London ০৮:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫, ১১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সবজির ভালো ফলনেও কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত, কেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সবজির উৎপাদন ভালো। ভরপুর ফলনেও কৃষকের হৃদয় ভেঙে চুরমার! ফুলকপি, বাঁধাকপি, মূলা, শিম এবং আলুসহ কয়েকটি সবজির দাম এযাবৎকালের সর্বনিম্নে এসে পৌঁছেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংশ্লিষ্ট কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঠিক নির্দেশনার অভাব, পর্যাপ্ত প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা না থাকা, বিভিন্ন প্রকার সবজি সংরক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত হিমাগার বা কোল্ডস্টোরেজ না থাকা, স্থানীয় পর্যায়ে বাজার ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা না থাকা, রপ্তানিযোগ্য সবজি উৎপাদন পরিকল্পনায় উত্তম কৃষির চর্চা না থাকার বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়েছেন।

এছাড়া সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর মনিটরিং সুপারভেশনের দুর্বলতা এবং মূল্য নির্ধারণের সুনির্দিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের সক্রিয় ভূমিকা না থাকা, দাম নিয়ে কৃষকের এমন দুর্গতি, কপালের দুর্ভোগও দায়ী মনে করছেন কৃষকরা।

নিম্নমানের বীজ, ভেজাল সার, ডিলারদের সিন্ডিকেট, কৃষি ঋণের ভোগান্তি, প্রণোদনায় প্রভাবশালীদের দাপট, কীটনাশকের চড়া মূল্য এবং সেচের শৃঙ্খলে পড়ে, আগে থেকেই আর্থিক কষ্টে আছে প্রান্তিক ও বর্গা চাষিরা। তার ওপর নতুন করে যুক্ত হয়েছে বাম্পার ফলনের কারণে সবজির দামে চরম নিম্নগতি—উপরোক্ত বিষয়গুলোই কি এর প্রধান কারণ?

এখানে উৎপাদনকারী কৃষক এবং সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান এবং কর্মকর্তাদের কি কোনো দায় নেই? তাদের নিজেদের দায়বদ্ধতাও এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই বলে মনে করেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা।

অঞ্চলভিত্তিক কৃষকরা সংশ্লিষ্ট কৃষি বিভাগের সহায়তা নিয়ে ফসল উৎপাদনে ক্রপ জোনিং এলাকা নির্ধারণ করতে পারে। অর্থাৎ কোন এলাকায়, কোন ফসল উৎপাদিত হয়, সেই অনুযায়ী কৃষকরা দল তৈরি করে পরিকল্পনামাফিক, ফসল উৎপাদন করতে পারে।

কৃষকের সমস্যা, কৃষকদেরই সর্বাগ্রে চিহ্নিত করে সেই অনুযায়ী সমাধান ভেবে পরিকল্পনামাফিক ফসল উৎপাদন করতে হবে। অঞ্চলভিত্তিক কৃষকরা সংশ্লিষ্ট কৃষি বিভাগের সহায়তা নিয়ে ফসল উৎপাদনে ক্রপ জোনিং এলাকা নির্ধারণ করতে পারে। অর্থাৎ কোন এলাকায়, কোন ফসল উৎপাদিত হয়, সেই অনুযায়ী কৃষকরা দল তৈরি করে পরিকল্পনামাফিক, ফসল উৎপাদন করতে পারে।

একটি এলাকায় একই ধরনের ফসল উৎপাদনের সময় ক্রপ-ক্যালেন্ডার লক্ষ্য রেখে আগাম, মধ্যম এবং নাবি জাতের চাষ পরিকল্পনায় রাখতে হবে। একটি কমিউনিটির সব চাষি একসাথে একই ধরনের ফসল চাষ করতে পারবেন না। সাথে সাথে চাহিদা এবং সাপ্লাই চেইন বিবেচনায় রেখে ফসলের উৎপাদন টার্গেট নির্ধারণ করতে হবে।

অর্থাৎ অপরিকল্পিত বা চাহিদার সাথে মিল না রেখে উৎপাদন করা ঝুঁকিপূর্ণ। এসব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কৃষকদের সাথে কৃষিসম্প্রসারণ এবং কৃষি বিপণন অধিদপ্তরকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।

ক্রপ জোনিং এবং ক্রপ-ক্যালেন্ডার পরিকল্পনা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট এলাকার কৃষক দলকে (ফসলভিত্তিক) চাহিদা এবং সাপ্লাই চেইনের কথা মাথায় রেখে ফসল উৎপাদনের কার্যকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এখানে একটি কথা খুবই গুরুত্বের সাথে মনে রাখতে হবে, কৃষকরা যেন কোনোভাবেই একই সময়, একই সাথে, সবাই মিলে, একই জাতের সবজি চাষ না করে।

নিজেদের পরিকল্পনার ভুলে, নিজেরা যেন, কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়; সেই বিবেচনাটা কৃষকদের মনে রাখতে হবে, যেকোনো ফসলের উৎপাদন সময় এবং তার সংগ্রহের সময় কখন? কখন-কীভাবে তা বাজারজাত করতে হবে? কোন প্রক্রিয়ায় বাজারজাত করতে হবে? হিমাগার বা কোল্ডস্টোরেজ ফ্যাসিলিটি পাওয়া যাবে কিনা, সিন্ডিকেটে কবলে পড়লে কী করতে হবে—এইসব গুরুত্বপূর্ণ এবং কারিগরি বিষয়ে অবশ্যই কৃষকে মাথায় রাখতে হবে।

সময় জ্ঞানটুকু মাথায় রেখে ফসল উৎপাদন পরিকল্পনা করতে হবে। আমরা যেন সবাই মনে রাখি, আমাদের ফসলটি যখন উত্তোলন করা হবে, তখন তার চাহিদা কী রকম থাকবে? সাপ্লাই চেইন কেমন হবে বা কেমন থাকবে? তা কৃষকদের ভাবনায় রাখতে হবে।

উৎপাদিত সবজির সঠিক মূল্য পেতে হলে; এ বিষয়গুলো অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে। আগামীতে কৃষকদের আরও সতর্ক হতে হবে। উৎপাদিত পণ্য নিয়ে নিজেরা যেন নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা না করে। নিজেরা নিজেদের প্রতিযোগী হলে সবজির দামে চরম হতাশার পরিস্থিতি তৈরি হয়।

অপরিকল্পিত বা চাহিদার সাথে মিল না রেখে উৎপাদন করা ঝুঁকিপূর্ণ। এসব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কৃষকদের সাথে কৃষিসম্প্রসারণ এবং কৃষি বিপণন অধিদপ্তরকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।

সবাই যদি সবার স্বার্থ দেখে, তাহলে কৃষক হিসেবে অবশ্যই নিজেদের স্বার্থ দেখতে হবে। এতে করে কৃষকরা তার সবজি পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাবেন।

যে কৃষক অন্ন-সবজি-ফলমূল জোগায়, সে আজ চরমভাবে বিপন্ন! সারাদেশের সব কৃষকদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ এবং এক হয়ে থাকতে হবে। কৃষকদের সময়ের সাথে সাথে শিক্ষিত, দক্ষ, কৌশলী এবং কারিগরি বিষয় সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকতে হবে।

বীজ, সার, কীটনাশক সিন্ডিকেট মুক্ত করা জরুরি। প্রতিটি উপজেলায় সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে হিমাগার বা কোল্ডস্টোরেজ ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে কৃষক অল্প টাকায় এই সুবিধা পেতে পারেন। কৃষকের উৎপাদন খরচ কমাতে বিনামূল্যে উত্তম কৃষি চর্চা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা চালু করতে হবে সরকারিভাবে।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের কৃষি ঋণ ও সুদ মওকুফের ব্যবস্থা করতে হবে। বয়স্ক পঙ্গু অসহায় কৃষকদের কৃষক ভাতা এবং পেনশন চালু করতে হবে যাতে কৃষকরা স্বাভাবিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে জীবনযাপন করতে পারে। উপজেলা পর্যায়ে কৃষক বাজার তৈরি করে সরাসরি ভোক্তার কাছ থেকে পণ্য ক্রয় করে তা বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে।

কৃষি পণ্য চলাচলে রেল বগি বরাদ্দ ও টোল প্রথা বিলুপ্ত করতে হবে। কৃষকের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ফসল ভিত্তিক লোন চালু করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন তথা প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে কৃষকদের জন্য কৃষি বীমা চালু করতে হবে। আজ সময় এসেছে কৃষকের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় কৃষকদেরই ঐক্যবদ্ধ আওয়াজ তুলতে হবে।

সমীরণ বিশ্বাস ।। কৃষি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০২:৩৫:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫
Translate »

সবজির ভালো ফলনেও কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত, কেন?

আপডেট : ০২:৩৫:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫

সবজির উৎপাদন ভালো। ভরপুর ফলনেও কৃষকের হৃদয় ভেঙে চুরমার! ফুলকপি, বাঁধাকপি, মূলা, শিম এবং আলুসহ কয়েকটি সবজির দাম এযাবৎকালের সর্বনিম্নে এসে পৌঁছেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংশ্লিষ্ট কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঠিক নির্দেশনার অভাব, পর্যাপ্ত প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা না থাকা, বিভিন্ন প্রকার সবজি সংরক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত হিমাগার বা কোল্ডস্টোরেজ না থাকা, স্থানীয় পর্যায়ে বাজার ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা না থাকা, রপ্তানিযোগ্য সবজি উৎপাদন পরিকল্পনায় উত্তম কৃষির চর্চা না থাকার বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়েছেন।

এছাড়া সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর মনিটরিং সুপারভেশনের দুর্বলতা এবং মূল্য নির্ধারণের সুনির্দিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের সক্রিয় ভূমিকা না থাকা, দাম নিয়ে কৃষকের এমন দুর্গতি, কপালের দুর্ভোগও দায়ী মনে করছেন কৃষকরা।

নিম্নমানের বীজ, ভেজাল সার, ডিলারদের সিন্ডিকেট, কৃষি ঋণের ভোগান্তি, প্রণোদনায় প্রভাবশালীদের দাপট, কীটনাশকের চড়া মূল্য এবং সেচের শৃঙ্খলে পড়ে, আগে থেকেই আর্থিক কষ্টে আছে প্রান্তিক ও বর্গা চাষিরা। তার ওপর নতুন করে যুক্ত হয়েছে বাম্পার ফলনের কারণে সবজির দামে চরম নিম্নগতি—উপরোক্ত বিষয়গুলোই কি এর প্রধান কারণ?

এখানে উৎপাদনকারী কৃষক এবং সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান এবং কর্মকর্তাদের কি কোনো দায় নেই? তাদের নিজেদের দায়বদ্ধতাও এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই বলে মনে করেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা।

অঞ্চলভিত্তিক কৃষকরা সংশ্লিষ্ট কৃষি বিভাগের সহায়তা নিয়ে ফসল উৎপাদনে ক্রপ জোনিং এলাকা নির্ধারণ করতে পারে। অর্থাৎ কোন এলাকায়, কোন ফসল উৎপাদিত হয়, সেই অনুযায়ী কৃষকরা দল তৈরি করে পরিকল্পনামাফিক, ফসল উৎপাদন করতে পারে।

কৃষকের সমস্যা, কৃষকদেরই সর্বাগ্রে চিহ্নিত করে সেই অনুযায়ী সমাধান ভেবে পরিকল্পনামাফিক ফসল উৎপাদন করতে হবে। অঞ্চলভিত্তিক কৃষকরা সংশ্লিষ্ট কৃষি বিভাগের সহায়তা নিয়ে ফসল উৎপাদনে ক্রপ জোনিং এলাকা নির্ধারণ করতে পারে। অর্থাৎ কোন এলাকায়, কোন ফসল উৎপাদিত হয়, সেই অনুযায়ী কৃষকরা দল তৈরি করে পরিকল্পনামাফিক, ফসল উৎপাদন করতে পারে।

একটি এলাকায় একই ধরনের ফসল উৎপাদনের সময় ক্রপ-ক্যালেন্ডার লক্ষ্য রেখে আগাম, মধ্যম এবং নাবি জাতের চাষ পরিকল্পনায় রাখতে হবে। একটি কমিউনিটির সব চাষি একসাথে একই ধরনের ফসল চাষ করতে পারবেন না। সাথে সাথে চাহিদা এবং সাপ্লাই চেইন বিবেচনায় রেখে ফসলের উৎপাদন টার্গেট নির্ধারণ করতে হবে।

অর্থাৎ অপরিকল্পিত বা চাহিদার সাথে মিল না রেখে উৎপাদন করা ঝুঁকিপূর্ণ। এসব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কৃষকদের সাথে কৃষিসম্প্রসারণ এবং কৃষি বিপণন অধিদপ্তরকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।

ক্রপ জোনিং এবং ক্রপ-ক্যালেন্ডার পরিকল্পনা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট এলাকার কৃষক দলকে (ফসলভিত্তিক) চাহিদা এবং সাপ্লাই চেইনের কথা মাথায় রেখে ফসল উৎপাদনের কার্যকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এখানে একটি কথা খুবই গুরুত্বের সাথে মনে রাখতে হবে, কৃষকরা যেন কোনোভাবেই একই সময়, একই সাথে, সবাই মিলে, একই জাতের সবজি চাষ না করে।

নিজেদের পরিকল্পনার ভুলে, নিজেরা যেন, কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়; সেই বিবেচনাটা কৃষকদের মনে রাখতে হবে, যেকোনো ফসলের উৎপাদন সময় এবং তার সংগ্রহের সময় কখন? কখন-কীভাবে তা বাজারজাত করতে হবে? কোন প্রক্রিয়ায় বাজারজাত করতে হবে? হিমাগার বা কোল্ডস্টোরেজ ফ্যাসিলিটি পাওয়া যাবে কিনা, সিন্ডিকেটে কবলে পড়লে কী করতে হবে—এইসব গুরুত্বপূর্ণ এবং কারিগরি বিষয়ে অবশ্যই কৃষকে মাথায় রাখতে হবে।

সময় জ্ঞানটুকু মাথায় রেখে ফসল উৎপাদন পরিকল্পনা করতে হবে। আমরা যেন সবাই মনে রাখি, আমাদের ফসলটি যখন উত্তোলন করা হবে, তখন তার চাহিদা কী রকম থাকবে? সাপ্লাই চেইন কেমন হবে বা কেমন থাকবে? তা কৃষকদের ভাবনায় রাখতে হবে।

উৎপাদিত সবজির সঠিক মূল্য পেতে হলে; এ বিষয়গুলো অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে। আগামীতে কৃষকদের আরও সতর্ক হতে হবে। উৎপাদিত পণ্য নিয়ে নিজেরা যেন নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা না করে। নিজেরা নিজেদের প্রতিযোগী হলে সবজির দামে চরম হতাশার পরিস্থিতি তৈরি হয়।

অপরিকল্পিত বা চাহিদার সাথে মিল না রেখে উৎপাদন করা ঝুঁকিপূর্ণ। এসব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কৃষকদের সাথে কৃষিসম্প্রসারণ এবং কৃষি বিপণন অধিদপ্তরকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।

সবাই যদি সবার স্বার্থ দেখে, তাহলে কৃষক হিসেবে অবশ্যই নিজেদের স্বার্থ দেখতে হবে। এতে করে কৃষকরা তার সবজি পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাবেন।

যে কৃষক অন্ন-সবজি-ফলমূল জোগায়, সে আজ চরমভাবে বিপন্ন! সারাদেশের সব কৃষকদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ এবং এক হয়ে থাকতে হবে। কৃষকদের সময়ের সাথে সাথে শিক্ষিত, দক্ষ, কৌশলী এবং কারিগরি বিষয় সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকতে হবে।

বীজ, সার, কীটনাশক সিন্ডিকেট মুক্ত করা জরুরি। প্রতিটি উপজেলায় সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে হিমাগার বা কোল্ডস্টোরেজ ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে কৃষক অল্প টাকায় এই সুবিধা পেতে পারেন। কৃষকের উৎপাদন খরচ কমাতে বিনামূল্যে উত্তম কৃষি চর্চা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা চালু করতে হবে সরকারিভাবে।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের কৃষি ঋণ ও সুদ মওকুফের ব্যবস্থা করতে হবে। বয়স্ক পঙ্গু অসহায় কৃষকদের কৃষক ভাতা এবং পেনশন চালু করতে হবে যাতে কৃষকরা স্বাভাবিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে জীবনযাপন করতে পারে। উপজেলা পর্যায়ে কৃষক বাজার তৈরি করে সরাসরি ভোক্তার কাছ থেকে পণ্য ক্রয় করে তা বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে।

কৃষি পণ্য চলাচলে রেল বগি বরাদ্দ ও টোল প্রথা বিলুপ্ত করতে হবে। কৃষকের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ফসল ভিত্তিক লোন চালু করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন তথা প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে কৃষকদের জন্য কৃষি বীমা চালু করতে হবে। আজ সময় এসেছে কৃষকের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় কৃষকদেরই ঐক্যবদ্ধ আওয়াজ তুলতে হবে।

সমীরণ বিশ্বাস ।। কৃষি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ