London ০৩:২৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৪ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্কুল-কলেজ থেকে বাদ পড়ছে শেখ হাসিনার নাম

অনলাইন ডেস্ক

শেখ হাসিনা ও তার পরিবারে নামে থাকা ১৩টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এবার শেখ হাসিনার নামে থাকা দেশের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, ইনস্টিটিউশন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের নামও পরিবর্তন করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। শুধু শেখ হাসিনা নয়, জুলাই গণহত্যার সঙ্গে ‍যুক্ত ব্যক্তিদের নামে থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামও পরিবর্তন করা হবে। শিক্ষা ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্তের আলোকে সারাদেশে আওয়ামী লীগের নেতাদের নামে থাকা সব স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসার তালিকা প্রস্তুত হচ্ছে। জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি এ নিয়ে কাজ করছে। তারা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নামে থাকা প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রস্তুত করবে এবং নাম পরিবর্তনের কারণসহ প্রস্তাবনা পাঠাবে। পরে নীতিমালার আলোকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করা হবে।

গত অক্টোবর মাসে উপদেষ্টা পরিষদে সিদ্ধান্ত হয় যে, গণহত্যাকারী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের নামে থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করা হবে। একই সঙ্গে তার দলের নেতাদের নামে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেগুলোর নামও পরিবর্তন করা হবে। সেই আলোকে গত ১২ জানুয়ারি উপদেষ্টা পরিষদে শেখ মুজিবুর রহমান ও ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা দেশের ১৩টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নতুন নামকরণ করা হবে এলাকা ও বাংলাদেশের নাম অনুসারে। সেই ধারাবাহিকতায় এবার প্রাথমিক-মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার নামও পরিবর্তনের কাজ শুরু করেছে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়।

dhakapost

জানা গেছে, সারাদেশে গণহত্যার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের নামে থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরি করতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়গুলো। উচ্চ শিক্ষা ও মাধ্যমিক বিভাগ, কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগ, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে তালিকা সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে। স্ব স্ব দপ্তরগুলো ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকদের চিঠি দিয়েছে। কোথাও কোথাও ডিসিরাও কাজ শুরু করেছেন। সব শেষ করে মার্চ মাসের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর প্রস্তুতি রয়েছে ডিসিদের।

উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্তের আলোকে সারাদেশে আওয়ামী লীগের নেতাদের নামে থাকা সব স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসার তালিকা প্রস্তুত হচ্ছে। জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি এ নিয়ে কাজ করছে। তারা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নামে থাকা প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রস্তুত করবে এবং নাম পরিবর্তনের কারণসহ প্রস্তাবনা পাঠাবে। পরে নীতিমালার আলোকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করা হবে

দপ্তরগুলোর সূত্র মতে, তালিকা করার ক্ষেত্রে পতিত সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে তার নামে থাকা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের নামও পরিবর্তন করা হতে পারে। এ ছাড়া বিভিন্ন ইনস্টিটিউশন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান থাকলে সেগুলোর নামও পরিবর্তন করা হবে। এরপর আওয়ামী লীগের শীর্ষপর্যায়ের নেতা, মন্ত্রী বা তাদের পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ধরা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিদ্যালয়) মাসুদ আকতার খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‍উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্তের আলোকে বিষয়টি বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছে তার মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে তালিকা করার জন্য ডিসি ও ইউএনওদের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি কাজ ‍শুরু করেছে।

যেভাবে তৈরি হবে তালিকা

জেলা ও উপজেলাপর্যায়ে আওয়ামী লীগের এমপি, মন্ত্রী ও স্থানীয়পর্যায়ের শীর্ষনেতাদের নামে থাকা স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার তালিকা প্রস্তুত করতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক- এডিসি (শিক্ষা)। তার সঙ্গে কাজ করবেন জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার। একইভাবে উপজেলাপর্যায়ে ইউএনও’র নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটিতে শিক্ষা অফিসার, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও থাকবেন। তারা ওই জেলায় ৫ আগস্টের আগে যেসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে মামলা হয়েছে সেগুলো চিহ্নিত করে কমিটির কাছে উপস্থাপন করবে। কমিটি সব বিষয়ে যাচাই-বাছাই করে প্রতিষ্ঠানের পাশে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অভিযোগ-মামলার তথ্য, কী কারণে নাম পরিবর্তন করতে হবে তার ব্যাখ্যাসহ পরিবর্তিত নাম কী হতে পারে— এমন সব তথ্য দিয়ে প্রতিবেদন পাঠাবে।

dhakapost

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এক জেলা প্রশাসক নাম প্রকাশ না করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেয়ে ইতোমধ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি। আশা করি ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাঠাতে পারব।’ শুধু মামলা থাকলেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করা হবে, নাকি অন্য কোনো বিষয় এখানে থাকবে— বিষয়টি স্পষ্ট করেননি তিনি। বলেন, ‘এমন কোনো নীতিমালা বা নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। ফলে এ কাজ করতে আমাদের নানা বাধা ও বিতর্কের মুখে পড়তে হবে। শুধু তা-ই নয়, তালিকা করতে স্থানীয়পর্যায় থেকে হয়তো বাধা আসতে পারে।’

তালিকা করার ক্ষেত্রে পতিত সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে তার নামে থাকা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের নামও পরিবর্তন করা হতে পারে। এ ছাড়া বিভিন্ন ইনস্টিটিউশন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান থাকলে সেগুলোর নামও পরিবর্তন করা হবে। এরপর আওয়ামী লীগের শীর্ষপর্যায়ের নেতা, মন্ত্রী বা তাদের পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ধরা হবে

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত সচিব (বিদ্যালয়) মাসুদ আকতার খান বলেন, ‘কোনো ঝামেলা হবে না। ডিসি শুধু স্থানীয়পর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করবেন। সেখানে তিনি ওই ব্যক্তির নামে কীভাবে নামকরণ হয়েছে, এখন কেন বাদ দেওয়ার সুপারিশ করছেন— সেই ব্যাখ্যা দেবেন। সেখানে তিনি হত্যা মামলা থাকলে সেই নম্বর ও বিবরণ এবং জুলাই-আগস্ট মাসে তার ভূমিকা কী ছিল— বিষয়গুলো প্রতিবেদন আকারে পাঠাবেন। এ বিষয়ে চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে মন্ত্রণালয়।’

‘এক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় একক কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না। এখানে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি কাজ করবে। এ ছাড়া নাম পরিবর্তনের জন্য মন্ত্রণালয়ের একটি নীতিমালা রয়েছে। সেই নীতিমালার আলোকেই নাম পরিবর্তন হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব হুমায়ুন কবির ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমি নতুন যোগদান করেছি। এমন একটি সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানি। কিন্তু চিঠি পাঠানোর বিষয়ে এ মুহূর্তে কিছু বলতে পারব না।’

শেখ হাসিনার নামে যত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

দেশের বিভিন্ন স্থানে শেখ হাসিনার নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। তার নামে দেশের বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০টি মেয়েদের হল রয়েছে। সেগুলো হলো- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জননেত্রী শেখ হাসিনা হল; জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হল; শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হল; বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়- বুটেক্সে শেখ হাসিনা হল; বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হল; কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল; শেখ হাসিনা হল, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়; যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হল, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হল।

dhakapost

শেখ হাসিনার নামে দেশে সাতটি কলেজ রয়েছে। সেগুলো হলো- শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ, হবিগঞ্জ; শেখ হাসিনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, মেলান্দহ, জামালপুর; সরকারি শেখ হাসিনা একাডেমি অ্যান্ড উইমেন্স কলেজ, ডাসার, মাদারীপুর; শেখ হাসিনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, গোপালগঞ্জ; শেখ হাসিনা পদ্ম পুকুর ডিগ্রি কলেজ, ঝিনাইদহ; শেখ হাসিনা একাডেমি, পিরোজপুর এবং শেখ হাসিনা উচ্চবিদ্যালয় মাধবপুর, আতাইকুলা, পাবনা।

তার নামে ‍দুটি ইনস্টিটিউট রয়েছে। একটি শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল টেকনোলজি, ইসলামপুর, জামালপুর এবং অন্যটি শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট, চানখারপুল, ঢাকা।

এ ছাড়া তার নামে শেখ হাসিনা জাতীয় যুবকেন্দ্র ও শেখ হাসিনা পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, মেলান্দহ, জামালপুর— দুটি দপ্তর রয়েছে। রয়েছে শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, পূর্বাচল, ঢাকা এবং মানিকগঞ্জ শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। জামালপুরে শেখ হাসিনার নামে একটি সাংস্কৃতিক পল্লীও রয়েছে।

দেশের দুটি সড়কের নামকরণও করা হয়েছে তারা নাসে। সেগুলো হলো— মাদারীপুর-শরীয়তপুরে শেখ হাসিনা মহাসড়ক এবং চট্টগ্রামে শেখ হাসিনা রোড। একটি সেনানিবাস ও কক্সবাজারে নৌবাহিনীর একটি জাহাজের নামকরণও করা হয়েছে তার নামে।

তার নামে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) শেখ হাসিনা কৃষি ইনস্টিটিউট। নৌবাহিনীর জাহাজ বিএনএস শেখ হাসিনাও তার নামে নামকরণ করা।

dhakapost

নীতিমালায় যা আছে

২০১৭ সালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তনের জন্য আগের নীতিমালাকে আরও যুগোপযোগী করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নীতিমালায় প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তনে গভার্নিং বডির অনুমোদন এবং দুটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, নাম পরিবর্তনে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য (স্কুল, কলেজ ও ডিগ্রির ক্ষেত্রে) জেলা প্রশাসককে (ডিসি) আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন, মাদ্রাসার ক্ষেত্রে মাদ্রাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে আহ্বায়ক করে পৃথক কমিটি গঠন এবং উক্ত কমিটি প্রাথমিকপর্যায়ে যাচাই-বাছাই করে উচ্চ কমিটির কাছে সুপারিশ করবে।

অপরদিকে, চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের (স্থায়ী কমিটি) বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শাখার অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের পৃথক কমিটি গঠন এবং এ কমিটি চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রাথমিক স্কুলের নাম পরিবর্তনের জন্য সর্বশেষ ২০২৩ সালে নতুন একটি নীতিমালা করা হয়। সেখানে বলা হয়, বিদ্যালয়ের নাম শ্রুতিকটু ও নেতিবাচক এবং শিশুমনে ও জনমনে বিরূপ প্রভাব ফেলছে— এমন বিবেচিত হলে তা বদলানো যাবে। বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্ত ও সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নামে বিদ্যালয়ের নামকরণ হয়ে থাকলে বা আদালতের বিশেষ কোনো নির্দেশনা থাকলে বদলানো যাবে। ভূমিকম্প, নদীভাঙনসহ নানাবিধ কারণে বিদ্যালয়ের নামের দ্বৈততা বা জটিলতা দেখা দিলে নাম বদলানো যাবে।

নতুন নামকরণের ক্ষেত্রে এলাকায় শিক্ষাক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখা সংশ্লিষ্ট এলাকার ব্যক্তি বা বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে নামকরণ করা যাবে। তবে রাষ্ট্রবিরোধী, ফৌজদারি, দেওয়ানি ও দুর্নীতির অপরাধে অভিযুক্ত বা সাজাপ্রাপ্তদের নামে বিদ্যালয়ের নামকরণ করা যাবে না। এ ছাড়া ক্ষেত্রবিশেষে এলাকার নাম অনুসারেও নামকরণ করা যাবে। স্থানীয় ইতিহাস, সংস্কৃতি ও কৃষ্টির সঙ্গে সামঞ্জস্যতাসাপেক্ষে নাম পরিবর্তন করা যাবে।

প্রাথমিকের নাম পরিবর্তনের জন্য উপজেলায় ইউএনও’র নেতৃত্বে ১১ সদস্যের কমিটি নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব পাঠাবে। কমিটিতে সদস্য সচিব হিসেবে থাকবেন সংশ্লিষ্ট উপজেলা শিক্ষা অফিসার। একইভাবে জেলাপর্যায়ে ডিসির নেতৃত্বে গঠিত কমিটির সদস্য সচিব থাকবেন সংশ্লিষ্ট জেলার শিক্ষা অফিসার। সিটি কর্পোরেশনপর্যায়ে কমিটির প্রধান থাকবেন বিভাগীয় কমিশনার। ১৪ সদস্যের কমিটিতে সদস্য সচিব থাকবেন জেলা শিক্ষা অফিসার।

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৬:১৮:২৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
Translate »

স্কুল-কলেজ থেকে বাদ পড়ছে শেখ হাসিনার নাম

আপডেট : ০৬:১৮:২৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

শেখ হাসিনা ও তার পরিবারে নামে থাকা ১৩টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এবার শেখ হাসিনার নামে থাকা দেশের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, ইনস্টিটিউশন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের নামও পরিবর্তন করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। শুধু শেখ হাসিনা নয়, জুলাই গণহত্যার সঙ্গে ‍যুক্ত ব্যক্তিদের নামে থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামও পরিবর্তন করা হবে। শিক্ষা ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্তের আলোকে সারাদেশে আওয়ামী লীগের নেতাদের নামে থাকা সব স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসার তালিকা প্রস্তুত হচ্ছে। জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি এ নিয়ে কাজ করছে। তারা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নামে থাকা প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রস্তুত করবে এবং নাম পরিবর্তনের কারণসহ প্রস্তাবনা পাঠাবে। পরে নীতিমালার আলোকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করা হবে।

গত অক্টোবর মাসে উপদেষ্টা পরিষদে সিদ্ধান্ত হয় যে, গণহত্যাকারী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের নামে থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করা হবে। একই সঙ্গে তার দলের নেতাদের নামে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেগুলোর নামও পরিবর্তন করা হবে। সেই আলোকে গত ১২ জানুয়ারি উপদেষ্টা পরিষদে শেখ মুজিবুর রহমান ও ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা দেশের ১৩টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নতুন নামকরণ করা হবে এলাকা ও বাংলাদেশের নাম অনুসারে। সেই ধারাবাহিকতায় এবার প্রাথমিক-মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার নামও পরিবর্তনের কাজ শুরু করেছে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়।

dhakapost

জানা গেছে, সারাদেশে গণহত্যার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের নামে থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরি করতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়গুলো। উচ্চ শিক্ষা ও মাধ্যমিক বিভাগ, কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগ, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে তালিকা সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে। স্ব স্ব দপ্তরগুলো ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকদের চিঠি দিয়েছে। কোথাও কোথাও ডিসিরাও কাজ শুরু করেছেন। সব শেষ করে মার্চ মাসের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর প্রস্তুতি রয়েছে ডিসিদের।

উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্তের আলোকে সারাদেশে আওয়ামী লীগের নেতাদের নামে থাকা সব স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসার তালিকা প্রস্তুত হচ্ছে। জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি এ নিয়ে কাজ করছে। তারা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নামে থাকা প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রস্তুত করবে এবং নাম পরিবর্তনের কারণসহ প্রস্তাবনা পাঠাবে। পরে নীতিমালার আলোকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করা হবে

দপ্তরগুলোর সূত্র মতে, তালিকা করার ক্ষেত্রে পতিত সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে তার নামে থাকা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের নামও পরিবর্তন করা হতে পারে। এ ছাড়া বিভিন্ন ইনস্টিটিউশন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান থাকলে সেগুলোর নামও পরিবর্তন করা হবে। এরপর আওয়ামী লীগের শীর্ষপর্যায়ের নেতা, মন্ত্রী বা তাদের পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ধরা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিদ্যালয়) মাসুদ আকতার খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‍উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্তের আলোকে বিষয়টি বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছে তার মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে তালিকা করার জন্য ডিসি ও ইউএনওদের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি কাজ ‍শুরু করেছে।

যেভাবে তৈরি হবে তালিকা

জেলা ও উপজেলাপর্যায়ে আওয়ামী লীগের এমপি, মন্ত্রী ও স্থানীয়পর্যায়ের শীর্ষনেতাদের নামে থাকা স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার তালিকা প্রস্তুত করতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক- এডিসি (শিক্ষা)। তার সঙ্গে কাজ করবেন জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার। একইভাবে উপজেলাপর্যায়ে ইউএনও’র নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটিতে শিক্ষা অফিসার, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও থাকবেন। তারা ওই জেলায় ৫ আগস্টের আগে যেসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে মামলা হয়েছে সেগুলো চিহ্নিত করে কমিটির কাছে উপস্থাপন করবে। কমিটি সব বিষয়ে যাচাই-বাছাই করে প্রতিষ্ঠানের পাশে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অভিযোগ-মামলার তথ্য, কী কারণে নাম পরিবর্তন করতে হবে তার ব্যাখ্যাসহ পরিবর্তিত নাম কী হতে পারে— এমন সব তথ্য দিয়ে প্রতিবেদন পাঠাবে।

dhakapost

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এক জেলা প্রশাসক নাম প্রকাশ না করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেয়ে ইতোমধ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি। আশা করি ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাঠাতে পারব।’ শুধু মামলা থাকলেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করা হবে, নাকি অন্য কোনো বিষয় এখানে থাকবে— বিষয়টি স্পষ্ট করেননি তিনি। বলেন, ‘এমন কোনো নীতিমালা বা নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। ফলে এ কাজ করতে আমাদের নানা বাধা ও বিতর্কের মুখে পড়তে হবে। শুধু তা-ই নয়, তালিকা করতে স্থানীয়পর্যায় থেকে হয়তো বাধা আসতে পারে।’

তালিকা করার ক্ষেত্রে পতিত সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে তার নামে থাকা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের নামও পরিবর্তন করা হতে পারে। এ ছাড়া বিভিন্ন ইনস্টিটিউশন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান থাকলে সেগুলোর নামও পরিবর্তন করা হবে। এরপর আওয়ামী লীগের শীর্ষপর্যায়ের নেতা, মন্ত্রী বা তাদের পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ধরা হবে

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত সচিব (বিদ্যালয়) মাসুদ আকতার খান বলেন, ‘কোনো ঝামেলা হবে না। ডিসি শুধু স্থানীয়পর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করবেন। সেখানে তিনি ওই ব্যক্তির নামে কীভাবে নামকরণ হয়েছে, এখন কেন বাদ দেওয়ার সুপারিশ করছেন— সেই ব্যাখ্যা দেবেন। সেখানে তিনি হত্যা মামলা থাকলে সেই নম্বর ও বিবরণ এবং জুলাই-আগস্ট মাসে তার ভূমিকা কী ছিল— বিষয়গুলো প্রতিবেদন আকারে পাঠাবেন। এ বিষয়ে চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে মন্ত্রণালয়।’

‘এক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় একক কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না। এখানে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি কাজ করবে। এ ছাড়া নাম পরিবর্তনের জন্য মন্ত্রণালয়ের একটি নীতিমালা রয়েছে। সেই নীতিমালার আলোকেই নাম পরিবর্তন হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব হুমায়ুন কবির ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমি নতুন যোগদান করেছি। এমন একটি সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানি। কিন্তু চিঠি পাঠানোর বিষয়ে এ মুহূর্তে কিছু বলতে পারব না।’

শেখ হাসিনার নামে যত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

দেশের বিভিন্ন স্থানে শেখ হাসিনার নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। তার নামে দেশের বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০টি মেয়েদের হল রয়েছে। সেগুলো হলো- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জননেত্রী শেখ হাসিনা হল; জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হল; শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হল; বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়- বুটেক্সে শেখ হাসিনা হল; বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হল; কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল; শেখ হাসিনা হল, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়; যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হল, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হল।

dhakapost

শেখ হাসিনার নামে দেশে সাতটি কলেজ রয়েছে। সেগুলো হলো- শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ, হবিগঞ্জ; শেখ হাসিনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, মেলান্দহ, জামালপুর; সরকারি শেখ হাসিনা একাডেমি অ্যান্ড উইমেন্স কলেজ, ডাসার, মাদারীপুর; শেখ হাসিনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, গোপালগঞ্জ; শেখ হাসিনা পদ্ম পুকুর ডিগ্রি কলেজ, ঝিনাইদহ; শেখ হাসিনা একাডেমি, পিরোজপুর এবং শেখ হাসিনা উচ্চবিদ্যালয় মাধবপুর, আতাইকুলা, পাবনা।

তার নামে ‍দুটি ইনস্টিটিউট রয়েছে। একটি শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল টেকনোলজি, ইসলামপুর, জামালপুর এবং অন্যটি শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট, চানখারপুল, ঢাকা।

এ ছাড়া তার নামে শেখ হাসিনা জাতীয় যুবকেন্দ্র ও শেখ হাসিনা পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, মেলান্দহ, জামালপুর— দুটি দপ্তর রয়েছে। রয়েছে শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, পূর্বাচল, ঢাকা এবং মানিকগঞ্জ শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। জামালপুরে শেখ হাসিনার নামে একটি সাংস্কৃতিক পল্লীও রয়েছে।

দেশের দুটি সড়কের নামকরণও করা হয়েছে তারা নাসে। সেগুলো হলো— মাদারীপুর-শরীয়তপুরে শেখ হাসিনা মহাসড়ক এবং চট্টগ্রামে শেখ হাসিনা রোড। একটি সেনানিবাস ও কক্সবাজারে নৌবাহিনীর একটি জাহাজের নামকরণও করা হয়েছে তার নামে।

তার নামে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) শেখ হাসিনা কৃষি ইনস্টিটিউট। নৌবাহিনীর জাহাজ বিএনএস শেখ হাসিনাও তার নামে নামকরণ করা।

dhakapost

নীতিমালায় যা আছে

২০১৭ সালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তনের জন্য আগের নীতিমালাকে আরও যুগোপযোগী করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নীতিমালায় প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তনে গভার্নিং বডির অনুমোদন এবং দুটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, নাম পরিবর্তনে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য (স্কুল, কলেজ ও ডিগ্রির ক্ষেত্রে) জেলা প্রশাসককে (ডিসি) আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন, মাদ্রাসার ক্ষেত্রে মাদ্রাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে আহ্বায়ক করে পৃথক কমিটি গঠন এবং উক্ত কমিটি প্রাথমিকপর্যায়ে যাচাই-বাছাই করে উচ্চ কমিটির কাছে সুপারিশ করবে।

অপরদিকে, চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের (স্থায়ী কমিটি) বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শাখার অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের পৃথক কমিটি গঠন এবং এ কমিটি চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রাথমিক স্কুলের নাম পরিবর্তনের জন্য সর্বশেষ ২০২৩ সালে নতুন একটি নীতিমালা করা হয়। সেখানে বলা হয়, বিদ্যালয়ের নাম শ্রুতিকটু ও নেতিবাচক এবং শিশুমনে ও জনমনে বিরূপ প্রভাব ফেলছে— এমন বিবেচিত হলে তা বদলানো যাবে। বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্ত ও সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নামে বিদ্যালয়ের নামকরণ হয়ে থাকলে বা আদালতের বিশেষ কোনো নির্দেশনা থাকলে বদলানো যাবে। ভূমিকম্প, নদীভাঙনসহ নানাবিধ কারণে বিদ্যালয়ের নামের দ্বৈততা বা জটিলতা দেখা দিলে নাম বদলানো যাবে।

নতুন নামকরণের ক্ষেত্রে এলাকায় শিক্ষাক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখা সংশ্লিষ্ট এলাকার ব্যক্তি বা বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে নামকরণ করা যাবে। তবে রাষ্ট্রবিরোধী, ফৌজদারি, দেওয়ানি ও দুর্নীতির অপরাধে অভিযুক্ত বা সাজাপ্রাপ্তদের নামে বিদ্যালয়ের নামকরণ করা যাবে না। এ ছাড়া ক্ষেত্রবিশেষে এলাকার নাম অনুসারেও নামকরণ করা যাবে। স্থানীয় ইতিহাস, সংস্কৃতি ও কৃষ্টির সঙ্গে সামঞ্জস্যতাসাপেক্ষে নাম পরিবর্তন করা যাবে।

প্রাথমিকের নাম পরিবর্তনের জন্য উপজেলায় ইউএনও’র নেতৃত্বে ১১ সদস্যের কমিটি নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব পাঠাবে। কমিটিতে সদস্য সচিব হিসেবে থাকবেন সংশ্লিষ্ট উপজেলা শিক্ষা অফিসার। একইভাবে জেলাপর্যায়ে ডিসির নেতৃত্বে গঠিত কমিটির সদস্য সচিব থাকবেন সংশ্লিষ্ট জেলার শিক্ষা অফিসার। সিটি কর্পোরেশনপর্যায়ে কমিটির প্রধান থাকবেন বিভাগীয় কমিশনার। ১৪ সদস্যের কমিটিতে সদস্য সচিব থাকবেন জেলা শিক্ষা অফিসার।