London ০৭:১৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিল্পীকে বাদ দেওয়ার চিন্তা না করে সম্মান দেখাতে হবে

গান পরিবেশন করছেন বেবী নাজনীন ছবি : প্রথম আলো

দেড় দশক আগেও স্টেজ ও চলচ্চিত্র অঙ্গন দাপিয়ে বেড়িয়েছেন বেবী নাজনীন, কনকচাঁপা, আসিফ আকবর, মনির খানরা। একটা সময় বিএনপি মতাদর্শের এই শিল্পীরা দেশে বিশেষ দিবসের বড় আয়োজনগুলো থেকে বাদ পড়তে থাকেন। কারও ১৫ বছর, কারও ১০ বছর, আবার কারও ৬-৭ বছর ধরে এই অবস্থা চলেছে। খোলা আকাশের নিচে বড় কোনো মঞ্চে, বড় কোনো আয়োজনে তাঁদের গাইতে দেখা যায়নি। এসব শিল্পীকে নিয়ে কোনো আয়োজনের পরিকল্পনা হলে তা থেকে বাদ দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। একটা সময় দেশের মধ্যে তাঁদের স্টেজ শোর ব্যস্ততা একেবারেই কমে যায়। দীর্ঘ কয়েক বছর পর তাঁরা চারজনই খোলা আকাশের নিচে গাইলেন, তাও আবার একই মঞ্চে। ঢাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ কনসার্টটি উপভোগ করেছেন হাজার হাজার ভক্ত-শ্রোতা।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে মনির খান বলেন, ‘শিল্পীদের রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকবে; কিন্তু সে কারণে তাঁদের শিল্পচর্চা ব্যাহত করা যাবে না। সৃষ্টিশীল কোনো জিনিস কোনো মানুষ যদি জোর করে আটকে রাখে, তাতে দেশ যেমন বঞ্চিত হয়, সংস্কৃতি ছোট হয়, জনগণও বঞ্চিত হয়।’ দীর্ঘ ১৬ বছর পর উন্মুক্ত মঞ্চে গাওয়ার অনুভূতি জানিয়ে মনির খান বলেন, ‘১৬ বছরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গান গেয়েছি; কিন্তু ঢাকায় এত বড় আয়োজনে দেশের কোনো বিশেষ দিবসে উন্মুক্ত কোনো মঞ্চে গাইনি। আমরা শিল্পীরা জনগণ, দেশের জন্য গান গাই।’

দীর্ঘদিন পর দেশে ফিরে যা বললেন বেবী নাজনীন

দীর্ঘদিন পর দেশে ফিরে যা বললেন বেবী নাজনীন

একজন মানুষ অন্ধকারে কারাবন্দী থাকলে যেমন হয়, শিল্পীকে গাওয়ার সুযোগ ও পরিবেশ না দেওয়াটা তেমনই কষ্টের, জানালেন বেবী নাজনীন। কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন বেবী নাজনীন। দেশে এসে এখন রাজনীতির পাশাপাশি গানেও ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। সামনে কয়েকটি স্টেজ শোও আছে।

বেবী নাজনীন বলেন, ‘১৬ বছরে একজন শিল্পীর জীবনের একটা বড় অংশ চলে যায়। একজন মানুষ বাঁচেই বা কত দিন। চাইলেই মানুষ টাকাপয়সা, জিনিসপত্র, বাড়ি-গাড়ি করতে পারে; কিন্তু সময়টা তো কিনে পাওয়া সম্ভব নয়। শিল্পীকে কাজ করার পরিবেশ ও সুযোগ দিতে হবে।

সংগীতশিল্পী মনির খান
সংগীতশিল্পী মনির খানছবি: প্রথম আলো

যুক্তরাষ্ট্রে নিয়মিত কনসার্টে গান গেয়েছেন বেবী নাজনীন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মঞ্চেও গেয়েছেন, ‘যেখানেই গেছি, সেটাকেই বাংলাদেশ বানিয়ে নিয়েছি। দেশের মঞ্চে ১৬ বছর পর যখন গাইলাম, দেখলাম আগত ভক্ত–শ্রোতাদের কেউ আমার ছেলের বয়সী বা তার চেয়ে বয়সে ছোট কিংবা বড়। কেউ আমার ভাইবোনের মতো। চমৎকার অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমরাও এত বড় একটা মঞ্চ পেলাম, যা সত্যি ভীষণ ভালো লাগার বিষয় ছিল।’

রাজনীতিতে আসব না ঘোষণা দেওয়ার পর স্টেজ শো বেড়েছে : মনির খান

বেবী নাজনীন বলেন, ‘কোনো শিল্পীকে বাদ দেওয়ার চিন্তা না করে সম্মান দেখাতে হবে। তাদের পরিচর্যা করতে হবে। একজন শিল্পী তো দেশের সম্পদ। সেই মেধাবী শিল্পীকে প্ল্যাটফর্ম যদি না দেওয়া হয়, তাহলে তো শিল্পী বিকশিত হতে পারবে না। রাজনীতি যে কারও মৌলিক অধিকার। একেকজন একেক আদর্শে চলে। একেকজন একেকজনকে আদর্শ মানে। আমরা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শ মেনে রাজনীতি করছি। শিল্পীদের আদর্শিক মতপার্থক্য থাকতেই পারে। অন্য কোনো মতাদর্শের কাউকে সরকারের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হবে, আমি কখনোই এটার পক্ষে নই।’

আসিফ আকবর
আসিফ আকবর ছবি : প্রথম আলো

পাশাপাশি আরেকটি দিক নিয়েও কথা বলেন বেবী নাজনীন, ‘কোনো শিল্পী যদি ক্ষমতার কাছাকাছি থেকে তার অপব্যবহার করেন, সেই দায়ভার তাঁকেই নিতে হবে। কখনোই রাজনীতি করেনি, এমন অনেক শিল্পী বিগত ১৬ বছরে বিশাল রাজনীতিবিদ হয়ে গেছে। কিন্তু সাংস্কৃতিক অঙ্গনটাকে শূন্য করে দিয়েছে। যেন অন্যের হাতে সব বিক্রি করে দিয়েছে। আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির চর্চা হয়নি। শিল্পীদের জীবনমানের উন্নতিও হয়নি।’

কারাগারের অভিজ্ঞতা বললেন আসিফ আকবর

কনসার্টে আসা অনেক ভক্ত-শ্রোতার মতে, শিল্পীদের তাঁদের মতো করে গাওয়ার পরিবেশ ও সুযোগ দেওয়া উচিত। শ্রোতারাই ঠিক করবেন কোন শিল্পীর গান শুনবেন, কোন শিল্পীর শুনবেন না। অনেকে এই মতও দিয়েছেন, শিল্পীরা সুনির্দিষ্ট কোনো দলের হয়ে উঠলে শ্রোতাদের মধ্যে একরকম দ্বিধাবিভক্তি তৈরি হয়। তাই যতটা সম্ভব সরাসরি রাজনীতি থেকে সর্বজন গ্রহণযোগ্য শিল্পীদের দূরে থাকা উচিত। যদি শিল্পীদের কেউ রাজনীতি করেও থাকেন, তাহলে সাদাকে সাদা এবং কালোকে কালো বলার সৎসাহস রাখতে হবে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ১১:৪৬:০৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪
১৪
Translate »

শিল্পীকে বাদ দেওয়ার চিন্তা না করে সম্মান দেখাতে হবে

আপডেট : ১১:৪৬:০৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪

দেড় দশক আগেও স্টেজ ও চলচ্চিত্র অঙ্গন দাপিয়ে বেড়িয়েছেন বেবী নাজনীন, কনকচাঁপা, আসিফ আকবর, মনির খানরা। একটা সময় বিএনপি মতাদর্শের এই শিল্পীরা দেশে বিশেষ দিবসের বড় আয়োজনগুলো থেকে বাদ পড়তে থাকেন। কারও ১৫ বছর, কারও ১০ বছর, আবার কারও ৬-৭ বছর ধরে এই অবস্থা চলেছে। খোলা আকাশের নিচে বড় কোনো মঞ্চে, বড় কোনো আয়োজনে তাঁদের গাইতে দেখা যায়নি। এসব শিল্পীকে নিয়ে কোনো আয়োজনের পরিকল্পনা হলে তা থেকে বাদ দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। একটা সময় দেশের মধ্যে তাঁদের স্টেজ শোর ব্যস্ততা একেবারেই কমে যায়। দীর্ঘ কয়েক বছর পর তাঁরা চারজনই খোলা আকাশের নিচে গাইলেন, তাও আবার একই মঞ্চে। ঢাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ কনসার্টটি উপভোগ করেছেন হাজার হাজার ভক্ত-শ্রোতা।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে মনির খান বলেন, ‘শিল্পীদের রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকবে; কিন্তু সে কারণে তাঁদের শিল্পচর্চা ব্যাহত করা যাবে না। সৃষ্টিশীল কোনো জিনিস কোনো মানুষ যদি জোর করে আটকে রাখে, তাতে দেশ যেমন বঞ্চিত হয়, সংস্কৃতি ছোট হয়, জনগণও বঞ্চিত হয়।’ দীর্ঘ ১৬ বছর পর উন্মুক্ত মঞ্চে গাওয়ার অনুভূতি জানিয়ে মনির খান বলেন, ‘১৬ বছরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গান গেয়েছি; কিন্তু ঢাকায় এত বড় আয়োজনে দেশের কোনো বিশেষ দিবসে উন্মুক্ত কোনো মঞ্চে গাইনি। আমরা শিল্পীরা জনগণ, দেশের জন্য গান গাই।’

দীর্ঘদিন পর দেশে ফিরে যা বললেন বেবী নাজনীন

দীর্ঘদিন পর দেশে ফিরে যা বললেন বেবী নাজনীন

একজন মানুষ অন্ধকারে কারাবন্দী থাকলে যেমন হয়, শিল্পীকে গাওয়ার সুযোগ ও পরিবেশ না দেওয়াটা তেমনই কষ্টের, জানালেন বেবী নাজনীন। কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন বেবী নাজনীন। দেশে এসে এখন রাজনীতির পাশাপাশি গানেও ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। সামনে কয়েকটি স্টেজ শোও আছে।

বেবী নাজনীন বলেন, ‘১৬ বছরে একজন শিল্পীর জীবনের একটা বড় অংশ চলে যায়। একজন মানুষ বাঁচেই বা কত দিন। চাইলেই মানুষ টাকাপয়সা, জিনিসপত্র, বাড়ি-গাড়ি করতে পারে; কিন্তু সময়টা তো কিনে পাওয়া সম্ভব নয়। শিল্পীকে কাজ করার পরিবেশ ও সুযোগ দিতে হবে।

সংগীতশিল্পী মনির খান
সংগীতশিল্পী মনির খানছবি: প্রথম আলো

যুক্তরাষ্ট্রে নিয়মিত কনসার্টে গান গেয়েছেন বেবী নাজনীন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মঞ্চেও গেয়েছেন, ‘যেখানেই গেছি, সেটাকেই বাংলাদেশ বানিয়ে নিয়েছি। দেশের মঞ্চে ১৬ বছর পর যখন গাইলাম, দেখলাম আগত ভক্ত–শ্রোতাদের কেউ আমার ছেলের বয়সী বা তার চেয়ে বয়সে ছোট কিংবা বড়। কেউ আমার ভাইবোনের মতো। চমৎকার অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমরাও এত বড় একটা মঞ্চ পেলাম, যা সত্যি ভীষণ ভালো লাগার বিষয় ছিল।’

রাজনীতিতে আসব না ঘোষণা দেওয়ার পর স্টেজ শো বেড়েছে : মনির খান

বেবী নাজনীন বলেন, ‘কোনো শিল্পীকে বাদ দেওয়ার চিন্তা না করে সম্মান দেখাতে হবে। তাদের পরিচর্যা করতে হবে। একজন শিল্পী তো দেশের সম্পদ। সেই মেধাবী শিল্পীকে প্ল্যাটফর্ম যদি না দেওয়া হয়, তাহলে তো শিল্পী বিকশিত হতে পারবে না। রাজনীতি যে কারও মৌলিক অধিকার। একেকজন একেক আদর্শে চলে। একেকজন একেকজনকে আদর্শ মানে। আমরা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শ মেনে রাজনীতি করছি। শিল্পীদের আদর্শিক মতপার্থক্য থাকতেই পারে। অন্য কোনো মতাদর্শের কাউকে সরকারের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হবে, আমি কখনোই এটার পক্ষে নই।’

আসিফ আকবর
আসিফ আকবর ছবি : প্রথম আলো

পাশাপাশি আরেকটি দিক নিয়েও কথা বলেন বেবী নাজনীন, ‘কোনো শিল্পী যদি ক্ষমতার কাছাকাছি থেকে তার অপব্যবহার করেন, সেই দায়ভার তাঁকেই নিতে হবে। কখনোই রাজনীতি করেনি, এমন অনেক শিল্পী বিগত ১৬ বছরে বিশাল রাজনীতিবিদ হয়ে গেছে। কিন্তু সাংস্কৃতিক অঙ্গনটাকে শূন্য করে দিয়েছে। যেন অন্যের হাতে সব বিক্রি করে দিয়েছে। আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির চর্চা হয়নি। শিল্পীদের জীবনমানের উন্নতিও হয়নি।’

কারাগারের অভিজ্ঞতা বললেন আসিফ আকবর

কনসার্টে আসা অনেক ভক্ত-শ্রোতার মতে, শিল্পীদের তাঁদের মতো করে গাওয়ার পরিবেশ ও সুযোগ দেওয়া উচিত। শ্রোতারাই ঠিক করবেন কোন শিল্পীর গান শুনবেন, কোন শিল্পীর শুনবেন না। অনেকে এই মতও দিয়েছেন, শিল্পীরা সুনির্দিষ্ট কোনো দলের হয়ে উঠলে শ্রোতাদের মধ্যে একরকম দ্বিধাবিভক্তি তৈরি হয়। তাই যতটা সম্ভব সরাসরি রাজনীতি থেকে সর্বজন গ্রহণযোগ্য শিল্পীদের দূরে থাকা উচিত। যদি শিল্পীদের কেউ রাজনীতি করেও থাকেন, তাহলে সাদাকে সাদা এবং কালোকে কালো বলার সৎসাহস রাখতে হবে।