London ০৩:০২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রেকর্ড গড়ে বিপিএলের ট্রফি আবারও লঞ্চে তুলল বরিশাল

স্টেডিয়ামমুখী জনস্রোত দেখে বোঝার উপায় কী, ৪০ দিনের একাদশ বিপিএলে খেলার চেয়ে ধুলা নিয়েই আলোচনা ছিল বেশি! কাল ফাইনালের বিকেলে মানুষের ভিড় ঠেলে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে পৌঁছাতে পৌঁছাতে মনে হলো, যত বিতর্কই থাকুক, মাঠের খেলায় এবার সার্থক টুর্নামেন্টটা।

এই যে এত দর্শক, তাঁরা তো আর মাঠে বিতর্ক দেখতে আসেননি, এসেছেন খেলার টানে, চার–ছক্কার রোমাঞ্চে ডুব দিতে। একাদশ বিপিএল সে প্রত্যাশা মেটাতে কার্পণ্য করেনি, এমনকি ফরচুন বরিশালের পরপর দ্বিতীয় শিরোপা জেতা ফাইনালটাও নয়।

২০১৩ সালে নিজেদের সর্বশেষ বিপিএলেও ফাইনাল খেলে হেরেছিল চিটাগং। আরও একটি ফাইনাল, আরও একবার হতাশায় ডোবাল তাদের। অন্যদিকে ফরচুন বরিশাল পরপর দুবার ফাইনালে উঠে ভাসল ট্রফি জয়ের উৎসবে।

চিটাগংকে ৩ উইকেটে হারিয়ে যোগ্যতর দল হিসেবেই চ্যাম্পিয়ন তারা। অবশ্য মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে কাল সবই ছিল চিটাগংয়ের বিপক্ষে। প্রায় পুরো গ্যালারিই বরিশালের জার্সির রঙে লালে লাল। ‘বরিশাল, বরিশাল’ মুহুর্মুহ স্লোগানে প্রকম্পিত স্টেডিয়াম। ম্যাচজুড়ে চলা সেই উৎসব শেষ হয়েছে বরিশালের আরেকটি লাল শিরোপায়।

অথচ ও রকম প্রতিকূল আবহেও চিটাগং শুরুটা করেছিল দারুণ। দুই ওপেনার খাজা নাফে ও পারভেজ হোসেন মিলে প্রথম ৫ ওভারেই তুলে ফেলেন ৫১ রান, পাওয়ারপ্লে শেষে ৫৭/০। তখন মনে হচ্ছিল, চিটাগংয়ের ইনিংস ২০০ তো পার হবেই, বরিশালের লক্ষ্যটা কোথায় গিয়ে ঠেকে, সেটাই দেখার। তবে শুরুর আক্রমণাত্মক ব্যাটিংটা শেষ পর্যন্ত ধরে রাখা যায়নি বলে হাতে ৭ উইকেট রেখেও চিটাগং ২০০ ছুঁতে পারল না। ৩ উইকেটে ১৯৪ রান করে বরিশালের সামনে দিতে পারল ১৯৫ রানের লক্ষ্য।

শেষদিকে দ্রুত রান তুলতে পারেননি পারভেজরা
শেষদিকে দ্রুত রান তুলতে পারেননি পারভেজরাপ্রথম আলো

১১তম ওভারে ১০০ রান হয়ে গেলেও পাওয়ারপ্লের পর কিছুটা কমে আসে চিটাগংয়ের রানের গতি, যেটা আবার বেড়েছে ১২তম ওভারে রিশাদ হোসেনের প্রথম দুই বলে নাফের দুই ছক্কায়।

প্রথমটিতে তো ৩৭ বলে ফিফটিও হয়ে যায় পাকিস্তানি এই ব্যাটসম্যানের। নাফের সঙ্গে ১২.৪ ওভারে বিপিএল ফাইনালে সর্বোচ্চ ১২১ রানের ওপেনিং জুটির পর ক্লার্কের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটেও পারভেজ গড়েছেন ৪০ বলে ৭০ রানের জুটি। তিন ছক্কা ও দুই চারে ক্লার্ক ২৩ বলে ৪৪ রান করে ফিরে গেলেও ৩০ বলে ফিফটি করা পারভেজ অপরাজিত ছিলেন ৪৯ বলে ৭৮ রান করে, তিন ছক্কার সঙ্গে মেরেছেন দুই বাউন্ডারি।

চিটাগং কিংসের তাণ্ডুবে ব্যাটিংয়ের জবাব দিতে নেমে বরিশাল অধিনায়ক তামিম ইকবাল আর তাওহিদ হৃদয়ের শুরুটাও ছিল ঝোড়ো। তামিম আউট হওয়ার আগে ৮.১ ওভারেই ৭৬ রানের জুটি, বিপিএলের ফাইনালে ওপেনিং জুটিতে যেটি এখন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। গতবার ফাইনালে বরিশালের হয়ে তামিমই মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে গড়েছিলেন ৭৬ রানের জুটি, যেটি কালকের আগপর্যন্ত ছিল সর্বোচ্চ। কাল পারভেজ–নাফের ওপেনিং জুটি অতিক্রম করে গেছেন সেটিকে।

দারুণ শুরু এনে দেন তামিম
দারুণ শুরু এনে দেন তামিম 

তামিম–হৃদয় যতক্ষণ উইকেটে ছিলেন, চিটাগংয়ের তালে তালেই এগোচ্ছিল বরিশালের ব্যাটিং। পাওয়ারপ্লেতে তারাও করল কোনো উইকেট না হারিয়ে ৫৭ রান। তামিমের ব্যাট থেক এসেছে ২৯ বলে আক্রমণাত্মক ৫৪, ২৮ বলে ৩২ করেছেন হৃদয়। তবে মিডল অর্ডারে কাইল মায়ার্সের ২৮ বলে ৪৬ রানের আরেকটি ঝড় না হলে পরিস্থিতি কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারত বরিশালের জন্য। সঙ্গে মুশফিকের ৯ বলে ১৬, বিশেষ করে শেষ দিকে রিশাদের ৬ বলে অপরাজিত ১৮ রান ৩ বল বাকি থাকতেই শিরোপার উৎসবে ভাসায় বরিশালকে।

হুসেন তালাতের করা শেষ ওভারে ৮ রান দরকার ছিল বরিশালের। প্রথম বলে ছক্কা মেরে শুধু আনুষ্ঠানিকতাই বাকি রাখেন রিশাদ। পরের বলে এক রান এবং এক বল পর তালাতের ওয়াইড—ম্যাচ শেষ ওখানেই। শেষ একাদশ বিপিএলও, যেটিকে আরও বর্ণময় করেছে ম্যাচ শেষে হওয়া লেজার শো। বরিশালের লাল উৎসবটাও তাতে হয়ে উঠল আরও বর্ণাঢ্য।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৪:৫৫:৫৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
২২
Translate »

রেকর্ড গড়ে বিপিএলের ট্রফি আবারও লঞ্চে তুলল বরিশাল

আপডেট : ০৪:৫৫:৫৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

স্টেডিয়ামমুখী জনস্রোত দেখে বোঝার উপায় কী, ৪০ দিনের একাদশ বিপিএলে খেলার চেয়ে ধুলা নিয়েই আলোচনা ছিল বেশি! কাল ফাইনালের বিকেলে মানুষের ভিড় ঠেলে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে পৌঁছাতে পৌঁছাতে মনে হলো, যত বিতর্কই থাকুক, মাঠের খেলায় এবার সার্থক টুর্নামেন্টটা।

এই যে এত দর্শক, তাঁরা তো আর মাঠে বিতর্ক দেখতে আসেননি, এসেছেন খেলার টানে, চার–ছক্কার রোমাঞ্চে ডুব দিতে। একাদশ বিপিএল সে প্রত্যাশা মেটাতে কার্পণ্য করেনি, এমনকি ফরচুন বরিশালের পরপর দ্বিতীয় শিরোপা জেতা ফাইনালটাও নয়।

২০১৩ সালে নিজেদের সর্বশেষ বিপিএলেও ফাইনাল খেলে হেরেছিল চিটাগং। আরও একটি ফাইনাল, আরও একবার হতাশায় ডোবাল তাদের। অন্যদিকে ফরচুন বরিশাল পরপর দুবার ফাইনালে উঠে ভাসল ট্রফি জয়ের উৎসবে।

চিটাগংকে ৩ উইকেটে হারিয়ে যোগ্যতর দল হিসেবেই চ্যাম্পিয়ন তারা। অবশ্য মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে কাল সবই ছিল চিটাগংয়ের বিপক্ষে। প্রায় পুরো গ্যালারিই বরিশালের জার্সির রঙে লালে লাল। ‘বরিশাল, বরিশাল’ মুহুর্মুহ স্লোগানে প্রকম্পিত স্টেডিয়াম। ম্যাচজুড়ে চলা সেই উৎসব শেষ হয়েছে বরিশালের আরেকটি লাল শিরোপায়।

অথচ ও রকম প্রতিকূল আবহেও চিটাগং শুরুটা করেছিল দারুণ। দুই ওপেনার খাজা নাফে ও পারভেজ হোসেন মিলে প্রথম ৫ ওভারেই তুলে ফেলেন ৫১ রান, পাওয়ারপ্লে শেষে ৫৭/০। তখন মনে হচ্ছিল, চিটাগংয়ের ইনিংস ২০০ তো পার হবেই, বরিশালের লক্ষ্যটা কোথায় গিয়ে ঠেকে, সেটাই দেখার। তবে শুরুর আক্রমণাত্মক ব্যাটিংটা শেষ পর্যন্ত ধরে রাখা যায়নি বলে হাতে ৭ উইকেট রেখেও চিটাগং ২০০ ছুঁতে পারল না। ৩ উইকেটে ১৯৪ রান করে বরিশালের সামনে দিতে পারল ১৯৫ রানের লক্ষ্য।

শেষদিকে দ্রুত রান তুলতে পারেননি পারভেজরা
শেষদিকে দ্রুত রান তুলতে পারেননি পারভেজরাপ্রথম আলো

১১তম ওভারে ১০০ রান হয়ে গেলেও পাওয়ারপ্লের পর কিছুটা কমে আসে চিটাগংয়ের রানের গতি, যেটা আবার বেড়েছে ১২তম ওভারে রিশাদ হোসেনের প্রথম দুই বলে নাফের দুই ছক্কায়।

প্রথমটিতে তো ৩৭ বলে ফিফটিও হয়ে যায় পাকিস্তানি এই ব্যাটসম্যানের। নাফের সঙ্গে ১২.৪ ওভারে বিপিএল ফাইনালে সর্বোচ্চ ১২১ রানের ওপেনিং জুটির পর ক্লার্কের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটেও পারভেজ গড়েছেন ৪০ বলে ৭০ রানের জুটি। তিন ছক্কা ও দুই চারে ক্লার্ক ২৩ বলে ৪৪ রান করে ফিরে গেলেও ৩০ বলে ফিফটি করা পারভেজ অপরাজিত ছিলেন ৪৯ বলে ৭৮ রান করে, তিন ছক্কার সঙ্গে মেরেছেন দুই বাউন্ডারি।

চিটাগং কিংসের তাণ্ডুবে ব্যাটিংয়ের জবাব দিতে নেমে বরিশাল অধিনায়ক তামিম ইকবাল আর তাওহিদ হৃদয়ের শুরুটাও ছিল ঝোড়ো। তামিম আউট হওয়ার আগে ৮.১ ওভারেই ৭৬ রানের জুটি, বিপিএলের ফাইনালে ওপেনিং জুটিতে যেটি এখন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। গতবার ফাইনালে বরিশালের হয়ে তামিমই মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে গড়েছিলেন ৭৬ রানের জুটি, যেটি কালকের আগপর্যন্ত ছিল সর্বোচ্চ। কাল পারভেজ–নাফের ওপেনিং জুটি অতিক্রম করে গেছেন সেটিকে।

দারুণ শুরু এনে দেন তামিম
দারুণ শুরু এনে দেন তামিম 

তামিম–হৃদয় যতক্ষণ উইকেটে ছিলেন, চিটাগংয়ের তালে তালেই এগোচ্ছিল বরিশালের ব্যাটিং। পাওয়ারপ্লেতে তারাও করল কোনো উইকেট না হারিয়ে ৫৭ রান। তামিমের ব্যাট থেক এসেছে ২৯ বলে আক্রমণাত্মক ৫৪, ২৮ বলে ৩২ করেছেন হৃদয়। তবে মিডল অর্ডারে কাইল মায়ার্সের ২৮ বলে ৪৬ রানের আরেকটি ঝড় না হলে পরিস্থিতি কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারত বরিশালের জন্য। সঙ্গে মুশফিকের ৯ বলে ১৬, বিশেষ করে শেষ দিকে রিশাদের ৬ বলে অপরাজিত ১৮ রান ৩ বল বাকি থাকতেই শিরোপার উৎসবে ভাসায় বরিশালকে।

হুসেন তালাতের করা শেষ ওভারে ৮ রান দরকার ছিল বরিশালের। প্রথম বলে ছক্কা মেরে শুধু আনুষ্ঠানিকতাই বাকি রাখেন রিশাদ। পরের বলে এক রান এবং এক বল পর তালাতের ওয়াইড—ম্যাচ শেষ ওখানেই। শেষ একাদশ বিপিএলও, যেটিকে আরও বর্ণময় করেছে ম্যাচ শেষে হওয়া লেজার শো। বরিশালের লাল উৎসবটাও তাতে হয়ে উঠল আরও বর্ণাঢ্য।