লভ্যাংশ না দেওয়ায় জেড ক্যাটেগরিতে ২৭ কোম্পানি
কমপক্ষে দুই বছর শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা না করা এবং লভ্যাংশ ঘোষণা ও বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) অনুমোদন হওয়ার পরও তা বিতরণ না করার দায়ে তালিকাভুক্ত ২৭ কোম্পানির মার্কেট ক্যাটেগরি বিদ্যমান ‘এ’ বা ‘বি’ থেকে ‘জেড’ ক্যাটেগরিতে নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ। আজ বৃহস্পতিবার থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে বলে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ নিজ নিজ ওয়েবসাইটে ঘোষণা দিয়েছে।
এদিকে তালিকাভুক্ত ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের দর হঠাৎ করে বাড়ার প্রেক্ষাপটে এক্ষেত্রে কোনো কারসাজি হচ্ছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে নিজস্ব সার্ভিল্যান্স বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। গতকাল জারি করা অফিস আদেশে গত ৬ আগস্ট থেকে গতকাল পর্যন্ত শেয়ার কেনাবেচার বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। ফ্লোর প্রাইস কার্যকর থাকায় গত ৬ আগস্ট ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার ৩২ টাকা ৬০ পয়সায় কেনাবেচা হয়। ফ্লোর প্রাইস তুলতেই শেয়ারদর বাড়তে থাকে। গতকাল শেয়ারটি ৭০ টাকা ৪০ পয়সায় কেনাবেচা হয়েছে। ইসলামী ব্যাংক-সংক্রান্ত তদন্তের আদেশে সকল ব্রোকারেজ হাউসের অনুমোদিত প্রতিনিধি, কমপ্লায়েন্স অফিসার এবং প্রধান নির্বাহীদের শেয়ার কেনাবেচায় বিদ্যমান বিধিগুলো মেনে চলতে বলেছে বিএসইসি।
‘জেড’ ক্যাটেগরিতে যারা : যেসব তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হতে যাচ্ছে, সেগুলো হলো–অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন, ইন্দোবাংলা ফার্মা, বিচ্ হ্যাচারি, দেশ গার্মেন্টস, এডভেন্ট ফার্মা, খুলনা পাওয়ার, প্যাসিফিক ডেনিম, ফরচুন সুজ, এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন, ভিএফএস থ্রেড, শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, ল্যুবরেফ বাংলাদেশ, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড, ফনিক্স ফাইন্যান্স, অলিম্পিক এক্সেসরিজ, ন্যাশনাল টিউবস, ন্যাশনাল ব্যাংক, মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ, জিএসপি ফাইন্যান্স, ফার কেমিক্যাল, সেন্ট্রাল ফার্মা, বিডি থাই অ্যালুমিনিয়াম, বে লিজিং, এটলাশ বাংলাদেশ এবং আনলিমা ইয়ার্ন।
২৭ কোম্পানির মধ্যে ১৩টি গত হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। এছাড়া ১৪টি কোম্পানি লভ্যাংশ ঘোষণা শেষে এজিএমে পাস হওয়ার পরও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেয়ারহোল্ডারদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে লভ্যাংশের টাকা পাঠাতে পারেনি। এর মধ্যে অন্তত ৮০ শতাংশ লভ্যাংশ পাঠাতে ব্যর্থ কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে ক্যাটেগরি অবনমন করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে ডিএসইর দায়িত্বশীল এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, যেসব কোম্পানি লভ্যাংশ অনুমোদনের পর এখনও লভ্যাংশ বিতরণ করেনি, সেগুলো লভ্যাংশ বিতরণ শেষে চিঠি দিয়ে নিশ্চিত করলে সর্বশেষ বার্ষিক লভ্যাংশ প্রদানের হার অনুযায়ী ক্যাটেগরি উন্নতি করা হবে। একটি কোম্পানি আছে এখন পর্যন্ত ৭১ শতাংশ লভ্যাংশ বিতরণ করেছে। আর মাত্র ১৬ লাখ টাকা বিতরণ করে চিঠি দিয়ে নিশ্চিত করলে তা ৮০ শতাংশে উন্নীত হবে। এর পর কোম্পানিটি চিঠি দিয়ে জানালে তার ক্যাটেগরি উন্নতি করা হবে।
কোন প্রেক্ষাপটে তালিকাভুক্ত কোম্পানি মার্কেট ক্যাটেগরি বদল হবে, তা নির্ধারণে আগের আদেশ বদলে চলতি বছরের ২০ মে নতুন আদেশ জারি করে বিএসইসি। এক্ষেত্রে যেসব বিষয় যুক্ত করা হয়, সেগুলো হলো–যেসব কোম্পানি পর পর দুই বছর লভ্যাংশ প্রদানে ব্যর্থ হলে বা আদালতের নিষেধাজ্ঞা না থাকা সত্ত্বেও এজিএম করতে ব্যর্থ হলে বা বিএমআরই সংক্রান্ত ইস্যু ছাড়া টানা ছয় মাসের বেশি উৎপাদন বা ব্যবসা কার্যক্রম বন্ধ থাকলে বা পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিশোধিত মূলধনকে ছাড়িয়ে গেলে বা এজিএমে লভ্যাংশ অনুমোদনের পরও নির্ধারিত ৩০ দিন সময়ের মধ্যে অন্তত ৮০ শতাংশ বিতরণে ব্যর্থ হলে জেড ক্যাটেগরিতে নামবে।
বাজারসংশ্লিষ্টরা জানান, কোনো কোম্পানির ক্যাটেগরি জেড করা হলে, তাতে শেয়ার কেনাবেচায় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। অথচ লভ্যাংশ দিতে না পারার ব্যর্থতার জন্য তারা দায়ী নন। এক্ষেত্রে দায় কোম্পানির পরিচালকদের। তাই এমন ব্যবস্থা থাকা উচিত, যাতে তারা চাপে পড়েন এবং এ ধরনের অবস্থা এড়াতে ব্যবসা করে কোম্পানিকে লাভজনক করতে পারেন এবং ওই মুনাফা থেকে নগদ লভ্যাংশ বিতরণের সক্ষমতা তৈরি করতে পারেন। অবশ্য জেড ক্যাটেগরিতে অবনমন-সংক্রান্ত বিএসইসির আদেশেই এমন একটি নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, কোনো কোম্পানি জেড ক্যাটেগরিতে অবনমিত হলে, ওই কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা কমিশনের পূর্বানুমতি ছাড়া কোনো শেয়ার কেনাবেচা বা হস্তান্তর করতে পারবেন না।
নিয়মটি চালুর পর গত ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দুটি কোম্পানির ক্যাটেগরি অবনমন করে জেড করা হয়। এর আগে গত ২০ মে এ নিয়ম চালু করা হয় এ-সংক্রান্ত বিষয়ে চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি জারি করা আদেশটি কিছুটা সংশোধন করে। ওই আদেশটি জারির পরপরই ৩২টি কোম্পানির ক্যাটেগরি অবনমন করে জেড করা হয়। তবে একসঙ্গে প্রায় ৬০টি কোম্পানি একবারে জেড ক্যাটেগরিতে নেমে যাচ্ছে দেখে মৌখিক নির্দেশে স্টক এক্সচেঞ্জকে লভ্যাংশ-সংক্রান্ত ইস্যুতে ক্যাটেগরি চেঞ্জ না করার নির্দেশ দিয়েছিল। ওই নির্দেশনা বাতিল করেছে বিএসইসি।