পারেন। 

গণঅভ্যুত্থানে কত মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তা এখনও অজানা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ৬৩১ জনের প্রাণ গেছে এ আন্দোলনে। বেসরকারি সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) তথ্য বলছে, ১৬ জুলাই থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৮৭৫ জন। এর বেশির ভাগই ছিল গুলিতে মৃত্যু। ১৮ থেকে ২০ জুলাই এবং ৪ থেকে ৭ আগস্ট– এই সাত দিনেই নিহত হয়েছেন ৭৪৮ জন। এদিকে অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্বাস্থ্য উপকমিটির তথ্যানুযায়ী, নিহতের সংখ্যা ১ হাজার ৪২৩। তবে বৈষম্যমুক্ত গণতান্ত্রিক দেশ গড়ার আকাঙ্ক্ষায় কত শিক্ষার্থী প্রাণ বিলিয়েছেন, তা কোনো প্রতিবেদনেই নেই।

সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে ১৩৫ নিহত শিক্ষার্থীর পরিবার কিংবা সহপাঠীর সঙ্গে কথা বলেছে সমকাল। তথ্য বলছে, সাভার, উত্তরা, বাড্ডা, রামপুরা, মিরপুর-১০, যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, কাজলা– এই কয়েকটি স্পটে বেশি হত্যাকাণ্ড হয়েছে। এ ছাড়া মোহাম্মদপুর, চানখাঁরপুল, আজিমপুর, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার এলাকায়ও কিছু হত্যার ঘটনা ঘটে। 
অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, সিংহভাগ শিক্ষার্থী পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন। সময়ের হিসাবে অধিকাংশ হত্যাকাণ্ড ১৮, ১৯ ও ২০ জুলাই এবং ৪ ও ৫ আগস্টে ঘটেছে। মৃত্যুর মিছিল শুরু হয় ১৬ জুলাই; সেদিন সায়েন্স ল্যাবে দু’পক্ষের সংঘর্ষে প্রথম ঢাকা কলেজের ছাত্র সবুজ আলীর মৃত্যু হয়। সর্বোচ্চ ২০ শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন যাত্রবাড়ী ও শনির আখড়ায়।

প্রতিষ্ঠান হিসেবে তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার সর্বোচ্চ ৫ শিক্ষার্থী জীবন দিয়েছেন। সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, রাজধানীর সরকারি কবি নজরুল কলেজ এবং নারায়ণগঞ্জের তোলারাম কলেজের চারজন করে শিক্ষার্থীকে হত্যা করা হয়েছে। সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৩, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, মিরপুর বাঙলা কলেজ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি (বিইউবিটি), বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিউপি) ও সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির দু’জন করে ছাত্র নিহত হয়েছেন। 

উত্তরা-বাড্ডা-রামপুরা 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের টিয়ার শেল-রাবার বুলেট ছুড়ে হলছাড়া করার পরের দিন ১৮ জুলাই রাজপথে নামেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রামপুরা, বাড্ডা ও উত্তরায় পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ বাধে তাদের। তিন দিনের সংঘর্ষে এ স্থানে ২০ শিক্ষার্থী মারা যান।

১৮ জুলাই নিহত হন উত্তরার আজমপুরে পুলিশের গুলিতে নর্দার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র আসিফ হাসান, মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ ১৭তম ব্যাচের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র শাকিল পারভেজ, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি) গাজীপুরের যন্ত্রপ্রকৌশল বিভাগের জাহিদুজ্জামান তানভীর, টঙ্গী সরকারি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক বিজ্ঞান বিভাগের শেখ ফাহমিন জাফর, বিউপির ছাত্র মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ, বাড্ডায় ইমপেরিয়াল কলেজের জিল্লুর শেখ। 

১৯ জুলাই মারা যান উত্তরায় বাসার বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা মাইলস্টোন স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী নাইমা সুলতানা, বনশ্রীতে ইন্টার্নকারী কুষ্টিয়া পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের কম্পিউটার বিভাগের ছাত্র মারুফ হোসেন, বাড্ডার শাহজাদপুরের গুলশান ডিগ্রি কলেজের উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মো. নাইমুর রহমান, রামপুরায় আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মোস্তফা জামান সমুদ্র ও ইমপেরিয়াল কলেজের সাবেক ছাত্র নাজমুল হাসান।

১৮ জুলাই রামপুরার ওয়াপদা সড়কে গুলিবিদ্ধ হয়ে ১৯ জুলাই মারা যান সরকারি তিতুমীর কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র মো. মামুন মিয়া। ১৯ জুলাই রামপুরায় গলা ও ঊরুতে গুলি লেগে আহত সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর ছাত্র ইমতিয়াজ আহমেদ জাবির ২৬ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।
১৮ জুলাই রাজধানীর মেরুল বাড্ডার বাসায় রাতে খাওয়া-দাওয়া করে বের হয়ে নিখোঁজ হয় পূর্ব বাড্ডার ইউসেপ হাজী সিকান্দার আলী টেকনিক্যাল স্কুলের এসএসসি ছাত্র মো. আহাদুন। পরে ২০ জুলাই ঢামেকে তার লাশ মেলে।

৫ আগস্ট উত্তরার আজমপুরে মাথায় গুলি লেগে মৃত্যু হয় টঙ্গী রেনেসাঁ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র ছাবিদ হোসেনের; বাড্ডায় গুলশান কমার্স কলেজের ছাত্র মো. রায়হান পুলিশের গুলিতে; একই দিনে উত্তরায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন গলাচিপার উলানিয়া হাট মাধ্যমিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ এইচএসসি পরীক্ষার্থী মো. সাগর গাজী। 
৫ আগস্ট খিলগাঁও থানার সামনে আল-জামিয়াতুল ইসলামিয়া মাখজানুল উলুম মাদ্রাসার ছাত্র যুবায়ের আহমদ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। একই দিন বাড্ডায় ছয় গুলি লেগে প্রাণ হারান পটুয়াখালীর মাদ্রাসাছাত্র রায়হান আকন। 

যাত্রাবাড়ী-কাজলা-শনির আখড়া 
১৮ জুলাই যাত্রাবাড়ীতে বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার দশম শ্রেণির ছাত্র আদিল আহমদ, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের ছাত্র ইরফান ভূঁইয়া গুলিতে নিহত হন। ১৯ জুলাই কবি নজরুল কলেজ ইতিহাস বিভাগের ছাত্র জিহাদ হোসেন, সরকারি তোলারাম কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী মাহাদী হাসান পান্থ এবং রওশানা আরা ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র নাইম হাওলাদার সানারপাড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।

২০ জুলাই যাত্রাবাড়ীর কাজলায় নারায়ণগঞ্জ সরকারি আদমজী নগর এমডব্লিউ কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র ইমাম হাসান ভূঁইয়া, দনিয়া কলেজের ডিগ্রির ছাত্র সাকিব হাসান, নারায়ণগঞ্জ চিটাগং রোডে গজারিয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র মো. মেহেদী, যাত্রাবাড়ী এ কে স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র ইফাত হাসান গুলিতে নিহত হন। সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কামরুল হাসান রাব্বি যাত্রাবাড়ীতে বাসার বারান্দায় ২০ জুলাই গুলিবিদ্ধ হয়ে পরের দিন মারা যান। 

দনিয়া কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী রোহান আহমেদ খান ১৯ জুলাই যাত্রাবাড়ীতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ২০ জুলাই মারা যান। নয়ামাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রথম শ্রেণির ছাত্রী রিয়া গোপ নারায়ণগঞ্জে বাসার ছাদে ১৯ জুলাই গুলিবিদ্ধ হয়ে ২৪ জুলাই ঢামেকে মৃত্যুবরণ করে। সরকারি তোলারাম কলেজ ডিগ্রি কলেজের বিএ তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মেহেদী হাসান নাঈম ২৪ জুলাই রায়েরবাগে আহত হয়ে ৩১ জুলাই তাঁর মৃত্যু ঘটে।

৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীর কাজলায় সরকারি তোলারাম কলেজের ছাত্র আবদুর রহমান, বিউপির আইনের ছাত্র জোবায়ের ওমর খান, তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা আলিম প্রথম বর্ষের ছাত্র মুনতাসির রহমান আলিফ, গেণ্ডারিয়ার উইল পাওয়ার স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র শেখ মাহাদি হাসান জুনায়েদ, সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ছাত্র রাসেল মাহমুদ গুলিতে নিহত হন। 
৫ আগস্ট রায়েরবাগ প্রতিবন্ধী স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র আবদুল রাকিব বিজয় মিছিলে যাত্রাবাড়ীতে গুলিতে এবং ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ একাদশ শ্রেণির ছাত্র মো. জিহাদ হাসান যাত্রাবাড়ী থানার সামনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। 

মোহাম্মদপুর-ধানমন্ডি-আজিমপুর 
মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, আজিমপুর ও নিউমার্কেট এলাকায় সংঘর্ষে ১০ শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। ১৮ জুলাই আজিমপুর সরকারি আবাসিক এলাকায় পেটে গুলি লেগে আইডিয়াল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র খালিদ হাসান সাইফুল্লাহ, ধানমন্ডির রাপা প্লাজার সামনে ছররা গুলিতে রেসিডেনসিয়াল মডেলে কলেজের ছাত্র ফারহান ফাইয়াজ নিহত হন। 

১৯ জুলাই শেখ বোরহানুদ্দীন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজের ছাত্র সাইদুল ইসলাম শোভন নিউমার্কেট এলাকায় গুলিতে আহত হয়ে ঢামেকে, মোহাম্মদপুরে র‍্যাবের হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গুলিতে মোহাম্মদপুর দারুননাজাত ইসলামিয়া মাদ্রাসার চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র যোবায়িত হোসেন ইমন, মোহাম্মদপুর নূরজাহান রোডে গুলিতে সরকারি মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র মাহমুদুর রহমান সৈকত, সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণে মাথায় জখম পেয়ে আগারগাঁও নিউরোসায়েন্সেসে একই দিনে মোহাম্মদপুর আইটিজেড স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র রাকিব হাসান মারা যায়। 

১৯ জুলাই বিকেলে মোহাম্মদপুরে মিছিলে মাথায় গুলিবিদ্ধ হন সরকারি ইস্পাহানি ডিগ্রি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র রিয়াজ হোসেন। ২০ জুলাই সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে তাঁর লাশ মেলে।
৪ আগস্ট জিগাতলায় গুলিতে হাবীবুল্লাহ বাহার ডিগ্রি কলেজের মার্কেটিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবদুল্লাহ সিদ্দিক ও ছাত্রত্ব শেষ করে চাকরিপ্রার্থী ইলিয়াস খানের মৃত্যু হয়। একই দিনে বরিশাল মুলাদী ডিগ্রি কলেজের স্নাতক (সম্মান) শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ রিয়াজ জিগাতলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ১৭ আগস্ট চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢামেকে মারা যান।

শাহবাগ-কারওয়ান বাজার
৪ আগস্ট দুপুর ১২টার পর কারওয়ান বাজার ও ফার্মগেটে পুলিশের সঙ্গে গুলি ছোড়ে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ। সেখানে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রমিজ উদ্দিন রূপ নিহত হন। ১৯ জুলাই শাহবাগে আন্দোলনে গিয়ে নিখোঁজ হন শরীয়তপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইসমাইল হোসেন রাব্বি। পরে ৪ আগস্ট ঢামেকে তাঁর লাশ পাওয়া যায়। ফার্মগেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে পুলিশ ও আওয়ামীপন্থিদের বাধায় হাসপাতালে নিতে না পারায় প্রাণ হারান নৌবাহিনী কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া ছাত্র গোলাম নাফিজ। রিকশায় ঝুলতে থাকা তাঁর লাশ সারাদেশকে কাঁদায়।
৪ আগস্ট ফার্মগেটে সংঘর্ষে আহত হয়ে সেদিন ঢামেকে মৃত্যু হয় সরকারি কবি নজরুল কলেজের এইচএসসি উত্তীর্ণ ছাত্র তৌহিদুল ইসলামের। বাংলামটরে সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত হয়ে ৮ আগস্ট ঢামেকে মৃত্যু হয় মিরপুর বাঙলা কলেজের ছাত্র বেলাল হোসেন রাব্বির।

পরের দিন ৫ আগস্ট গুলিবিদ্ধ হয়ে সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র রাকিব হোসেন ঢামেক এলাকায় এবং যাত্রাবাড়ী থেকে মিছিলে আসা সরকারি তোলারাম কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের মানিক মিয়া চানখাঁরপুলে নিহত হন। ৫ আগস্ট শহীদ হওয়ার বাসনায় বাসায় চিঠি লিখে মিছিলে যোগ দিয়ে চানখাঁরপুলে পুলিশের গুলিতে মারা যান গেণ্ডারিয়া আদর্শ একাডেমির দশম শ্রেণি ছাত্র শাহরিয়ার খান আনাস।

মিরপুর-১০
বৃহত্তর মিরপুরে ১৫ শিক্ষার্থী নিহতের তথ্য পাওয়া গেছে। ১৮ জুলাই মিরপুর-১০-এ মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগের ১৩তম ব্যাচের প্রাক্তন ছাত্র রাকিবুল হাসান, ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র আসিফ ইকবাল পুলিশের গুলিতে নিহত হন।
১৯ জুলাই মিরপুর-১০-এ শহীদ আবু তালেব উচ্চ বিদ্যালয় ও নিকুঞ্জ ক্রাউন ইনস্টিটিউট অব বিজনেস টেকনোলজির ছাত্র আকরাম খান রাব্বি, পল্লবী সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র মমিনুল ইসলাম হৃদয়, ঢাকা মডেল ডিগ্রি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ফয়জুল ইসলাম রাজন, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাগর আহমেদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের আহসান হাবীব তামিম গুলিতে নিহত হন।

একই দিন মিরপুর কাফরুল থানার সামনে টিয়ার গ্যাসের ধোঁয়া এড়াতে বাসায় জানালা আটকাতে গিয়ে মিরপুর-১৪ জামিউল উলুম মাদ্রাসার নূরানি দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র সাফকাত সামির গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ে।

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ পৌর এলাকার আইডিয়াল কলেজের মানবিক বিভাগের এইচএসসি পরীক্ষার্থী শেখ শাহরিয়ার বিন মতিন ঢাকায় আন্দোলনে যোগ দিয়ে ১৮ জুলাই গুলিবিদ্ধ হয়ে ২০ জুলাই মারা যান।
৪ আগস্ট মিরপুর-১০-এ গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকার বিএএফ শাহীন কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র শাফিক উদ্দিন আহম্মেদ আহনাফ নিহত হন। একই দিনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ১৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ইকরামুল হক সাজিদ গুলিবিদ্ধ হয়ে ১৪ আগস্ট এবং মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভের (ইউডা) চারুকলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জুলফিকার আহমেদ শাকিল ৭ আগস্ট হাসপাতালে মারা যান।

৫ আগস্ট মিরপুর শ্যামলী রিংরোডে পুলিশের তিনটি গুলি লেগে ধানমন্ডি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র নাসিব হাসান রিয়ান, মিরপুর-২-এ গুলিবিদ্ধ হয়ে বিইউবিটির ইইই বিভাগের সুজন মাহমুদ মিথির মৃত্যু হয়। ৫ আগস্টেই মিরপুর থানার সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে বিইউবিটির সিএসই বিভাগের তাহমিদ আবদুল্লাহ অয়ন ১০ আগস্ট ঢামেকে মারা যান। 

পুরান ঢাকা-লক্ষ্মীবাজার
১৯ জুলাই সোহরাওয়ার্দী কলেজসংলগ্ন এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢামেকে মৃত্যু হয় কবি নজরুল কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ওমর ফারুকের। একই দিনে লক্ষ্মীবাজারে মারা যান কবি নজরুল কলেজের মাস্টার্সের ছাত্র ইকরাম হোসেন কাউসার। ৫ আগস্ট বংশাল থানার সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে কুমিল্লা সিসিএন পলিটেকনিকের পুরকৌশল বিভাগের ছাত্র হামিদুর রহমানের মৃত্যু হয়।

টঙ্গী-সাভার
গাজীপুরের টঙ্গী ও ঢাকার সাভারে অভ্যুত্থানের সময় ১৫ জনের হত্যার খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। ১৮ জুলাই সাভারে মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) সিএসইর ছাত্র শাইখ আসহাবুল ইয়ামিনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সাঁজোয়া যানের ওপরে ঘোরানো হয়। পরে তাঁকে সড়ক বিভাজকে ফেলে দিলে মারা যান ইয়ামিন।

২০ জুলাই টঙ্গীতে তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার ছাত্র মো. নাসির ইসলাম, সাভার নিউমার্কেটে শাহীনবাগ জাবালে নূর দাখিল মাদ্রাসায় ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র সাদ মাহমুদ পুলিশের গুলিতে মারা যায়।
সাভারে ৫ আগস্ট টঙ্গী সাহাজউদ্দিন সরকার স্কুল অ্যান্ড কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী নাফিছা হোসেন মারওয়া, সাভার থানার সামনে বিজয় মিছিলে ঢাকা কমার্স কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল আহাদ সৈকত, সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্র সাফওয়ান আখতার, সাভার সরকারি কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তানজীর খান মুন্না, মালয়েশিয়ার টিঙ্কু আবদুল রহমান ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজির সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী শ্রাবণ গাজী, সাভারের বাইপাইলে মানারাত ইউনিভার্সিটির ইইই বিভাগের ছাত্র আহনাফ আবির আশরাফুল্লাহ মারা যান।

৫ আগস্ট আশুলিয়ায় থানার সামনে সিটি ইউনিভার্সিটির বিএসসি (টেক্সটাইল) দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্র সাজ্জাদ হোসেন সজলের আগুনে পোড়া গুলিবিদ্ধ লাশ শনাক্ত করা হয়। পরদিন ৬ আগস্ট বাইপাইল মোড়ে শাহীন স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র আস-সাবুরের পুড়ে যাওয়া লাশ উদ্ধার করা হয়।

গত ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাপারেল ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের সাজ্জাদ হোসেন গুলিতে মারা যান। একই দিন সাভারে পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে ৭ আগস্ট মারা যায় সাভারের ডেইরি ফার্ম হাই স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আলিফ আহমেদ সিয়াম। ৫ আগস্ট ধামরাইয়ে হার্ডিঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে পুলিশের গুলিতে সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আফিকুল ইসলাম সাদ আহত হয়ে ৮ আগস্ট মারা যায়।

রাজধানী ছাড়াও ৪ আগস্ট লক্ষ্মীপুরের তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা টঙ্গী শাখার ছাত্র ওসমান পাটওয়ারী, ৫ আগস্ট লালমনিরহাটে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির ছাত্র শাহরিয়ার আল আফরোজ শ্রাবণ গুলিতে নিহত হন।

রাজধানীর কয়েকটি স্থানে মৃত্যুর ঘটনা একাধিক মূলধারার গণমাধ্যমে এসেছে। তবে তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ১৯ জুলাই বনশ্রীতে মূল সড়কে গুলিবিদ্ধ হয়ে কিশোর আশিকুল ইসলাম নিহতের ঘটনায় গত ২৮ আগস্ট শেখ হাসিনাসহ ২৭ জনকে দায়ী করে মামলা করে তার পরিবার। আশিকুলকে মাদ্রাসা শিক্ষার্থী হিসেবে উল্লেখ করা হলেও পূর্ণাঙ্গ পরিচয় জানা যায়নি।
এ ছাড়া গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ৩ আগস্ট কাউকে না জানিয়ে আন্দোলনে যোগ দিতে ঢাকায় আসে বাগেরহাটের শরণখোলার রাজাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র শামীম হাওলাদার। ৪ আগস্ট বিকেলে কেরানীগঞ্জের কদমতলী থেকে বাবা রুহুল আমিন হাওলাদারের সঙ্গে শেষ কথা হয় তার। এর পর নিখোঁজ হয় শামীম। পরে ২০ আগস্ট মিটফোর্ড হাসপাতালে পাওয়া যায় তার লাশ।
আরও বেশ কয়েকটি মৃত্যুর আংশিক তথ্য পাওয়া গেছে, যাদের শিক্ষার্থী পরিচয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ১৮ জুলাই যাত্রাবাড়ীতে নিহত নাজমুল শেখ ও মোহাম্মদ; ১৯ জুলাই আজিমপুর চায়না বিল্ডিং এলাকায় নিহত শাওন ও কাজলায় ইফতি; ২০ জুলাই যাত্রাবাড়ীতে নিহত মাদ্রাসাছাত্র শাহরিয়ার; ২৪ জুলাই মহাখালীতে নিহত শাহজাহান হৃদয়; ৫ আগস্ট শনির আখড়ায় নিহত সাইদ মুনতাসীর আলী, বংশালে নিহত রনি এবং ধানমন্ডি ৩২-এ নিহত ইউসুফ; ৬ আগস্ট বাড্ডায় নিহত আশরাফুল হাওলাদার ও গুলশানে আসিফ– এদের সবার পরিচয় ঢামেকে আনার পর পাওয়া গিয়েছিল। এ ছাড়া ৭ আগস্ট সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে হাসিবুর রহমান নামে এক কিশোরের মৃত্যুর তথ্য সংবাদমাধ্যমে পাওয়া যায়।

সিলেট ব্যুরো জানিয়েছে, ৫ আগস্ট বিয়ানীবাজারের কুড়ারবাজার কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের কলেজছাত্র রায়হান উদ্দিন গুলিতে নিহত হয়। ১৯ জুলাই শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রুদ্র সেন পুলিশের ধাওয়ায় পানিতে ডুবে মারা যান।

চট্টগ্রামে ব্যুরো জানিয়েছে, ১৬ জুলাই চট্টগ্রাম কলেজের মো. ওয়াসিম আকরাম, ওমরগনি এমইএইচ কলেজের অনার্স শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ শান্ত; ১৮ জুলাই আশেকান আউলিয়া ডিগ্রি কলেজের এইচএসসির শিক্ষার্থী তানবীর সিদ্দিকী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হৃদয় চন্দ্র তরুয়া নিহত হন।

গত ৫ আগস্ট চৌদ্দগ্রামে কুমিল্লা সরকারি কলেজের জামশেদুর রহমান মিয়াজী জুয়েল ও তালপুকুরে নাফিজুল আলম সামি নিহত হন। 
ফেনীতে ৪ আগস্ট সরকারি কলেজের সরোয়ার জাহান মাসুদ ও ইশতিয়াক আহমেদ শ্রাবণ, চট্টগ্রাম কলেজের মাহবুবুল হাসান মাসুম নিহত হন। ১৮ জুলাই কক্সবাজারে নিহত হন চকরিয়া ডিগ্রি কলেজের ছাত্র আহসান হাবিব।

লক্ষ্মীপুরে নিহত হয়েছে ভিক্টোরিয়া কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী সাদ আল আফনান এবং রাসেল দালালবাজার ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন রাসেল। আরও দুই শিক্ষার্থীকে হত্যার খবর মিললেও তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাওয়া যায়নি।

কিশোরগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র সামিদ হোসেন ৫ আগস্ট ঢাকা ঘেরাও কর্মসূচিতে টঙ্গীতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ১৯ জুলাই ময়মনসিংহে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর গুলিতে নিহত হন রেদওয়ান হাসান সাগর, পরদিন ময়মনসিংহের গৌরীপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান নূরে আলম সিদ্দিকী রাকিব। তিনি কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী।
রাজশাহী ব্যুরো জানিয়েছে, ৫ আগস্ট আলুপট্টিতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হন রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী আবু রায়হান। তিনি ছাত্রশিবিরের নেতা ছিলেন। একই দিনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী সাকিব আনজুমকে।

বগুড়া ব্যুরো জানিয়েছে, নওগাঁর বদলগাছী সরকারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মনিরুল ইসলাম মনির এবং সুখানপুকুর মোস্তাফিজার মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র সাব্বির হাসান ৫ আগস্ট নিহত হন। সেদিন মাথায় গুলিবিদ্ধ ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী রাতুল গতকাল সোমবার রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেসে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। ৪ আগস্ট জয়পুরহাটে পুলিশের গুলিতে কলেজছাত্র নজিবুল সরকার বিশাল নিহত হয়েছেন।

রংপুর অফিস জানিয়েছে, ১৬ জুলাই দুপুরে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটে ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নিহত হন। সাঈদের মৃত্যুর পরই ছাত্র আন্দোলন নতুন মাত্রা পায়। ১৯ জুলাই নিহত হন আবদুল্লাহ আল তাহির। তিনি ঢাকার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব গ্লাস অ্যান্ড সিরামিকসের অষ্টম সেমিস্টারের ছাত্র ছিলেন। 

কুড়িগ্রামের পাঁচপীর ডিগ্রি কলেজে এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আশিক ৪ আগস্ট যুবলীগ-ছাত্রলীগের হামলায় মাথায় ইটের আঘাত পান। পরে ১ সেপ্টেম্বর ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। দিনাজপুর সদর হাসপাতাল মোড়ে ৪ আগস্ট গুলিবিদ্ধ হন রানীগঞ্জ এহিয়া হোসেন স্কুল অ্যান্ড কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাহুল ইসলাম। ৯ আগস্ট তাঁর মৃত্যু হয়।
এদিকে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের ব্যবসায় শাখার এইচএসসি পরীক্ষার্থী মোহাম্মদ শিহাব আহমেদ, ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার নবম শ্রেণির ছাত্র শিক্ষার্থী হাফেজ সিয়াম হোসেন ৪ আগস্ট এনায়েতপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। 
পাবনায় পলিটেকনিকের ছাত্র জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, ছিদ্দিক মেমোরিয়াল হাই স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র মাহবুব হাসান নিলয় ৪ আগস্ট নিহত হয়।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৪:০৭:৪৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
৬৬
Translate »

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ১৩৫ শিক্ষার্থীর প্রাণক্ষয়

আপডেট : ০৪:০৭:৪৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশে অন্তত ৯৬ শিক্ষার্থী প্রাণ দিয়েছেন। অন্য জেলায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৩৯ জন। কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে হাসিনা সরকারের পতনের অভ্যুত্থানে ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত হত্যাযজ্ঞে এসব শিক্ষার্থী জীবন দেন। নিহত শিক্ষার্থীর প্রতিষ্ঠান ও তাদের স্বজন-সহপাঠীর সঙ্গে যোগাযোগ এবং তথ্য বিশ্লেষণ করে ১৩৫ শিক্ষার্থীকে হত্যার তথ্য নিশ্চিত করতে পেরেছে সমকাল। তবে এ সংখ্যা পূর্ণাঙ্গ নয়। এর বাইরেও প্রাণ হারানো শিক্ষার্থী থাকতে পারেন। 

গণঅভ্যুত্থানে কত মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তা এখনও অজানা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ৬৩১ জনের প্রাণ গেছে এ আন্দোলনে। বেসরকারি সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) তথ্য বলছে, ১৬ জুলাই থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৮৭৫ জন। এর বেশির ভাগই ছিল গুলিতে মৃত্যু। ১৮ থেকে ২০ জুলাই এবং ৪ থেকে ৭ আগস্ট– এই সাত দিনেই নিহত হয়েছেন ৭৪৮ জন। এদিকে অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্বাস্থ্য উপকমিটির তথ্যানুযায়ী, নিহতের সংখ্যা ১ হাজার ৪২৩। তবে বৈষম্যমুক্ত গণতান্ত্রিক দেশ গড়ার আকাঙ্ক্ষায় কত শিক্ষার্থী প্রাণ বিলিয়েছেন, তা কোনো প্রতিবেদনেই নেই।

সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে ১৩৫ নিহত শিক্ষার্থীর পরিবার কিংবা সহপাঠীর সঙ্গে কথা বলেছে সমকাল। তথ্য বলছে, সাভার, উত্তরা, বাড্ডা, রামপুরা, মিরপুর-১০, যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, কাজলা– এই কয়েকটি স্পটে বেশি হত্যাকাণ্ড হয়েছে। এ ছাড়া মোহাম্মদপুর, চানখাঁরপুল, আজিমপুর, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার এলাকায়ও কিছু হত্যার ঘটনা ঘটে। 
অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, সিংহভাগ শিক্ষার্থী পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন। সময়ের হিসাবে অধিকাংশ হত্যাকাণ্ড ১৮, ১৯ ও ২০ জুলাই এবং ৪ ও ৫ আগস্টে ঘটেছে। মৃত্যুর মিছিল শুরু হয় ১৬ জুলাই; সেদিন সায়েন্স ল্যাবে দু’পক্ষের সংঘর্ষে প্রথম ঢাকা কলেজের ছাত্র সবুজ আলীর মৃত্যু হয়। সর্বোচ্চ ২০ শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন যাত্রবাড়ী ও শনির আখড়ায়।

প্রতিষ্ঠান হিসেবে তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার সর্বোচ্চ ৫ শিক্ষার্থী জীবন দিয়েছেন। সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, রাজধানীর সরকারি কবি নজরুল কলেজ এবং নারায়ণগঞ্জের তোলারাম কলেজের চারজন করে শিক্ষার্থীকে হত্যা করা হয়েছে। সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৩, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, মিরপুর বাঙলা কলেজ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি (বিইউবিটি), বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিউপি) ও সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির দু’জন করে ছাত্র নিহত হয়েছেন। 

উত্তরা-বাড্ডা-রামপুরা 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের টিয়ার শেল-রাবার বুলেট ছুড়ে হলছাড়া করার পরের দিন ১৮ জুলাই রাজপথে নামেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রামপুরা, বাড্ডা ও উত্তরায় পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ বাধে তাদের। তিন দিনের সংঘর্ষে এ স্থানে ২০ শিক্ষার্থী মারা যান।

১৮ জুলাই নিহত হন উত্তরার আজমপুরে পুলিশের গুলিতে নর্দার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র আসিফ হাসান, মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ ১৭তম ব্যাচের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র শাকিল পারভেজ, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি) গাজীপুরের যন্ত্রপ্রকৌশল বিভাগের জাহিদুজ্জামান তানভীর, টঙ্গী সরকারি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক বিজ্ঞান বিভাগের শেখ ফাহমিন জাফর, বিউপির ছাত্র মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ, বাড্ডায় ইমপেরিয়াল কলেজের জিল্লুর শেখ। 

১৯ জুলাই মারা যান উত্তরায় বাসার বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা মাইলস্টোন স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী নাইমা সুলতানা, বনশ্রীতে ইন্টার্নকারী কুষ্টিয়া পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের কম্পিউটার বিভাগের ছাত্র মারুফ হোসেন, বাড্ডার শাহজাদপুরের গুলশান ডিগ্রি কলেজের উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মো. নাইমুর রহমান, রামপুরায় আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মোস্তফা জামান সমুদ্র ও ইমপেরিয়াল কলেজের সাবেক ছাত্র নাজমুল হাসান।

১৮ জুলাই রামপুরার ওয়াপদা সড়কে গুলিবিদ্ধ হয়ে ১৯ জুলাই মারা যান সরকারি তিতুমীর কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র মো. মামুন মিয়া। ১৯ জুলাই রামপুরায় গলা ও ঊরুতে গুলি লেগে আহত সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর ছাত্র ইমতিয়াজ আহমেদ জাবির ২৬ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।
১৮ জুলাই রাজধানীর মেরুল বাড্ডার বাসায় রাতে খাওয়া-দাওয়া করে বের হয়ে নিখোঁজ হয় পূর্ব বাড্ডার ইউসেপ হাজী সিকান্দার আলী টেকনিক্যাল স্কুলের এসএসসি ছাত্র মো. আহাদুন। পরে ২০ জুলাই ঢামেকে তার লাশ মেলে।

৫ আগস্ট উত্তরার আজমপুরে মাথায় গুলি লেগে মৃত্যু হয় টঙ্গী রেনেসাঁ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র ছাবিদ হোসেনের; বাড্ডায় গুলশান কমার্স কলেজের ছাত্র মো. রায়হান পুলিশের গুলিতে; একই দিনে উত্তরায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন গলাচিপার উলানিয়া হাট মাধ্যমিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ এইচএসসি পরীক্ষার্থী মো. সাগর গাজী। 
৫ আগস্ট খিলগাঁও থানার সামনে আল-জামিয়াতুল ইসলামিয়া মাখজানুল উলুম মাদ্রাসার ছাত্র যুবায়ের আহমদ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। একই দিন বাড্ডায় ছয় গুলি লেগে প্রাণ হারান পটুয়াখালীর মাদ্রাসাছাত্র রায়হান আকন। 

যাত্রাবাড়ী-কাজলা-শনির আখড়া 
১৮ জুলাই যাত্রাবাড়ীতে বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার দশম শ্রেণির ছাত্র আদিল আহমদ, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের ছাত্র ইরফান ভূঁইয়া গুলিতে নিহত হন। ১৯ জুলাই কবি নজরুল কলেজ ইতিহাস বিভাগের ছাত্র জিহাদ হোসেন, সরকারি তোলারাম কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী মাহাদী হাসান পান্থ এবং রওশানা আরা ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র নাইম হাওলাদার সানারপাড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।

২০ জুলাই যাত্রাবাড়ীর কাজলায় নারায়ণগঞ্জ সরকারি আদমজী নগর এমডব্লিউ কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র ইমাম হাসান ভূঁইয়া, দনিয়া কলেজের ডিগ্রির ছাত্র সাকিব হাসান, নারায়ণগঞ্জ চিটাগং রোডে গজারিয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র মো. মেহেদী, যাত্রাবাড়ী এ কে স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র ইফাত হাসান গুলিতে নিহত হন। সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কামরুল হাসান রাব্বি যাত্রাবাড়ীতে বাসার বারান্দায় ২০ জুলাই গুলিবিদ্ধ হয়ে পরের দিন মারা যান। 

দনিয়া কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী রোহান আহমেদ খান ১৯ জুলাই যাত্রাবাড়ীতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ২০ জুলাই মারা যান। নয়ামাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রথম শ্রেণির ছাত্রী রিয়া গোপ নারায়ণগঞ্জে বাসার ছাদে ১৯ জুলাই গুলিবিদ্ধ হয়ে ২৪ জুলাই ঢামেকে মৃত্যুবরণ করে। সরকারি তোলারাম কলেজ ডিগ্রি কলেজের বিএ তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মেহেদী হাসান নাঈম ২৪ জুলাই রায়েরবাগে আহত হয়ে ৩১ জুলাই তাঁর মৃত্যু ঘটে।

৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীর কাজলায় সরকারি তোলারাম কলেজের ছাত্র আবদুর রহমান, বিউপির আইনের ছাত্র জোবায়ের ওমর খান, তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা আলিম প্রথম বর্ষের ছাত্র মুনতাসির রহমান আলিফ, গেণ্ডারিয়ার উইল পাওয়ার স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র শেখ মাহাদি হাসান জুনায়েদ, সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ছাত্র রাসেল মাহমুদ গুলিতে নিহত হন। 
৫ আগস্ট রায়েরবাগ প্রতিবন্ধী স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র আবদুল রাকিব বিজয় মিছিলে যাত্রাবাড়ীতে গুলিতে এবং ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ একাদশ শ্রেণির ছাত্র মো. জিহাদ হাসান যাত্রাবাড়ী থানার সামনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। 

মোহাম্মদপুর-ধানমন্ডি-আজিমপুর 
মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, আজিমপুর ও নিউমার্কেট এলাকায় সংঘর্ষে ১০ শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। ১৮ জুলাই আজিমপুর সরকারি আবাসিক এলাকায় পেটে গুলি লেগে আইডিয়াল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র খালিদ হাসান সাইফুল্লাহ, ধানমন্ডির রাপা প্লাজার সামনে ছররা গুলিতে রেসিডেনসিয়াল মডেলে কলেজের ছাত্র ফারহান ফাইয়াজ নিহত হন। 

১৯ জুলাই শেখ বোরহানুদ্দীন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজের ছাত্র সাইদুল ইসলাম শোভন নিউমার্কেট এলাকায় গুলিতে আহত হয়ে ঢামেকে, মোহাম্মদপুরে র‍্যাবের হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গুলিতে মোহাম্মদপুর দারুননাজাত ইসলামিয়া মাদ্রাসার চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র যোবায়িত হোসেন ইমন, মোহাম্মদপুর নূরজাহান রোডে গুলিতে সরকারি মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র মাহমুদুর রহমান সৈকত, সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণে মাথায় জখম পেয়ে আগারগাঁও নিউরোসায়েন্সেসে একই দিনে মোহাম্মদপুর আইটিজেড স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র রাকিব হাসান মারা যায়। 

১৯ জুলাই বিকেলে মোহাম্মদপুরে মিছিলে মাথায় গুলিবিদ্ধ হন সরকারি ইস্পাহানি ডিগ্রি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র রিয়াজ হোসেন। ২০ জুলাই সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে তাঁর লাশ মেলে।
৪ আগস্ট জিগাতলায় গুলিতে হাবীবুল্লাহ বাহার ডিগ্রি কলেজের মার্কেটিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবদুল্লাহ সিদ্দিক ও ছাত্রত্ব শেষ করে চাকরিপ্রার্থী ইলিয়াস খানের মৃত্যু হয়। একই দিনে বরিশাল মুলাদী ডিগ্রি কলেজের স্নাতক (সম্মান) শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ রিয়াজ জিগাতলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ১৭ আগস্ট চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢামেকে মারা যান।

শাহবাগ-কারওয়ান বাজার
৪ আগস্ট দুপুর ১২টার পর কারওয়ান বাজার ও ফার্মগেটে পুলিশের সঙ্গে গুলি ছোড়ে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ। সেখানে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রমিজ উদ্দিন রূপ নিহত হন। ১৯ জুলাই শাহবাগে আন্দোলনে গিয়ে নিখোঁজ হন শরীয়তপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইসমাইল হোসেন রাব্বি। পরে ৪ আগস্ট ঢামেকে তাঁর লাশ পাওয়া যায়। ফার্মগেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে পুলিশ ও আওয়ামীপন্থিদের বাধায় হাসপাতালে নিতে না পারায় প্রাণ হারান নৌবাহিনী কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া ছাত্র গোলাম নাফিজ। রিকশায় ঝুলতে থাকা তাঁর লাশ সারাদেশকে কাঁদায়।
৪ আগস্ট ফার্মগেটে সংঘর্ষে আহত হয়ে সেদিন ঢামেকে মৃত্যু হয় সরকারি কবি নজরুল কলেজের এইচএসসি উত্তীর্ণ ছাত্র তৌহিদুল ইসলামের। বাংলামটরে সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত হয়ে ৮ আগস্ট ঢামেকে মৃত্যু হয় মিরপুর বাঙলা কলেজের ছাত্র বেলাল হোসেন রাব্বির।

পরের দিন ৫ আগস্ট গুলিবিদ্ধ হয়ে সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র রাকিব হোসেন ঢামেক এলাকায় এবং যাত্রাবাড়ী থেকে মিছিলে আসা সরকারি তোলারাম কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের মানিক মিয়া চানখাঁরপুলে নিহত হন। ৫ আগস্ট শহীদ হওয়ার বাসনায় বাসায় চিঠি লিখে মিছিলে যোগ দিয়ে চানখাঁরপুলে পুলিশের গুলিতে মারা যান গেণ্ডারিয়া আদর্শ একাডেমির দশম শ্রেণি ছাত্র শাহরিয়ার খান আনাস।

মিরপুর-১০
বৃহত্তর মিরপুরে ১৫ শিক্ষার্থী নিহতের তথ্য পাওয়া গেছে। ১৮ জুলাই মিরপুর-১০-এ মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগের ১৩তম ব্যাচের প্রাক্তন ছাত্র রাকিবুল হাসান, ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র আসিফ ইকবাল পুলিশের গুলিতে নিহত হন।
১৯ জুলাই মিরপুর-১০-এ শহীদ আবু তালেব উচ্চ বিদ্যালয় ও নিকুঞ্জ ক্রাউন ইনস্টিটিউট অব বিজনেস টেকনোলজির ছাত্র আকরাম খান রাব্বি, পল্লবী সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র মমিনুল ইসলাম হৃদয়, ঢাকা মডেল ডিগ্রি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ফয়জুল ইসলাম রাজন, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাগর আহমেদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের আহসান হাবীব তামিম গুলিতে নিহত হন।

একই দিন মিরপুর কাফরুল থানার সামনে টিয়ার গ্যাসের ধোঁয়া এড়াতে বাসায় জানালা আটকাতে গিয়ে মিরপুর-১৪ জামিউল উলুম মাদ্রাসার নূরানি দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র সাফকাত সামির গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ে।

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ পৌর এলাকার আইডিয়াল কলেজের মানবিক বিভাগের এইচএসসি পরীক্ষার্থী শেখ শাহরিয়ার বিন মতিন ঢাকায় আন্দোলনে যোগ দিয়ে ১৮ জুলাই গুলিবিদ্ধ হয়ে ২০ জুলাই মারা যান।
৪ আগস্ট মিরপুর-১০-এ গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকার বিএএফ শাহীন কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র শাফিক উদ্দিন আহম্মেদ আহনাফ নিহত হন। একই দিনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ১৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ইকরামুল হক সাজিদ গুলিবিদ্ধ হয়ে ১৪ আগস্ট এবং মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভের (ইউডা) চারুকলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জুলফিকার আহমেদ শাকিল ৭ আগস্ট হাসপাতালে মারা যান।

৫ আগস্ট মিরপুর শ্যামলী রিংরোডে পুলিশের তিনটি গুলি লেগে ধানমন্ডি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র নাসিব হাসান রিয়ান, মিরপুর-২-এ গুলিবিদ্ধ হয়ে বিইউবিটির ইইই বিভাগের সুজন মাহমুদ মিথির মৃত্যু হয়। ৫ আগস্টেই মিরপুর থানার সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে বিইউবিটির সিএসই বিভাগের তাহমিদ আবদুল্লাহ অয়ন ১০ আগস্ট ঢামেকে মারা যান। 

পুরান ঢাকা-লক্ষ্মীবাজার
১৯ জুলাই সোহরাওয়ার্দী কলেজসংলগ্ন এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢামেকে মৃত্যু হয় কবি নজরুল কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ওমর ফারুকের। একই দিনে লক্ষ্মীবাজারে মারা যান কবি নজরুল কলেজের মাস্টার্সের ছাত্র ইকরাম হোসেন কাউসার। ৫ আগস্ট বংশাল থানার সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে কুমিল্লা সিসিএন পলিটেকনিকের পুরকৌশল বিভাগের ছাত্র হামিদুর রহমানের মৃত্যু হয়।

টঙ্গী-সাভার
গাজীপুরের টঙ্গী ও ঢাকার সাভারে অভ্যুত্থানের সময় ১৫ জনের হত্যার খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। ১৮ জুলাই সাভারে মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) সিএসইর ছাত্র শাইখ আসহাবুল ইয়ামিনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সাঁজোয়া যানের ওপরে ঘোরানো হয়। পরে তাঁকে সড়ক বিভাজকে ফেলে দিলে মারা যান ইয়ামিন।

২০ জুলাই টঙ্গীতে তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার ছাত্র মো. নাসির ইসলাম, সাভার নিউমার্কেটে শাহীনবাগ জাবালে নূর দাখিল মাদ্রাসায় ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র সাদ মাহমুদ পুলিশের গুলিতে মারা যায়।
সাভারে ৫ আগস্ট টঙ্গী সাহাজউদ্দিন সরকার স্কুল অ্যান্ড কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী নাফিছা হোসেন মারওয়া, সাভার থানার সামনে বিজয় মিছিলে ঢাকা কমার্স কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল আহাদ সৈকত, সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্র সাফওয়ান আখতার, সাভার সরকারি কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তানজীর খান মুন্না, মালয়েশিয়ার টিঙ্কু আবদুল রহমান ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজির সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী শ্রাবণ গাজী, সাভারের বাইপাইলে মানারাত ইউনিভার্সিটির ইইই বিভাগের ছাত্র আহনাফ আবির আশরাফুল্লাহ মারা যান।

৫ আগস্ট আশুলিয়ায় থানার সামনে সিটি ইউনিভার্সিটির বিএসসি (টেক্সটাইল) দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্র সাজ্জাদ হোসেন সজলের আগুনে পোড়া গুলিবিদ্ধ লাশ শনাক্ত করা হয়। পরদিন ৬ আগস্ট বাইপাইল মোড়ে শাহীন স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র আস-সাবুরের পুড়ে যাওয়া লাশ উদ্ধার করা হয়।

গত ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাপারেল ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের সাজ্জাদ হোসেন গুলিতে মারা যান। একই দিন সাভারে পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে ৭ আগস্ট মারা যায় সাভারের ডেইরি ফার্ম হাই স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আলিফ আহমেদ সিয়াম। ৫ আগস্ট ধামরাইয়ে হার্ডিঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে পুলিশের গুলিতে সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আফিকুল ইসলাম সাদ আহত হয়ে ৮ আগস্ট মারা যায়।

রাজধানী ছাড়াও ৪ আগস্ট লক্ষ্মীপুরের তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা টঙ্গী শাখার ছাত্র ওসমান পাটওয়ারী, ৫ আগস্ট লালমনিরহাটে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির ছাত্র শাহরিয়ার আল আফরোজ শ্রাবণ গুলিতে নিহত হন।

রাজধানীর কয়েকটি স্থানে মৃত্যুর ঘটনা একাধিক মূলধারার গণমাধ্যমে এসেছে। তবে তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ১৯ জুলাই বনশ্রীতে মূল সড়কে গুলিবিদ্ধ হয়ে কিশোর আশিকুল ইসলাম নিহতের ঘটনায় গত ২৮ আগস্ট শেখ হাসিনাসহ ২৭ জনকে দায়ী করে মামলা করে তার পরিবার। আশিকুলকে মাদ্রাসা শিক্ষার্থী হিসেবে উল্লেখ করা হলেও পূর্ণাঙ্গ পরিচয় জানা যায়নি।
এ ছাড়া গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ৩ আগস্ট কাউকে না জানিয়ে আন্দোলনে যোগ দিতে ঢাকায় আসে বাগেরহাটের শরণখোলার রাজাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র শামীম হাওলাদার। ৪ আগস্ট বিকেলে কেরানীগঞ্জের কদমতলী থেকে বাবা রুহুল আমিন হাওলাদারের সঙ্গে শেষ কথা হয় তার। এর পর নিখোঁজ হয় শামীম। পরে ২০ আগস্ট মিটফোর্ড হাসপাতালে পাওয়া যায় তার লাশ।
আরও বেশ কয়েকটি মৃত্যুর আংশিক তথ্য পাওয়া গেছে, যাদের শিক্ষার্থী পরিচয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ১৮ জুলাই যাত্রাবাড়ীতে নিহত নাজমুল শেখ ও মোহাম্মদ; ১৯ জুলাই আজিমপুর চায়না বিল্ডিং এলাকায় নিহত শাওন ও কাজলায় ইফতি; ২০ জুলাই যাত্রাবাড়ীতে নিহত মাদ্রাসাছাত্র শাহরিয়ার; ২৪ জুলাই মহাখালীতে নিহত শাহজাহান হৃদয়; ৫ আগস্ট শনির আখড়ায় নিহত সাইদ মুনতাসীর আলী, বংশালে নিহত রনি এবং ধানমন্ডি ৩২-এ নিহত ইউসুফ; ৬ আগস্ট বাড্ডায় নিহত আশরাফুল হাওলাদার ও গুলশানে আসিফ– এদের সবার পরিচয় ঢামেকে আনার পর পাওয়া গিয়েছিল। এ ছাড়া ৭ আগস্ট সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে হাসিবুর রহমান নামে এক কিশোরের মৃত্যুর তথ্য সংবাদমাধ্যমে পাওয়া যায়।

সিলেট ব্যুরো জানিয়েছে, ৫ আগস্ট বিয়ানীবাজারের কুড়ারবাজার কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের কলেজছাত্র রায়হান উদ্দিন গুলিতে নিহত হয়। ১৯ জুলাই শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রুদ্র সেন পুলিশের ধাওয়ায় পানিতে ডুবে মারা যান।

চট্টগ্রামে ব্যুরো জানিয়েছে, ১৬ জুলাই চট্টগ্রাম কলেজের মো. ওয়াসিম আকরাম, ওমরগনি এমইএইচ কলেজের অনার্স শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ শান্ত; ১৮ জুলাই আশেকান আউলিয়া ডিগ্রি কলেজের এইচএসসির শিক্ষার্থী তানবীর সিদ্দিকী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হৃদয় চন্দ্র তরুয়া নিহত হন।

গত ৫ আগস্ট চৌদ্দগ্রামে কুমিল্লা সরকারি কলেজের জামশেদুর রহমান মিয়াজী জুয়েল ও তালপুকুরে নাফিজুল আলম সামি নিহত হন। 
ফেনীতে ৪ আগস্ট সরকারি কলেজের সরোয়ার জাহান মাসুদ ও ইশতিয়াক আহমেদ শ্রাবণ, চট্টগ্রাম কলেজের মাহবুবুল হাসান মাসুম নিহত হন। ১৮ জুলাই কক্সবাজারে নিহত হন চকরিয়া ডিগ্রি কলেজের ছাত্র আহসান হাবিব।

লক্ষ্মীপুরে নিহত হয়েছে ভিক্টোরিয়া কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী সাদ আল আফনান এবং রাসেল দালালবাজার ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন রাসেল। আরও দুই শিক্ষার্থীকে হত্যার খবর মিললেও তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাওয়া যায়নি।

কিশোরগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র সামিদ হোসেন ৫ আগস্ট ঢাকা ঘেরাও কর্মসূচিতে টঙ্গীতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ১৯ জুলাই ময়মনসিংহে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর গুলিতে নিহত হন রেদওয়ান হাসান সাগর, পরদিন ময়মনসিংহের গৌরীপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান নূরে আলম সিদ্দিকী রাকিব। তিনি কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী।
রাজশাহী ব্যুরো জানিয়েছে, ৫ আগস্ট আলুপট্টিতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হন রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী আবু রায়হান। তিনি ছাত্রশিবিরের নেতা ছিলেন। একই দিনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী সাকিব আনজুমকে।

বগুড়া ব্যুরো জানিয়েছে, নওগাঁর বদলগাছী সরকারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মনিরুল ইসলাম মনির এবং সুখানপুকুর মোস্তাফিজার মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র সাব্বির হাসান ৫ আগস্ট নিহত হন। সেদিন মাথায় গুলিবিদ্ধ ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী রাতুল গতকাল সোমবার রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেসে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। ৪ আগস্ট জয়পুরহাটে পুলিশের গুলিতে কলেজছাত্র নজিবুল সরকার বিশাল নিহত হয়েছেন।

রংপুর অফিস জানিয়েছে, ১৬ জুলাই দুপুরে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটে ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নিহত হন। সাঈদের মৃত্যুর পরই ছাত্র আন্দোলন নতুন মাত্রা পায়। ১৯ জুলাই নিহত হন আবদুল্লাহ আল তাহির। তিনি ঢাকার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব গ্লাস অ্যান্ড সিরামিকসের অষ্টম সেমিস্টারের ছাত্র ছিলেন। 

কুড়িগ্রামের পাঁচপীর ডিগ্রি কলেজে এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আশিক ৪ আগস্ট যুবলীগ-ছাত্রলীগের হামলায় মাথায় ইটের আঘাত পান। পরে ১ সেপ্টেম্বর ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। দিনাজপুর সদর হাসপাতাল মোড়ে ৪ আগস্ট গুলিবিদ্ধ হন রানীগঞ্জ এহিয়া হোসেন স্কুল অ্যান্ড কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাহুল ইসলাম। ৯ আগস্ট তাঁর মৃত্যু হয়।
এদিকে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের ব্যবসায় শাখার এইচএসসি পরীক্ষার্থী মোহাম্মদ শিহাব আহমেদ, ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার নবম শ্রেণির ছাত্র শিক্ষার্থী হাফেজ সিয়াম হোসেন ৪ আগস্ট এনায়েতপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। 
পাবনায় পলিটেকনিকের ছাত্র জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, ছিদ্দিক মেমোরিয়াল হাই স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র মাহবুব হাসান নিলয় ৪ আগস্ট নিহত হয়।