মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে ১৫ দিন ধরে পদ্মায় ভাঙন চলছে। এতে আতঙ্কে রয়েছেন বাসিন্দারা। ভাঙনঝুঁকিতে রয়েছে মসজিদ, মাজারসহ অর্ধশতাধিক বাড়িঘর। ভাঙনরোধে টেকসই বেড়িবাঁধের দাবি এলাকাবাসীর।
উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের ১৩টি মৌজার মধ্যে ১২টি মৌজা ইতোমধ্যে পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। অবশিষ্ট রয়েছে গৌড়বড়দিয়া মৌজা। সে মৌজারও অবশিষ্ট অংশের বাসিন্দারা পদ্মার ভাঙনে আতঙ্কে রয়েছেন। ১৫ দিন আগে কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের নদী-তীরবর্তী মালুচি ও কুশিয়ারচরে ভাঙন দেখা দেয়। ভাঙনঝুঁকিতে রয়েছে কুশিয়ারচর গায়েনবাড়ি মসজিদ, হোসেন শাহের মাজার, মালুচি মসজিদ ও অর্ধশতাধিক বাড়িঘর।
স্থানীয় লোকজন জানান, কয়েক বছরে পদ্মার ভাঙনে এ ইউনিয়নের ৭০-৭৫ শতাংশই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। গত তিন বছরে কোর্টকান্দি, মুহম্মদপুর ও বৌদ্ধকানিতে পদ্মার ভাঙনে শত শত বিঘা জমি ও বাড়িঘর বিলীন হয়েছে। চলতি বছরের ১৫ দিন আগে নদীতে পানি বৃদ্ধির কারণে কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের কুশিয়ারচর থেকে মালুচি ঘাট এলাকায় তীব্র স্রোত ও ঢেউয়ের আঘাতে ভাঙন দেখা দেয়।
কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য তোফাজ্জল হোসেন বলেন, কুশিয়ারচর এলাকার ফয়েজউদ্দীনের বাড়ি, বেলায়েত মেম্বার, নুরুল, বনি, রাকিব, বারেক গাজী, আইয়ুব খাঁ, গেন্দু বেপারি, বিশু বেপারি, লালন, জিয়াউর মেম্বারের বাড়ি এবং মালুচি এলাকার শাহাজুদ্দীন, লাল মিয়া, আখিজুদ্দীন ও ফুলুর বাড়ি ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে বাড়িগুলো পদ্মায় বিলীন হয়ে যাবে।
কুশিয়ারচর গ্রামের বেলায়েত মেম্বার বলেন, তাদের বাড়িটি ১২০ শতাংশের বেশি বড় ছিল। ৭০-৮০ শতাংশ পদ্মায় ভেঙে গেছে। বাড়ির সামনে জিও ব্যাগ ছিল, তাও ধসে গেছে। দ্রুত ভাঙনরোধে ব্যবস্থা না নিলে বাড়িটি পদ্মায় বিলীন হয়ে যাবে। এ এলাকা রক্ষার জন্য একটি স্থায়ী বেড়িবাঁধের দাবি জানান তিনি।
একই গ্রামের কৃষক ফয়েজউদ্দীন বলেন, ‘কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের বাগমারায় আমার বাড়ি ছিল। দুইবার বাড়ি ভাঙার পর ৬-৭ বছর আগে কুশিয়ারচর এলাকায় বাড়ি করলাম। কৃষিকাজের পাশাপাশি মাছও ধরি। অনেক কষ্টে একটা ঘর দিলাম। তাও যে কোনো সময় ঘরবাড়ি পদ্মায় চইলা যাইব। কয়েক চাপ মাটি পড়লেই আমার ঘরটা পদ্মায় চইলা যাইব।’
মালুচি এলাকার আখিজুদ্দীন বলেন, কুশিয়ারচর ও মালুচিতে তাঁর বাড়ির সামনে জিও ব্যাগ না ফেললে তাঁর বাড়ি ও কুশিয়ারচরের কয়েকটি বাড়ি যে কোনো সময় নদীতে চলে যাবে।
কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী বনি ইসলাম রূপক বলেন, ‘কয়েক বছরে পদ্মার ভাঙনে ১৩টি মৌজার ১২টি মৌজাই ইতোমধ্যে পদ্মায় ভেঙে গেছে। এখন শুধু গৌড়বড়দিয়া মৌজা অবশিষ্ট আছে। গত দুই থেকে তিন বছরে কোর্টকান্দি, মুহম্মদপুর ও বৌদ্ধকান্দিতে পদ্মার ভাঙনে শত শত বিঘা জমি ও বাড়িঘর বিলীন হয়েছে। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে পদ্মার পানির স্রোতে কয়েক দিন আগে বিল্লাল মেম্বাবের বাড়ির সামনে জিও ব্যাগ ধসে গেছে। এখনও ৫০০ মিটার এলাকায় জিও ব্যাগ পড়েনি। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের শাখা কর্মকর্তাকে (এসও) জানিয়েছেন।
হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহরিয়ার রহমান জানান, ভাঙনের ঝুঁকিতে থাকা কাঞ্চনপুরের কুশিয়ারচর ও মালুচি এলাকার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান বলেন, হরিরামপুরের চরাঞ্চলে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙনরোধে কাজ শুরু হয়েছে। কুশিয়ারচর ও মালুচি এলাকায়ও শিগগির জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।