London ০৭:০৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম:

পানামা খালে চীনের প্রভাব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর হুঁশিয়ারি

অনলাইন ডেস্ক

পানামা খালের ওপর চীনের “প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ” কমানোর দাবি জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তিনি পানামাকে এ বিষয়ে “তাৎক্ষণিক পরিবর্তন” আনতে বলেছেন, অন্যথায় যুক্তরাষ্ট্র প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

গতকাল রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) পানামার প্রেসিডেন্ট হোসে রাউল মুলিনোর সঙ্গে দুই ঘণ্টার বৈঠকের পর রুবিওর বক্তব্য স্পষ্ট হয়েছে। তবে বৈঠক শেষে দুজনের মন্তব্যে ভিন্নতা দেখা গেছে।

মুলিনো বলেন, তিনি মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপের আশঙ্কা দেখছেন না। তবে ট্রাম্পের উদ্বেগ নিরসনে কারিগরি পর্যায়ে আলোচনা চালানোর প্রস্তাব দিয়েছেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন, পানামা খাল পুনরুদ্ধার করা হবে। এই মন্তব্যের জেরে পানামা সিটিতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। শুক্রবার বিক্ষোভকারীরা ট্রাম্প ও রুবিওর কুশপুত্তলিকা দাহ করেন। রায়ট পুলিশ বিক্ষোভ দমনে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে এবং কিছু মানুষকে গ্রেপ্তার করে। যদিও সংঘর্ষ ছোট পরিসরে হয়েছে, তবে ট্রাম্পের হুমকির বিরুদ্ধে পানামার জনগণের মধ্যে দেশপ্রেমী আবেগ প্রবল হয়ে উঠেছে।

প্রেসিডেন্ট মুলিনো সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, খালের মালিকানা নিয়ে কোনো আলোচনা হবে না। তিনি বলেন, “আমি এ বিষয়ে কোনো আলোচনায় যাব না। এটি আমাদের সার্বভৌমত্বের বিষয়, পানামা খাল পানামারই থাকবে।”

এদিকে ট্রাম্প দাবি করেছেন, চীনা সেনারা পানামা খালের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে এই দাবি বাস্তবতাবর্জিত বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। পানামা সরকার ১৯৯৯ সাল থেকে খাল পরিচালনা করছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে স্বাক্ষরিত নিরপেক্ষতা চুক্তির আওতায় পড়ে।

যদিও চীনা কোম্পানিগুলো খালের আশপাশে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে, বিশেষ করে বন্দর ও টার্মিনালগুলোর উন্নয়নে। একটি হংকং-ভিত্তিক কোম্পানি পানামা খালের প্রবেশপথের দুটি প্রধান বন্দর পরিচালনা করে।

তবে ট্রাম্প সামরিক পদক্ষেপের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি, যা পানামার জনগণের মধ্যে ভয় ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মারি বলেন, “ট্রাম্পকে আমাদের চুক্তির প্রতি সম্মান দেখাতে হবে। চীনা কোম্পানির বিনিয়োগ আমাদের অধিকার। যুক্তরাষ্ট্রেও চীনা বিনিয়োগ রয়েছে, তাই এটি কোনো অজুহাত হতে পারে না।”

পানামার সাবেক কংগ্রেস সদস্য এডউইন ক্যাব্রেরা বলেন, “আমি ১৯৮৯ সালের মার্কিন আগ্রাসনের সাক্ষী। সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা আমরা আবার পেতে চাই না।”

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও চীন ও লাতিন আমেরিকার বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়ে চলেছেন। পানামায় তার সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল চীনের বিনিয়োগ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ প্রকাশ করা।

মার্কো রুবিও বলেন, “যদি চীন চায়, তারা পানামা খালে মার্কিন জাহাজ চলাচল বাধাগ্রস্ত করতে পারে। এটি বাস্তবতা। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যা বলেছেন, আমরা তা নিয়ে আলোচনা করব।”

তবে পানামার সাধারণ জনগণ মনে করেন, খালের আয় থেকে তারা প্রকৃত সুবিধা পাচ্ছেন না। হোটেল কর্মী আন্দ্রে হাওয়েল বলেন, “যদি সরকার খাল সঠিকভাবে পরিচালনা করত, তবে ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের সুযোগ থাকত না।”

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৬:৫৫:৫৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
Translate »

পানামা খালে চীনের প্রভাব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর হুঁশিয়ারি

আপডেট : ০৬:৫৫:৫৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

পানামা খালের ওপর চীনের “প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ” কমানোর দাবি জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তিনি পানামাকে এ বিষয়ে “তাৎক্ষণিক পরিবর্তন” আনতে বলেছেন, অন্যথায় যুক্তরাষ্ট্র প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

গতকাল রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) পানামার প্রেসিডেন্ট হোসে রাউল মুলিনোর সঙ্গে দুই ঘণ্টার বৈঠকের পর রুবিওর বক্তব্য স্পষ্ট হয়েছে। তবে বৈঠক শেষে দুজনের মন্তব্যে ভিন্নতা দেখা গেছে।

মুলিনো বলেন, তিনি মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপের আশঙ্কা দেখছেন না। তবে ট্রাম্পের উদ্বেগ নিরসনে কারিগরি পর্যায়ে আলোচনা চালানোর প্রস্তাব দিয়েছেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন, পানামা খাল পুনরুদ্ধার করা হবে। এই মন্তব্যের জেরে পানামা সিটিতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। শুক্রবার বিক্ষোভকারীরা ট্রাম্প ও রুবিওর কুশপুত্তলিকা দাহ করেন। রায়ট পুলিশ বিক্ষোভ দমনে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে এবং কিছু মানুষকে গ্রেপ্তার করে। যদিও সংঘর্ষ ছোট পরিসরে হয়েছে, তবে ট্রাম্পের হুমকির বিরুদ্ধে পানামার জনগণের মধ্যে দেশপ্রেমী আবেগ প্রবল হয়ে উঠেছে।

প্রেসিডেন্ট মুলিনো সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, খালের মালিকানা নিয়ে কোনো আলোচনা হবে না। তিনি বলেন, “আমি এ বিষয়ে কোনো আলোচনায় যাব না। এটি আমাদের সার্বভৌমত্বের বিষয়, পানামা খাল পানামারই থাকবে।”

এদিকে ট্রাম্প দাবি করেছেন, চীনা সেনারা পানামা খালের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে এই দাবি বাস্তবতাবর্জিত বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। পানামা সরকার ১৯৯৯ সাল থেকে খাল পরিচালনা করছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে স্বাক্ষরিত নিরপেক্ষতা চুক্তির আওতায় পড়ে।

যদিও চীনা কোম্পানিগুলো খালের আশপাশে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে, বিশেষ করে বন্দর ও টার্মিনালগুলোর উন্নয়নে। একটি হংকং-ভিত্তিক কোম্পানি পানামা খালের প্রবেশপথের দুটি প্রধান বন্দর পরিচালনা করে।

তবে ট্রাম্প সামরিক পদক্ষেপের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি, যা পানামার জনগণের মধ্যে ভয় ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মারি বলেন, “ট্রাম্পকে আমাদের চুক্তির প্রতি সম্মান দেখাতে হবে। চীনা কোম্পানির বিনিয়োগ আমাদের অধিকার। যুক্তরাষ্ট্রেও চীনা বিনিয়োগ রয়েছে, তাই এটি কোনো অজুহাত হতে পারে না।”

পানামার সাবেক কংগ্রেস সদস্য এডউইন ক্যাব্রেরা বলেন, “আমি ১৯৮৯ সালের মার্কিন আগ্রাসনের সাক্ষী। সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা আমরা আবার পেতে চাই না।”

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও চীন ও লাতিন আমেরিকার বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়ে চলেছেন। পানামায় তার সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল চীনের বিনিয়োগ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ প্রকাশ করা।

মার্কো রুবিও বলেন, “যদি চীন চায়, তারা পানামা খালে মার্কিন জাহাজ চলাচল বাধাগ্রস্ত করতে পারে। এটি বাস্তবতা। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যা বলেছেন, আমরা তা নিয়ে আলোচনা করব।”

তবে পানামার সাধারণ জনগণ মনে করেন, খালের আয় থেকে তারা প্রকৃত সুবিধা পাচ্ছেন না। হোটেল কর্মী আন্দ্রে হাওয়েল বলেন, “যদি সরকার খাল সঠিকভাবে পরিচালনা করত, তবে ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের সুযোগ থাকত না।”