London ১২:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাবেক হুইপের দৃষ্টিনন্দন বাড়িটি এখন বিরানভূমি

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে সাবেক হুইপ নজরুল ইসলাম বাবুর দৃষ্টিনন্দন ডুপ্লেক্স বাড়িটি দু’মাস আগেই হাজারো লোকের সমাগমে মুখর থাকত। অথচ সেটি এখন পোড়োবাড়ি। বাড়িজুড়ে সুনসান নীরবতা।

আড়াইহাজার উপজেলা নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে পরপর চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত এবং সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় জাতীয় সংসদের হুইপ নির্বাচিত হন নজরুল ইসলাম বাবু। তাঁর পৈতৃক বাড়ি আড়াইহাজার উপজেলার একেবারে পশ্চিম সীমান্তে দুপ্তারা ইউনিয়নের বাজবী গ্রামে। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য তিনি আড়াইহাজার পৌরসভার কৃষ্ণপুরা এলাকায় দৃষ্টিনন্দন ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণ করেন। রাজধানী ঢাকায় তাঁর পরিবার থাকলেও তিনি অধিকাংশ সময় এ বাড়িতে অবস্থান করে তাঁর সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন। প্রতিদিন ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত হাজারো লোকের সমাগমে সবসময় জমজমাট ছিল বাড়িটি। যখন বাসা থেকে বের হতেন তার গাড়ির সামনের পেছনের ছিল মোটরসাইকেল শোভাযাত্রাসহ গাড়ির বহর। কিন্তু আজ তা কেবলই স্মৃতি। গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শেখ হাসিনার পতন এবং দেশত্যাগের পর গোটা উপজেলার দৃশ্যপট মুহূর্তেই পাল্টে যায়। এর আগেই পরিবারসহ আত্মগোপনে চলে যান বাবু। ওইদিন বিকেলে দুর্বৃত্তরা তাঁর বাড়িতে হামলা চালিয়ে দরজা জানালা, সিঁড়ির রেলিং, এসি, টিভি, ফ্রিজ, সোফা, আলমারি ভর্তি বইপুস্তক, ক্রেস্ট থেকে শুরু করে নগদ টাকার পাশাপাশি ঘরে রক্ষিত সমস্ত আসবাবপত্র লুটে নিয়ে বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। কেয়ারটেকারসহ বাসায় লোকজন আগেই সরে যাওয়ায় কোনো প্রাণহানি হয়নি। 

স্থানীয় সবুজ মিয়া জানান, তাঁর জীবদ্দশায় এ রকম লুটপাট ও অগ্নিকাণ্ড দেখেননি। দিনদুপুরে দুর্বৃত্তরা বাবুর দৃষ্টিনন্দন বাড়িটি বিরানভূমি বানিয়ে ফেলেছে। বাড়ির টাইলস ও দেয়ালগুলো হ্যামার দিয়ে ভেঙে নষ্ট করে দিয়েছে। সুনসান নীরব নিস্তব্ধ বাড়ি থেকে এখনও আগুনে পোড়া দুর্গন্ধ বের হয়। গত প্রায় দুই মাস ধরে এখানে নেই কোনো প্রাণের স্পন্দন। 

সাবেক হুইপ বাবুর পাশেই ছিল আড়াইহাজার পৌরসভার কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেনের বাসভবন। তিনি জানান, বাবুর বাড়িতে মুখোশধারী সশস্ত্র একটি গ্রুপ তাণ্ডব চালিয়েছে। হামলার সময় তারা উস্কানিমূলক স্লোগান দিয়ে কয়েক ঘণ্টাব্যাপী ভাঙচুর ও লুটপাট করতে থাকে। তাদের হিংস্রতা দেখে আশপাশের লোকজন আতঙ্কে ছোটাছুটি করতে থাকে।

এ এলাকার বাসিন্দা আড়াইহাজার উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জুয়েল আহমেদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের মামলা হামলার কারণে বছরের পর বছর আমিসহ বিএনপির অধিকাংশ নেতাকর্মী এলাকাছাড়া। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতন হওয়ার পর ওইদিন সন্ধ্যায় নিজের বাড়িতে আসি। এসে শুনলাম নজরুল ইসলাম বাবু নিরাপত্তার দায়িত্ব যাদের দিয়ে গেছেন তারাই তাঁর বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। যদিও নজরুল ইসলাম বাবু গত ১৫ বছর ধরে বিনা কারণে নির্যাতন, হামলা ও গায়েবি মামলা দিয়ে জেল খাটিয়েছেন। তারপরও তাঁর এ রকম ক্ষতি আমাদের কাম্য ছিল না। কারণ বিএনপি প্রতিটি নেতাকর্মী শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শ ধারণ করে এবং সবসময় শান্তি-শৃঙ্খলায় বিশ্বাস করে। তাই সবসময় আমরা সব ধরনের সন্ত্রাস ও বিশৃঙ্খলার প্রতিবাদ করে আসছি।’

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০২:৫৪:১৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর ২০২৪
৪৮
Translate »

সাবেক হুইপের দৃষ্টিনন্দন বাড়িটি এখন বিরানভূমি

আপডেট : ০২:৫৪:১৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর ২০২৪

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে সাবেক হুইপ নজরুল ইসলাম বাবুর দৃষ্টিনন্দন ডুপ্লেক্স বাড়িটি দু’মাস আগেই হাজারো লোকের সমাগমে মুখর থাকত। অথচ সেটি এখন পোড়োবাড়ি। বাড়িজুড়ে সুনসান নীরবতা।

আড়াইহাজার উপজেলা নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে পরপর চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত এবং সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় জাতীয় সংসদের হুইপ নির্বাচিত হন নজরুল ইসলাম বাবু। তাঁর পৈতৃক বাড়ি আড়াইহাজার উপজেলার একেবারে পশ্চিম সীমান্তে দুপ্তারা ইউনিয়নের বাজবী গ্রামে। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য তিনি আড়াইহাজার পৌরসভার কৃষ্ণপুরা এলাকায় দৃষ্টিনন্দন ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণ করেন। রাজধানী ঢাকায় তাঁর পরিবার থাকলেও তিনি অধিকাংশ সময় এ বাড়িতে অবস্থান করে তাঁর সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন। প্রতিদিন ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত হাজারো লোকের সমাগমে সবসময় জমজমাট ছিল বাড়িটি। যখন বাসা থেকে বের হতেন তার গাড়ির সামনের পেছনের ছিল মোটরসাইকেল শোভাযাত্রাসহ গাড়ির বহর। কিন্তু আজ তা কেবলই স্মৃতি। গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শেখ হাসিনার পতন এবং দেশত্যাগের পর গোটা উপজেলার দৃশ্যপট মুহূর্তেই পাল্টে যায়। এর আগেই পরিবারসহ আত্মগোপনে চলে যান বাবু। ওইদিন বিকেলে দুর্বৃত্তরা তাঁর বাড়িতে হামলা চালিয়ে দরজা জানালা, সিঁড়ির রেলিং, এসি, টিভি, ফ্রিজ, সোফা, আলমারি ভর্তি বইপুস্তক, ক্রেস্ট থেকে শুরু করে নগদ টাকার পাশাপাশি ঘরে রক্ষিত সমস্ত আসবাবপত্র লুটে নিয়ে বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। কেয়ারটেকারসহ বাসায় লোকজন আগেই সরে যাওয়ায় কোনো প্রাণহানি হয়নি। 

স্থানীয় সবুজ মিয়া জানান, তাঁর জীবদ্দশায় এ রকম লুটপাট ও অগ্নিকাণ্ড দেখেননি। দিনদুপুরে দুর্বৃত্তরা বাবুর দৃষ্টিনন্দন বাড়িটি বিরানভূমি বানিয়ে ফেলেছে। বাড়ির টাইলস ও দেয়ালগুলো হ্যামার দিয়ে ভেঙে নষ্ট করে দিয়েছে। সুনসান নীরব নিস্তব্ধ বাড়ি থেকে এখনও আগুনে পোড়া দুর্গন্ধ বের হয়। গত প্রায় দুই মাস ধরে এখানে নেই কোনো প্রাণের স্পন্দন। 

সাবেক হুইপ বাবুর পাশেই ছিল আড়াইহাজার পৌরসভার কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেনের বাসভবন। তিনি জানান, বাবুর বাড়িতে মুখোশধারী সশস্ত্র একটি গ্রুপ তাণ্ডব চালিয়েছে। হামলার সময় তারা উস্কানিমূলক স্লোগান দিয়ে কয়েক ঘণ্টাব্যাপী ভাঙচুর ও লুটপাট করতে থাকে। তাদের হিংস্রতা দেখে আশপাশের লোকজন আতঙ্কে ছোটাছুটি করতে থাকে।

এ এলাকার বাসিন্দা আড়াইহাজার উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জুয়েল আহমেদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের মামলা হামলার কারণে বছরের পর বছর আমিসহ বিএনপির অধিকাংশ নেতাকর্মী এলাকাছাড়া। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতন হওয়ার পর ওইদিন সন্ধ্যায় নিজের বাড়িতে আসি। এসে শুনলাম নজরুল ইসলাম বাবু নিরাপত্তার দায়িত্ব যাদের দিয়ে গেছেন তারাই তাঁর বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। যদিও নজরুল ইসলাম বাবু গত ১৫ বছর ধরে বিনা কারণে নির্যাতন, হামলা ও গায়েবি মামলা দিয়ে জেল খাটিয়েছেন। তারপরও তাঁর এ রকম ক্ষতি আমাদের কাম্য ছিল না। কারণ বিএনপি প্রতিটি নেতাকর্মী শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শ ধারণ করে এবং সবসময় শান্তি-শৃঙ্খলায় বিশ্বাস করে। তাই সবসময় আমরা সব ধরনের সন্ত্রাস ও বিশৃঙ্খলার প্রতিবাদ করে আসছি।’