London ০৮:১৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫, ৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম:
রাণীনগরে মৌসুমী সমৃদ্ধির দিনভর নানা উন্নয়নমূলক কর্মসূচি কসবায় হেফাজতের নেতৃবৃন্দের সাথে কসবা-আখাউড়া এমপি পদপ্রার্থী প্রভাষক কাজী মঈনুদ্দিনের সৌজন্য সাক্ষাৎ ও মত বিনিময় সিরাজগঞ্জে পলিথিনে মোড়ানো বস্তুয় অর্ধগলিত নবজাতক শিশুর মরা দেহ উদ্ধার কালিয়াকৈরে দোকানে মালামাল ও নগদ টাকা চুরি কসবায় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এমপি প্রার্থী প্রভাষক কাজী মোঃ মাঈনুদ্দিনের সৌজন্য সাক্ষাৎ ও মতবিনিময় সাংবাদিকের বিরুদ্ধে স্কুল শিক্ষিকা ও চাঁদাবাজদের মাধ্যমে পরিকল্পিত অপপ্রচার রাজশাহীতে হিমাগারের ভাড়া কমালো কালিয়াকৈরে উপজেলা ও পৌর বিএনপির ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত সেই কথিত যুবদল নেতা আবার চাঁদাবাজি করতে গিয়ে জনতার হাতে আটক। নীরব পুলিশ! রাজশাহীতে করোনা সনাক্ত

ট্রাম্পের ‘শুল্ক বিরতি’তে ভরসা পাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা

অনলাইন ডেস্ক:

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্ব বাণিজ্যে নতুন মোড় নেওয়ার আভাস দিলেও বিনিয়োগকারীরা তাতে স্বস্তি পাচ্ছেন না। সম্প্রতি ট্রাম্প তার কঠোর শুল্কনীতি আংশিকভাবে শিথিল করলেও চীনের জন্য তা আরও কঠোর করেছেন। এতে আবারও অস্থির হয়ে উঠেছে বৈশ্বিক অর্থনীতি ও পুঁজিবাজার।

চীন চলতি বছরে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ১০টি সিনেমা আমদানি করেছে, যার মধ্যে রয়েছে জনপ্রিয় ভিডিও গেম-ভিত্তিক সিনেমা ‘এ মাইনক্রাফট মুভি’ও। কিন্তু ট্রাম্প যখন অধিকাংশ দেশের জন্য ‘পারস্পরিক’ শুল্ক ১০ শতাংশে নামিয়ে আনলেন এবং চীনের জন্য তা বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করলেন, তখন চীনের চলচ্চিত্র প্রশাসন পাল্টা ঘোষণা দেয়— দেশটির মূল ভূখণ্ডে হলিউড সিনেমা প্রদর্শন কমিয়ে আনা হবে। প্রশাসনের ভাষায়, এই শুল্ক চীনা দর্শকের মধ্যে মার্কিন সিনেমার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব কমিয়ে দেবে।

এরপর ১১ এপ্রিল চীনের মন্ত্রিসভা ট্রাম্পের পদক্ষেপের সমপরিমাণ পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়। তারা জানায়, যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেউ এখন আর চীনে কিছু বিক্রি করতে পারবে না— এ অবস্থায় আরও পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন নেই। এমনকি চীন সরকার স্পষ্ট বলে দেয়, যুক্তরাষ্ট্র আরও কিছু চাপালে চীন তাতে গুরুত্ব দেবে না।

বিনিয়োগকারীরাও যেন ঠিক একই মনোভাব দেখাচ্ছেন। ৯ এপ্রিল ট্রাম্প ৯০ দিনের শুল্ক বিরতি ঘোষণার পর বাজারে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফিরেছিল। শেয়ারবাজার চাঙ্গা হয়ে ওঠে এবং সরকারি বন্ডের সুদের হার ওঠানামা থেমে যায়। কিন্তু সেই সুখ স্থায়ী হয়নি। পরদিনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান স্টক সূচক ৩ দশমিক ৫ শতাংশ পড়ে যায়, ডলার ফের দুর্বল হয় এবং বন্ডের মূল্য কমে সুদের হার বেড়ে যায়।

বিশেষ করে ১০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের ক্ষেত্রে সুদের হার মাত্র এক সপ্তাহে বেড়ে দাঁড়ায় ৪ দশমিক ৫ শতাংশে—যা অর্থনীতির ধীরগতির পূর্বাভাসের পরেও অস্বাভাবিক বৃদ্ধি। জেপি মরগান চেজ-এর অর্থনীতিবিদরা বলছেন, চীনা আমদানির হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়া, আত্মবিশ্বাসে ধাক্কা এবং নীতিগত বিশৃঙ্খলা- সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্র মন্দা এড়াতে পারবে কি না, তা এখন প্রশ্নবিদ্ধ।

স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে এমন মন্দা আশঙ্কা সুদের হার কমিয়ে দিতো আর বন্ডের দাম বাড়িয়ে তুলতো। কিন্তু এবার সেই হিসাব মিলছে না। গবেষণা প্রতিষ্ঠান টিএস লম্বার্ড-এর ফ্রেয়া বিমিশ বলেন, যদি আপনার নিরাপদ আশ্রয় থাকে মার্কিন ট্রেজারি, তাহলে এখন নতুন আশ্রয় খুঁজুন।

বিশ্লেষকদের মতে, কিছু হেজ ফান্ড বন্ড বিক্রি করে তহবিল গুছিয়ে নিচ্ছে। আবার অনেকে দীর্ঘমেয়াদি মার্কিন ঋণপত্রকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করায় ‘টার্ম প্রিমিয়াম’ বাড়িয়ে দিচ্ছেন। এর ফলেই ডলারের মান পড়ছে, এবং বিনিয়োগকারীদের মুখ ফিরছে সোনার দিকে—যার মূল্য নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। তবে এ অবস্থা কতদিন স্থায়ী হয় সেটাই এখন দেখার বিষয়।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ১১:৩৯:১৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫
২৪
Translate »

ট্রাম্পের ‘শুল্ক বিরতি’তে ভরসা পাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা

আপডেট : ১১:৩৯:১৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্ব বাণিজ্যে নতুন মোড় নেওয়ার আভাস দিলেও বিনিয়োগকারীরা তাতে স্বস্তি পাচ্ছেন না। সম্প্রতি ট্রাম্প তার কঠোর শুল্কনীতি আংশিকভাবে শিথিল করলেও চীনের জন্য তা আরও কঠোর করেছেন। এতে আবারও অস্থির হয়ে উঠেছে বৈশ্বিক অর্থনীতি ও পুঁজিবাজার।

চীন চলতি বছরে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ১০টি সিনেমা আমদানি করেছে, যার মধ্যে রয়েছে জনপ্রিয় ভিডিও গেম-ভিত্তিক সিনেমা ‘এ মাইনক্রাফট মুভি’ও। কিন্তু ট্রাম্প যখন অধিকাংশ দেশের জন্য ‘পারস্পরিক’ শুল্ক ১০ শতাংশে নামিয়ে আনলেন এবং চীনের জন্য তা বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করলেন, তখন চীনের চলচ্চিত্র প্রশাসন পাল্টা ঘোষণা দেয়— দেশটির মূল ভূখণ্ডে হলিউড সিনেমা প্রদর্শন কমিয়ে আনা হবে। প্রশাসনের ভাষায়, এই শুল্ক চীনা দর্শকের মধ্যে মার্কিন সিনেমার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব কমিয়ে দেবে।

এরপর ১১ এপ্রিল চীনের মন্ত্রিসভা ট্রাম্পের পদক্ষেপের সমপরিমাণ পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়। তারা জানায়, যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেউ এখন আর চীনে কিছু বিক্রি করতে পারবে না— এ অবস্থায় আরও পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন নেই। এমনকি চীন সরকার স্পষ্ট বলে দেয়, যুক্তরাষ্ট্র আরও কিছু চাপালে চীন তাতে গুরুত্ব দেবে না।

বিনিয়োগকারীরাও যেন ঠিক একই মনোভাব দেখাচ্ছেন। ৯ এপ্রিল ট্রাম্প ৯০ দিনের শুল্ক বিরতি ঘোষণার পর বাজারে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফিরেছিল। শেয়ারবাজার চাঙ্গা হয়ে ওঠে এবং সরকারি বন্ডের সুদের হার ওঠানামা থেমে যায়। কিন্তু সেই সুখ স্থায়ী হয়নি। পরদিনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান স্টক সূচক ৩ দশমিক ৫ শতাংশ পড়ে যায়, ডলার ফের দুর্বল হয় এবং বন্ডের মূল্য কমে সুদের হার বেড়ে যায়।

বিশেষ করে ১০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের ক্ষেত্রে সুদের হার মাত্র এক সপ্তাহে বেড়ে দাঁড়ায় ৪ দশমিক ৫ শতাংশে—যা অর্থনীতির ধীরগতির পূর্বাভাসের পরেও অস্বাভাবিক বৃদ্ধি। জেপি মরগান চেজ-এর অর্থনীতিবিদরা বলছেন, চীনা আমদানির হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়া, আত্মবিশ্বাসে ধাক্কা এবং নীতিগত বিশৃঙ্খলা- সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্র মন্দা এড়াতে পারবে কি না, তা এখন প্রশ্নবিদ্ধ।

স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে এমন মন্দা আশঙ্কা সুদের হার কমিয়ে দিতো আর বন্ডের দাম বাড়িয়ে তুলতো। কিন্তু এবার সেই হিসাব মিলছে না। গবেষণা প্রতিষ্ঠান টিএস লম্বার্ড-এর ফ্রেয়া বিমিশ বলেন, যদি আপনার নিরাপদ আশ্রয় থাকে মার্কিন ট্রেজারি, তাহলে এখন নতুন আশ্রয় খুঁজুন।

বিশ্লেষকদের মতে, কিছু হেজ ফান্ড বন্ড বিক্রি করে তহবিল গুছিয়ে নিচ্ছে। আবার অনেকে দীর্ঘমেয়াদি মার্কিন ঋণপত্রকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করায় ‘টার্ম প্রিমিয়াম’ বাড়িয়ে দিচ্ছেন। এর ফলেই ডলারের মান পড়ছে, এবং বিনিয়োগকারীদের মুখ ফিরছে সোনার দিকে—যার মূল্য নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। তবে এ অবস্থা কতদিন স্থায়ী হয় সেটাই এখন দেখার বিষয়।