London ১০:২১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১৬ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম:

তরুণদের সম্ভাব্য নতুন দল ‘এসিপি’, গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকছেন নারীরাও

অনলাইন ডেস্ক

নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের আশা জাগিয়ে আত্মপ্রকাশ ঘটতে যাচ্ছে ছাত্র-জনতার নতুন রাজনৈতিক দলের। সেই দলের সম্ভাব্য নাম ‘অল সিটিজেনস পার্টি (এসিপি)’ চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র। 

জানা গেছে, শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে জাতীয় সংসদের সামনে বড় জমায়েতের মাধ্যমে বহুল কাঙ্ক্ষিত এ রাজনৈতিক শক্তির আত্মপ্রকাশ ঘটবে। তার জন্য মেট্রোপলিটন পুলিশকেও জানানো হয়েছে।

এদিকে, দল গঠনকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগে চূড়ান্ত করা হয়েছে দলের নাম ও কেন্দ্রীয় কমিটি। তবে কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ দুই পদ ছাড়া বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীরা আসছেন বলে জানা গেছে।

দলীয় সূত্র মতে, দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর অতীতের অনিয়ম, দুর্নীতি, লুটপাট, আইনের অপপ্রয়োগ, বিচারহীনতা, নির্বাচন ব্যবস্থার ক্ষতিসাধন, সংবিধান সংশোধনের নামে কাটাছেঁড়া ইত্যাদির মতো গণবিরোধী কর্মকাণ্ড ভবিষ্যতে যেন ঘটতে না পারে, সে বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে সরকার দেশের উল্লেখযোগ্য সেক্টরগুলোতে সংস্কারে হাত দিয়েছে। এজন্য শিক্ষার্থীরাও বিগত সময়ের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নতুনভাবে দেশ গঠনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। তারপর থেকে ছাত্র নেতারা ‘আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ’ নামে একটি ক্যাম্প চালিয়ে যাচ্ছে। এতে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষ যুক্ত হয়েছেন। অনেকে অনেক নাম দিচ্ছেন। সেখান থেকেই দলে নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে।

এদিকে গত মঙ্গলবার উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। তিনি নতুন দলের আহ্বায়ক হচ্ছেন। নতুন দলে সদস্য সচিব পদ নিয়ে  আলোচনা থাকলেও শেষমেশ এই পদে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেনের নাম এগিয়ে আছে। এছাড়া যুগ্ম আহ্বায়ক পদে নাসীর উদ্দীন পাটওয়ারী, মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, মুখপাত্র হিসেবে হাসনাত আবদুল্লাহসহ শীর্ষ পদে চমক দেখাতে যাচ্ছে ছাত্র নেতারা। ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় তবে অপরিচিতি অনেককে গুরুত্বপূর্ণ পদে দেখা যেতে পারে। এক উপদেষ্টার ভাইও গুরুত্বপূর্ণ পদে আসছেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছেন।

জাতীয় নাগরিক কমিটির একাধিক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগামীকাল জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ে নতুন রাজনৈতিক দল গঠিত হচ্ছে। নতুন দলের নাম সম্ভাব্য ‘অল সিটিজেনস পার্টি’ হতে যাচ্ছে। নতুন দলে দুই কমিটির বাহিরে অনেকে স্থান পাচ্ছে নতুন দলে। নতুন রাজনৈতিক দলে ১৫১সদস্য হতে পারে। কোর- কমিটি হতে পারে ২৪ জনের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশ থেকে নেতৃত্ব নিয়ে গঠিত হচ্ছে নতুন রাজনৈতিক দলটি। এই দলে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারসহ বিভিন্ন সেক্টরের জনপ্রিয়রা স্থান পাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

দলের নেতাদের ভাষ্যমতে,  নতুন দলে শীর্ষ দুই পদ ব্যতীত অন্যান্য পদে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় নারী নেতৃত্ব থাকছেন। জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছাড়াও সেলিব্রেটি নারীরাও নতুন কমিটিতে স্থান পাচ্ছেন। তার মধ্যে নুসরাত তাবাসসুম, সামান্তা শারমিন, ডা. তাসনিম জারাসহ আরও অনেক।

জাতীয় নাগরিক কমিটির ফেসবুক পোস্টে গতকাল বলা হয়, জুলাইয়ের সাহসী নারীদেরকে আমরা হারাতে দেব না। আসন্ন রাজনৈতিক দলসহ অন্যান্য রাজনৈতিক প্লাটফর্মে তাদেরকে সামনের কাতারে দেখা যাবে।

এদিকে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে নিজেদেরকে নতুন দল থেকে প্রত্যাহার করে নিলেন জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ ও যুগ্ম সদস্য সচিব রাফে সালমান রিফাত। আলী আহসান জুনায়েদ ও রাফে সালমান রিফাত বর্তমানে চীন সফরে রয়েছেন দেশটির কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে। তাদের চীন সফর নিয়েও আপত্তি উঠে নাগরিক কমিটিতে। গত সোমবার এ বিষয়ে একটি বিবৃতি দেয় সংগঠনটি।

আলী জুনায়েদের সঙ্গে নাগরিক কমিটির নেতাদের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে নতুন রাজনৈতিক দলের সদস্য সচিব পদ নিয়ে। তার অনুসারীরা তাকে এ পদে দাবি করলেও আরেকটি অংশ নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেনকে চান। এ নিয়ে টানাপড়েন চলে নাগরিক কমিটিতে।

আলী আহসান জুনায়েদ তার ফেসবুক পোস্টে বলেন, আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি তরুণদের নেতৃত্বে যেই নতুন রাজনৈতিক দলটি আসছে, সেখানে আমি থাকছি না। সে কথা আমি আরও সপ্তাহখানেক আগেই জানিয়েছি দলের নেতাদের। বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থে ও জাতির নজর নতুন দলের ওপর নিবদ্ধ রাখতে নীরবতা বেছে নিয়েছিলাম। কিন্তু, চারপাশের গুঞ্জন থামছে না। তাই, স্পষ্ট করে রাখছি।

অন্য দিকে জুনায়েদের ফেসবুক পোস্ট শেয়ার করে রাফে সালমান রিফাত লিখেছেন, ২৮ তারিখে ঘোষিত হতে যাওয়া নতুন রাজনৈতিক দলে আমিও থাকছি না। তবে, আমার রাজনৈতিক পথচলা থেমে থাকবে না। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নতুন রাজনৈতিক সম্ভাবনার যে জোয়ার তৈরি হয়েছিল তাতে শর্ট টার্মে খুব ভালো কিছু পাওয়ার প্রত্যাশা রাখি না আপাতত।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী ঢাকা পোস্টকে গত সপ্তাহে বলেন, গত ১৫ বছরে যুবকদের তেমন ফিল্ড দেওয়া হয়নি। নেতৃত্বেও সংকট হয়ে গিয়েছিল। আমরা গত ছয় মাস যুবকদের নিয়ে কাজ করেছি যাতে নেতৃত্বে সংকট দূর করতে পারি। সে জায়গা থেকে আমরা অনেকটাই গুছিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি।

আরও জানা গেছে, সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে গত জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামে প্ল্যাটফর্ম করে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। নেতৃত্বের সামনের দিকে ছিল ২০২৩ সালের অক্টোবরে গঠিত ছাত্রশক্তি। শেখ হাসিনার শাসনামলে ধরপাকড়ের শিকার হয়ে প্রকাশ্য রাজনীতিতে না থাকা ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরাও এ প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হন। ২০১৮ সালে কোটাবিরোধী আন্দোলন করা ছাত্র অধিকার পরিষদও এতে যোগ দেয়। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে শিবিরের ভূমিকা সে সময় সামনে আসে। অভ্যুত্থানের নেতাদের নিয়ে গত ৮ সেপ্টেম্বর গঠিত প্ল্যাটফর্ম জাতীয় নাগরিক কমিটিতেও বিভিন্ন সংগঠন থেকে আসা নেতাকর্মী রয়েছেন। ১৮৮ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে বিলুপ্ত ছাত্রশক্তির নেতা, শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক তিন সভাপতিসহ অনেকে, কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন, গণঅধিকার পরিষদ, এবি পার্টি এবং বিভিন্ন বাম দল থেকে আসা নেতারা রয়েছেন। চলতি মাসেই নাগরিক কমিটির প্ল্যাটফর্ম থেকে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা করা হচ্ছে।

এদিকে নতুন দল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ছাত্রশক্তি ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতাদের বাহাস জড়ান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একে অপরকে নিয়ে পোস্টের লড়াই দেখা যায়। সাবেক কয়েকজন নেতা দাবি করেন, অভ্যুত্থানের বড় অংশীদার শিবির। তা নাকচ করে বিলুপ্ত ছাত্র শক্তির নেতারা বলেন, অন্যদের মতোই সহযোগী ছিল শিবির। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদও এ বাহাসে জড়ান।

সূত্র মতে, নতুন দলের নির্বাচনী প্রতীক কি হবে, তা নিয়েও চলছে জোর আলোচনা। এখন পর্যন্ত সম্ভাব্য চারটি প্রতীক নিয়েই বেশি কথা হয়েছে। এগুলো হলো-মুষ্টিবদ্ধ হাত, হাতি, রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও ইলিশ। এরমধ্যে ইলিশ বাদে বাকি তিনটি প্রতীকই বেশি সমর্থন পাচ্ছে বলে জানা গেছে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৬:৪২:২২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
Translate »

তরুণদের সম্ভাব্য নতুন দল ‘এসিপি’, গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকছেন নারীরাও

আপডেট : ০৬:৪২:২২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের আশা জাগিয়ে আত্মপ্রকাশ ঘটতে যাচ্ছে ছাত্র-জনতার নতুন রাজনৈতিক দলের। সেই দলের সম্ভাব্য নাম ‘অল সিটিজেনস পার্টি (এসিপি)’ চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র। 

জানা গেছে, শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে জাতীয় সংসদের সামনে বড় জমায়েতের মাধ্যমে বহুল কাঙ্ক্ষিত এ রাজনৈতিক শক্তির আত্মপ্রকাশ ঘটবে। তার জন্য মেট্রোপলিটন পুলিশকেও জানানো হয়েছে।

এদিকে, দল গঠনকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগে চূড়ান্ত করা হয়েছে দলের নাম ও কেন্দ্রীয় কমিটি। তবে কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ দুই পদ ছাড়া বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীরা আসছেন বলে জানা গেছে।

দলীয় সূত্র মতে, দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর অতীতের অনিয়ম, দুর্নীতি, লুটপাট, আইনের অপপ্রয়োগ, বিচারহীনতা, নির্বাচন ব্যবস্থার ক্ষতিসাধন, সংবিধান সংশোধনের নামে কাটাছেঁড়া ইত্যাদির মতো গণবিরোধী কর্মকাণ্ড ভবিষ্যতে যেন ঘটতে না পারে, সে বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে সরকার দেশের উল্লেখযোগ্য সেক্টরগুলোতে সংস্কারে হাত দিয়েছে। এজন্য শিক্ষার্থীরাও বিগত সময়ের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নতুনভাবে দেশ গঠনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। তারপর থেকে ছাত্র নেতারা ‘আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ’ নামে একটি ক্যাম্প চালিয়ে যাচ্ছে। এতে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষ যুক্ত হয়েছেন। অনেকে অনেক নাম দিচ্ছেন। সেখান থেকেই দলে নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে।

এদিকে গত মঙ্গলবার উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। তিনি নতুন দলের আহ্বায়ক হচ্ছেন। নতুন দলে সদস্য সচিব পদ নিয়ে  আলোচনা থাকলেও শেষমেশ এই পদে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেনের নাম এগিয়ে আছে। এছাড়া যুগ্ম আহ্বায়ক পদে নাসীর উদ্দীন পাটওয়ারী, মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, মুখপাত্র হিসেবে হাসনাত আবদুল্লাহসহ শীর্ষ পদে চমক দেখাতে যাচ্ছে ছাত্র নেতারা। ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় তবে অপরিচিতি অনেককে গুরুত্বপূর্ণ পদে দেখা যেতে পারে। এক উপদেষ্টার ভাইও গুরুত্বপূর্ণ পদে আসছেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছেন।

জাতীয় নাগরিক কমিটির একাধিক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগামীকাল জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ে নতুন রাজনৈতিক দল গঠিত হচ্ছে। নতুন দলের নাম সম্ভাব্য ‘অল সিটিজেনস পার্টি’ হতে যাচ্ছে। নতুন দলে দুই কমিটির বাহিরে অনেকে স্থান পাচ্ছে নতুন দলে। নতুন রাজনৈতিক দলে ১৫১সদস্য হতে পারে। কোর- কমিটি হতে পারে ২৪ জনের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশ থেকে নেতৃত্ব নিয়ে গঠিত হচ্ছে নতুন রাজনৈতিক দলটি। এই দলে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারসহ বিভিন্ন সেক্টরের জনপ্রিয়রা স্থান পাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

দলের নেতাদের ভাষ্যমতে,  নতুন দলে শীর্ষ দুই পদ ব্যতীত অন্যান্য পদে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় নারী নেতৃত্ব থাকছেন। জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছাড়াও সেলিব্রেটি নারীরাও নতুন কমিটিতে স্থান পাচ্ছেন। তার মধ্যে নুসরাত তাবাসসুম, সামান্তা শারমিন, ডা. তাসনিম জারাসহ আরও অনেক।

জাতীয় নাগরিক কমিটির ফেসবুক পোস্টে গতকাল বলা হয়, জুলাইয়ের সাহসী নারীদেরকে আমরা হারাতে দেব না। আসন্ন রাজনৈতিক দলসহ অন্যান্য রাজনৈতিক প্লাটফর্মে তাদেরকে সামনের কাতারে দেখা যাবে।

এদিকে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে নিজেদেরকে নতুন দল থেকে প্রত্যাহার করে নিলেন জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ ও যুগ্ম সদস্য সচিব রাফে সালমান রিফাত। আলী আহসান জুনায়েদ ও রাফে সালমান রিফাত বর্তমানে চীন সফরে রয়েছেন দেশটির কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে। তাদের চীন সফর নিয়েও আপত্তি উঠে নাগরিক কমিটিতে। গত সোমবার এ বিষয়ে একটি বিবৃতি দেয় সংগঠনটি।

আলী জুনায়েদের সঙ্গে নাগরিক কমিটির নেতাদের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে নতুন রাজনৈতিক দলের সদস্য সচিব পদ নিয়ে। তার অনুসারীরা তাকে এ পদে দাবি করলেও আরেকটি অংশ নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেনকে চান। এ নিয়ে টানাপড়েন চলে নাগরিক কমিটিতে।

আলী আহসান জুনায়েদ তার ফেসবুক পোস্টে বলেন, আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি তরুণদের নেতৃত্বে যেই নতুন রাজনৈতিক দলটি আসছে, সেখানে আমি থাকছি না। সে কথা আমি আরও সপ্তাহখানেক আগেই জানিয়েছি দলের নেতাদের। বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থে ও জাতির নজর নতুন দলের ওপর নিবদ্ধ রাখতে নীরবতা বেছে নিয়েছিলাম। কিন্তু, চারপাশের গুঞ্জন থামছে না। তাই, স্পষ্ট করে রাখছি।

অন্য দিকে জুনায়েদের ফেসবুক পোস্ট শেয়ার করে রাফে সালমান রিফাত লিখেছেন, ২৮ তারিখে ঘোষিত হতে যাওয়া নতুন রাজনৈতিক দলে আমিও থাকছি না। তবে, আমার রাজনৈতিক পথচলা থেমে থাকবে না। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নতুন রাজনৈতিক সম্ভাবনার যে জোয়ার তৈরি হয়েছিল তাতে শর্ট টার্মে খুব ভালো কিছু পাওয়ার প্রত্যাশা রাখি না আপাতত।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী ঢাকা পোস্টকে গত সপ্তাহে বলেন, গত ১৫ বছরে যুবকদের তেমন ফিল্ড দেওয়া হয়নি। নেতৃত্বেও সংকট হয়ে গিয়েছিল। আমরা গত ছয় মাস যুবকদের নিয়ে কাজ করেছি যাতে নেতৃত্বে সংকট দূর করতে পারি। সে জায়গা থেকে আমরা অনেকটাই গুছিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি।

আরও জানা গেছে, সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে গত জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামে প্ল্যাটফর্ম করে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। নেতৃত্বের সামনের দিকে ছিল ২০২৩ সালের অক্টোবরে গঠিত ছাত্রশক্তি। শেখ হাসিনার শাসনামলে ধরপাকড়ের শিকার হয়ে প্রকাশ্য রাজনীতিতে না থাকা ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরাও এ প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হন। ২০১৮ সালে কোটাবিরোধী আন্দোলন করা ছাত্র অধিকার পরিষদও এতে যোগ দেয়। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে শিবিরের ভূমিকা সে সময় সামনে আসে। অভ্যুত্থানের নেতাদের নিয়ে গত ৮ সেপ্টেম্বর গঠিত প্ল্যাটফর্ম জাতীয় নাগরিক কমিটিতেও বিভিন্ন সংগঠন থেকে আসা নেতাকর্মী রয়েছেন। ১৮৮ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে বিলুপ্ত ছাত্রশক্তির নেতা, শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক তিন সভাপতিসহ অনেকে, কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন, গণঅধিকার পরিষদ, এবি পার্টি এবং বিভিন্ন বাম দল থেকে আসা নেতারা রয়েছেন। চলতি মাসেই নাগরিক কমিটির প্ল্যাটফর্ম থেকে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা করা হচ্ছে।

এদিকে নতুন দল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ছাত্রশক্তি ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতাদের বাহাস জড়ান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একে অপরকে নিয়ে পোস্টের লড়াই দেখা যায়। সাবেক কয়েকজন নেতা দাবি করেন, অভ্যুত্থানের বড় অংশীদার শিবির। তা নাকচ করে বিলুপ্ত ছাত্র শক্তির নেতারা বলেন, অন্যদের মতোই সহযোগী ছিল শিবির। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদও এ বাহাসে জড়ান।

সূত্র মতে, নতুন দলের নির্বাচনী প্রতীক কি হবে, তা নিয়েও চলছে জোর আলোচনা। এখন পর্যন্ত সম্ভাব্য চারটি প্রতীক নিয়েই বেশি কথা হয়েছে। এগুলো হলো-মুষ্টিবদ্ধ হাত, হাতি, রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও ইলিশ। এরমধ্যে ইলিশ বাদে বাকি তিনটি প্রতীকই বেশি সমর্থন পাচ্ছে বলে জানা গেছে।