আঞ্চলিক ভৌগোলিক দিক থেকে ‘গুরুত্বপূর্ণ জায়গা’ হওয়ায় এবং অর্থনৈতিক দিক বিবেচনায় চট্টগ্রামে বে টার্মিনালের অবকাঠামো উন্নয়নে সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
দীর্ঘসূত্রতায় পড়া প্রকল্পটি চূড়ান্ত হতে সময় লেগে যায় ১০ বছর; তবে চূড়ান্ত হওয়ার পর সরকার পতনের ধাক্কায় প্রায় সাড়ে চার মাস ধরে থমকে যায় এ বে টার্মিনালের প্রকল্পের কাজ। টার্মিনাল নির্মাণের জন্য মূল জায়গা পাওয়া গেলেও অবকাঠামোর কোনো কাজ হয়নি।
রোববার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় এবার অবকাঠামো উন্নয়নে সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করল সরকার।
বে টার্মিনালের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ১৩ হাজার ৫২৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক দেবে ৯ হাজার ৩৩৩ কোটি এবং সরকারি তহবিল থেকে খরচ হবে ৪ হাজার ১৯২ কোটি টাকা।
একনেক বৈঠকের পর ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, “বহুদিন ধরে এটা নিয়ে কাজ হচ্ছিল কিন্তু কোন অগ্রগতি হচ্ছিল না। কিন্তু এখন আমরা এটা শুরু করে দিচ্ছি। প্রকল্পটা হল বে টার্মিনাল। চিটাগাংয়ের বে টার্মিনাল।
বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর তো চিটাগাংকেই বলা হয়। কিন্তু চিটাগাং তো আসলে সমুদ্রবন্দর না। চিটাগাং একটা নদী বন্দর।
তিনি বলেন, আমাদের তো কোনো সমুদ্রবন্দর নাই। বাংলাদেশের অর্থনীতি যেভাবে বড় হচ্ছে এবং আমরা মনে করি যে ভবিষ্যতে আরো ১৫-২০ বছরে যেই আকার ধারণ করবে। যে ব্যবসা বাণিজ্য হবে, বৈদেশিক বাণিজ্য, সেখানে তো একদমই আমাদের, শুধু বাংলাদেশের জন্য না, এটা তো একটা আঞ্চলিক ভৌগোলিক দিক থেকেও একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গা।
বঙ্গোপসাগরের এই জায়গাটুকুতে এখানে পোর্ট ফ্যাসিলিটিস সামুদ্রিক বন্দরটা থাকতেই হবে।
এটিকে ‘মেগা প্রকল্প’ না বললেও এখানে আরও একটি প্রকল্প মিলে একটি মেগা প্রকল্প হবে বলেও তুলে ধরেন উপদেষ্টা।
সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) এর মাধ্যমে আরও একটি প্রকল্প নেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, সব মিলিয়ে এখানে চারটি টার্মিনাল হবে এবং এটি মেগাপ্রকল্প হবে। প্রকল্পটি যাতে দ্রুত শেষ হয় সে জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তার ভাষ্য, যেটাকে, এই পর্যায়ে যে প্রকল্পটা আমরা আজকে পাশ করলাম, সেটাকে বড় প্রকল্প বলবে না। কিন্তু এটার পরে সব মিলে পরবর্তী পর্যায়ে যেটা হবে, সব মিলে এটা একটা মেগা প্রকল্পই বলতে হবে।
এ প্রকল্পের কাজ শুরুর পরিকল্পনা নিয়ে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, অনেকদিন ধরে এ সম্বন্ধে আলাপ আলোচনা হচ্ছিল কিন্তু শুরু হচ্ছিল না কিছুতেই। এটা আমরা আজকে পাশ করে দিয়েছি। অতি দ্রুত এটা শুরু হবে। এটার জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে যেটা দরকার সেটা হল ব্রেক ওয়াটার।
তিনি বলেন, বন্দর তৈরি করতে হলে ঝড় বা বড় ঢেউ যাতে না আসে সেজন্য ব্রেক ওয়াটার নির্মাণ করতে হয়। আর বন্দরের পিছন দিকের একটা পরিকাঠামো লাগে। এগুলা তৈরির প্রকল্প বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় হবে।
দুই প্রকল্প মিলে যদি ১০ থেকে ১৫ বছর সময় লাগে তাতেও এটি ‘সম্পূর্ণ সক্ষমতা’ অর্জন করুক, আশা করেন উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, আমরা আশা করব যে বাংলাদেশের অর্থনীতি এটা দিয়েও হয়তো সংকুলান হচ্ছে না বা যতদূর দরকার ততদূর হবে। কিন্তু এর থেকে দেরি করা ঠিক হবে না।
এটা তো একদম সমুদ্রের সাথে এবং এটা এতদিন না করার কোনো কারণ ছিল না। কর্ণফুলী নদী দিয়ে আমাদের যে চট্টগ্রাম বন্দর এটা যে শেষ পর্যন্ত আমাদের প্রয়োজন মেটাতে পারবে না এটা তো ২০ বছর আগেও বোঝা যেত। কারণ এটা নদীর ভিতরের একটা, এটাতে ছোট শিপও তো আসতে পারে না।
দেশের ভবিষ্যৎ বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং আন্তর্জাতিক মানের বন্দরের কথা মাথায় রেখে ১০ বছর আগে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। এর তিন বছর পর প্রকল্পের সমীক্ষা যাচাই হলেও মহাপরিকল্পনা চূড়ান্ত হয় ২০২৩ সালের নভেম্বরে।
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের চট্টগ্রাম ইপিজেডের পেছনের অংশ থেকে রাণী রাসমনি ঘাট পর্যন্ত প্রায় সোয়া ৬ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে হওয়ার কথা এ বে-টার্মিনাল প্রকল্প। এজন্য প্রয়োজনীয় জমির বেশিরভাগ বরাদ্দও মিলেছে, প্রকল্পের ‘ব্রেক ওয়াটার’তৈরির জন্য বিশ্ব ব্যাংক ঋণ অনুমোদন করলেও এতদিন ছিল না দৃশ্যমান অগ্রগতি।