London ০৯:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিকল ট্রেনের যাত্রীদের খাবার খাইয়ে প্রশংসায় ভাসছেন পাবনাবাসী

অনলাইন ডেস্ক

বিকল ট্রেনের ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত যাত্রীদের খাবার খাইয়ে প্রশংসায় ভাসছেন পাবনাবাসী। এ নিয়ে ফেইসবুক পোস্টে প্রশংসায় পঞ্চমুখ নেটিজেনরা। পোস্টে পাবনার মানুষের মানবিকতার প্রশংসা করেছেন খোদ রেল কর্মকর্তা ও যাত্রীরা।

রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) ট্রেনটির টিটিই আব্দুল আলিম মিঠু ফেসবুকে এ সংক্রান্ত একটি পোস্ট দেন। ছড়িয়ে পড়া সেই পোস্টে এই প্রশংসা উঠে এসেছে।

পোস্টে বলা হয়, ‘রোববার পাবনার লোকজন দেখিয়ে দিলেন তারা কতটা উদার মনের মানুষ। এদিন সকালে ঢালারচর থেকে ছেড়ে আসা চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী ঢালারচর এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিন পাবনার সাঁথিয়ার রাজাপুর স্টেশন পার হওয়ার পর হঠাৎ বিকল হয়ে যায়। বিকল্প ইঞ্জিন আনতে আনতে বেলা পেরিয়ে দুপুর হয়ে যায়। এর মাঝে যাত্রীসহ আমরা যারা ট্রেনের স্টাফ ছিলাম তারা অনেকেই ছিলেন ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত। রেললাইন থেকে কিছু দূরের বাসিন্দারা ওই সময় ঢালারচর ট্রেনের সবার জন্য যা করলেন তা এক কথায় অবিস্মরণীয়! যার যা সামর্থ্য আছে তা দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেন। কারো হাতে ছিল ভাত-ডাল, কারো হাতে খিচুড়ি, কারো হাতে রুটি-সবজি, কারো হাতে পানি। কেউবা তখন কিছু রান্না করে নিয়ে আসার জন্য উদগ্রীব। এতদিন শুধু শুনে এসেছি পাবনার মানুষ বিরাট মনের মানুষ হয়, আজ স্বচক্ষে পাবনার মানুষের আতিথেয়তা দেখে মুগ্ধ হলাম।’

টিটিই আব্দুল আলিম মিঠু বলেন, ট্রেনের স্টাফ ও যাত্রীসহ আমরা যারা ছিলাম তারা সবাই কমবেশি ক্ষুধার্ত। কিন্তু তারা এসে শিশু ও বয়স্কদের দিকে আগে নজর দিলেন। যারা এসব খাবার নিয়ে এসেছিলেন, আমি নিশ্চিত তারা সবাই দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ। দুর্মূল্যের বাজারে তাদের সংসার চালানো দায়, কিন্তু এসব কিছুই ভাবেননি তারা। ঘরের খাবারতো এনেছেনই, কেউ কেউ আবার বলেছেন রান্নার ব্যবস্থা করার কথা। পুরো দৃশ্যে আমি অসম্ভব রকমের অবাক হয়েছি। বিশাল মন না থাকলে এগুলো করা সম্ভব নয়। তাদের এ কাজে মুগ্ধ হওয়া ও প্রশংসা করা ছাড়া কিছু বলার নেই।

এদিকে মানবিকতার জায়গা থেকে এভাবে ছুটে এসেছেন বলে জানিয়েছেন ঘটনাস্থল তাঁতিবন্দের কয়েকজন বাসিন্দা।

বিকল টেনের যাত্রীদের খাবার খাইয়ে প্রশংসায় ভাসছেন পাবনাবাসী

স্থানীয় আবেদ আলী বলেন, আমি যখন দেখলাম স্টেশনের বাইরে ট্রেনটা অনেক সময় দাঁড়িয়ে আছে। কাছে গিয়ে দেখি, অনেকে পানি, কেউবা খাবারের জন্য কষ্ট পাচ্ছে। আশপাশে কোনো দোকানপাট ছিল না। তখন আশপাশের সবাইকে সাধ্যমতো খাবার-পানি নিয়ে আসতে বলি। এভাবেই হয়েছে।

হালিমা খাতুন নামের এক গৃহবধূ বলেন, ‘মানুষের কষ্ট দেখে কী ভালো লাগে কন তো। যেহেনে টেরেন থামিছিল, সেহান থেনে কিছু দূর আমারে বাড়ি। মেলাক্ষণ টেরেন দাঁড়ায় ছিল। মেলা মানুষ। আগা যায়ে দেহি কেউ পানি খুঁজতিছে, কেউ কিছু খাওয়ারতা খুঁজতিছে। তহন বাড়িত যায়া পানি আর ভাত-ডাইল ছিল, সেগুলাই লিয়ে দিছি। আমার নিজেরও ভালো লাগিছে।’

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৪:২৮:০৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
২১
Translate »

বিকল ট্রেনের যাত্রীদের খাবার খাইয়ে প্রশংসায় ভাসছেন পাবনাবাসী

আপডেট : ০৪:২৮:০৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

বিকল ট্রেনের ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত যাত্রীদের খাবার খাইয়ে প্রশংসায় ভাসছেন পাবনাবাসী। এ নিয়ে ফেইসবুক পোস্টে প্রশংসায় পঞ্চমুখ নেটিজেনরা। পোস্টে পাবনার মানুষের মানবিকতার প্রশংসা করেছেন খোদ রেল কর্মকর্তা ও যাত্রীরা।

রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) ট্রেনটির টিটিই আব্দুল আলিম মিঠু ফেসবুকে এ সংক্রান্ত একটি পোস্ট দেন। ছড়িয়ে পড়া সেই পোস্টে এই প্রশংসা উঠে এসেছে।

পোস্টে বলা হয়, ‘রোববার পাবনার লোকজন দেখিয়ে দিলেন তারা কতটা উদার মনের মানুষ। এদিন সকালে ঢালারচর থেকে ছেড়ে আসা চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী ঢালারচর এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিন পাবনার সাঁথিয়ার রাজাপুর স্টেশন পার হওয়ার পর হঠাৎ বিকল হয়ে যায়। বিকল্প ইঞ্জিন আনতে আনতে বেলা পেরিয়ে দুপুর হয়ে যায়। এর মাঝে যাত্রীসহ আমরা যারা ট্রেনের স্টাফ ছিলাম তারা অনেকেই ছিলেন ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত। রেললাইন থেকে কিছু দূরের বাসিন্দারা ওই সময় ঢালারচর ট্রেনের সবার জন্য যা করলেন তা এক কথায় অবিস্মরণীয়! যার যা সামর্থ্য আছে তা দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেন। কারো হাতে ছিল ভাত-ডাল, কারো হাতে খিচুড়ি, কারো হাতে রুটি-সবজি, কারো হাতে পানি। কেউবা তখন কিছু রান্না করে নিয়ে আসার জন্য উদগ্রীব। এতদিন শুধু শুনে এসেছি পাবনার মানুষ বিরাট মনের মানুষ হয়, আজ স্বচক্ষে পাবনার মানুষের আতিথেয়তা দেখে মুগ্ধ হলাম।’

টিটিই আব্দুল আলিম মিঠু বলেন, ট্রেনের স্টাফ ও যাত্রীসহ আমরা যারা ছিলাম তারা সবাই কমবেশি ক্ষুধার্ত। কিন্তু তারা এসে শিশু ও বয়স্কদের দিকে আগে নজর দিলেন। যারা এসব খাবার নিয়ে এসেছিলেন, আমি নিশ্চিত তারা সবাই দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ। দুর্মূল্যের বাজারে তাদের সংসার চালানো দায়, কিন্তু এসব কিছুই ভাবেননি তারা। ঘরের খাবারতো এনেছেনই, কেউ কেউ আবার বলেছেন রান্নার ব্যবস্থা করার কথা। পুরো দৃশ্যে আমি অসম্ভব রকমের অবাক হয়েছি। বিশাল মন না থাকলে এগুলো করা সম্ভব নয়। তাদের এ কাজে মুগ্ধ হওয়া ও প্রশংসা করা ছাড়া কিছু বলার নেই।

এদিকে মানবিকতার জায়গা থেকে এভাবে ছুটে এসেছেন বলে জানিয়েছেন ঘটনাস্থল তাঁতিবন্দের কয়েকজন বাসিন্দা।

বিকল টেনের যাত্রীদের খাবার খাইয়ে প্রশংসায় ভাসছেন পাবনাবাসী

স্থানীয় আবেদ আলী বলেন, আমি যখন দেখলাম স্টেশনের বাইরে ট্রেনটা অনেক সময় দাঁড়িয়ে আছে। কাছে গিয়ে দেখি, অনেকে পানি, কেউবা খাবারের জন্য কষ্ট পাচ্ছে। আশপাশে কোনো দোকানপাট ছিল না। তখন আশপাশের সবাইকে সাধ্যমতো খাবার-পানি নিয়ে আসতে বলি। এভাবেই হয়েছে।

হালিমা খাতুন নামের এক গৃহবধূ বলেন, ‘মানুষের কষ্ট দেখে কী ভালো লাগে কন তো। যেহেনে টেরেন থামিছিল, সেহান থেনে কিছু দূর আমারে বাড়ি। মেলাক্ষণ টেরেন দাঁড়ায় ছিল। মেলা মানুষ। আগা যায়ে দেহি কেউ পানি খুঁজতিছে, কেউ কিছু খাওয়ারতা খুঁজতিছে। তহন বাড়িত যায়া পানি আর ভাত-ডাইল ছিল, সেগুলাই লিয়ে দিছি। আমার নিজেরও ভালো লাগিছে।’