ইউক্রেন সংকটে ইউরোপ কি এবার সাহসী পদক্ষেপ নেবে?

তিন বছর আগে ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে রণক্ষেত্রের সম্মুখ সারির দৃশ্য তেমন বদলায়নি। তবে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স যখন ওভাল অফিসে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে কঠোর ভাষায় আক্রমণ করলেন, তখন কিয়েভের প্রতিরক্ষা দুর্গ এক মুহূর্তেই দুর্বল হয়ে পড়ে।
ওই বৈঠকে জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চয়তার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করলেও ট্রাম্প ও ভ্যান্সের কাছে তা গুরুত্ব পায়নি। বরং তারা অভিযোগ করেন, জেলেনস্কি যথেষ্ট ‘শ্রদ্ধাশীল’ নন এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ‘কৃতজ্ঞতা’ প্রকাশ করেননি। যদিও যুদ্ধকালীন বিভিন্ন সময়ে ইউক্রেনের আচরণ এর বিপরীত চিত্রই তুলে ধরে।
এই ঘটনার ফলে যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন এবং ইউরোপের জন্য নতুন বাস্তবতা তৈরি হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন মার্কিন নেতৃত্বের ঐতিহ্যকে পরিহার করে স্বার্থকেন্দ্রিক নীতিতে মনোনিবেশ করেছে। এর ফলে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আরও শক্তিশালী বোধ করতে পারেন এবং ইউক্রেনকে বেইমানির মুখে ঠেলে দিতে পারেন।
ট্রাম্পের ধারণা, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে মধ্যস্থতার মাধ্যমে শান্তি আনা সম্ভব। তবে তিনি পুতিনের আগের চুক্তিভঙ্গের ইতিহাস উপেক্ষা করছেন এবং ইউক্রেনের জনগণের আত্মত্যাগের মানসিকতাকে খাটো করে দেখছেন। ইতিহাস বলছে, ইউক্রেন একসময় মস্কোর শাসনে দুঃসহ দুর্দশা ভোগ করেছে এবং তারা সেই পরিস্থিতি পুনরাবৃত্তি চায় না।
ইউক্রেনের জন্য এই মুহূর্তটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। মার্কিন সমর্থন কমে গেলে সামরিক সহায়তা, গোয়েন্দা তথ্য ও যুদ্ধক্ষেত্রের সমন্বয় দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। এই পরিস্থিতিতে কিয়েভের রাজনীতি অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে, যার সুবিধা তুলবেন পুতিন।
দায়িত্ব নিতে হবে ইউরোপকে
২ মার্চ লন্ডনে ইউক্রেনের সঙ্গে ইউরোপীয় নেতাদের বৈঠক হওয়ার কথা। এখানে তাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্ক পুনর্গঠন নয়, বরং ইউরোপের নিজস্ব প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করা। ইউক্রেনকে দ্রুত আরও অর্থায়ন দিতে হবে এবং রাশিয়ার বাজেয়াপ্ত প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ এই উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে হবে।
ইউরোপীয় দেশগুলো প্রতিরক্ষা বাজেট বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তা কার্যকর হয়নি। জার্মানির সম্ভাব্য চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ এবং যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার প্রতিরক্ষা শক্তি বৃদ্ধির অঙ্গীকার করলেও বাস্তবে সেই বৃদ্ধি সীমিত। ন্যাটোকে এখন পোল্যান্ডের পথ অনুসরণ করতে হবে, যারা তাদের জিডিপির ৪ দশমিক ৭ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ওভাল অফিসে যা ঘটেছে তা ইউরোপীয় নেতাদের জন্য একটি কঠোর সতর্কবার্তা। ট্রাম্পের নীতির কারণে ইউরোপীয় নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। এই মুহূর্তে ইউরোপকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরক্ষা খাতে আরও বিনিয়োগ করতে হবে এবং সংকটে থাকা ইউক্রেনের পাশে দাঁড়াতে হবে। নাহলে তারা নিজেদের ভবিষ্যৎকেই বিপদের দিকে ঠেলে দেবে।