সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ফরিদপুরের ১০ গ্রামে আগাম ঈদ উল আযাহা উদযাপন

চাঁদ এখনো দেখা যায়নি দেশের আকাশে। সরকারি ঘোষণাও আসেনি। তবু ফরিদপুরের বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গার ১০টি গ্রামের মানুষ আজ শুক্রবার (৬ জুন) ঈদুল আজহা উদযাপন করলেন। নামাজ শেষে কোরবানি দিয়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করলেন প্রতিবেশীদের সঙ্গে। কারণ—তারা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখেই ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করেন।
ঈদের জামাত বসে সকাল থেকে। মাইটকুমড়া জামে মসজিদে সাড়ে ৮টায়, রাখালতলি ঈদগাহ মাঠ ও লস্করবাড়ি জামে মসজিদে ৯টায়, আর দায়রা শরিফে ১০টায়।
এই ঈদ উদযাপনে অংশ নেয় বোয়ালমারী উপজেলার রূপাপাত ইউনিয়নের কাটাগড় ও শেখর ইউনিয়নের রাখালতলি, সহস্রাইল, মাইটকুমড়া, ভুলবাড়িয়া, দরি সহস্রাইল গ্রামের মানুষ। এ ছাড়া আলফাডাঙ্গা উপজেলার ইছাপাশা, শুকুরহাটা, সহ আরো কয়েক গ্রামের মুসল্লিরাও এতে শামিল হন।
এই অঞ্চলের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে সৌদি সময় অনুযায়ী রোজা ও ঈদ উদযাপন করে আসছেন। স্থানীয়দের ভাষায়, এটি কেবল ধর্মীয় রেওয়াজ নয়, আত্মিক সংযোগও বটে।
বোয়ালমারীর কাটাগড় গ্রামের বাসিন্দা, আলফাডাঙ্গা সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মাহিদুল হক বলেন, “আমাদের পূর্বপুরুষরা চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার হজরত ইয়াছিন আলী (রহ.)-এর তরিকায় দীক্ষিত ছিলেন, যিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মির্জাখিল পীরের অনুসারী। আমরা সেই ধারায়ই ঈদ উদযাপন করি।”
তিনি জানান, একসময় অনুসারীর সংখ্যা ছিল ২০ হাজারের মতো। এখন তা কমে আড়াই হাজারে এসে ঠেকেছে। “নতুন প্রজন্মের অনেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে,” আক্ষেপের সুরে বললেন তিনি।
তবে এ চর্চা নিয়ে স্থানীয় আলেম সমাজের মধ্যে রয়েছে স্পষ্ট ভিন্নমত।
আলফাডাঙ্গা উপজেলা উলমা পরিষদের সাধারণত সম্পাদক হাঃ মাও মুঃআহ্সানউল্লা বলেন, “ইসলামে ঈদের চাঁদ দেখা একটি সময়নির্ধারক ফরজ বিষয়। হাদীস স্পষ্ট করে বলেছে—‘তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখো, চাঁদ দেখে ঈদ করো।’ এখানে স্থানীয় চাঁদ দেখাই গুরুত্বপূর্ণ, সৌদি আরবের ওপর নির্ভর নয়।”
তিনি আরও বলেন, “জাতীয়ভাবে ঈদ উদযাপন মানেই জাতীয় ঐক্য। আলাদা করে ঈদ করা বিভ্রান্তির জন্ম দেয়।”
তবে অনুসারীরা মনে করেন, এটি কোনো বিদআত নয়, বরং আত্মিক তরিকাভিত্তিক আমল। তাদের দাবি, ১৯২৮ সালে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার আলেম আবু ইছহাক সর্বপ্রথম সৌদি ক্যালেন্ডার অনুসরণে রোজা ও ঈদের প্রচলন শুরু করেন। সেই ধারা এখন ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।
প্রতি বছরই ফরিদপুরের এই গ্রামগুলো আলোচনায় আসে সৌদি সময় মেনে আগাম ঈদ পালনের কারণে। প্রশাসন সাধারণত এতে হস্তক্ষেপ করে না, তবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় পর্যায়ে সহযোগিতা করে থাকে।
সামাজিকভাবে এ চর্চা কিছুটা বিভাজনের জন্ম দিলেও অনুসারীদের মধ্যে রয়েছে এক ধরনের আত্মতৃপ্তি—বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপনের।