London ১২:৪০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজশাহীতে বিদ্যুৎহীন ভ্যাপসা গরমে শিক্ষার্থীদের ক্লাস গাছতলায়

লোডশেডিং আর ভ্যাপসা গরমের কারণে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পীরগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গাছতলায় ক্লাস করাচ্ছেন শিক্ষকেরা। সোমবার সকালেছবি:সংগৃহীত

রাজশাহীতে আজ সোমবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে অসহনীয় লোডশেডিং, সেই সঙ্গে ভ্যাপসা গরম। কোনো কোনো বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষের ভেতরে টিকতে না পেরে বাইরে গাছের নিচে দাঁড়ায়। শিক্ষকেরা সেখানেই গিয়ে ক্লাস নিয়েছেন। কোনো কোনো বিদ্যালয়ে আগাম ছুটি দেওয়া হয়েছে।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, আজ সকাল ৬টা ও সন্ধ্যা ৬টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮৯ শতাংশ। বেলা ৩টায় আর্দ্রতা ছিল ৭২ শতাংশ। আবার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধানও কম। যে কারণে গরম অনুভূত হচ্ছে অনেকে বেশি। বেলা ৩টায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সকাল ৬টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এদিকে দিনভর বিদ্যুতের লোডশেডিং ছিল অনেক বেশি। রাজশাহী শহরের বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা নেসকো সূত্রে জানা যায়, শহরে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১২০ মেগাওয়াট। তার বিপরীতে পাওয়া গেছে ৯৫ মেগাওয়াট। নেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর রশিদ জানান, লোডশেডিং তো আছেই, তার ওপর অত্যধিক গরমের কারণে লাইনে অনেক বিঘ্ন ঘটছে। এটা ঠিক করতে গেলে অনেক সময় চলে যায়। এই জন্য মানুষের দুর্ভোগটা অনেক বেশি হচ্ছে।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা যায়, জেলার বাঘা, চারঘাট, দুর্গাপুর ও মোহনপুর উপজেলার পুরোটা এবং বাগমারার তাহেরপুর ও পুঠিয়ার বানেশ্বরের একটি করে ফিডারে সরবরাহ কম পাচ্ছে। যেমন বাঘায় আজ বিদ্যুতের মোট চাহিদা ছিল ১৮ মেগাওয়াট। তার বিপরীতে পাওয়া গেছে ৬ দশমিক ৪৫ মেগাওয়াট।

লোডশোডিং ও গরমের কারণে গাছতলায় চলছে পাঠদান। সোমবার দুপুরে বাঘা উপজেলার কাদিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে

লোডশোডিং ও গরমের কারণে গাছতলায় চলছে পাঠদান। সোমবার দুপুরে বাঘা উপজেলার কাদিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে

বাঘা উপজেলার কাদিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাহামুদুল হাসান জানান, বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষের ভেতরে থাকতে পারছিল না। বাধ্য হয়ে তাঁরা প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ক্লাস গাছতলায় নিয়েছেন। তাঁরা ভেবেছিলেন, পরের ক্লাসগুলো শ্রেণিকক্ষে নেওয়া যাবে। কিন্তু বিদ্যুতের অবস্থা একই ছিল। তাই পরের ক্লাসগুলোও বাইরে নিতে হয়েছে।

রাজশাহী নগরের লক্ষ্মীপুর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তাঁদের প্রায় ১ হাজার ১০০ শিক্ষার্থী। চারদিকে দেয়াল ঘেরা এই বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে বৈদ্যুতিক পাখা ছাড়া টিকে থাকা কষ্টকর। ঘণ্টায় ঘণ্টায় বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার কারণে শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে থাকতে পারছিল না। বাধ্য হয়ে বেলা আড়াইটার দিকে কর্তৃপক্ষ বিদ্যালয়ের আগাম ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়।

নগরের তালাইমারী এলাকায় পদ্মা নদীর ধারে আলোর পাঠশালায় গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীরা ছুটে বাইরে বের হচ্ছে। দৌড়ে গাছতলায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে। বই-খাতা দিয়ে গায়ে বাতাস করছে।

এদিকে অতিরিক্ত গরমের কারণে রাজশাহীর কোর্টবাজার ও হড়গ্রাম বাজার এলাকায় মহানগর যুবদলের সদস্যসচিব রফিকুল ইসলাম সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে পথচারী ও খেটে খাওয়া মানুষের মধ্যে শরবত বিতরণ করেছেন।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৪:৩২:৫৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
৫৪
Translate »

রাজশাহীতে বিদ্যুৎহীন ভ্যাপসা গরমে শিক্ষার্থীদের ক্লাস গাছতলায়

আপডেট : ০৪:৩২:৫৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

লোডশেডিং আর ভ্যাপসা গরমের কারণে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পীরগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গাছতলায় ক্লাস করাচ্ছেন শিক্ষকেরা। সোমবার সকালেছবি:সংগৃহীত

রাজশাহীতে আজ সোমবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে অসহনীয় লোডশেডিং, সেই সঙ্গে ভ্যাপসা গরম। কোনো কোনো বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষের ভেতরে টিকতে না পেরে বাইরে গাছের নিচে দাঁড়ায়। শিক্ষকেরা সেখানেই গিয়ে ক্লাস নিয়েছেন। কোনো কোনো বিদ্যালয়ে আগাম ছুটি দেওয়া হয়েছে।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, আজ সকাল ৬টা ও সন্ধ্যা ৬টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮৯ শতাংশ। বেলা ৩টায় আর্দ্রতা ছিল ৭২ শতাংশ। আবার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধানও কম। যে কারণে গরম অনুভূত হচ্ছে অনেকে বেশি। বেলা ৩টায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সকাল ৬টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এদিকে দিনভর বিদ্যুতের লোডশেডিং ছিল অনেক বেশি। রাজশাহী শহরের বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা নেসকো সূত্রে জানা যায়, শহরে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১২০ মেগাওয়াট। তার বিপরীতে পাওয়া গেছে ৯৫ মেগাওয়াট। নেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর রশিদ জানান, লোডশেডিং তো আছেই, তার ওপর অত্যধিক গরমের কারণে লাইনে অনেক বিঘ্ন ঘটছে। এটা ঠিক করতে গেলে অনেক সময় চলে যায়। এই জন্য মানুষের দুর্ভোগটা অনেক বেশি হচ্ছে।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা যায়, জেলার বাঘা, চারঘাট, দুর্গাপুর ও মোহনপুর উপজেলার পুরোটা এবং বাগমারার তাহেরপুর ও পুঠিয়ার বানেশ্বরের একটি করে ফিডারে সরবরাহ কম পাচ্ছে। যেমন বাঘায় আজ বিদ্যুতের মোট চাহিদা ছিল ১৮ মেগাওয়াট। তার বিপরীতে পাওয়া গেছে ৬ দশমিক ৪৫ মেগাওয়াট।

লোডশোডিং ও গরমের কারণে গাছতলায় চলছে পাঠদান। সোমবার দুপুরে বাঘা উপজেলার কাদিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে

লোডশোডিং ও গরমের কারণে গাছতলায় চলছে পাঠদান। সোমবার দুপুরে বাঘা উপজেলার কাদিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে

বাঘা উপজেলার কাদিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাহামুদুল হাসান জানান, বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষের ভেতরে থাকতে পারছিল না। বাধ্য হয়ে তাঁরা প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ক্লাস গাছতলায় নিয়েছেন। তাঁরা ভেবেছিলেন, পরের ক্লাসগুলো শ্রেণিকক্ষে নেওয়া যাবে। কিন্তু বিদ্যুতের অবস্থা একই ছিল। তাই পরের ক্লাসগুলোও বাইরে নিতে হয়েছে।

রাজশাহী নগরের লক্ষ্মীপুর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তাঁদের প্রায় ১ হাজার ১০০ শিক্ষার্থী। চারদিকে দেয়াল ঘেরা এই বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে বৈদ্যুতিক পাখা ছাড়া টিকে থাকা কষ্টকর। ঘণ্টায় ঘণ্টায় বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার কারণে শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে থাকতে পারছিল না। বাধ্য হয়ে বেলা আড়াইটার দিকে কর্তৃপক্ষ বিদ্যালয়ের আগাম ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়।

নগরের তালাইমারী এলাকায় পদ্মা নদীর ধারে আলোর পাঠশালায় গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীরা ছুটে বাইরে বের হচ্ছে। দৌড়ে গাছতলায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে। বই-খাতা দিয়ে গায়ে বাতাস করছে।

এদিকে অতিরিক্ত গরমের কারণে রাজশাহীর কোর্টবাজার ও হড়গ্রাম বাজার এলাকায় মহানগর যুবদলের সদস্যসচিব রফিকুল ইসলাম সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে পথচারী ও খেটে খাওয়া মানুষের মধ্যে শরবত বিতরণ করেছেন।