১৭ বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে থাকার পর মুক্তি পেয়েছেন হাওর অঞ্চল মদন- মোহনগঞ্জ -খালিয়াজুরী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, বিএনপির সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর।সবগুলো মামলা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর শেষ হয়েছে তার বন্দি জীবন। উল্লেখযোগ্য দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন গত সোমবার (১৪ জানুয়ারি)। দুদিন পর বৃহস্পতিবার দুপুর দুইটার দিকে তাকে মুক্তি দিয়েছেন ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার। ফলে জেলার বিএনপির রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরাজ করছে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা।
খালাস পাওয়া সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, বিএনপির হেভিওয়েট কেন্দ্রীয় নেতা লুৎফুজ্জামান বাবরের আগমনকে ঘিরে তাকে বরণ করতে নেত্রকোনা বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। হাওর অঞ্চল মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরী ও তার জন্মস্থান মদনে তাকে বরণ করতে ও অভিনন্দন জানাতে নানা রকম প্রস্তুতি চলছে। নির্মাণ করা হয়েছে নানা ধরনের তোরণ ।
কারাগার থেকে বিএনপির সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের আগমনের খবর পেয়ে তার সমর্থকরা ভাসছে আনন্দের জোয়ারে। বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে দেখা দিয়েছে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা। নেত্রকোনা জেলার অন্তত ৩০ হাজার মানুষ তাকে বরণ করে নিতে বুধবার রাতে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছে।। অগণিত নেতাকর্মীরা ভিড় করছেন তারা কেরানীগঞ্জ কারাগারের সামনের চত্বরে । অনেকের হাতে ফুলের তোড়া ও মালা।
বহস্পতিবার সাবেক লুৎফুজ্জামান বাবর কারাগার থেকে বেকসুর খালাস পাওয়ার খবর পেয়ে মোহনগঞ্জ,খালিয়াজুরী ও তার জন্মস্থান মদনে মিষ্টি বিতরণ করেন দলের নেতাকর্মীসহ সমর্থকরা। ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে জেলা শহরে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেন নেতাকর্মীরা।
সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের মুক্তিতে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে ক্রিয়া, প্রতিক্রিয়া। লুৎফুজ্জামান বাবর সংসদ সদস্য ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী থাকাকালীন নিজ নির্বাচনী এলাকা মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরী ও মদন উপজেলাসহ জেলার সার্বিক অবকাঠামোগত উন্নয়নে যথেষ্ট ভূমিকা রাখেন। ভূমিকা রাখেন বিভিন্ন পদে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়ার জন্য। হাওর অঞ্চলে তাই তার অবস্থান জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে।
সাবেক সংসদ সদস্য ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আনারস প্রতীক নিয়ে নেত্রকোনা-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে নেত্রকোনা-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ।বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারে তিনি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়ে সফলতার সাথে পালন করেন।
বিএনপির রাজনৈতিক দলের সূত্রে জানা যায়, ফখরুদ্দিনের তথ্যাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালে ২৮ মে আটক করা হয়। এরপর তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের মামলা দায়ের করা হয়।বেশ কয়েকটি মামলায় আদালত তাকে দণ্ডাদেশ প্রদান করেন।
দুটি মামলায় তার মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।একটিতে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সাবেক আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পর সকল মামলার আপিল শুনানি শেষে একে একে খালাস পান বাবর।
সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর গত ২৩ অক্টোবর দুর্নীতির মামলায় ৮ বছরের দণ্ড থেকে খালাস পেয়েছেন। ১ ডিসেম্বর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলা থেকে খালাস ও পান। ২১ আগস্টের মামলায়ও বাবরকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন বিচারক আদালত।
বিএনপির জেলা কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি ডাঃ দেলোয়ার হোসেন টিটু জানান, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর মুক্তি পাওয়ার পর সাধারণ মানুষের মাঝে শান্তি ফিরে আসছে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের আমলে জনগণ অফিসে আদালতে কোথাও নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার পায়নি। এখন ধীরে ধীরে জেলার বিভিন্ন স্থানে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাবে।এ ক্ষেত্রে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবেন সকল স্তরের জনগণের নেতা ও বিএনপির প্রিয় নেতা লুৎফুজ্জামান বাবর।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডাঃ আনোয়ারুল ইসলাম জানান, আমাদের প্রাণপ্রিয় নেতা লুৎফুজ্জামান বাবরের মুক্তিতে দীর্ঘদিন পর আনন্দ মিছিল করেছি, নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মাঝে মিষ্টি বিতরণ করেছি। বিএনপির অবিসংবাদিত নেতা বাবরের নেতৃত্বে বিএনপি নেতৃবৃন্দ প্রাণ খুঁজে পেয়েছেন। সাধারণ মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ তৈরি করতে এটাই উপযুক্ত সময়। এবার নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সকল প্রকার মানুষের অধিকার আদায়ের দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গঠন করে বিএনপি সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।