সিরাজগঞ্জে মিনি আয়নাঘরের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার চান্দাইকোনা ইউনিয়নের সোনারামপুর গ্রামে একটি মিনি ‘আয়নাঘর’ এর সন্ধান মিলেছে। এ ঘরে সাধারণ মানুষকে বন্দি করে চাঁদা আদায়, কিডনি বিক্রি ও জমি লিখে নেওয়াসহ নানা অপকর্ম পরিচালনা করা হতো বলে অভিযোগ ওঠেছে।
শুক্রবার (২ মে) সকাল ৯টায় উপজেলার চান্দাইকোনা ইউনিয়নের সোনারাম গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে মোহাম্মদ জহিরুল (৪৫) এর বাড়ির বিল্ডিং এর নিচে একটি মিনি ‘আয়নাঘর’ এর সন্ধান পাওয়া যায়। এটি দেখতে হাজার হাজার উৎসুক জনতা ভিড় করছেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার দিনগত রাত ১:৩০ মিনিটের সময়স দীর্ঘ ছয় মাস বন্দি থাকা একই ইউনিয়নের পূর্ব পাইকড়া গ্রামের মৃত রুস্তম আলীর ছেলে আব্দুল জুব্বার (৭৫) ও লক্ষ্মী বিষ্ণু প্রসাদ গ্রামের মুনসুর আলীর স্ত্রী শিল্পী খাতুন (৪৮) মুক্ত হন। তারা টানা চার-পাঁচদিন ধারালো কাঁচি দিয়ে মেঝে খুঁড়ে একটি সুড়ঙ্গ তৈরি করে বের হন। এরপর তারা পরিবার-পরিজনকে এ লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দেন। পরে তারা ঘটনাস্থলে এসে ‘আয়নাঘর’ এর সত্যতা পেয়ে পুলিশকে খবর দেন।
কথিত এই আয়নাঘর থেকে মুক্ত হওয়া ভুক্তভোগী শিল্পী খাতুন বলেন, পাঁচ মাস ধরে বন্দি। একমাস অন্য জায়গায় রেখেছিল। তবে কোথায় রেখেছিল জানি না। মাঝে মধ্যে শরীরে ইনজেকশন দিতো তারা।
তবে কারা তাকে বন্দি করেছিল? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পল্লি চিকিৎসক আরাফাত, শরীফ মেম্বার, কামরুল ইসলাম, হাফিজুল, পান্নাসহ আরও তিনজন। তারা মুখোশপরা ছিলেন। বন্দিঘরে তিনি ছাড়াও আব্দুল জব্বার নামের একজন ছিলেন।
আরেক ভুক্তভোগী আব্দুল জব্বার গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছেন। তার ছেলে শফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আমার বাবা গত বছরের ৮ নভেম্বর বিকেল ৩টার দিকে নিখোঁজ হন। পরে কোথাও খুঁজে না পেয়ে ১২ নভেম্বর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করি। তাতেও কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। কিন্তু গভীর রাতে বাবা ওই আয়নাঘর থেকে কৌশলে বের হয়েছে। তিনি খুব অসুস্থ, আমরা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেছি।
স্থানীয়রা বলছেন, ওই ভবনের মালিক জহুরুল ইসলামের ছেলে সুমন সেখ। তার কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে ভবনের নিচে বেশ কয়েকটি ছোট ছোট কক্ষ করে আয়নাঘর বানিয়েছেন পশ্চিম লক্ষ্মীকোলা গ্রামের রেজাউল করিম তালুকদারের ছেলে পল্লি চিকিৎসক নাজমুল হোসেন আরাফাত। তিনি ও তার কিছু লোকজন গভীর রাতে এ বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন।
রায়গঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, আমি এখনো ঘটনাস্থলে রয়েছি। অনেক মানুষের সমাগম হয়েছে। এখন আর কিছু বলতে পারছি না।
সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) ফারুক হোসেন বলেন, ওটা আসলে আয়নাঘর কি না- সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। এ বিষয়টি নিয়ে পুলিশ কাজ করছে। একই সঙ্গে আরাফাত নামের একজনকে আটক করা হয়েছে।