London ১০:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম:
চারঘাটে ডোবা থেকে যুবকের লা’শ উদ্ধার কালিয়াকৈরে ভুল রক্ত পুশে সিজারের রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ কালিয়াকৈর উপজেলা সূত্রাপুর এলাকায় চলন্ত অ্যাম্বুলেন্সে আগুনে পুড়ে ছাই কালিয়াকৈর ঘনঘন লোডশেডিংয়ের কারনে চরম ভোগান্তিতে দৈনন্দিন জনজীবন কালিয়া হরিপুরে নারীদের ফ্যামিলি কার্ড কার্যক্রমে তৃণমূল নারীদের জাগরণে ইব্রাহিম মোল্লা রাণীনগরে মৌসুমীর উদ্যোগে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্প অনুষ্ঠিত বিএনপির নতুন সদস্য সংহের ফরম বিতরন ও নবায়ন কমসুচি ধানখেত থেকে নারীর লাশ উদ্ধার সিরাজগঞ্জে চুরির মহামারি: সাংবাদিকের মোটরসাইকেল চুরি, নাগরিকদের মধ্যে চরম উদ্বেগ কালিয়াকৈরে হাজী বাড়ী ফুটবল প্রিমিয়ার লীগের ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত

রাজশাহীতে নতুন জাতের আম কটিমন

মো: গোলাম কিবরিয়া,রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি

আমাদের দেশে আমের মৌসুম শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু মৌসুম শেষে বরেন্দ্র অঞ্চলে দেখা যাচ্ছে এক ভিন্ন চিত্র। এখানে এখনো গাছে গাছে ঝুলছে সুস্বাদু আম, যেন নতুন করে শুরু হচ্ছে আমের মৌসুম। বিশেষ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় শত শত বাগান জুড়ে ঝুলছে থোকায় থোকায় কাটিমন আম।

কৃষিবিদদের মতে, কাটিমন বা সুইট কাটিমন হলো থাইল্যান্ড থেকে আনা একটি প্রজাতি। দেশীয় জাতের বাইরে সারাবছর চাষ করা যায় বলে এর বাণিজ্যিক সম্ভাবনা অনেক। মৌসুমের বাইরেও বাজারে এই আমের চাহিদা থাকে, ফলে দামও ভালো। চাষিরা বছরে দু’বার আম সংগ্রহ করতে পারেন। এজন্যই দিন দিন বাড়ছে কাটিমন চাষে আগ্রহ।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার আমনুরা থেকে নাচোল-আড্ডা, নওগাঁর পোরশা-নিয়ামতপুর সড়ক কিংবা তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা থেকে কলমা পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে অসংখ্য কাটিমন আমের বাগান। নাচোল উপজেলার লক্ষিপুর মোড়ের একটি বাগানে দেখা যায়—ছোট ছোট গাছে ঝুলছে টসটসে আম, যা পথচারীদের দৃষ্টি কাড়ছে।

বাগানের মালিক টি ইসলাম বলেন, আগে তিনি সাত বিঘা জমিতে কাটিমন আম চাষ শুরু করেন। বর্তমানে তার সাতটি বাগানে ১৫ থেকে ১৬ হাজার গাছ রয়েছে। সবগুলোতেই ফলন আসছে। বাজারে পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি আম ২০০–৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বছরে দু’বার আম সংগ্রহ করে তিনি কয়েক লাখ টাকা আয় করছেন।

রাজশাহীর তানোর উপজেলার কৃষক তাবারক হোসেন জানান, আগে তিনি দেশি জাতের আম (গোপাল ভোগ, নেংড়া, ঘিরসা) চাষ করতেন। কিন্তু খরচের তুলনায় লাভ না হওয়ায় সেগুলো কেটে এখন ২৫ বিঘা জমিতে প্রায় আড়াই হাজার কাটিমন গাছ করেছেন। চলতি বছরই তিনি ভালো ফলনের আশা করছেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের কৃষিবিদ ড. জহুরুল ইসলাম বলেন, পরীক্ষামূলক সফলতার পর কাটিমন চাষ নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হর্টিকালচার সেন্টার ও নার্সারির মাধ্যমে এই আমের চারা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে রাজশাহী, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের চাষিরা বেশি আগ্রহী।

তিনি আরও জানান, কাটিমন চাষে বাড়তি যত্ন প্রয়োজন। এটি মূলত শুষ্ক আবহাওয়ার ফসল। দেশি আমের তুলনায় কাটিমন গাছে আলাদা পরিচর্যা লাগে। মৌসুমের বাইরে ফলন চাইলে আমের মৌসুমে আসা মুকুল বা গুটি ছেঁটে দিতে হয়, যাকে বলা হয় প্রুনিং। এটি কাটিমন চাষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।

বরেন্দ্র অঞ্চলের গ্রামীণ সড়ক দিয়ে যেকোনো পথচারী গেলেই দেখতে পাবেন আমে ভরা ছোট-বড় বাগান। মৌসুম শেষ হলেও গাছে ঝুলন্ত কাটিমন আম মনে করিয়ে দিচ্ছে—বরেন্দ্রে যেন বারোমাসই আমের উৎসব।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৩:৫৬:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
৫০
Translate »

রাজশাহীতে নতুন জাতের আম কটিমন

আপডেট : ০৩:৫৬:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আমাদের দেশে আমের মৌসুম শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু মৌসুম শেষে বরেন্দ্র অঞ্চলে দেখা যাচ্ছে এক ভিন্ন চিত্র। এখানে এখনো গাছে গাছে ঝুলছে সুস্বাদু আম, যেন নতুন করে শুরু হচ্ছে আমের মৌসুম। বিশেষ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় শত শত বাগান জুড়ে ঝুলছে থোকায় থোকায় কাটিমন আম।

কৃষিবিদদের মতে, কাটিমন বা সুইট কাটিমন হলো থাইল্যান্ড থেকে আনা একটি প্রজাতি। দেশীয় জাতের বাইরে সারাবছর চাষ করা যায় বলে এর বাণিজ্যিক সম্ভাবনা অনেক। মৌসুমের বাইরেও বাজারে এই আমের চাহিদা থাকে, ফলে দামও ভালো। চাষিরা বছরে দু’বার আম সংগ্রহ করতে পারেন। এজন্যই দিন দিন বাড়ছে কাটিমন চাষে আগ্রহ।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার আমনুরা থেকে নাচোল-আড্ডা, নওগাঁর পোরশা-নিয়ামতপুর সড়ক কিংবা তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা থেকে কলমা পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে অসংখ্য কাটিমন আমের বাগান। নাচোল উপজেলার লক্ষিপুর মোড়ের একটি বাগানে দেখা যায়—ছোট ছোট গাছে ঝুলছে টসটসে আম, যা পথচারীদের দৃষ্টি কাড়ছে।

বাগানের মালিক টি ইসলাম বলেন, আগে তিনি সাত বিঘা জমিতে কাটিমন আম চাষ শুরু করেন। বর্তমানে তার সাতটি বাগানে ১৫ থেকে ১৬ হাজার গাছ রয়েছে। সবগুলোতেই ফলন আসছে। বাজারে পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি আম ২০০–৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বছরে দু’বার আম সংগ্রহ করে তিনি কয়েক লাখ টাকা আয় করছেন।

রাজশাহীর তানোর উপজেলার কৃষক তাবারক হোসেন জানান, আগে তিনি দেশি জাতের আম (গোপাল ভোগ, নেংড়া, ঘিরসা) চাষ করতেন। কিন্তু খরচের তুলনায় লাভ না হওয়ায় সেগুলো কেটে এখন ২৫ বিঘা জমিতে প্রায় আড়াই হাজার কাটিমন গাছ করেছেন। চলতি বছরই তিনি ভালো ফলনের আশা করছেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের কৃষিবিদ ড. জহুরুল ইসলাম বলেন, পরীক্ষামূলক সফলতার পর কাটিমন চাষ নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হর্টিকালচার সেন্টার ও নার্সারির মাধ্যমে এই আমের চারা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে রাজশাহী, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের চাষিরা বেশি আগ্রহী।

তিনি আরও জানান, কাটিমন চাষে বাড়তি যত্ন প্রয়োজন। এটি মূলত শুষ্ক আবহাওয়ার ফসল। দেশি আমের তুলনায় কাটিমন গাছে আলাদা পরিচর্যা লাগে। মৌসুমের বাইরে ফলন চাইলে আমের মৌসুমে আসা মুকুল বা গুটি ছেঁটে দিতে হয়, যাকে বলা হয় প্রুনিং। এটি কাটিমন চাষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।

বরেন্দ্র অঞ্চলের গ্রামীণ সড়ক দিয়ে যেকোনো পথচারী গেলেই দেখতে পাবেন আমে ভরা ছোট-বড় বাগান। মৌসুম শেষ হলেও গাছে ঝুলন্ত কাটিমন আম মনে করিয়ে দিচ্ছে—বরেন্দ্রে যেন বারোমাসই আমের উৎসব।