London ১০:০৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাফেজ কামরুল হাসান নিহতের চাঞ্চল্যকর ঘটনায় জড়িত দুই পেশাদার ছিনতাইকারী গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের ওপর ছিনতাইকারীদের হাতে হাফেজ কামরুল হাসান (২৩) নিহতের চাঞ্চল্যকর ঘটনায় দুই পেশাদার ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলো- ১। শাকিল (১৬) ও ২। আশরাফুল ইসলাম (১৭)।
আজ শনিবার (২১ ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রি.) সকাল ৬:৩০ ঘটিকায় যাত্রাবাড়ীর করাতিটোলা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
যাত্রাবাড়ী থানা সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রি. তারিখে হাফেজ কামরুল হাসান তার বন্ধুদের সাথে সাজেক যাওয়ার জন্য রায়েরবাগ বাসস্ট্যান্ড হতে সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডের উদ্দেশে রওনা করেন। তিনি রাত অনুমান ০৮.৪০ ঘটিকার দিকে যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের সায়েদাবাদ এলাকায় নেমে সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে যাওয়ার জন্য ফ্লাইওভার দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। তিনি ফ্লাইওভারের ওপর সাথী আবাসিক হোটেল বরাবর পৌঁছালে কয়েকজন ছিনতাইকারী তার গতিরোধ করে। ছিনতাইকারীরা দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তার কাছে থাকা নগদ অর্থ ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিতে চায়। ভিকটিম কামরুল হাসান ছিনতাইকারীদের বাঁধা দেওয়ায় তাদের সাথে কামরুল হাসানের ধস্তাধস্তি শুরু হয়। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ছিনতাইকারী রোহান তার হাতে থাকা ধারালো চাকু দিয়ে তার বুকে আঘাত করে। কামরুল হাসান ফ্লাইওভারের ওপর লুটিয়ে পড়লে ছিনতাইকারীরা তার কাছে থাকা একটি মোবাইল ফোন যার আনুমানিক মূল্য ১১ হাজার টাকা ও নগদ ৭ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় কামরুল হাসানকে ফ্লাইওভারের ওপর পড়ে থাকতে দেখে পথচারী জনৈক রুবেল চিকিৎসার জন্য তাকে দ্রুত ধলপুরের ইসলামিয়া হাসপাতালে নিয়ে যায়। সংবাদ পেয়ে কামরুল হাসানের বাবা দ্রুত হাসপাতালে ছুঁটে যান। পরবর্তীতে ইসলামিয়া হাসপাতাল থেকে ওইদিনই উন্নত চিকিৎসার জন্য মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় গতকাল (২০ ডিসেম্বর) কামরুল হাসানের বাবা মো: ইমাম হোসেন বাদী হয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু করেন।
যাত্রাবাড়ী থানা সূত্রে আরো জানা যায়, মামলাটি তদন্তকালে ঘটনাস্থলের আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় প্রথমে ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যদের সনাক্ত করা হয়। এরপর যাত্রাবাড়ী থানার একটি টিম আজ সকাল ৬:৩০ ঘটিকায় যাত্রাবাড়ীর করাতিটোলা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে শাকিল ও আশরাফুলকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। এ সময় গ্রেফতারকৃত দুই ছিনতাইকারী শাকিল ও আশরাফুল ছিনতাই ও হত্যাকান্ডের সময় যে পোশাক, ক্যাপ ও জুতা পরিহিত অবস্থায় ছিলো সেই পোশাক, ক্যাপ ও জুতা পরিহিত অবস্থাতেই তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, গ্রেফতারকৃতরা পেশাদার ছিনতাইকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারসহ আশেপাশের এলাকায় পথচারীদের নিকট থেকে মোবাইল ফোন, নগদ অর্থ ও মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনতাই করতো। তারা হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার কথা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে। তারা মূলত মাদক সেবনের অর্থ সংগ্রহের জন্য ছিনতাই করতো। ঘটনার দিন গ্রেফতারকৃত শাকিল ও আশরাফুলসহ পলাতক আপন (১৫), রোহান (১৭) ও সিফাত (১৫) ভিকটিম কামরুল হাসানের নিকট থেকে মোবাইল ও নগদ অর্থ ছিনিয়ে নেয়ার সময় ভিকটিম বাঁধা দেয়ায় তার সাথে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে রোহান চাকু দিয়ে তার বুকে আঘাত করে। অতঃপর ভিকটিমের নিকট থেকে মোবাইল ফোন ও নগদ অর্থ ছিনিয়ে নিয়ে তারা পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। ছিনতাইকারী চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ১২:৪৭:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪
১২
Translate »

হাফেজ কামরুল হাসান নিহতের চাঞ্চল্যকর ঘটনায় জড়িত দুই পেশাদার ছিনতাইকারী গ্রেফতার

আপডেট : ১২:৪৭:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের ওপর ছিনতাইকারীদের হাতে হাফেজ কামরুল হাসান (২৩) নিহতের চাঞ্চল্যকর ঘটনায় দুই পেশাদার ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলো- ১। শাকিল (১৬) ও ২। আশরাফুল ইসলাম (১৭)।
আজ শনিবার (২১ ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রি.) সকাল ৬:৩০ ঘটিকায় যাত্রাবাড়ীর করাতিটোলা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
যাত্রাবাড়ী থানা সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রি. তারিখে হাফেজ কামরুল হাসান তার বন্ধুদের সাথে সাজেক যাওয়ার জন্য রায়েরবাগ বাসস্ট্যান্ড হতে সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডের উদ্দেশে রওনা করেন। তিনি রাত অনুমান ০৮.৪০ ঘটিকার দিকে যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের সায়েদাবাদ এলাকায় নেমে সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে যাওয়ার জন্য ফ্লাইওভার দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। তিনি ফ্লাইওভারের ওপর সাথী আবাসিক হোটেল বরাবর পৌঁছালে কয়েকজন ছিনতাইকারী তার গতিরোধ করে। ছিনতাইকারীরা দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তার কাছে থাকা নগদ অর্থ ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিতে চায়। ভিকটিম কামরুল হাসান ছিনতাইকারীদের বাঁধা দেওয়ায় তাদের সাথে কামরুল হাসানের ধস্তাধস্তি শুরু হয়। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ছিনতাইকারী রোহান তার হাতে থাকা ধারালো চাকু দিয়ে তার বুকে আঘাত করে। কামরুল হাসান ফ্লাইওভারের ওপর লুটিয়ে পড়লে ছিনতাইকারীরা তার কাছে থাকা একটি মোবাইল ফোন যার আনুমানিক মূল্য ১১ হাজার টাকা ও নগদ ৭ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় কামরুল হাসানকে ফ্লাইওভারের ওপর পড়ে থাকতে দেখে পথচারী জনৈক রুবেল চিকিৎসার জন্য তাকে দ্রুত ধলপুরের ইসলামিয়া হাসপাতালে নিয়ে যায়। সংবাদ পেয়ে কামরুল হাসানের বাবা দ্রুত হাসপাতালে ছুঁটে যান। পরবর্তীতে ইসলামিয়া হাসপাতাল থেকে ওইদিনই উন্নত চিকিৎসার জন্য মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় গতকাল (২০ ডিসেম্বর) কামরুল হাসানের বাবা মো: ইমাম হোসেন বাদী হয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু করেন।
যাত্রাবাড়ী থানা সূত্রে আরো জানা যায়, মামলাটি তদন্তকালে ঘটনাস্থলের আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় প্রথমে ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যদের সনাক্ত করা হয়। এরপর যাত্রাবাড়ী থানার একটি টিম আজ সকাল ৬:৩০ ঘটিকায় যাত্রাবাড়ীর করাতিটোলা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে শাকিল ও আশরাফুলকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। এ সময় গ্রেফতারকৃত দুই ছিনতাইকারী শাকিল ও আশরাফুল ছিনতাই ও হত্যাকান্ডের সময় যে পোশাক, ক্যাপ ও জুতা পরিহিত অবস্থায় ছিলো সেই পোশাক, ক্যাপ ও জুতা পরিহিত অবস্থাতেই তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, গ্রেফতারকৃতরা পেশাদার ছিনতাইকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারসহ আশেপাশের এলাকায় পথচারীদের নিকট থেকে মোবাইল ফোন, নগদ অর্থ ও মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনতাই করতো। তারা হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার কথা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে। তারা মূলত মাদক সেবনের অর্থ সংগ্রহের জন্য ছিনতাই করতো। ঘটনার দিন গ্রেফতারকৃত শাকিল ও আশরাফুলসহ পলাতক আপন (১৫), রোহান (১৭) ও সিফাত (১৫) ভিকটিম কামরুল হাসানের নিকট থেকে মোবাইল ও নগদ অর্থ ছিনিয়ে নেয়ার সময় ভিকটিম বাঁধা দেয়ায় তার সাথে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে রোহান চাকু দিয়ে তার বুকে আঘাত করে। অতঃপর ভিকটিমের নিকট থেকে মোবাইল ফোন ও নগদ অর্থ ছিনিয়ে নিয়ে তারা পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। ছিনতাইকারী চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।