London ০৪:১১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রুশ জেনারেলকে হত্যার জন্য ইউক্রেন দায়ী : ক্রেমলিন

অনলাইন ডেস্ক

রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইগর কিরিলভকে হত্যার জন্য ইউক্রেনকে দায়ী করা হয়েছে। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে অনুষ্ঠিত একটি রাজনৈতিক টকশোর উপস্থাপক এ হত্যার জন্য ইউক্রেনকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘এই হামলার মাধ্যমে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তাঁর নিজের মৃত্যুদণ্ডে সই করেছেন।’

মঙ্গলবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় এক বিস্ফোরণে ইগর কিরিলভ নিহত হন। এই গুপ্তহত্যার দায় স্বীকার করেছে ইউক্রেন। এর মধ্য দিয়ে প্রায় তিন বছর ধরে চলা ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার ভূখণ্ডে দেশটির সবচেয়ে উচ্চপর্যায়ের কোনো সামরিক কর্মকর্তা ইউক্রেনের হামলায় প্রাণ হারালেন। ইগর কিরিলভ রাশিয়ার ‘নিউক্লিয়ার, বায়োলজিক্যাল অ্যান্ড কেমিক্যাল প্রোটেকশন ট্রুপস’ নামে একটি বাহিনীর প্রধান ছিলেন।

একটি বৈদ্যুতিক স্কুটারে লুকিয়ে রাখা বোমার বিস্ফোরণে ইগর কিরিলভ ও তাঁর সহকারী ইলিয়া পোলিকারপভ নিহত হন। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধের যে বাস্তবতা, তা এই ঘটনার মধ্য দিয়ে ঘরে বসে বসে টের পেল মস্কোবাসী। অন্তত বিস্ফোরণস্থলের কাছে যাঁদের বসবাস, তাঁরা টের পেয়েছেন।

মস্কোর বিস্ফোরণস্থলের কাছের একটি ভবনে থাকেন লিজা। তিনি বিবিসির এই প্রতিবেদককে বলেন, ঘটনাটি সম্পর্কে খবরের কাগজে পড়াটা একটা ব্যাপার। তখন এটিকে অনেক দূরের ঘটনা মনে হয়। কিন্তু যখন তা পাশে ঘটে, তখন তা সম্পূর্ণ ভিন্ন ও ভীতিকর একটা ব্যাপার।

লিজা বলেন, এত দিন পর্যন্ত যুদ্ধকে মনে হচ্ছিল, তা যেন অনেক দূরে ঘটছে। এখন এখানে কেউ মারা গেছেন। ফলে যুদ্ধের পরিণতি এখন এখানে বসেই অনুভব করা যায়।

উদ্বেগ অনেক বেড়ে গেছে জানিয়ে লিজা বলেন, তাঁর শোনা প্রতিটি শব্দই তাঁকে বিচলিত করে। চমকে উঠে তাঁর মনে হয়, এটি ড্রোন নাকি কোনো নির্মাণকাজের শব্দ।

রুশদের এমন ভাবনার কারণটাও বোধগম্য। রুশদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের জন্য এটি এমন একটি যুদ্ধ, যার সম্পর্কে তাঁরা কেবল তাঁদের টিভি পর্দা বা স্মার্ট ফোন থেকে জানতে পারেন। নানাভাবেই এটি একটি ভার্চ্যুয়াল যুদ্ধ। তবে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, বাস্তবে এই যুদ্ধে বিপুলসংখ্যক মানুষ নিহত ও আহত হয়েছে।

কিন্তু মস্কোতে যখন একজন রুশ জেনারেল গুপ্তহত্যার শিকার হলেন, তখন তা স্পষ্টই জেগে ওঠার ডাক। এ ঘটনা প্রমাণ করে, এই যুদ্ধ খুবই বাস্তব, বাড়ির খুব কাছের ঘটনা।

এখন প্রশ্ন, এই ঘটনা কি রুশ কর্তৃপক্ষের জন্য একটি জেগে ওঠার ডাক হিসেবে কাজ করবে?

বিবিসি রাশিয়ার সম্পাদক স্টিভ রোজেনবার্গের মতে, সম্ভবত না। ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে ক্রেমলিনের সরে আসার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং রাশিয়ার ইউক্রেন যুদ্ধ আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি।

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৯:৪৮:৫০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
১৫
Translate »

রুশ জেনারেলকে হত্যার জন্য ইউক্রেন দায়ী : ক্রেমলিন

আপডেট : ০৯:৪৮:৫০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইগর কিরিলভকে হত্যার জন্য ইউক্রেনকে দায়ী করা হয়েছে। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে অনুষ্ঠিত একটি রাজনৈতিক টকশোর উপস্থাপক এ হত্যার জন্য ইউক্রেনকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘এই হামলার মাধ্যমে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তাঁর নিজের মৃত্যুদণ্ডে সই করেছেন।’

মঙ্গলবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় এক বিস্ফোরণে ইগর কিরিলভ নিহত হন। এই গুপ্তহত্যার দায় স্বীকার করেছে ইউক্রেন। এর মধ্য দিয়ে প্রায় তিন বছর ধরে চলা ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার ভূখণ্ডে দেশটির সবচেয়ে উচ্চপর্যায়ের কোনো সামরিক কর্মকর্তা ইউক্রেনের হামলায় প্রাণ হারালেন। ইগর কিরিলভ রাশিয়ার ‘নিউক্লিয়ার, বায়োলজিক্যাল অ্যান্ড কেমিক্যাল প্রোটেকশন ট্রুপস’ নামে একটি বাহিনীর প্রধান ছিলেন।

একটি বৈদ্যুতিক স্কুটারে লুকিয়ে রাখা বোমার বিস্ফোরণে ইগর কিরিলভ ও তাঁর সহকারী ইলিয়া পোলিকারপভ নিহত হন। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধের যে বাস্তবতা, তা এই ঘটনার মধ্য দিয়ে ঘরে বসে বসে টের পেল মস্কোবাসী। অন্তত বিস্ফোরণস্থলের কাছে যাঁদের বসবাস, তাঁরা টের পেয়েছেন।

মস্কোর বিস্ফোরণস্থলের কাছের একটি ভবনে থাকেন লিজা। তিনি বিবিসির এই প্রতিবেদককে বলেন, ঘটনাটি সম্পর্কে খবরের কাগজে পড়াটা একটা ব্যাপার। তখন এটিকে অনেক দূরের ঘটনা মনে হয়। কিন্তু যখন তা পাশে ঘটে, তখন তা সম্পূর্ণ ভিন্ন ও ভীতিকর একটা ব্যাপার।

লিজা বলেন, এত দিন পর্যন্ত যুদ্ধকে মনে হচ্ছিল, তা যেন অনেক দূরে ঘটছে। এখন এখানে কেউ মারা গেছেন। ফলে যুদ্ধের পরিণতি এখন এখানে বসেই অনুভব করা যায়।

উদ্বেগ অনেক বেড়ে গেছে জানিয়ে লিজা বলেন, তাঁর শোনা প্রতিটি শব্দই তাঁকে বিচলিত করে। চমকে উঠে তাঁর মনে হয়, এটি ড্রোন নাকি কোনো নির্মাণকাজের শব্দ।

রুশদের এমন ভাবনার কারণটাও বোধগম্য। রুশদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের জন্য এটি এমন একটি যুদ্ধ, যার সম্পর্কে তাঁরা কেবল তাঁদের টিভি পর্দা বা স্মার্ট ফোন থেকে জানতে পারেন। নানাভাবেই এটি একটি ভার্চ্যুয়াল যুদ্ধ। তবে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, বাস্তবে এই যুদ্ধে বিপুলসংখ্যক মানুষ নিহত ও আহত হয়েছে।

কিন্তু মস্কোতে যখন একজন রুশ জেনারেল গুপ্তহত্যার শিকার হলেন, তখন তা স্পষ্টই জেগে ওঠার ডাক। এ ঘটনা প্রমাণ করে, এই যুদ্ধ খুবই বাস্তব, বাড়ির খুব কাছের ঘটনা।

এখন প্রশ্ন, এই ঘটনা কি রুশ কর্তৃপক্ষের জন্য একটি জেগে ওঠার ডাক হিসেবে কাজ করবে?

বিবিসি রাশিয়ার সম্পাদক স্টিভ রোজেনবার্গের মতে, সম্ভবত না। ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে ক্রেমলিনের সরে আসার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং রাশিয়ার ইউক্রেন যুদ্ধ আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি।