London ০৯:৪৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ২৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম:
কসবায় ক্যান্সারে আক্রান্ত পাখি আক্তারের পাশে ‘অগ্রভাগীয় সাহিত্য সংগঠন (সি.টি.এল) এর’ ২৫০ তম মানবিক সহায়তার কাজ সম্পন্ন সিরাজগঞ্জে অসহায় নারীর জমি দখল, ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ ফরিদপুরে ৪৩ বছর পর সরকারী হাসপাতালের জমি পুনঃউদ্ধার কালিয়াকৈরে শ্রমিক দলের বর্ণাঢ্য র‍্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় কালিয়াকৈরে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যুর কালিয়াকৈরে ১জন যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু ২৪ বছর শিকলে বন্দি শাহানের জীবন,মেলেনি উন্নত চিকিৎসা কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামীলীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম তুষার গ্রেফতার ড. মোহাম্মদ ফয়েজ উদ্দিন এমবিই’র দিকনির্দেশনামূলক সুপারিশ: আগামীর উন্নত জাতি গঠনের রূপরেখা নাটোর বিএনপির প্রার্থী ও ভোটের রাজনীতি

২৪ বছর শিকলে বন্দি শাহানের জীবন,মেলেনি উন্নত চিকিৎসা

মামুন রণবীর, নেত্রকোনা

নেত্রকোণার দুর্গাপুরের ৩০ বছর বয়সী শাহান আলী। গত ২৪ বছর ধরে হাতে ও পায়ে শিকল ও দড়ির বাঁধনে বন্দি জীবন কাটাচ্ছে। তাকে ২৪ ঘন্টাই বেঁধে রাখতে হয়। তার যখন ৬ বছর বয়স তখন তার শরীরে খিঁচুনি দেখা দেয়,এরপর থেকেই সে মানসিক ভারসাম্যহীনতায় ভুগছে।

শাহান দুর্গাপুর উপজেলার চন্ডিগড় ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের থাপনারগাতি গ্রামের কৃষক আব্দুল মজিদ মিয়ার ছেলে। আর্থিক সংকটের কারণে তাকে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারেনি তার পরিবার। স্থানীয়রা বলছেন, উন্নত চিকিৎসা পেলে হয়তো শাহান আলী শিকলমুক্ত জীবনে ফিরতে পারবে।

দিনের বেলায় বসতঘরের পেছনে খোলা আকাশের নিচে গাছের সঙ্গে ও রাতে ঘরের ভিতর খুটির সঙ্গে হাতে ও পায়ে শিকল দিয়ে তাকে বেঁধে রাখা হয়। সেখানেই চলে তার খাওয়া-দাওয়া আর প্রশ্রাব-পায়খানা। এভাবেই বছরের পর বছর ধরে চলছে শাহানের বন্দি জীবন।

মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঘরের ভেতর দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে মানসিক ভারসাম্যহীন শাহানকে। তাকে সারাদিন ও রাতেও এভাবে বেঁধে রাখতে হয় বলে জানান বাবা আব্দুল মজিদ আলী। বাঁধন খুলে দিলে সে আক্রমণাত্মক আচরণ করে। সে নিজের শরীরে আঘাত করে,এমনকি ঘরের বেড়ার টিনেও জোরে ধাক্কা মারে।

শাহান আলীর বাবা আব্দুল মজিদ বলেন,জন্মের ৬ বছর বয়স হওয়ার পর থেকেই তার মধ্যে অস্বাভাবিক আচরণ শুরু হয়। সে সময় তাকে ছেড়ে দিলে ছোটাছুটি করে যাকে সামনে পেত তাকেই মারধর করতো। এলাকাবাসীর গরু,হাস,মুরগি, ছাগল সহ পোষা প্রাণীকে মারধর করাসহ পরিবারের লোকজনদের কাছে পেলে আঘাত করার চেষ্টা করতো। যতই বড় হচ্ছিলো অস্বাভাবিক আচার-আচরণ, মারধর দিন দিন বাড়তে থাকে। পরে সামর্থ্য মতো কিছুদিন চিকিৎসা চালালেও সুস্থ হয়নি শাহান আলী। তার আচরণের কোনো পরিবর্তন হয়নি। বরং দিন দিন বাড়তেই থাকে। তাই অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়াতে বাধ্য হয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বেঁধে রাখা হচ্ছে তাকে।

শাহানের মা রহিমা খাতুন বলেন, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করালেও বয়স বাড়ার সাথে সাথে অস্বাভাবিক আচরণ দেখা যায় তার মাঝে। বয়স যখন ছয় তখনই মানুষকে মারধর শুরু করে। বড় দূর্ঘটনাও ঘটিয়েছে। এজন্যই তাকে রাতে ঘরের ভিতর খুটির সঙ্গে এবং সকালে বাড়ির সামনে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে সেখানেই খাবার দেয়া হয়।

তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন,দীর্ঘ সময় ধরে হাতে পায়ে বেঁধে রেখেছি সন্তানকে। দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখায় হাত ক্ষত হয়ে গেছে। এই দৃশ্য মা হয়ে সহ্য করতে পারছি না।

এলাকাবাসী বলেন, উন্নত চিকিৎসা পেলে হয়তো কিছুটা স্বাভাবিক হতো শাহান। শিকলমুক্ত হতো তার জীবন৷

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০২:৪০:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫
Translate »

২৪ বছর শিকলে বন্দি শাহানের জীবন,মেলেনি উন্নত চিকিৎসা

আপডেট : ০২:৪০:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫

নেত্রকোণার দুর্গাপুরের ৩০ বছর বয়সী শাহান আলী। গত ২৪ বছর ধরে হাতে ও পায়ে শিকল ও দড়ির বাঁধনে বন্দি জীবন কাটাচ্ছে। তাকে ২৪ ঘন্টাই বেঁধে রাখতে হয়। তার যখন ৬ বছর বয়স তখন তার শরীরে খিঁচুনি দেখা দেয়,এরপর থেকেই সে মানসিক ভারসাম্যহীনতায় ভুগছে।

শাহান দুর্গাপুর উপজেলার চন্ডিগড় ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের থাপনারগাতি গ্রামের কৃষক আব্দুল মজিদ মিয়ার ছেলে। আর্থিক সংকটের কারণে তাকে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারেনি তার পরিবার। স্থানীয়রা বলছেন, উন্নত চিকিৎসা পেলে হয়তো শাহান আলী শিকলমুক্ত জীবনে ফিরতে পারবে।

দিনের বেলায় বসতঘরের পেছনে খোলা আকাশের নিচে গাছের সঙ্গে ও রাতে ঘরের ভিতর খুটির সঙ্গে হাতে ও পায়ে শিকল দিয়ে তাকে বেঁধে রাখা হয়। সেখানেই চলে তার খাওয়া-দাওয়া আর প্রশ্রাব-পায়খানা। এভাবেই বছরের পর বছর ধরে চলছে শাহানের বন্দি জীবন।

মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঘরের ভেতর দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে মানসিক ভারসাম্যহীন শাহানকে। তাকে সারাদিন ও রাতেও এভাবে বেঁধে রাখতে হয় বলে জানান বাবা আব্দুল মজিদ আলী। বাঁধন খুলে দিলে সে আক্রমণাত্মক আচরণ করে। সে নিজের শরীরে আঘাত করে,এমনকি ঘরের বেড়ার টিনেও জোরে ধাক্কা মারে।

শাহান আলীর বাবা আব্দুল মজিদ বলেন,জন্মের ৬ বছর বয়স হওয়ার পর থেকেই তার মধ্যে অস্বাভাবিক আচরণ শুরু হয়। সে সময় তাকে ছেড়ে দিলে ছোটাছুটি করে যাকে সামনে পেত তাকেই মারধর করতো। এলাকাবাসীর গরু,হাস,মুরগি, ছাগল সহ পোষা প্রাণীকে মারধর করাসহ পরিবারের লোকজনদের কাছে পেলে আঘাত করার চেষ্টা করতো। যতই বড় হচ্ছিলো অস্বাভাবিক আচার-আচরণ, মারধর দিন দিন বাড়তে থাকে। পরে সামর্থ্য মতো কিছুদিন চিকিৎসা চালালেও সুস্থ হয়নি শাহান আলী। তার আচরণের কোনো পরিবর্তন হয়নি। বরং দিন দিন বাড়তেই থাকে। তাই অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়াতে বাধ্য হয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বেঁধে রাখা হচ্ছে তাকে।

শাহানের মা রহিমা খাতুন বলেন, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করালেও বয়স বাড়ার সাথে সাথে অস্বাভাবিক আচরণ দেখা যায় তার মাঝে। বয়স যখন ছয় তখনই মানুষকে মারধর শুরু করে। বড় দূর্ঘটনাও ঘটিয়েছে। এজন্যই তাকে রাতে ঘরের ভিতর খুটির সঙ্গে এবং সকালে বাড়ির সামনে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে সেখানেই খাবার দেয়া হয়।

তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন,দীর্ঘ সময় ধরে হাতে পায়ে বেঁধে রেখেছি সন্তানকে। দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখায় হাত ক্ষত হয়ে গেছে। এই দৃশ্য মা হয়ে সহ্য করতে পারছি না।

এলাকাবাসী বলেন, উন্নত চিকিৎসা পেলে হয়তো কিছুটা স্বাভাবিক হতো শাহান। শিকলমুক্ত হতো তার জীবন৷