London ১০:০৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ০২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম:

বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান ঘিরে ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথে বাঁকবদল

অনলাইন ডেস্ক

চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তানের প্রভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আঞ্চলিক সম্পর্কে পরিবর্তন আসছে। নয়াদিল্লি আফগানিস্তানের তালেবানদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করছে আর অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের নতুন সরকারের সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে ইসলামাবাদ।

দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক তৎপরতার মূলে রয়েছে এই অঞ্চলের সর্বাধিক জনবহুল ও পারমাণবিক শক্তিধর দেশ দুটির মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী অনাস্থা। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হওয়ার পর উপমহাদেশ ভেঙে ভারত ও পাকিস্তানের জন্ম হয়। দেশ দুটি একাধিকবার যুদ্ধে জড়িয়েছে এবং এখনও তাদের মধ্যে শত্রুতা বজায় রয়েছে।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কমার কোনো লক্ষণ নেই। গত জানুয়ারিতে পাকিস্তানের ভুখণ্ডে ভারতবিরোধী জঙ্গিদের হত্যার গোপন অভিযান চালুর বিষয়টি অস্বীকার করেছে নয়াদিল্লি।

অভিযোগ নাকচ করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আপনি বাড়ির আঙিনায় সাপ রাখতে পারেন না এবং তারা কেবল আপনার প্রতিবেশীদেরই কামড়াবে, এমনটি আশা করাও উচিত নয়।’

প্রায় চার বছর আগে কাবুলে তালেবানরা ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে।

ইসলামাবাদ অভিযোগ করেছে, তালেবান সরকার জঙ্গিদের লাগাম টেনে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা বলেছে, জঙ্গিরা আফগান ভূখণ্ড ব্যবহার করে পাকিস্তানে হামলা চালাচ্ছে এবং হাজার হাজার পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যকে হত্যা করেছে।

ডিসেম্বরে আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে মারাত্মক বিমান হামলা চালায় পাকিস্তান। এ ছাড়া সীমান্তে জঙ্গিদের সঙ্গে গুলি বিনিময়ের ঘটনাও ঘটে। আফগানিস্তানের কট্টর ইসলামপন্থি তালেবানদের সঙ্গে ভারতের হিন্দুত্ববাদী নরেন্দ্র মোদি সরকারের সম্পর্ক গড়ে ওঠা প্রাথমিকভাবে অসম্ভব মনে হয়, তবে ভারত এর সুযোগ সৃষ্টির জন্য এগিয়ে এসেছে।

ওয়াশিংটনের ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক হাসান আব্বাস এএফপিকে বলেন, ‘ভারত বেশ কিছুদিন ধরেই ধারাবাহিকভাবে এই পথ অনুসরণ করে আসছে।’

অধ্যাপক হাসান আব্বাস বলেন, ‘তারা (ভারত) চায় না, তালেবান এমন কোনো গোষ্ঠীকে সুযোগ দিক, যারা শেষ পর্যন্ত ভারতের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে।’ এ ছাড়া এটি ‘পাকিস্তানকে বিরক্ত করতেও’ নয়াদিল্লির জন্য আকর্ষণীয় সুযোগ।

গত জানুয়ারিতে ভারতের শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিক বিক্রম মিসরি  দুবাইয়ে তালেবানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাওলাউই আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জয়সওয়াল এ বৈঠককে “এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ পর্যায়ের যোগাযোগ” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, নয়াদিল্লি আফগানিস্তানের জনগণের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ককে আরও জোরদার করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

আমির খান মুত্তাকি সম্পর্ক সম্প্রসারণের ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেছেন বলে আফগান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন।

রনধীর জয়সওয়াল বলেন, বৈঠকে ইরানের চাবাহার কন্টেইনার বন্দরের ৩৭০ মিলিয়ন ডলারের উন্নয়ন প্রকল্প ব্যবহার করে স্থলবেষ্টিত আফগানিস্তানে বাণিজ্য ও বাণিজ্যিক কার্যক্রমকে তরান্বিত করার বিষয়ে একমত হয়েছেন তারা।

চাবাহার পাকিস্তানের গোয়াদর বন্দরের ঠিক পশ্চিমে অবস্থিত, যা পাকিস্তানে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অবকাঠামো সম্প্রসারণের ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত।

সম্প্রতি কূটনৈতিক সম্পর্কের বরফ গললেও চীনের ক্রমবর্ধমান আঞ্চলিক প্রভাব ও দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়ার বিষয়ে ভারত দীর্ঘদিন ধরেই সতর্ক ছিল।

দুবাইয়ে মুত্তকাই-বিক্রম মিসরির বৈঠকের পর টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক সম্পাদকীয়তে বলা হয়, তালেবানদের সঙ্গে নয়াদিল্লির ‘নীরব ও স্বেচ্ছা যোগাযোগ’ কৌশলগত আঞ্চলিক সম্পর্ককে নতুন রূপ দিচ্ছে।

সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়, ‘তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি না দিলেও ভারত আফগানিস্তানে পা দেওয়ার গুরুত্ব বোঝে।’

এতে আরও বলা হয়, ‘এই পদক্ষেপটি ভারতের বৃহত্তর আঞ্চলিক কৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এবং প্রতিবেশী পাকিস্তানে দেশটির প্রভাব মোকাবিলার চেষ্টা করছে নয়াদিল্লি।’

শত্রুর শুত্রু আমার বন্ধু : একই সময়ে পুরোনো শত্রু পাকিস্তান ও বাংলাদেশ এখন ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ সম্পর্কের কথা বলছে। ১৯৭১ সালে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে বিভক্ত হয়ে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্ম হয়। তখন ভারতের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। ২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে পুরোনো বন্ধু রাষ্ট্র ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অভিযোগে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তাকে বাংলাদেশে প্রত্যর্পণের জন্য ঢাকার অনুরোধে সাড়া দেয়নি নয়াদিল্লি।

তখন থেকেই ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের নতুন সরকারের সম্পর্ক শীতল হতে থাকে। এর ফলে ইসলামাবাদ ও ঢাকার মধ্যে ধীরে ধীরে সম্পর্ক পুনর্গঠনের সুযোগ সৃষ্টি হয়।

গত নভেম্বরে কয়েক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো পাকিস্তান থেকে সরাসরি বাংলাদেশে আসা পণ্যবাহী জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করে।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ডিসেম্বরে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি বলেন, সম্পর্ক জোরদারে উভয়ে সম্মত হয়েছেন।

বাংলাদেশি সেনাবাহিনীর শীর্ষ কমান্ডাররা পরে পাকিস্তান সফর করেন। তারা সামরিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করেন এবং দুই দেশের মধ্যে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের’ প্রশংসা করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আমেনা মহসিন এএফপিকে বলেন, হঠাৎ ঘনিষ্ঠতা আন্তর্জাতিক কূটনীতির প্রাচীনতম নীতিগুলোর একটি। আমার শত্রুর শত্রু আমার বন্ধু।

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৮:৩৪:০৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
Translate »

বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান ঘিরে ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথে বাঁকবদল

আপডেট : ০৮:৩৪:০৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তানের প্রভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আঞ্চলিক সম্পর্কে পরিবর্তন আসছে। নয়াদিল্লি আফগানিস্তানের তালেবানদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করছে আর অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের নতুন সরকারের সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে ইসলামাবাদ।

দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক তৎপরতার মূলে রয়েছে এই অঞ্চলের সর্বাধিক জনবহুল ও পারমাণবিক শক্তিধর দেশ দুটির মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী অনাস্থা। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হওয়ার পর উপমহাদেশ ভেঙে ভারত ও পাকিস্তানের জন্ম হয়। দেশ দুটি একাধিকবার যুদ্ধে জড়িয়েছে এবং এখনও তাদের মধ্যে শত্রুতা বজায় রয়েছে।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কমার কোনো লক্ষণ নেই। গত জানুয়ারিতে পাকিস্তানের ভুখণ্ডে ভারতবিরোধী জঙ্গিদের হত্যার গোপন অভিযান চালুর বিষয়টি অস্বীকার করেছে নয়াদিল্লি।

অভিযোগ নাকচ করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আপনি বাড়ির আঙিনায় সাপ রাখতে পারেন না এবং তারা কেবল আপনার প্রতিবেশীদেরই কামড়াবে, এমনটি আশা করাও উচিত নয়।’

প্রায় চার বছর আগে কাবুলে তালেবানরা ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে।

ইসলামাবাদ অভিযোগ করেছে, তালেবান সরকার জঙ্গিদের লাগাম টেনে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা বলেছে, জঙ্গিরা আফগান ভূখণ্ড ব্যবহার করে পাকিস্তানে হামলা চালাচ্ছে এবং হাজার হাজার পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যকে হত্যা করেছে।

ডিসেম্বরে আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে মারাত্মক বিমান হামলা চালায় পাকিস্তান। এ ছাড়া সীমান্তে জঙ্গিদের সঙ্গে গুলি বিনিময়ের ঘটনাও ঘটে। আফগানিস্তানের কট্টর ইসলামপন্থি তালেবানদের সঙ্গে ভারতের হিন্দুত্ববাদী নরেন্দ্র মোদি সরকারের সম্পর্ক গড়ে ওঠা প্রাথমিকভাবে অসম্ভব মনে হয়, তবে ভারত এর সুযোগ সৃষ্টির জন্য এগিয়ে এসেছে।

ওয়াশিংটনের ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক হাসান আব্বাস এএফপিকে বলেন, ‘ভারত বেশ কিছুদিন ধরেই ধারাবাহিকভাবে এই পথ অনুসরণ করে আসছে।’

অধ্যাপক হাসান আব্বাস বলেন, ‘তারা (ভারত) চায় না, তালেবান এমন কোনো গোষ্ঠীকে সুযোগ দিক, যারা শেষ পর্যন্ত ভারতের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে।’ এ ছাড়া এটি ‘পাকিস্তানকে বিরক্ত করতেও’ নয়াদিল্লির জন্য আকর্ষণীয় সুযোগ।

গত জানুয়ারিতে ভারতের শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিক বিক্রম মিসরি  দুবাইয়ে তালেবানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাওলাউই আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জয়সওয়াল এ বৈঠককে “এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ পর্যায়ের যোগাযোগ” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, নয়াদিল্লি আফগানিস্তানের জনগণের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ককে আরও জোরদার করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

আমির খান মুত্তাকি সম্পর্ক সম্প্রসারণের ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেছেন বলে আফগান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন।

রনধীর জয়সওয়াল বলেন, বৈঠকে ইরানের চাবাহার কন্টেইনার বন্দরের ৩৭০ মিলিয়ন ডলারের উন্নয়ন প্রকল্প ব্যবহার করে স্থলবেষ্টিত আফগানিস্তানে বাণিজ্য ও বাণিজ্যিক কার্যক্রমকে তরান্বিত করার বিষয়ে একমত হয়েছেন তারা।

চাবাহার পাকিস্তানের গোয়াদর বন্দরের ঠিক পশ্চিমে অবস্থিত, যা পাকিস্তানে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অবকাঠামো সম্প্রসারণের ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত।

সম্প্রতি কূটনৈতিক সম্পর্কের বরফ গললেও চীনের ক্রমবর্ধমান আঞ্চলিক প্রভাব ও দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়ার বিষয়ে ভারত দীর্ঘদিন ধরেই সতর্ক ছিল।

দুবাইয়ে মুত্তকাই-বিক্রম মিসরির বৈঠকের পর টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক সম্পাদকীয়তে বলা হয়, তালেবানদের সঙ্গে নয়াদিল্লির ‘নীরব ও স্বেচ্ছা যোগাযোগ’ কৌশলগত আঞ্চলিক সম্পর্ককে নতুন রূপ দিচ্ছে।

সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়, ‘তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি না দিলেও ভারত আফগানিস্তানে পা দেওয়ার গুরুত্ব বোঝে।’

এতে আরও বলা হয়, ‘এই পদক্ষেপটি ভারতের বৃহত্তর আঞ্চলিক কৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এবং প্রতিবেশী পাকিস্তানে দেশটির প্রভাব মোকাবিলার চেষ্টা করছে নয়াদিল্লি।’

শত্রুর শুত্রু আমার বন্ধু : একই সময়ে পুরোনো শত্রু পাকিস্তান ও বাংলাদেশ এখন ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ সম্পর্কের কথা বলছে। ১৯৭১ সালে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে বিভক্ত হয়ে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্ম হয়। তখন ভারতের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। ২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে পুরোনো বন্ধু রাষ্ট্র ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অভিযোগে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তাকে বাংলাদেশে প্রত্যর্পণের জন্য ঢাকার অনুরোধে সাড়া দেয়নি নয়াদিল্লি।

তখন থেকেই ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের নতুন সরকারের সম্পর্ক শীতল হতে থাকে। এর ফলে ইসলামাবাদ ও ঢাকার মধ্যে ধীরে ধীরে সম্পর্ক পুনর্গঠনের সুযোগ সৃষ্টি হয়।

গত নভেম্বরে কয়েক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো পাকিস্তান থেকে সরাসরি বাংলাদেশে আসা পণ্যবাহী জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করে।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ডিসেম্বরে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি বলেন, সম্পর্ক জোরদারে উভয়ে সম্মত হয়েছেন।

বাংলাদেশি সেনাবাহিনীর শীর্ষ কমান্ডাররা পরে পাকিস্তান সফর করেন। তারা সামরিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করেন এবং দুই দেশের মধ্যে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের’ প্রশংসা করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আমেনা মহসিন এএফপিকে বলেন, হঠাৎ ঘনিষ্ঠতা আন্তর্জাতিক কূটনীতির প্রাচীনতম নীতিগুলোর একটি। আমার শত্রুর শত্রু আমার বন্ধু।