London ০৩:০৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১৮ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম:
‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ কোন পথে’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠিত নেত্রকোনা সীমান্তে টংক আন্দোলনের নেত্রী রাশি মণি’র হাজংয়ের ৭৯তম প্রয়াণ দিবস পালিত ফরিদপুরে রিকশা ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে চালককে হত্যা বিয়ে করলেন সারজিস আলম টিকটকে আসক্ত মেয়েকে গুলি করে হত্যা উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ প্লে-অফেই রিয়াল-সিটি লড়াই, বাকি ম্যাচে কে কার প্রতিপক্ষ ছাত্রলীগ কোনো প্রোগ্রাম করার চেষ্টা করলে ব্যবস্থা নেবে পুলিশ কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ ট্রাম্পের মঞ্চে কোমর ধরে তরুণীকে কাছে টেনে ফ্লার্টিং শাহরুখের! ভিডিও ভাইরাল ১৪ সেকেন্ডের দুষ্টু ভঙ্গির ভিডিওতে ঝড় তুললেন পরীমণি!

শঙ্কাকুল কুম্ভীগাছ

ফলসহ কুম্ভীগাছ। কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসেছবি: লেখক

কিশোরগঞ্জের সরকারি গুরুদয়াল কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগে গিয়েছিলাম ২০২৩ সালের ৬ জুলাই। ভবনের পূর্ব পাশে চোখে পড়ল সবুজ পাতার ফাঁকে পেয়ারা বা বড় জামরুলের মতো দেখতে একগুচ্ছ ফলের দিকে।

ভবন থেকে নিচে নেমে গাছের তলায় গিয়ে দেখি, বেশ কিছু ফল পড়ে আছে। দুটি ফল কুড়িয়ে নিয়ে আবার ভবনে উঠে এলাম। সেখানে এসে একটি ফল দুই ভাগ করে কাটলাম। পরে বইপত্র ও ইন্টারনেট ঘেঁটে জানতে পারি, এটি কুম্ভী ফল। এর পর থেকে অপেক্ষায় থাকি ফুল ফোটার। ফুল ফোটার খবর পেয়ে আবার সেখানে যাই এ বছরের ৮ এপ্রিল। গাছতলায় গিয়ে দেখি, অনেক ফুল মাটিতে পড়ে আছে, সঙ্গে কচি ফল।

কুম্ভী ছোট থেকে মধ্যম আকৃতির প্রচুর ডালপালাবিশিষ্ট পাতাঝরা বৃক্ষ। এটি উচ্চতায় ১৫ থেকে ২০ মিটার হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Careya arborea, এটি Lecythidaceae পরিবারের উদ্ভিদ। এর বাংলা ও স্থানীয় নাম কুম্ভী, ভাকাম্বা, কুমহি, কাম্বার, কুম্ভীপাতা, বিড়িপাতা, টেন্ডুপাতা, খাত্রাপাতা, গাডিলা বা গাডুলা, বল-ডিম্বেল বা গাম্বেল ইত্যাদি। ইংরেজিতে Slow-match tree, Wild Guava, Ceylon Oak, Patana Oak ইত্যাদি নামে পরিচিত। কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল সরকারি কলেজের মিলনায়তনের প্রধান ফটকের পাশে পরে আরেকটি কুম্ভীগাছের দেখা পেয়েছিলাম।

বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস ও মালয়েশিয়ায় কুম্ভীগাছ পাওয়া যায়। বাংলাদেশে কুম্ভী একটি দেশি প্রজাতির শঙ্কাকুল (Vulnerable) গাছ। পরিবেশ বা বাসস্থান ধ্বংসের কারণে যেসব প্রজাতি বিপজ্জনক পর্যায় বা বিপন্ন অবস্থার কাছাকাছি পৌঁছেছে, আইইউসিএনের স্ট্যাটাস অনুসারে এগুলো শঙ্কাকুল (Vulnerable) প্রজাতি। ২০১২ সালের প্রণীত বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে কুম্ভীগাছ রক্ষিত উদ্ভিদ (Protected Plant) হিসেবে অভিহিত।

গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের পাতাঝরা শালবন এবং চট্টগ্রামসহ সিলেটের আদমপুর বনাঞ্চলে বিক্ষিপ্তভাবে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো কুম্ভীগাছ দেখা যায়। ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের ৪৬ নম্বর সেকশনে লাগানো কুম্ভীর কিছু গাছ সংরক্ষিত রয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তিনটি বড় কুম্ভীগাছ আছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনেও কুম্ভীগাছ আছে।

কুম্ভীর কাণ্ড আঁকাবাঁকা ধরনের, বাকল গাঢ় ধূসর বা বাদামি বর্ণের এবং বাকলের উপরিভাগ রুক্ষ ও ফাটলযুক্ত। পাতা সরল ও ডিম্বাকার; লম্বায় ১৫ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার এবং চওড়ায় ৭ থেকে ১৬ সেন্টিমিটার; কিনারা করাতের মতো খাঁজকাটা। ডালপালার অগ্রভাগে পাতাগুলো ঘনবদ্ধভাবে বিন্যস্ত। শীতকালে পাতা ঝরে পড়ার আগে কমলা লাল বর্ণের হয়। এর ফলে গাছ রঙিন পাতায় সাজে। ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে গুচ্ছাকার স্পাইক পুষ্পবিন্যাসে বড় আকারের হলুদ বা সাদা বর্ণের ফুল ফোটে। ফুল কিছুটা সুগন্ধযুক্ত। ফুলে পাপড়ি চারটি, ফুলগুলো বড়, গোলাপি সাদা। ফল বেরি–জাতীয়, গোলাকার, ৫.০-৭.৫ সেন্টিমিটার ব্যাসযুক্ত, সবুজ, মাংসল ও রসালো। দেখতে অনেকটা গোলাপজাম বা পেয়ারার মতো। ফলের শেষ প্রান্তভাগ পানির কলসের মতো গহ্বরযুক্ত। জুন-জুলাই মাসে ফল পরিপক্ব হয়। প্রতিটি ফলে রয়েছে বাদামি বর্ণের অসংখ্য ছোট বীজ।

বীজের মাধ্যমে কুম্ভীর বংশবৃদ্ধি হয়। গাছ কেটে নেওয়ার পর গোড়া থেকেও কাণ্ড গজায় এবং তা থেকেও নতুন উদ্ভিদের জন্ম হয়। যেমন হয় শালগাছের।

বন এলাকায় প্রাকৃতিকভাবে কুম্ভীর বীজ থেকে চারা ও গাছ জন্মায়। কাঠ হালকা থেকে গাঢ় লাল বর্ণের এবং মধ্যম শক্ত। কাঠের সংকোচন ক্ষমতা অধিক এবং পানিতে টেকসই। গৃহ নির্মাণের খুঁটি, তক্তা, আসবাব, ক্যাবিনেট ও কৃষিসরঞ্জাম তৈরিতে কাঠ ব্যবহার করা হয়। বাকল থেকে ট্যানিন ও তামাটে রং পাওয়া যায়। বাকলের আঁশ দিয়ে মোটা দড়ি ও ব্রাউন পেপার তৈরি করা হয়। ফল ভক্ষণযোগ্য, তবে বীজ সামান্য বিষাক্ত। থাইল্যান্ডে ফুল ও কচি পাতা সালাদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৫:৩২:৪০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ অক্টোবর ২০২৪
৪৩
Translate »

শঙ্কাকুল কুম্ভীগাছ

আপডেট : ০৫:৩২:৪০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ অক্টোবর ২০২৪

ফলসহ কুম্ভীগাছ। কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসেছবি: লেখক

কিশোরগঞ্জের সরকারি গুরুদয়াল কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগে গিয়েছিলাম ২০২৩ সালের ৬ জুলাই। ভবনের পূর্ব পাশে চোখে পড়ল সবুজ পাতার ফাঁকে পেয়ারা বা বড় জামরুলের মতো দেখতে একগুচ্ছ ফলের দিকে।

ভবন থেকে নিচে নেমে গাছের তলায় গিয়ে দেখি, বেশ কিছু ফল পড়ে আছে। দুটি ফল কুড়িয়ে নিয়ে আবার ভবনে উঠে এলাম। সেখানে এসে একটি ফল দুই ভাগ করে কাটলাম। পরে বইপত্র ও ইন্টারনেট ঘেঁটে জানতে পারি, এটি কুম্ভী ফল। এর পর থেকে অপেক্ষায় থাকি ফুল ফোটার। ফুল ফোটার খবর পেয়ে আবার সেখানে যাই এ বছরের ৮ এপ্রিল। গাছতলায় গিয়ে দেখি, অনেক ফুল মাটিতে পড়ে আছে, সঙ্গে কচি ফল।

কুম্ভী ছোট থেকে মধ্যম আকৃতির প্রচুর ডালপালাবিশিষ্ট পাতাঝরা বৃক্ষ। এটি উচ্চতায় ১৫ থেকে ২০ মিটার হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Careya arborea, এটি Lecythidaceae পরিবারের উদ্ভিদ। এর বাংলা ও স্থানীয় নাম কুম্ভী, ভাকাম্বা, কুমহি, কাম্বার, কুম্ভীপাতা, বিড়িপাতা, টেন্ডুপাতা, খাত্রাপাতা, গাডিলা বা গাডুলা, বল-ডিম্বেল বা গাম্বেল ইত্যাদি। ইংরেজিতে Slow-match tree, Wild Guava, Ceylon Oak, Patana Oak ইত্যাদি নামে পরিচিত। কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল সরকারি কলেজের মিলনায়তনের প্রধান ফটকের পাশে পরে আরেকটি কুম্ভীগাছের দেখা পেয়েছিলাম।

বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস ও মালয়েশিয়ায় কুম্ভীগাছ পাওয়া যায়। বাংলাদেশে কুম্ভী একটি দেশি প্রজাতির শঙ্কাকুল (Vulnerable) গাছ। পরিবেশ বা বাসস্থান ধ্বংসের কারণে যেসব প্রজাতি বিপজ্জনক পর্যায় বা বিপন্ন অবস্থার কাছাকাছি পৌঁছেছে, আইইউসিএনের স্ট্যাটাস অনুসারে এগুলো শঙ্কাকুল (Vulnerable) প্রজাতি। ২০১২ সালের প্রণীত বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে কুম্ভীগাছ রক্ষিত উদ্ভিদ (Protected Plant) হিসেবে অভিহিত।

গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের পাতাঝরা শালবন এবং চট্টগ্রামসহ সিলেটের আদমপুর বনাঞ্চলে বিক্ষিপ্তভাবে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো কুম্ভীগাছ দেখা যায়। ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের ৪৬ নম্বর সেকশনে লাগানো কুম্ভীর কিছু গাছ সংরক্ষিত রয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তিনটি বড় কুম্ভীগাছ আছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনেও কুম্ভীগাছ আছে।

কুম্ভীর কাণ্ড আঁকাবাঁকা ধরনের, বাকল গাঢ় ধূসর বা বাদামি বর্ণের এবং বাকলের উপরিভাগ রুক্ষ ও ফাটলযুক্ত। পাতা সরল ও ডিম্বাকার; লম্বায় ১৫ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার এবং চওড়ায় ৭ থেকে ১৬ সেন্টিমিটার; কিনারা করাতের মতো খাঁজকাটা। ডালপালার অগ্রভাগে পাতাগুলো ঘনবদ্ধভাবে বিন্যস্ত। শীতকালে পাতা ঝরে পড়ার আগে কমলা লাল বর্ণের হয়। এর ফলে গাছ রঙিন পাতায় সাজে। ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে গুচ্ছাকার স্পাইক পুষ্পবিন্যাসে বড় আকারের হলুদ বা সাদা বর্ণের ফুল ফোটে। ফুল কিছুটা সুগন্ধযুক্ত। ফুলে পাপড়ি চারটি, ফুলগুলো বড়, গোলাপি সাদা। ফল বেরি–জাতীয়, গোলাকার, ৫.০-৭.৫ সেন্টিমিটার ব্যাসযুক্ত, সবুজ, মাংসল ও রসালো। দেখতে অনেকটা গোলাপজাম বা পেয়ারার মতো। ফলের শেষ প্রান্তভাগ পানির কলসের মতো গহ্বরযুক্ত। জুন-জুলাই মাসে ফল পরিপক্ব হয়। প্রতিটি ফলে রয়েছে বাদামি বর্ণের অসংখ্য ছোট বীজ।

বীজের মাধ্যমে কুম্ভীর বংশবৃদ্ধি হয়। গাছ কেটে নেওয়ার পর গোড়া থেকেও কাণ্ড গজায় এবং তা থেকেও নতুন উদ্ভিদের জন্ম হয়। যেমন হয় শালগাছের।

বন এলাকায় প্রাকৃতিকভাবে কুম্ভীর বীজ থেকে চারা ও গাছ জন্মায়। কাঠ হালকা থেকে গাঢ় লাল বর্ণের এবং মধ্যম শক্ত। কাঠের সংকোচন ক্ষমতা অধিক এবং পানিতে টেকসই। গৃহ নির্মাণের খুঁটি, তক্তা, আসবাব, ক্যাবিনেট ও কৃষিসরঞ্জাম তৈরিতে কাঠ ব্যবহার করা হয়। বাকল থেকে ট্যানিন ও তামাটে রং পাওয়া যায়। বাকলের আঁশ দিয়ে মোটা দড়ি ও ব্রাউন পেপার তৈরি করা হয়। ফল ভক্ষণযোগ্য, তবে বীজ সামান্য বিষাক্ত। থাইল্যান্ডে ফুল ও কচি পাতা সালাদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।