London ০১:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৭ জুন ২০২৫, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম:
হামজার ছোঁয়ায় ভুটানের বিপক্ষে বাংলাদেশের দারুণ জয় এই রাতে আলো ছিল, জয় ছিল, আর ছিল একজন হামজা চৌধুরী ইতালিতে সাংগঠনিক কাজে‌ বিশেষ অবদান রাখায় ইকবাল বেপারী‌কে সংবর্ধনা দিলো‌ প্রগতি ব্যবসায়ী সমিতি পটুয়াখালীতে কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষনে বিনামূল্যে ৪৭ মেট্রিক টন লবন বিতরণ পটুয়াখালীতে রাত ৯ টা পর্যন্ত চলছে বিভিন্ন পশুর হাট রাজশাহীতে প্রতারণা করে ফ্ল্যাট কেনার অভিযোগ ব্যারিস্টার কায়সার কামালের ঈদ উপহার পেলো দুর্গাপুরের চার শহীদের পরিবার সিরাজগঞ্জে স্বামী কর্তৃক স্ত্রী‌কে খুনের অ‌ভি‌যোগ-আটক ১ জিয়াউর রহমানের ৪৪ তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত ইতালির পিসাকানে স্কুলে টেস্ট দ্যা ওয়ার্ল্ড নামে অনুষ্ঠিত বহুজাতিক সংস্কৃতির মিলনমেলা

লোকদেখানো ড্রেজিংয়ে বন্ধ হচ্ছে দক্ষিণের নৌপথ

অনলাইন ডেস্ক:

খনন কার্যক্রমের বছর না ঘুরতেই ডুবোচর পড়ছে কীর্তনখোলা নদীতে। লোকদেখানো ড্রেজিং কার্যক্রমের কারণে চরম নাব্য সংকট দেখা দিয়েছে বরিশাল-ঢাকা নৌপথে। ফলে নির্ধারিত সময়ে পন্টুনে ভিড়তে পারছে না ছোট-বড় নৌযান। একদিকে যাত্রী সংকট, অন্যদিকে অপরিকল্পিত ড্রেজিংয়ের কারণে বন্ধ হতে বসেছে বরিশালের নৌপথ। নৌপথটি বাচাঁনোর জোর দাবি জানিয়েছেন লঞ্চমালিকরা।

লঞ্চমালিকদের দাবি, ড্রেজিংয়ের নামে প্রতিবছর শুধু অর্থ লোপাট করা হয়েছে। যে খরচ ধরা হয় তার ৭০ শতাংশ টাকা নিজেদের পকেটে ভরেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও ড্রেজিং বিভাগ। ফলে ড্রেজিং কার্যক্রমের কোনো সুফল মিলছে না দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথে।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, নদীবেষ্টিত এ অঞ্চলের ছোট-বড় প্রায় সব নদীতেই এখন অসংখ্য ডুবোচর। বিশেষ করে মেঘনা ও গজারিয়া নদীর দুই জায়গায়, বরিশাল-ভোলা রুটের বেশিরভাগ জায়গায়, বরিশাল-পাতারহাট-লক্ষ্মীপুর রুটে ভাটার সময় পানি তলানিতে পৌঁছে যাচ্ছে। এতে যাত্রীবাহী লঞ্চ এবং মালবাহী জাহাজ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি বরিশাল নৌবন্দরেও নাব্য সংকট রয়েছে।

ঢাকা-বরিশাল, মিয়ারচর, পটুয়াখালী, ভোলা, লক্ষ্মীপুর, হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জসহ বেশ কিছু রুটের যাত্রীদের অভিযোগ, প্রতিবছরই ড্রেজিং চলে, তারপরও শুকনা মৌসুমে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। বিভিন্ন স্থানে ডুবোচরে লঞ্চ আটকে যাচ্ছে। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জোয়ারের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এতে কাজের ব্যাঘাত ঘটছে। লোকসান গুনছেন লঞ্চমালিকরা।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ লঞ্চমালিক সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট কাজী ওয়াহিদুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘ড্রেজিং বিভাগ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রতিবছর নদী খননের নামে অর্থ লোপাটের মচ্ছব করছে। তারা আগে ড্রেজিংয়ের সময় বিআইডব্লিউটিএ ও লঞ্চমালিকদের প্রতিনিধি সঙ্গে নিতেন। এখন সেই সিস্টেম বাদ দিয়ে ড্রেজিং বিভাগ একাই খনন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ফলে নিজেদের ইচ্ছামতো খননের বিল তুলে নিচ্ছে। নদীর বালি নদীতেই থেকে যাচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ড্রেজিং বিভাগের লোকজন ‘ভাটায় কাটেন জোয়ারে মাপেন’। ভাটার সময় বালু কাটেন এক ফুট আর জোয়ার এলে মাপেন পাঁচ ফুট। এভাবেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও ড্রেজিং বিভাগ মিলে সরকারের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে ড্রেজিং কার্যক্রমের সময় আগের নিয়মে বিআইডব্লিউটিএ ও লঞ্চমালিকদের একজন করে প্রতিনিধি রাখার দাবি জানান তিনি।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ লঞ্চমালিক সমিতির প্রেসিডেন্ট আক্কাস সিকদার বলেন, ‘প্রতিবছরই ড্রেজিং হয়। আসলে ড্রেজিংয়ের নামে চুরি হয়। যে খরচ ধরা হয় তার ৭০ শতাংশ টাকা নিজেদের পকেটে ভরছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও ড্রেজিং বিভাগ। ফলে ড্রেজিং কার্যক্রমের কোনো সুফল মিলছে না। এতে একে একে বন্ধ হচ্ছে দক্ষিণের নৌপথ। বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে নৌ পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত হোসেনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। কারণ তার নিজের বাড়িও বরিশালের হিজলায়। তাই এই অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ তিনি বুঝবেন।’

লঞ্চের একাধিক মাস্টার জানান, বরিশাল নৌবন্দরেও নাব্য সংকট রয়েছে। যদিও সেখানে খনন চলছে। কিন্তু প্রতিবছরই অপরিকল্পিত খননের কারণে ঘাটে লঞ্চ ভেড়াতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ বরিশাল নদীর বন্দরের যুগ্ম পরিচালক (বন্দর ও পরিবহন বিভাগ) শেখ মোহাম্মদ সেলিম রেজা জাগো নিউজকে বলেন, নদীপথের বিভিন্ন স্থানের ডুবোচর খননের জন্য লঞ্চমালিকরা আমাদের জানিয়েছেন। আমরা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জানিয়েছি। তারা আশ্বস্ত করেছেন, শিগগির এগুলো খনন করা হবে।

বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর) মো. মামুন উর রশীদ বলেন, ‘লঞ্চমালিকদের এসব অভিযোগের আসলে সত্যতা নেই। কারণ এখনতো সব কিছুই স্বচ্ছতার মাধ্যমে করা হয়। আগে কী হয়েছে না হয়েছে জানি না। তবে এখন সব কিছু স্বচ্ছতার মাধ্যমে করা হয়। সামনের দিনগুলোতে বিআইডব্লিউটিএ ও লঞ্চমালিকদের একজন করে প্রতিনিধি সঙ্গে নিয়ে ড্রেজিং করা হবে।’

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৩:৪৩:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫
১৬
Translate »

লোকদেখানো ড্রেজিংয়ে বন্ধ হচ্ছে দক্ষিণের নৌপথ

আপডেট : ০৩:৪৩:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

খনন কার্যক্রমের বছর না ঘুরতেই ডুবোচর পড়ছে কীর্তনখোলা নদীতে। লোকদেখানো ড্রেজিং কার্যক্রমের কারণে চরম নাব্য সংকট দেখা দিয়েছে বরিশাল-ঢাকা নৌপথে। ফলে নির্ধারিত সময়ে পন্টুনে ভিড়তে পারছে না ছোট-বড় নৌযান। একদিকে যাত্রী সংকট, অন্যদিকে অপরিকল্পিত ড্রেজিংয়ের কারণে বন্ধ হতে বসেছে বরিশালের নৌপথ। নৌপথটি বাচাঁনোর জোর দাবি জানিয়েছেন লঞ্চমালিকরা।

লঞ্চমালিকদের দাবি, ড্রেজিংয়ের নামে প্রতিবছর শুধু অর্থ লোপাট করা হয়েছে। যে খরচ ধরা হয় তার ৭০ শতাংশ টাকা নিজেদের পকেটে ভরেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও ড্রেজিং বিভাগ। ফলে ড্রেজিং কার্যক্রমের কোনো সুফল মিলছে না দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথে।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, নদীবেষ্টিত এ অঞ্চলের ছোট-বড় প্রায় সব নদীতেই এখন অসংখ্য ডুবোচর। বিশেষ করে মেঘনা ও গজারিয়া নদীর দুই জায়গায়, বরিশাল-ভোলা রুটের বেশিরভাগ জায়গায়, বরিশাল-পাতারহাট-লক্ষ্মীপুর রুটে ভাটার সময় পানি তলানিতে পৌঁছে যাচ্ছে। এতে যাত্রীবাহী লঞ্চ এবং মালবাহী জাহাজ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি বরিশাল নৌবন্দরেও নাব্য সংকট রয়েছে।

ঢাকা-বরিশাল, মিয়ারচর, পটুয়াখালী, ভোলা, লক্ষ্মীপুর, হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জসহ বেশ কিছু রুটের যাত্রীদের অভিযোগ, প্রতিবছরই ড্রেজিং চলে, তারপরও শুকনা মৌসুমে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। বিভিন্ন স্থানে ডুবোচরে লঞ্চ আটকে যাচ্ছে। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জোয়ারের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এতে কাজের ব্যাঘাত ঘটছে। লোকসান গুনছেন লঞ্চমালিকরা।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ লঞ্চমালিক সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট কাজী ওয়াহিদুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘ড্রেজিং বিভাগ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রতিবছর নদী খননের নামে অর্থ লোপাটের মচ্ছব করছে। তারা আগে ড্রেজিংয়ের সময় বিআইডব্লিউটিএ ও লঞ্চমালিকদের প্রতিনিধি সঙ্গে নিতেন। এখন সেই সিস্টেম বাদ দিয়ে ড্রেজিং বিভাগ একাই খনন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ফলে নিজেদের ইচ্ছামতো খননের বিল তুলে নিচ্ছে। নদীর বালি নদীতেই থেকে যাচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ড্রেজিং বিভাগের লোকজন ‘ভাটায় কাটেন জোয়ারে মাপেন’। ভাটার সময় বালু কাটেন এক ফুট আর জোয়ার এলে মাপেন পাঁচ ফুট। এভাবেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও ড্রেজিং বিভাগ মিলে সরকারের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে ড্রেজিং কার্যক্রমের সময় আগের নিয়মে বিআইডব্লিউটিএ ও লঞ্চমালিকদের একজন করে প্রতিনিধি রাখার দাবি জানান তিনি।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ লঞ্চমালিক সমিতির প্রেসিডেন্ট আক্কাস সিকদার বলেন, ‘প্রতিবছরই ড্রেজিং হয়। আসলে ড্রেজিংয়ের নামে চুরি হয়। যে খরচ ধরা হয় তার ৭০ শতাংশ টাকা নিজেদের পকেটে ভরছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও ড্রেজিং বিভাগ। ফলে ড্রেজিং কার্যক্রমের কোনো সুফল মিলছে না। এতে একে একে বন্ধ হচ্ছে দক্ষিণের নৌপথ। বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে নৌ পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত হোসেনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। কারণ তার নিজের বাড়িও বরিশালের হিজলায়। তাই এই অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ তিনি বুঝবেন।’

লঞ্চের একাধিক মাস্টার জানান, বরিশাল নৌবন্দরেও নাব্য সংকট রয়েছে। যদিও সেখানে খনন চলছে। কিন্তু প্রতিবছরই অপরিকল্পিত খননের কারণে ঘাটে লঞ্চ ভেড়াতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ বরিশাল নদীর বন্দরের যুগ্ম পরিচালক (বন্দর ও পরিবহন বিভাগ) শেখ মোহাম্মদ সেলিম রেজা জাগো নিউজকে বলেন, নদীপথের বিভিন্ন স্থানের ডুবোচর খননের জন্য লঞ্চমালিকরা আমাদের জানিয়েছেন। আমরা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জানিয়েছি। তারা আশ্বস্ত করেছেন, শিগগির এগুলো খনন করা হবে।

বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর) মো. মামুন উর রশীদ বলেন, ‘লঞ্চমালিকদের এসব অভিযোগের আসলে সত্যতা নেই। কারণ এখনতো সব কিছুই স্বচ্ছতার মাধ্যমে করা হয়। আগে কী হয়েছে না হয়েছে জানি না। তবে এখন সব কিছু স্বচ্ছতার মাধ্যমে করা হয়। সামনের দিনগুলোতে বিআইডব্লিউটিএ ও লঞ্চমালিকদের একজন করে প্রতিনিধি সঙ্গে নিয়ে ড্রেজিং করা হবে।’