স্পেনে মাত্র ৮ ঘণ্টায় এক বছরের সমান বৃষ্টি, ৫১ জনের মৃত্যু
প্রবল বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে ইউরোপের দেশ স্পেনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল। এতে ওই অঞ্চলে আকস্মিক বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে সেখানে অন্তত ৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এখনও বহু লোক নিখোঁজ থাকায় উদ্ধার তৎপরতা চলছে। ভারি বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টিতে দেশটির একাধিক অঞ্চলে দ্রুত বন্যার সৃষ্টি হয়েছে।ভ্যালেন্সিয়ার কাছে চিভা শহরে মাত্র আট ঘণ্টায় এক বছরের সমান বৃষ্টি হয়েছে।
স্পেনের আবহাওয়া সংস্থা এএমইটির তথ্যানুসারে, মঙ্গলবার মাত্র আট ঘণ্টায় সেখানে ৪৯১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, যা এক বছরের গড় বৃষ্টিপাতের সমান।
এদিকে স্থানীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, এখনই মোট মৃত্যুর সংখ্যা নির্ধারণ করা ‘অসম্ভব’। মারাত্মক বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টির কারণে গোটা দেশজুড়েই বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। অনেক মানুষ এখনও নিখোঁজ থাকায় এক হাজারেরও বেশি সেনা সদস্য উদ্ধার অভিযানে সহায়তার জন্য মোতায়েন করা হয়েছে।
জরুরি সেবা কর্মীরা কিছু অঞ্চলে পৌঁছতে হিমশিম খাচ্ছেন। তারা ড্রোন ব্যবহার করে ক্ষতিগ্রস্ত লেতুর পৌর এলাকায় নিখোঁজদের সন্ধান করছেন বলে স্প্যানিশ সরকারি টেলিভিশন স্টেশন টিভিইকে জানিয়েছেন স্থানীয় কর্মকর্তা মিলাগ্রোস টোলন। তিনি বলেন, প্রথম অগ্রাধিকার নিখোঁজদের খুঁজে বের করা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, বন্যার পানির কারণে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে, সেতু ভেঙে পড়ছে, রাস্তা দিয়ে গাড়িগুলো ভেসে যাচ্ছে।
কিছু ভিডিওতে মানুষকে গাছ আঁকড়ে ধরে থাকতে দেখা গেছে, যাতে তারা স্রোতে ভেসে না যায়। এছাড়া স্থানীয় রেডিও ও টিভি স্টেশনগুলোতে শত শত ফোন এসেছে, যেগুলোতে বন্যার পানিতে আটকে পড়া বা প্রিয়জনদের খোঁজ পাওয়ার জন্য সাহায্য চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ভ্যালেন্সিয়ার অনেক মানুষ ট্রাক, গাড়ি, ছাদ ও সেতুতে উদ্ধারকারীদের অপেক্ষায় রাত কাটিয়েছে।
ভ্যালেন্সিয়া অঞ্চলে লাল সতর্কতা ও আন্দালুসিয়ার কিছু অংশে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে এএমইটি। সংস্থাটি জানায়, ভ্যালেন্সিয়া অঞ্চলে এত প্রবল বৃষ্টির কারণ ছিল উচ্চস্তরে বিচ্ছিন্ন নিম্নচাপ। এতে বায়ুমণ্ডলের ওপরের স্তরে ঠাণ্ডা বাতাস জমে থাকে, যার নিচে উষ্ণ ও আর্দ্র বাতাস প্রবাহিত হলে আবহাওয়া খুবই অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। ফলে গভীর মেঘ ও আরো প্রবল বৃষ্টিপাতের সৃষ্টি হয়।
বন্যায় পরিবহন ব্যবস্থায়ও ব্যাঘাত ঘটেছে। ভ্যালেন্সিয়ায় নামার কথা ছিল— এমন বেশ কয়েকটি ফ্লাইট অন্য শহরে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং কিছু ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। ভ্যালেন্সিয়া অঞ্চলে সব ট্রেনসেবা স্থগিত বলে জানিয়েছে জাতীয় রেল অবকাঠামো পরিচালনা সংস্থা এডিআইএফ। অন্যদিকে ভ্যালেন্সিয়া সিটি হল জানিয়েছে, বুধবার সব স্কুল ও খেলাধুলার অনুষ্ঠান স্থগিত থাকবে এবং পার্কগুলোও বন্ধ থাকবে। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, স্কাই নিউজ, বিবিসি