London ০৮:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম:
দুর্গাপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১জন পাবনার সাঁথিয়ায় মানসিক রোগী পুত্রবধূর ধারালো বটির কোপে শ্বশুর নিহত পাবনায় বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত রাবিতে তালা ভেংগে মনোনয়নপত্র বিতরণ কালিয়াকৈরে পৃথক স্থান থেকে দুই নারীর লাশ উদ্ধার জমিজমা বিরোধকে কেন্দ্র করে মা ও মেয়ের উপর সন্ত্রাসী হামলা নেত্রকোণায় বিএনপি নেতাকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা,পাল্টা হামলায় নিহত আরো ২ সিরাজগঞ্জ শহরে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, ওএমএস ডিলারের চাল ও নগদ টাকা লুট রজব আলী মেমোরিয়াল বিজ্ঞান কলেজে বিএনপি’র বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি ও নবনির্বাচিত সভাপতিকে সংবর্ধনা রাজশাহীতে শিশুদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ

সিরাজগঞ্জ-১: আওয়ামী লীগের দুর্গে বিএনপির ভরসা কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপা

ওয়াসিম সেখ, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

সিরাজগঞ্জ-১ (কাজিপুর ও সদরের একাংশ) আসনটি বরাবরই ছিল আওয়ামী লীগের একক আধিপত্যের আসন। কিন্তু ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন করে আশায় বুক বেঁধেছে বিএনপি-জামায়াত। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন (ফেব্রুয়ারি ২০২৬) ঘিরে এ আসনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা।

১৯৮৬ সাল থেকে এ আসনে আওয়ামী লীগের আধিপত্য অব্যাহত। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর ছেলে মোহাম্মদ নাসিম একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮, ২০২০ সালের উপ-নির্বাচন ও ২০২৪ সালে জয় পান তার ছেলে প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয়। শুধু ১৯৮৮ সালের চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির শফিকুল ইসলাম বিজয়ী হয়েছিলেন।

২০১৪ সালে বিএনপিতে যোগ দেন কনকচাঁপা। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি সিরাজগঞ্জ-১ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হয়েও আওয়ামী লীগের একক আধিপত্য ও রাজনৈতিক সন্ত্রাসের কারণে প্রচারণা চালাতে পারেননি। বাধা ও প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ এনে তিনি সেসময় বগুড়ায় সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন।

কনকচাঁপা বলেন, “আমার শৈশব কেটেছে কাজিপুরের মাটিতে। ওই মাটিতেই মিশে আছে আমার অনেক স্মৃতি। আমার পৈতৃক ভিটা যমুনা নদীতে বিলীন হলেও কাজিপুরের প্রতিটি ঘরই আমার কাছে নিজের বাড়ির মতো।”

তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ আমলে তাকে শিল্পী হিসেবেও কাজ করতে দেওয়া হয়নি।
“২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগে আমি ফেসবুকে কিছু লিখতেও পারতাম না। আমার গান পরিবেশনের দায়ে দুজনকে শোকজ করা হয়েছিল। মোবাইল সিম কার্ড উঠানোর সঙ্গে সঙ্গে ব্লক করে দেওয়া হতো।”

বর্তমানে কনকচাঁপা কাজিপুর ও সদরের গ্রামাঞ্চলে নিয়মিত বৈঠক করছেন। স্থানীয় নেতাকর্মীরা তাকে স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন দিচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

“আগামী নির্বাচন সামনে রেখে কাজিপুরের প্রতিটি গ্রামে যাচ্ছি। মানুষের সুখ-দুঃখের কথা শুনছি। মনোনয়ন পেলে ধানের শীষের পক্ষে বিপুল ভোটে জয় পাবো।”

কনকচাঁপার দাদাবাড়ি কাজিপুরের মাইজবাড়িতে। তার দাদা শেখ কাজেমুদ্দিন ছিলেন জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলের শিক্ষক। নানা ভাই মজিবর রহমান ছিলেন গোঁসাইবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক। বাবা আজিজুল হক মোর্শেদ ছিলেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-পরিচালক।

মাইজবাড়ি ইউনিয়নের তরুণ ভোটার বুলবুল বলেন, “জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপা মনোনয়ন পেলে তার জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে ধানের শীষের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি করবেন।”

সিরাজগঞ্জ-১ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৬৭২ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৯৯ হাজার ৫৫৫ এবং পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৯৫ হাজার ১১৫। এছাড়া এ আসনে দুইজন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটারও রয়েছেন।

দীর্ঘদিনের আওয়ামী আধিপত্য ভেঙে সিরাজগঞ্জ-১ আসনে বিএনপি কতটা শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারে, তা এখন দেখার বিষয়। তবে স্থানীয় রাজনীতিতে কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপা নতুন একটি ভরসার নাম হয়ে উঠেছেন।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৫:০৯:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৫
Translate »

সিরাজগঞ্জ-১: আওয়ামী লীগের দুর্গে বিএনপির ভরসা কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপা

আপডেট : ০৫:০৯:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৫

সিরাজগঞ্জ-১ (কাজিপুর ও সদরের একাংশ) আসনটি বরাবরই ছিল আওয়ামী লীগের একক আধিপত্যের আসন। কিন্তু ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন করে আশায় বুক বেঁধেছে বিএনপি-জামায়াত। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন (ফেব্রুয়ারি ২০২৬) ঘিরে এ আসনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা।

১৯৮৬ সাল থেকে এ আসনে আওয়ামী লীগের আধিপত্য অব্যাহত। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর ছেলে মোহাম্মদ নাসিম একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮, ২০২০ সালের উপ-নির্বাচন ও ২০২৪ সালে জয় পান তার ছেলে প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয়। শুধু ১৯৮৮ সালের চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির শফিকুল ইসলাম বিজয়ী হয়েছিলেন।

২০১৪ সালে বিএনপিতে যোগ দেন কনকচাঁপা। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি সিরাজগঞ্জ-১ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হয়েও আওয়ামী লীগের একক আধিপত্য ও রাজনৈতিক সন্ত্রাসের কারণে প্রচারণা চালাতে পারেননি। বাধা ও প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ এনে তিনি সেসময় বগুড়ায় সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন।

কনকচাঁপা বলেন, “আমার শৈশব কেটেছে কাজিপুরের মাটিতে। ওই মাটিতেই মিশে আছে আমার অনেক স্মৃতি। আমার পৈতৃক ভিটা যমুনা নদীতে বিলীন হলেও কাজিপুরের প্রতিটি ঘরই আমার কাছে নিজের বাড়ির মতো।”

তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ আমলে তাকে শিল্পী হিসেবেও কাজ করতে দেওয়া হয়নি।
“২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগে আমি ফেসবুকে কিছু লিখতেও পারতাম না। আমার গান পরিবেশনের দায়ে দুজনকে শোকজ করা হয়েছিল। মোবাইল সিম কার্ড উঠানোর সঙ্গে সঙ্গে ব্লক করে দেওয়া হতো।”

বর্তমানে কনকচাঁপা কাজিপুর ও সদরের গ্রামাঞ্চলে নিয়মিত বৈঠক করছেন। স্থানীয় নেতাকর্মীরা তাকে স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন দিচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

“আগামী নির্বাচন সামনে রেখে কাজিপুরের প্রতিটি গ্রামে যাচ্ছি। মানুষের সুখ-দুঃখের কথা শুনছি। মনোনয়ন পেলে ধানের শীষের পক্ষে বিপুল ভোটে জয় পাবো।”

কনকচাঁপার দাদাবাড়ি কাজিপুরের মাইজবাড়িতে। তার দাদা শেখ কাজেমুদ্দিন ছিলেন জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলের শিক্ষক। নানা ভাই মজিবর রহমান ছিলেন গোঁসাইবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক। বাবা আজিজুল হক মোর্শেদ ছিলেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-পরিচালক।

মাইজবাড়ি ইউনিয়নের তরুণ ভোটার বুলবুল বলেন, “জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপা মনোনয়ন পেলে তার জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে ধানের শীষের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি করবেন।”

সিরাজগঞ্জ-১ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৬৭২ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৯৯ হাজার ৫৫৫ এবং পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৯৫ হাজার ১১৫। এছাড়া এ আসনে দুইজন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটারও রয়েছেন।

দীর্ঘদিনের আওয়ামী আধিপত্য ভেঙে সিরাজগঞ্জ-১ আসনে বিএনপি কতটা শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারে, তা এখন দেখার বিষয়। তবে স্থানীয় রাজনীতিতে কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপা নতুন একটি ভরসার নাম হয়ে উঠেছেন।