London ০১:১৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাষ্ট্রের দায়িত্ব শুধু দমন নয়, সমাধানও দিতে হবে

মো: বিল্লাল সরকার।

 

গনঅভ্যুথানের পর নতুন স্বাধীন এই দেশে প্রতিদিনই ঘটে চলেছে অনাকাঙ্কিত সব দুঃখজনক ঘটনা, খুন, ধর্ষন, জুলুম, লুটপাট,দখলবাজ ও চা্দাআাজীসহ অনৈতিক সব ঘটনা, এর ফলে যেখানে রাষ্ট্রের ভূমিকা হয়ে উঠছে প্রশ্নবিদ্ধ।

আজ সকালে ভিডিওটি দেখলাম, শেয়ার করেছিলো, সামাজিক মাধ্যমে, সদ্য উচ্চমাধ্যমিক পাস করা এক তরুণ ইউল্যাবের সামনে ছোট্ট একটি ফুডকার্ট দিয়েছিল, নিজের ভবিষ্যৎ গড়ার চেষ্টা করছিল। কিন্তু প্রশাসনের এক নির্দেশে তার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের উপস্থিতিতে কার্টটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো, আর প্রতিবাদ করায় ছেলেটিকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হলো।

প্রশ্ন হলো, এই তরুণ কি অন্যায় করেছিল? সে কি রাষ্ট্রবিরোধী কিছু করছিল? না, সে শুধু নিজের জীবনধারণের পথ তৈরি করছিল। তার স্বপ্ন ও শ্রমের প্রতি এভাবে নিষ্ঠুর আচরণ করার অধিকার রাষ্ট্র পেল কোথা থেকে?

আমরা চাই ফুটপাত হোক দখলমুক্ত। কিন্তু তার আগে বিকল্প ব্যবস্থা নিশ্চিত করা কি রাষ্ট্রের দায়িত্ব নয়? ঢাকার ফুটপাত ও রাস্তা কারা দখল করে রেখেছে, তা আমরা সবাই জানি। বড় ব্যবসায়ীদের অনৈতিক দখলদারির বিরুদ্ধে প্রশাসন কেন এতটা সক্রিয় নয়? কেন শুধুমাত্র দুর্বল ও অসহায় মানুষের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা প্রয়োগ হয়?

সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, প্রশ্ন তোলা মাত্রই রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতিক্রিয়া। একজন নাগরিক হিসেবে যে কেউ প্রশাসনের সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা জানতে চাইতে পারে। কিন্তু এখানে প্রশ্ন করলেই শাস্তি দেওয়া হয়, গায়ের জোরে চুপ করিয়ে দেওয়া হয়। এটা কি একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য?

একজন নাগরিককে পেটানো, চুল ধরে টেনে গাড়িতে তোলা, থানায় আটকে রাখা—এসব আচরণ কীসের ইঙ্গিত দেয়? রাষ্ট্র কি ভয় পাচ্ছে? প্রশ্নের সামনে দাঁড়াতে ভয় পাওয়া শাসনব্যবস্থা কখনোই টেকসই হতে পারে না। আমরা এমন দেশ চাইনি, যে দেশের সরকার ও শাষন ব্যবস্তার অপব্যবহার করে গরীব ও মেহনতী মানুষের বুকে লাথি মেরে শাসৃতি দেয়া হয়, হয়রানী করা হয়, আমরা এমন সংস্কার চাইনা।

আমরা এমন একটি রাষ্ট্র চাই, যেখানে আইন থাকবে, কিন্তু সেই আইনের প্রয়োগ হবে সবার জন্য সমান। যেখানে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে সাধারণ মানুষের কথা ভাবা হবে। যেখানে প্রশ্ন করাকে অপরাধ হিসেবে দেখা হবে না, বরং রাষ্ট্র নিজেকে আরো জবাবদিহির জায়গায় আনবে। উন্নতদেশগুলোর সরকার জনগণের জন্য যেমন করছে তেমনি আমরাও চাই প্রকৃত গনতন্ত্র ও শাষনব্যবস্থা দেশে ফিরে আসুক। এই দেশে শান্তি ফিরে আসুক আবার।

এই নিপীড়ন বন্ধ করতেই হবে। রাষ্ট্রকে হতে হবে মানবিক, গণতান্ত্রিক ও দায়িত্বশীল। আজ না হোক, কাল পরিবর্তন আসবেই—তবে সেটা শান্তিপূর্ণ, ন্যায়ের ভিত্তিতে হলে সবার জন্য মঙ্গলজনক হবে। ”

 

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ১২:৪৭:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫
৪৮
Translate »

রাষ্ট্রের দায়িত্ব শুধু দমন নয়, সমাধানও দিতে হবে

আপডেট : ১২:৪৭:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫

 

গনঅভ্যুথানের পর নতুন স্বাধীন এই দেশে প্রতিদিনই ঘটে চলেছে অনাকাঙ্কিত সব দুঃখজনক ঘটনা, খুন, ধর্ষন, জুলুম, লুটপাট,দখলবাজ ও চা্দাআাজীসহ অনৈতিক সব ঘটনা, এর ফলে যেখানে রাষ্ট্রের ভূমিকা হয়ে উঠছে প্রশ্নবিদ্ধ।

আজ সকালে ভিডিওটি দেখলাম, শেয়ার করেছিলো, সামাজিক মাধ্যমে, সদ্য উচ্চমাধ্যমিক পাস করা এক তরুণ ইউল্যাবের সামনে ছোট্ট একটি ফুডকার্ট দিয়েছিল, নিজের ভবিষ্যৎ গড়ার চেষ্টা করছিল। কিন্তু প্রশাসনের এক নির্দেশে তার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের উপস্থিতিতে কার্টটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো, আর প্রতিবাদ করায় ছেলেটিকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হলো।

প্রশ্ন হলো, এই তরুণ কি অন্যায় করেছিল? সে কি রাষ্ট্রবিরোধী কিছু করছিল? না, সে শুধু নিজের জীবনধারণের পথ তৈরি করছিল। তার স্বপ্ন ও শ্রমের প্রতি এভাবে নিষ্ঠুর আচরণ করার অধিকার রাষ্ট্র পেল কোথা থেকে?

আমরা চাই ফুটপাত হোক দখলমুক্ত। কিন্তু তার আগে বিকল্প ব্যবস্থা নিশ্চিত করা কি রাষ্ট্রের দায়িত্ব নয়? ঢাকার ফুটপাত ও রাস্তা কারা দখল করে রেখেছে, তা আমরা সবাই জানি। বড় ব্যবসায়ীদের অনৈতিক দখলদারির বিরুদ্ধে প্রশাসন কেন এতটা সক্রিয় নয়? কেন শুধুমাত্র দুর্বল ও অসহায় মানুষের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা প্রয়োগ হয়?

সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, প্রশ্ন তোলা মাত্রই রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতিক্রিয়া। একজন নাগরিক হিসেবে যে কেউ প্রশাসনের সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা জানতে চাইতে পারে। কিন্তু এখানে প্রশ্ন করলেই শাস্তি দেওয়া হয়, গায়ের জোরে চুপ করিয়ে দেওয়া হয়। এটা কি একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য?

একজন নাগরিককে পেটানো, চুল ধরে টেনে গাড়িতে তোলা, থানায় আটকে রাখা—এসব আচরণ কীসের ইঙ্গিত দেয়? রাষ্ট্র কি ভয় পাচ্ছে? প্রশ্নের সামনে দাঁড়াতে ভয় পাওয়া শাসনব্যবস্থা কখনোই টেকসই হতে পারে না। আমরা এমন দেশ চাইনি, যে দেশের সরকার ও শাষন ব্যবস্তার অপব্যবহার করে গরীব ও মেহনতী মানুষের বুকে লাথি মেরে শাসৃতি দেয়া হয়, হয়রানী করা হয়, আমরা এমন সংস্কার চাইনা।

আমরা এমন একটি রাষ্ট্র চাই, যেখানে আইন থাকবে, কিন্তু সেই আইনের প্রয়োগ হবে সবার জন্য সমান। যেখানে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে সাধারণ মানুষের কথা ভাবা হবে। যেখানে প্রশ্ন করাকে অপরাধ হিসেবে দেখা হবে না, বরং রাষ্ট্র নিজেকে আরো জবাবদিহির জায়গায় আনবে। উন্নতদেশগুলোর সরকার জনগণের জন্য যেমন করছে তেমনি আমরাও চাই প্রকৃত গনতন্ত্র ও শাষনব্যবস্থা দেশে ফিরে আসুক। এই দেশে শান্তি ফিরে আসুক আবার।

এই নিপীড়ন বন্ধ করতেই হবে। রাষ্ট্রকে হতে হবে মানবিক, গণতান্ত্রিক ও দায়িত্বশীল। আজ না হোক, কাল পরিবর্তন আসবেই—তবে সেটা শান্তিপূর্ণ, ন্যায়ের ভিত্তিতে হলে সবার জন্য মঙ্গলজনক হবে। ”