London ০৬:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শ্রমিক দল নেতাকে ছাড়িয়ে নিতে যুবদল নেতার নেতৃত্বে থানায় হামলা

অনলাইন ডেস্ক

কুমিল্লার মুরাদনগরে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চাঁদাবাজির অভিযোগে আবুল কালাম নামে শ্রমিক দলের এক নেতাকে আটক করেছে পুলিশ। তাকে ছাড়িয়ে নিতে যুবদল নেতার নেতৃত্বে থানায় হামলার অভিযোগ উঠেছে। এ সময় থানায় অবস্থান করা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের ওপরেও হামলা করা হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ছয়জনকে আটক করেছে পুলিশ।

সোমবার (২৪ মার্চ) রাতে মুরাদনগর থানায় এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত যুবদল নেতা মাসুদ রানা উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক। আটক আবুল কালাম উপজেলার নবীপুর ইউনিয়ন শ্রমিক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক।

পুলিশ জানায়, সোমবার ইফতারের আগে শ্রমিক দল নেতা আবুল কালামসহ তিনজন একটি অটোরিকশায় আকবপুর গ্রামে যাচ্ছিলেন। অটোরিকশাচালক মুরাদনগর হয়ে সরাসরি নবীনগর রাস্তায় না গিয়ে কোম্পানীগঞ্জ হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কারণ জানতে চাইলে চালক বলেন, ‘ওই দিক দিয়ে গেলে ৫০ টাকা জিবি (চাঁদা) দিতে হবে।’ তখন তিনি চালককে সোজা পথে যেতে বলেন। কিন্তু নবীনগর সড়কের মুখেই চালককে চাঁদা দেওয়ার টোকেন আছে কি না জিজ্ঞাসা করা হয়। চালক টোকেন নেই জানালে কয়েকজন তাকে মারধর শুরু করেন। যাত্রীরা নেমে মারধরের কারণ ও চাঁদা কে তুলতে বলেছে জানতে চাইলে তারা হামলা করেন। চিৎকার শুনে লোকজন এগিয়ে এসে তাদের রক্ষা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ এসে আবুল কালামকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। সন্ধ্যার পর হামলার ঘটনায় অভিযোগ করতে তারা থানায় যান। এ সময় যুবদল নেতা মাসুদ রানার নেতৃত্বে ৭০-৮০ জন থানায় গিয়ে হামলা করেন।

মুরাদনগর থানা সূত্রে জানা গেছে, থানায় হামলা করে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা, পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে থানার উপপরিদর্শক আলী আক্কাস বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলায় যুবদল নেতা মাসুদ রানাকে প্রধান আসামি করে ৩১ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ৭০ থেকে ৮০ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় গতকাল রাতভর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

একই দিনে চাঁদাবাজি ও হামলার ঘটনায় উপজেলার আকবপুর গ্রামের বাসিন্দা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা আবু ফয়সাল বাদী হয়ে শ্রমিক দল নেতা আবুল কালামকে প্রধান আসামি করে ৩০ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ৭০ থেকে ৮০ জনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেছেন। হেফাজতে থাকা আবুল কালামকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

আবুল কালাম ছাড়া গ্রেপ্তার অন্য পাঁচজন হলেন- উপজেলার রহিমপুর গ্রামের মো. হোসেন, নবীপুর গ্রামের ওহাব আলী, মুরাদনগর উত্তরপাড়া গ্রামের আবুল হাসান, পরমতলা গ্রামের মহসিন সরকার ও রহিমপুর গ্রামের জসিম উদ্দিন।

যুবদল নেতা মাসুদ রানা জানান, আবুল কালাম শ্রমিক দল নেতা। এ ছাড়া গ্রেপ্তার অন্য পাঁচজন স্বেচ্ছাসেবক দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী।

মুরাদনগর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, চাঁদাবাজিতে জড়িত একজনকে আটকের জেরে অন্যরা থানায় হামলা করেন। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীসহ বৈষম্যবিরোধীদের ওপর হামলার ঘটনায় আরেকটি মামলা হয়েছে। দুই মামলায়  ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০১:২১:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫
১৩
Translate »

শ্রমিক দল নেতাকে ছাড়িয়ে নিতে যুবদল নেতার নেতৃত্বে থানায় হামলা

আপডেট : ০১:২১:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫

কুমিল্লার মুরাদনগরে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চাঁদাবাজির অভিযোগে আবুল কালাম নামে শ্রমিক দলের এক নেতাকে আটক করেছে পুলিশ। তাকে ছাড়িয়ে নিতে যুবদল নেতার নেতৃত্বে থানায় হামলার অভিযোগ উঠেছে। এ সময় থানায় অবস্থান করা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের ওপরেও হামলা করা হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ছয়জনকে আটক করেছে পুলিশ।

সোমবার (২৪ মার্চ) রাতে মুরাদনগর থানায় এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত যুবদল নেতা মাসুদ রানা উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক। আটক আবুল কালাম উপজেলার নবীপুর ইউনিয়ন শ্রমিক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক।

পুলিশ জানায়, সোমবার ইফতারের আগে শ্রমিক দল নেতা আবুল কালামসহ তিনজন একটি অটোরিকশায় আকবপুর গ্রামে যাচ্ছিলেন। অটোরিকশাচালক মুরাদনগর হয়ে সরাসরি নবীনগর রাস্তায় না গিয়ে কোম্পানীগঞ্জ হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কারণ জানতে চাইলে চালক বলেন, ‘ওই দিক দিয়ে গেলে ৫০ টাকা জিবি (চাঁদা) দিতে হবে।’ তখন তিনি চালককে সোজা পথে যেতে বলেন। কিন্তু নবীনগর সড়কের মুখেই চালককে চাঁদা দেওয়ার টোকেন আছে কি না জিজ্ঞাসা করা হয়। চালক টোকেন নেই জানালে কয়েকজন তাকে মারধর শুরু করেন। যাত্রীরা নেমে মারধরের কারণ ও চাঁদা কে তুলতে বলেছে জানতে চাইলে তারা হামলা করেন। চিৎকার শুনে লোকজন এগিয়ে এসে তাদের রক্ষা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ এসে আবুল কালামকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। সন্ধ্যার পর হামলার ঘটনায় অভিযোগ করতে তারা থানায় যান। এ সময় যুবদল নেতা মাসুদ রানার নেতৃত্বে ৭০-৮০ জন থানায় গিয়ে হামলা করেন।

মুরাদনগর থানা সূত্রে জানা গেছে, থানায় হামলা করে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা, পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে থানার উপপরিদর্শক আলী আক্কাস বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলায় যুবদল নেতা মাসুদ রানাকে প্রধান আসামি করে ৩১ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ৭০ থেকে ৮০ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় গতকাল রাতভর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

একই দিনে চাঁদাবাজি ও হামলার ঘটনায় উপজেলার আকবপুর গ্রামের বাসিন্দা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা আবু ফয়সাল বাদী হয়ে শ্রমিক দল নেতা আবুল কালামকে প্রধান আসামি করে ৩০ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ৭০ থেকে ৮০ জনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেছেন। হেফাজতে থাকা আবুল কালামকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

আবুল কালাম ছাড়া গ্রেপ্তার অন্য পাঁচজন হলেন- উপজেলার রহিমপুর গ্রামের মো. হোসেন, নবীপুর গ্রামের ওহাব আলী, মুরাদনগর উত্তরপাড়া গ্রামের আবুল হাসান, পরমতলা গ্রামের মহসিন সরকার ও রহিমপুর গ্রামের জসিম উদ্দিন।

যুবদল নেতা মাসুদ রানা জানান, আবুল কালাম শ্রমিক দল নেতা। এ ছাড়া গ্রেপ্তার অন্য পাঁচজন স্বেচ্ছাসেবক দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী।

মুরাদনগর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, চাঁদাবাজিতে জড়িত একজনকে আটকের জেরে অন্যরা থানায় হামলা করেন। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীসহ বৈষম্যবিরোধীদের ওপর হামলার ঘটনায় আরেকটি মামলা হয়েছে। দুই মামলায়  ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।