London ০২:৫৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চলনবিলের হলুদ ফুলে মুগ্ধ পর্যটক, মৌমাছি-পাখিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

হলুদ সরিষায় হাসছে চলনবিল। দিগন্ত বিস্তৃত হলুদের সমারোহে মৌমাছি আর হাজারো পাখির কলতান। প্রকৃতির রঙিন সাজে চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্যের হাতছানিতে দূর দূরান্ত থেকে আসছেন দর্শনার্থীরা। সরেজমিনে চলনবিল ঘুরে দেখা যায়, দৃষ্টিসীমায় যতদূর চোখ যায়, ততটা জুড়েই যেন হলুদের গালিচা।

পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, নাটোরের গুরুদাসপুর, সিংড়া, সিরাজগঞ্জের তাড়াশসহ পুরো চলনবিলের বুকজুড়েই এখন এমন হলুদ সরিষা ফুলের নিথুয়া পাথার। শান্ত স্নিগ্ধ বিলপাড়ের গ্রামগুলোতে মাঘের শীতেই যেনো নেমে এসেছে বসন্ত। অবারিত সৌন্দর্য্যের নয়নাভিরাম সাজে চলনবিলে যেন চলছে গায়ে হলুদের উৎসব।

চলনবিলের হলুদ ফুলে মুগ্ধ পর্যটক, মৌমাছি-পাখিরা

মধু গন্ধে ভরা সর্ষে ফুলে মৌমাছির গুঞ্জন,পাখিদের কলতানের সুখ জাগানিয়া সুরে নিস্তব্ধ বিলে নিরবতা ভাঙে। শুকিয়ে আসা বিলের জলে বালিহাঁস, পানকৌড়ির জলকেলির সুখী নৃত্য। মাছ শিকার শেষে হলুদ সরোবরে সাদা শুভ্র বকের ডানা মেলে উড়ে বেড়ানো। প্রকৃতির এমন অপরূপ সাজের অনাবিল আনন্দ ছুঁয়ে যাচ্ছে বিলপাড়ের মানুষকেও।

নিমাইচড়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম রনি বলেন, ‘চলনবিল সব সময়ই সুন্দর, বিল নয় এ যেন ভূ স্বর্গ। প্রকৃতির অপরূপ লীলাভূমি এই বিল এখন সরিষা ফুলের ছেয়ে গেছে। হলুদ ফুলের মিষ্টি গন্ধ, আর দূর দিগন্তে সূর্যাস্ত দেখে মন জুড়িয়ে যায়। অতিথি পাখি দেখতেও দূর দূরান্ত থেকে এই দৃশ্য দেখতে আসে মানুষ।’

চলনবিলের হলুদ ফুলে মুগ্ধ পর্যটক, মৌমাছি-পাখিরা

হান্ডিয়াল গ্রামের সানোয়ার হোসেন বলেন, ‘বর্ষা শেষে চলনবিলের পানি শুকিয়ে এলে সরিষা চাষ করেন গ্রামের মানুষ। শীতে পুরো বিলে কেবল সরিষা ফুলের শোভা আর সুবাস। প্রতিদিন হাজারো মানুষ ভীড় জমায় বিলের বিভিন্ন এলাকায়। এসব দর্শনার্থীদের জন্য খাবারের দোকান দিয়ে অনেকের কর্মসংস্থানও হয়েছে।’

স্থানীয়রা জানান, ঋতুভেদে চলনবিলের চিত্র পরিবর্তন হয় বছরজুড়েই। গ্রীষ্মের রুক্ষতায় ধানের সবুজ। বর্ষায় অকুল পাথার বিলের জলে নানা পদের সুস্বাদু দেশীয় মাছের সম্ভার। শীতে সেসব জমিতেই সরিষা ফুলের শোভায়, অতিথি পাখির আনাগোনা। সবমিলে চলনবিলের আছে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা।

চলনবিলের হলুদ ফুলে মুগ্ধ পর্যটক, মৌমাছি-পাখিরা

চলনবিল গবেষক আব্দুল মান্নান পলাশ বলেন, ‘চলনবিলে উন্নয়নের নামে যা করা হয়েছে, তা কেবল বিলের মরণ ও ধ্বংস ডেকে এনেছে। চলনবিলের সৌন্দর্য্যকে কখনোই ভ্রমণপিপাসুদের কাছে সেভাবে তুলে ধরা হয়নি।’

‘বিশ্রামাগার বা রাতযাপনের সু-ব্যবস্থা না থাকায় দুরাগত দর্শণার্থীরা বেড়াতে এসে কিছুটা বিপাকে পড়েন। তাই সরকারি উদ্যোগে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য রিসোর্ট নির্মাণসহ যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা আর পরিকল্পিত উদ্যোগ নিলে বৃহত্তম জল সম্পদ চলনবিল দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠবে।’

চলনবিলের হলুদ ফুলে মুগ্ধ পর্যটক, মৌমাছি-পাখিরা

বিপন্ন চলন বিলের পরিবেশ রক্ষায় পর্যটনের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা কাজে লাগানোর তাগিদ বিশেষজ্ঞদেরও। এ ব্যাপারে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে বিলের পানির উৎস নদীগুলোতে প্রবাহ কমে যাওয়ায় দিনে দিনে চলনবিল সংকীর্ণ হয়েছে।’

‘এই সুযোগে ভূমিদস্যুরা বিল দখল করে স্থাপনা গড়েছে। মানুষের লোভের কারণে বিলে ক্রমাগত দূষণ হয়ে চলনবিল অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। অথচ এই বিলের প্রাকৃতিক সম্পদ ও পর্যটন সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারলে অর্থনীতির চিত্রপট বদলে দেয়া সম্ভব। স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে চলনবিলের পর্যটন খাতে অর্থনৈতিকভাবে সম্পৃক্ত করা গেলে তারা নিজ উদ্যোগেই এই প্রাণ প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসবে।’

চলনবিলের হলুদ ফুলে মুগ্ধ পর্যটক, মৌমাছি-পাখিরা

ড. নাজমুল আরো বলেন, ‘অর্থনৈতিক সম্ভাবনা কাজে লাগাতে চলনবিলের ৯ উপজেলায় পৃথক উন্নয়ন কর্মসূচি না নিয়ে পরিবেশগত সমীক্ষা করে সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন।’

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ১০:৪১:০৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫
Translate »

চলনবিলের হলুদ ফুলে মুগ্ধ পর্যটক, মৌমাছি-পাখিরা

আপডেট : ১০:৪১:০৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫

হলুদ সরিষায় হাসছে চলনবিল। দিগন্ত বিস্তৃত হলুদের সমারোহে মৌমাছি আর হাজারো পাখির কলতান। প্রকৃতির রঙিন সাজে চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্যের হাতছানিতে দূর দূরান্ত থেকে আসছেন দর্শনার্থীরা। সরেজমিনে চলনবিল ঘুরে দেখা যায়, দৃষ্টিসীমায় যতদূর চোখ যায়, ততটা জুড়েই যেন হলুদের গালিচা।

পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, নাটোরের গুরুদাসপুর, সিংড়া, সিরাজগঞ্জের তাড়াশসহ পুরো চলনবিলের বুকজুড়েই এখন এমন হলুদ সরিষা ফুলের নিথুয়া পাথার। শান্ত স্নিগ্ধ বিলপাড়ের গ্রামগুলোতে মাঘের শীতেই যেনো নেমে এসেছে বসন্ত। অবারিত সৌন্দর্য্যের নয়নাভিরাম সাজে চলনবিলে যেন চলছে গায়ে হলুদের উৎসব।

চলনবিলের হলুদ ফুলে মুগ্ধ পর্যটক, মৌমাছি-পাখিরা

মধু গন্ধে ভরা সর্ষে ফুলে মৌমাছির গুঞ্জন,পাখিদের কলতানের সুখ জাগানিয়া সুরে নিস্তব্ধ বিলে নিরবতা ভাঙে। শুকিয়ে আসা বিলের জলে বালিহাঁস, পানকৌড়ির জলকেলির সুখী নৃত্য। মাছ শিকার শেষে হলুদ সরোবরে সাদা শুভ্র বকের ডানা মেলে উড়ে বেড়ানো। প্রকৃতির এমন অপরূপ সাজের অনাবিল আনন্দ ছুঁয়ে যাচ্ছে বিলপাড়ের মানুষকেও।

নিমাইচড়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম রনি বলেন, ‘চলনবিল সব সময়ই সুন্দর, বিল নয় এ যেন ভূ স্বর্গ। প্রকৃতির অপরূপ লীলাভূমি এই বিল এখন সরিষা ফুলের ছেয়ে গেছে। হলুদ ফুলের মিষ্টি গন্ধ, আর দূর দিগন্তে সূর্যাস্ত দেখে মন জুড়িয়ে যায়। অতিথি পাখি দেখতেও দূর দূরান্ত থেকে এই দৃশ্য দেখতে আসে মানুষ।’

চলনবিলের হলুদ ফুলে মুগ্ধ পর্যটক, মৌমাছি-পাখিরা

হান্ডিয়াল গ্রামের সানোয়ার হোসেন বলেন, ‘বর্ষা শেষে চলনবিলের পানি শুকিয়ে এলে সরিষা চাষ করেন গ্রামের মানুষ। শীতে পুরো বিলে কেবল সরিষা ফুলের শোভা আর সুবাস। প্রতিদিন হাজারো মানুষ ভীড় জমায় বিলের বিভিন্ন এলাকায়। এসব দর্শনার্থীদের জন্য খাবারের দোকান দিয়ে অনেকের কর্মসংস্থানও হয়েছে।’

স্থানীয়রা জানান, ঋতুভেদে চলনবিলের চিত্র পরিবর্তন হয় বছরজুড়েই। গ্রীষ্মের রুক্ষতায় ধানের সবুজ। বর্ষায় অকুল পাথার বিলের জলে নানা পদের সুস্বাদু দেশীয় মাছের সম্ভার। শীতে সেসব জমিতেই সরিষা ফুলের শোভায়, অতিথি পাখির আনাগোনা। সবমিলে চলনবিলের আছে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা।

চলনবিলের হলুদ ফুলে মুগ্ধ পর্যটক, মৌমাছি-পাখিরা

চলনবিল গবেষক আব্দুল মান্নান পলাশ বলেন, ‘চলনবিলে উন্নয়নের নামে যা করা হয়েছে, তা কেবল বিলের মরণ ও ধ্বংস ডেকে এনেছে। চলনবিলের সৌন্দর্য্যকে কখনোই ভ্রমণপিপাসুদের কাছে সেভাবে তুলে ধরা হয়নি।’

‘বিশ্রামাগার বা রাতযাপনের সু-ব্যবস্থা না থাকায় দুরাগত দর্শণার্থীরা বেড়াতে এসে কিছুটা বিপাকে পড়েন। তাই সরকারি উদ্যোগে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য রিসোর্ট নির্মাণসহ যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা আর পরিকল্পিত উদ্যোগ নিলে বৃহত্তম জল সম্পদ চলনবিল দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠবে।’

চলনবিলের হলুদ ফুলে মুগ্ধ পর্যটক, মৌমাছি-পাখিরা

বিপন্ন চলন বিলের পরিবেশ রক্ষায় পর্যটনের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা কাজে লাগানোর তাগিদ বিশেষজ্ঞদেরও। এ ব্যাপারে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে বিলের পানির উৎস নদীগুলোতে প্রবাহ কমে যাওয়ায় দিনে দিনে চলনবিল সংকীর্ণ হয়েছে।’

‘এই সুযোগে ভূমিদস্যুরা বিল দখল করে স্থাপনা গড়েছে। মানুষের লোভের কারণে বিলে ক্রমাগত দূষণ হয়ে চলনবিল অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। অথচ এই বিলের প্রাকৃতিক সম্পদ ও পর্যটন সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারলে অর্থনীতির চিত্রপট বদলে দেয়া সম্ভব। স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে চলনবিলের পর্যটন খাতে অর্থনৈতিকভাবে সম্পৃক্ত করা গেলে তারা নিজ উদ্যোগেই এই প্রাণ প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসবে।’

চলনবিলের হলুদ ফুলে মুগ্ধ পর্যটক, মৌমাছি-পাখিরা

ড. নাজমুল আরো বলেন, ‘অর্থনৈতিক সম্ভাবনা কাজে লাগাতে চলনবিলের ৯ উপজেলায় পৃথক উন্নয়ন কর্মসূচি না নিয়ে পরিবেশগত সমীক্ষা করে সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন।’