London ০৫:২৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

১৯ বলে ৬৬ রান নিয়ে সিপিএলে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন সেন্ট লুসিয়া

জয়ের জন্য ছয় ওভারে প্রয়োজন তখন ৭২ রান। মন্থর উইকেটে কাজটা মনে হচ্ছিল ভীষণ কঠিন। যে লক্ষ্য ক্রমশ চলে যাচ্ছিল নাগালের বাইরে, সেটিই নাগালে চলে এলো তিন ওভারের টর্নেডোতে। একই সঙ্গে ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (সিপিএল) দ্বাদশ আসরের ফাইনালে গায়ানা অ্যামাজন ওয়ারিয়র্সকে ৬ উইকেটে হারাল সেন্ট লুসিয়া কিংস।

গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় আজ সোমবার সকালে শেষ হওয়া ফাইনালে ঝড়ো ব্যাটিং দেখা গেছে কেবল দুই দলের ইনিংসের একদম শেষ ভাগে। ধীরগতির উইকেটে বল গ্রিপ করেছে বেশ। বড় রান তাই দেখা যায়নি। গত আসরের চ্যাম্পিয়ন গায়ানা নিজেদের মাঠে ২০ ওভারে তোলে ১৩৮ রান। রান তাড়ায় লম্বা সময় ধরে ধুঁকতে থাকা সেন্ট লুসিয়া তিন ওভারের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে ম্যাচ জিতে নেয় ১১ বল বাকি রেখে।টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ওভারেই ধাক্কা খায় গায়ানা। বাঁহাতি স্পিনার খ্যারি পিয়ের শূন্য রানেই ফেরান বিপজ্জনক রাহমানউল্লাহ গুরবাজকে। আরেক ওপেনার মইন আলি ১৪ রান করেন ২০ বল খেলে, তিনে নেমে শেই হোপ ২৪ বল খেলে করেন ২২। ১০ ওভারে গায়ানার রান ছিল মাত্র ৪৯। একটি ছক্কা মেরে ১১ রানেই বিদায় নেন শিমরন হেটমায়ার। ১৮ ওভার শেষে গায়ানার রান ছিল কেবল ১০২। শেষ দুই ওভারে ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস ও রোমারিও শেফার্ডের ঝড়ে রান আসে ৩৬। ১২ বলে ২৫ রানে অপরাজিত থাকেন প্রিটোরিয়াস, ৯ বলে ১৯ রানে শেফার্ড। সেন্ট লুসিয়ার আফগান বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার নুর আহমাদ তিন উইকেট নেন ১৯ রান দিয়ে।

মাঝবিরতিতে নাচ-গান-উৎসবের পর শুরু হয় সেন্ট লুসিয়ার রান তাড়া। গায়ানার মতো তারাও শুরুতে যেন পেছন পানেই হাঁটতে থাকে। অভিজ্ঞ জনসন চার্লস ফেরেন ১০ বলে ৭ রান করে, অধিনায়ক ফাফ দু প্লেসির ব্যাট থেকে আসে ২১ বলে ২১। ব্যর্থ হন টিম সাইফার্টও (১০ বলে ৩)। ১০ ওভারে সেন্ট লুসিয়ার রান ছিল ৪ উইকেটে ৫১। সেখান থেকে চেইস ও জোন্সের জুটি। শুরুতে একদমই মিইয়ে ছিল তাদের ব্যাট। পাঁচ ওভারে রান ওঠে কেবল ২২, বাউন্ডারি হয়নি একটিও।

এরপর ওই শেষের সাইক্লোন। টুর্নামেন্টজুড়ে দারুণ বোলিং করা মইন আলির ওপর চড়াও হন দুজন। ষোড়শ ওভারের প্রথম বলে ছক্কা মারেন জোন্স। পরের বলে নেন একটি রান। স্ট্রাইক পেয়ে পরের চার বলে চেইসের ব্যাট থেকে আসে দুটি ছক্কা দুটি চার। ওই ওভার থেকে আসে ২৭ রান। পরের ওভারে প্রিটোরিয়াসকে দুটি ছক্কা এক চারে ২০ রান তোলে জোন্স। শেষ নয় সেখানেই। পরের ওভারে শেফার্ডের বলে জোন্সের ছক্কা ও চারে ওভার থেকে আসে ১৮ রান। ৩১ বলে ৪৮ রানে অপরাজিত থাকেন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাটসম্যান জোন্স। গুরুত্বপূর্ণ একটি উইকেট নেওয়ার পর ২২ বলে অপাজিত ৩৯ রান করে ম্যান অব দা ম্যাচ রোস্টন চেইস।

১২ ম্যাচে ২২ উইকেটে নিয়ে ম্যান অব দা টুর্নামেন্ট নুর আহমাদ। আসরে ১৭ উইকেটের বেশি পাননি আর কেউ। ৪৫ বছর বয়সী লেগ স্পিনার ইমরান তাহিরের দারুণ অধিনায়কত্বে প্রাথমিক পর্বে শীর্ষে থাকলেও ফাইনালে পারল না গায়ানা। ৪০ বছর বয়সী দু প্লেসির নেতৃত্বে শিরোপার স্বাদ পেল সেন্ট লুসিয়া। ট্রফি নিয়ে গোটা দলের সঙ্গে আবেগময় উল্লাসে উদযাপনে মেতে উঠলেন সেন্ট লুসিয়ারই সন্তান কোচ স্যামি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

গায়ানা অ্যামাজন ওয়ারিয়র্স: ২০ ওভারে ১৩৮/৮ (মইন ১৪, গুরবাজ ০, হোপ ২২, হেটমায়ার ১১, পল ১২, সিনক্লেয়ার ১১, রিফার ১৩, শেফার্ড ১৯, প্রিটোরিয়াস ২৫*, মোটি ০*; পিয়ের ৪-০-২১-১, ফোর্ড ৩-০-১১-১, জোসেফ ৪-০-৩৫-১, নুর ৪-০-১৯-৩, চেইস ২-০-১৩-১, ভিসা ৩-০-৩৪-১)।

সেন্ট লুসিয়া কিংস: ১৮.১ ওভারে ১৩৯/৪ (দু প্লেসি ২১, চার্লস ৭, অগাস্তে ১৩, সাইফার্ট ৩, চেইস ৩৯*, জোন্স ৪৮*; মোটি ৪-০-২০-০, শেফার্ড ২.৫-০-২৯-১, সিনক্লেয়ার ১.১-০-৫-১, তাহির ৩.১-০-১৬-০, মইন ৪-০-৪১-০, প্রিটোরিয়াস ৩-০-২৫-১)।

ফল: সেন্ট লুসিয়া কিংস ৬ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দা ফাইনাল: রোস্টন চেইস।

ম্যান অব দা টুর্নামেন্ট: নুর আহমাদ।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ১২:৩৪:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ অক্টোবর ২০২৪
৪৩
Translate »

১৯ বলে ৬৬ রান নিয়ে সিপিএলে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন সেন্ট লুসিয়া

আপডেট : ১২:৩৪:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ অক্টোবর ২০২৪

জয়ের জন্য ছয় ওভারে প্রয়োজন তখন ৭২ রান। মন্থর উইকেটে কাজটা মনে হচ্ছিল ভীষণ কঠিন। যে লক্ষ্য ক্রমশ চলে যাচ্ছিল নাগালের বাইরে, সেটিই নাগালে চলে এলো তিন ওভারের টর্নেডোতে। একই সঙ্গে ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (সিপিএল) দ্বাদশ আসরের ফাইনালে গায়ানা অ্যামাজন ওয়ারিয়র্সকে ৬ উইকেটে হারাল সেন্ট লুসিয়া কিংস।

গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় আজ সোমবার সকালে শেষ হওয়া ফাইনালে ঝড়ো ব্যাটিং দেখা গেছে কেবল দুই দলের ইনিংসের একদম শেষ ভাগে। ধীরগতির উইকেটে বল গ্রিপ করেছে বেশ। বড় রান তাই দেখা যায়নি। গত আসরের চ্যাম্পিয়ন গায়ানা নিজেদের মাঠে ২০ ওভারে তোলে ১৩৮ রান। রান তাড়ায় লম্বা সময় ধরে ধুঁকতে থাকা সেন্ট লুসিয়া তিন ওভারের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে ম্যাচ জিতে নেয় ১১ বল বাকি রেখে।টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ওভারেই ধাক্কা খায় গায়ানা। বাঁহাতি স্পিনার খ্যারি পিয়ের শূন্য রানেই ফেরান বিপজ্জনক রাহমানউল্লাহ গুরবাজকে। আরেক ওপেনার মইন আলি ১৪ রান করেন ২০ বল খেলে, তিনে নেমে শেই হোপ ২৪ বল খেলে করেন ২২। ১০ ওভারে গায়ানার রান ছিল মাত্র ৪৯। একটি ছক্কা মেরে ১১ রানেই বিদায় নেন শিমরন হেটমায়ার। ১৮ ওভার শেষে গায়ানার রান ছিল কেবল ১০২। শেষ দুই ওভারে ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস ও রোমারিও শেফার্ডের ঝড়ে রান আসে ৩৬। ১২ বলে ২৫ রানে অপরাজিত থাকেন প্রিটোরিয়াস, ৯ বলে ১৯ রানে শেফার্ড। সেন্ট লুসিয়ার আফগান বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার নুর আহমাদ তিন উইকেট নেন ১৯ রান দিয়ে।

মাঝবিরতিতে নাচ-গান-উৎসবের পর শুরু হয় সেন্ট লুসিয়ার রান তাড়া। গায়ানার মতো তারাও শুরুতে যেন পেছন পানেই হাঁটতে থাকে। অভিজ্ঞ জনসন চার্লস ফেরেন ১০ বলে ৭ রান করে, অধিনায়ক ফাফ দু প্লেসির ব্যাট থেকে আসে ২১ বলে ২১। ব্যর্থ হন টিম সাইফার্টও (১০ বলে ৩)। ১০ ওভারে সেন্ট লুসিয়ার রান ছিল ৪ উইকেটে ৫১। সেখান থেকে চেইস ও জোন্সের জুটি। শুরুতে একদমই মিইয়ে ছিল তাদের ব্যাট। পাঁচ ওভারে রান ওঠে কেবল ২২, বাউন্ডারি হয়নি একটিও।

এরপর ওই শেষের সাইক্লোন। টুর্নামেন্টজুড়ে দারুণ বোলিং করা মইন আলির ওপর চড়াও হন দুজন। ষোড়শ ওভারের প্রথম বলে ছক্কা মারেন জোন্স। পরের বলে নেন একটি রান। স্ট্রাইক পেয়ে পরের চার বলে চেইসের ব্যাট থেকে আসে দুটি ছক্কা দুটি চার। ওই ওভার থেকে আসে ২৭ রান। পরের ওভারে প্রিটোরিয়াসকে দুটি ছক্কা এক চারে ২০ রান তোলে জোন্স। শেষ নয় সেখানেই। পরের ওভারে শেফার্ডের বলে জোন্সের ছক্কা ও চারে ওভার থেকে আসে ১৮ রান। ৩১ বলে ৪৮ রানে অপরাজিত থাকেন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাটসম্যান জোন্স। গুরুত্বপূর্ণ একটি উইকেট নেওয়ার পর ২২ বলে অপাজিত ৩৯ রান করে ম্যান অব দা ম্যাচ রোস্টন চেইস।

১২ ম্যাচে ২২ উইকেটে নিয়ে ম্যান অব দা টুর্নামেন্ট নুর আহমাদ। আসরে ১৭ উইকেটের বেশি পাননি আর কেউ। ৪৫ বছর বয়সী লেগ স্পিনার ইমরান তাহিরের দারুণ অধিনায়কত্বে প্রাথমিক পর্বে শীর্ষে থাকলেও ফাইনালে পারল না গায়ানা। ৪০ বছর বয়সী দু প্লেসির নেতৃত্বে শিরোপার স্বাদ পেল সেন্ট লুসিয়া। ট্রফি নিয়ে গোটা দলের সঙ্গে আবেগময় উল্লাসে উদযাপনে মেতে উঠলেন সেন্ট লুসিয়ারই সন্তান কোচ স্যামি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

গায়ানা অ্যামাজন ওয়ারিয়র্স: ২০ ওভারে ১৩৮/৮ (মইন ১৪, গুরবাজ ০, হোপ ২২, হেটমায়ার ১১, পল ১২, সিনক্লেয়ার ১১, রিফার ১৩, শেফার্ড ১৯, প্রিটোরিয়াস ২৫*, মোটি ০*; পিয়ের ৪-০-২১-১, ফোর্ড ৩-০-১১-১, জোসেফ ৪-০-৩৫-১, নুর ৪-০-১৯-৩, চেইস ২-০-১৩-১, ভিসা ৩-০-৩৪-১)।

সেন্ট লুসিয়া কিংস: ১৮.১ ওভারে ১৩৯/৪ (দু প্লেসি ২১, চার্লস ৭, অগাস্তে ১৩, সাইফার্ট ৩, চেইস ৩৯*, জোন্স ৪৮*; মোটি ৪-০-২০-০, শেফার্ড ২.৫-০-২৯-১, সিনক্লেয়ার ১.১-০-৫-১, তাহির ৩.১-০-১৬-০, মইন ৪-০-৪১-০, প্রিটোরিয়াস ৩-০-২৫-১)।

ফল: সেন্ট লুসিয়া কিংস ৬ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দা ফাইনাল: রোস্টন চেইস।

ম্যান অব দা টুর্নামেন্ট: নুর আহমাদ।