London ০১:৩৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘আয়নাঘরে’ গেলেন ইউনূস, দেখলেন নির্যাতনের যন্ত্র

অনলাইন ডেস্ক

বিগত সরকারের আমলে ‘আয়নাঘর’ নামে কুখ্যাতি পাওয়া তিনটি গোপন বন্দিশালা ঘুরে দেখলেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস; দেখলেন নির্যাতনে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক চেয়ার, দেয়ালে লেখা কলেমা, যা লিখেছিলেন নির্যাতিত কেউ একজন।

বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁও, কচুক্ষেত ও উত্তরা এলাকায় তিনটি স্থান পরিদর্শন করেন সরকারপ্রধান। সেই নির্যাতন পেরিয়ে বেঁচে ফিরে আসা কয়েকজন ভুক্তভোগী আর সাংবাদিকরা এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন।

উপদেষ্টা পরিষদের কয়েকজন সদস্য এবং গুম তদন্ত কমিশনের সদস্যরাও এসময় তার সঙ্গে ছিলেন বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস অফিস থেকে জানানো হয়েছে।

 

প্রেস অফিস বলছে, প্রধান উপদেষ্টাকে ঢাকার আগারগাঁওয়ের একটি নির্যাতনকেন্দ্রে ব্যবহৃত একটি বৈদ্যুতিক চেয়ার দেখানো হয়। একজন গুমের শিকার ব্যক্তি কচুক্ষেত এলাকায় প্রধান উপদেষ্টাকে নির্যাতন সেলের দেয়াল দেখান।

আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বিরোধী মতের বহু মানুষকে তুলে নিয়ে বিচার বহির্ভূতভাবে অজ্ঞাত স্থানে আটক রাখার অভিযোগ ওঠে, সেইসব বন্দিশালার প্রতীকী নাম রাখা হয়েছে ‘আয়নাঘর’।

তুলে নেওয়া সেসব মানুষদের কেউ কেউ বহু দিন পর পরিবারের কাছে ফিরে বীভৎস নির্যাতনের বিবরণ দিলেও অনেকের খোঁজ এখনও মেলেনি। বিভিন্ন বাহিনীর আওতাধীন এমন আয়নাঘরের সন্ধান পাওয়ার কথা বলেছে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত ‘গুম তদন্ত কমিশন’।

গত ১৯ জানুয়ারি বৈঠকে কয়েকটি গুমের ঘটনার নৃশংস বর্ণনা প্রধান উপদেষ্টার সামনে তুলে ধরা হয়। ছয় বছরের শিশু গুম হওয়ার ঘটনাও তদন্তে উঠে এসেছে বলে জানান কমিশন সদস্যরা।

মুহাম্মদ ইউনূস কমিশনের সেই আহ্বানে তখন সাড়া দিয়ে বলেন, আপনাদের তদন্তে যেসব ঘটনা উঠে এসেছে, তা গা শিউরে ওঠার মত। আমি শিগগিরই আয়নাঘর পরিদর্শনে যাব।

আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ‘গুমের’ ঘটনা তদন্তে গত ২৭ অগাস্ট অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের এ কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

 

২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৫ অগাস্ট সরকার পতনের দিন পর্যন্ত সময়ের ঘটনা কমিশনের বিবেচনায় আনা হয়।

কমিশন গত ১৪ ডিসেম্বর অন্তর্বর্তী একটি প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেয়। পরদিন এ প্রতিবেদনের কিছু অংশ প্রকাশও করা হয়।

‘গুমের’ ঘটনায় বিচার প্রক্রিয়া শুরু এবং র্যাব বিলুপ্তির সুপারিশ করা হয় ‘আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ’ শিরোনামে জমা দেওয়া ওই প্রতিবেদনে।

সেদিন প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর গুম বিষয়ক কমিশনের প্রধান মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, তারা মার্চে আরও একটি অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন দেবেন। চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে কমপক্ষে আরও এক বছর সময় প্রয়োজন পড়বে।

কমিশনের অনুসন্ধান এবং অভিযোগের ভিত্তিতে তৈরি প্রতিবেদনে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের পাশাপাশি রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সরাসরি নির্দেশে আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের বেশি সময়ের শাসনামলে ‘গুম’, ‘আটকে রেখে নির্যাতন’ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর মাধ্যমে ধরে এনে ‘হত্যার’ অভিযোগের একের পর এক ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরা হয়।

বিভিন্ন অভিযোগ ও ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীগুলো ‘গুম, নির্যাতন ও ধরে এনে হত্যার’ মত ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে। অনেকগুলো বাহিনীর কার্যালয়ে পাওয়া গেছে নির্যাতনের বিশেষায়িত যন্ত্র ও সাউন্ড প্রুফ কক্ষ।

প্রতিবেদনে বিভিন্ন বাহিনীর দপ্তরে ‘আয়নাঘর’ বা তুলে নিয়ে আসা ব্যক্তিদের দিনের পর দিন আটকে রাখার জন্য কক্ষ তৈরি করার কথা তুলে ধরা হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ১০:০৪:২৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
২৫
Translate »

‘আয়নাঘরে’ গেলেন ইউনূস, দেখলেন নির্যাতনের যন্ত্র

আপডেট : ১০:০৪:২৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

বিগত সরকারের আমলে ‘আয়নাঘর’ নামে কুখ্যাতি পাওয়া তিনটি গোপন বন্দিশালা ঘুরে দেখলেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস; দেখলেন নির্যাতনে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক চেয়ার, দেয়ালে লেখা কলেমা, যা লিখেছিলেন নির্যাতিত কেউ একজন।

বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁও, কচুক্ষেত ও উত্তরা এলাকায় তিনটি স্থান পরিদর্শন করেন সরকারপ্রধান। সেই নির্যাতন পেরিয়ে বেঁচে ফিরে আসা কয়েকজন ভুক্তভোগী আর সাংবাদিকরা এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন।

উপদেষ্টা পরিষদের কয়েকজন সদস্য এবং গুম তদন্ত কমিশনের সদস্যরাও এসময় তার সঙ্গে ছিলেন বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস অফিস থেকে জানানো হয়েছে।

 

প্রেস অফিস বলছে, প্রধান উপদেষ্টাকে ঢাকার আগারগাঁওয়ের একটি নির্যাতনকেন্দ্রে ব্যবহৃত একটি বৈদ্যুতিক চেয়ার দেখানো হয়। একজন গুমের শিকার ব্যক্তি কচুক্ষেত এলাকায় প্রধান উপদেষ্টাকে নির্যাতন সেলের দেয়াল দেখান।

আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বিরোধী মতের বহু মানুষকে তুলে নিয়ে বিচার বহির্ভূতভাবে অজ্ঞাত স্থানে আটক রাখার অভিযোগ ওঠে, সেইসব বন্দিশালার প্রতীকী নাম রাখা হয়েছে ‘আয়নাঘর’।

তুলে নেওয়া সেসব মানুষদের কেউ কেউ বহু দিন পর পরিবারের কাছে ফিরে বীভৎস নির্যাতনের বিবরণ দিলেও অনেকের খোঁজ এখনও মেলেনি। বিভিন্ন বাহিনীর আওতাধীন এমন আয়নাঘরের সন্ধান পাওয়ার কথা বলেছে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত ‘গুম তদন্ত কমিশন’।

গত ১৯ জানুয়ারি বৈঠকে কয়েকটি গুমের ঘটনার নৃশংস বর্ণনা প্রধান উপদেষ্টার সামনে তুলে ধরা হয়। ছয় বছরের শিশু গুম হওয়ার ঘটনাও তদন্তে উঠে এসেছে বলে জানান কমিশন সদস্যরা।

মুহাম্মদ ইউনূস কমিশনের সেই আহ্বানে তখন সাড়া দিয়ে বলেন, আপনাদের তদন্তে যেসব ঘটনা উঠে এসেছে, তা গা শিউরে ওঠার মত। আমি শিগগিরই আয়নাঘর পরিদর্শনে যাব।

আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ‘গুমের’ ঘটনা তদন্তে গত ২৭ অগাস্ট অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের এ কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

 

২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৫ অগাস্ট সরকার পতনের দিন পর্যন্ত সময়ের ঘটনা কমিশনের বিবেচনায় আনা হয়।

কমিশন গত ১৪ ডিসেম্বর অন্তর্বর্তী একটি প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেয়। পরদিন এ প্রতিবেদনের কিছু অংশ প্রকাশও করা হয়।

‘গুমের’ ঘটনায় বিচার প্রক্রিয়া শুরু এবং র্যাব বিলুপ্তির সুপারিশ করা হয় ‘আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ’ শিরোনামে জমা দেওয়া ওই প্রতিবেদনে।

সেদিন প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর গুম বিষয়ক কমিশনের প্রধান মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, তারা মার্চে আরও একটি অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন দেবেন। চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে কমপক্ষে আরও এক বছর সময় প্রয়োজন পড়বে।

কমিশনের অনুসন্ধান এবং অভিযোগের ভিত্তিতে তৈরি প্রতিবেদনে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের পাশাপাশি রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সরাসরি নির্দেশে আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের বেশি সময়ের শাসনামলে ‘গুম’, ‘আটকে রেখে নির্যাতন’ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর মাধ্যমে ধরে এনে ‘হত্যার’ অভিযোগের একের পর এক ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরা হয়।

বিভিন্ন অভিযোগ ও ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীগুলো ‘গুম, নির্যাতন ও ধরে এনে হত্যার’ মত ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে। অনেকগুলো বাহিনীর কার্যালয়ে পাওয়া গেছে নির্যাতনের বিশেষায়িত যন্ত্র ও সাউন্ড প্রুফ কক্ষ।

প্রতিবেদনে বিভিন্ন বাহিনীর দপ্তরে ‘আয়নাঘর’ বা তুলে নিয়ে আসা ব্যক্তিদের দিনের পর দিন আটকে রাখার জন্য কক্ষ তৈরি করার কথা তুলে ধরা হয়।