London ০১:০৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যৌবনের ইবাদত যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ

অনলাইন ডেস্ক

যৌবন মানুষের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। এ সময় মানুষের শরীরে শক্তি-সামর্থ্য পূর্ণ মাত্রায় থাকে। প্রবৃত্তি পরিপূর্ণ সক্রিয় থাকে। কুপ্রবৃত্তি ও শয়তানের পক্ষ থেকে গুনাহের প্ররোচনা বা উস্কানিও বেশি থাকে। এ সময় যে নিজেকে গুনাহ থেকে রক্ষা করতে পারে, আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকতে পারে, আল্লাহর কাছে তার রয়েছে বিশেষ মর্যাদা।

হাদিসে রাসুল (সা.) যৌবনে ইবাদতকারীকে ওই সাত শ্রেণীর মানুষের অন্তর্ভুক্ত করেছেন, যারা কেয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের ছায়া পাবে। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যেদিন আরশের ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না, সেদিন আল্লাহ তাআলা সাত ব্যক্তিকে ছায়া দান করবেন। তারা হলো, ন্যায়পরায়ণ শাসক, সেই যুবক যার যৌবন আল্লাহ ইবাদতে অতিবাহিত হয়, সেই ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদের দিকে আকৃষ্ট থাকে। সেই দুই ব্যক্তি যারা আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা স্থাপন করে; তার জন্য মিলিত হয় এবং তার জন্যই বিচ্ছিন্ন হয়। সেই ব্যক্তি যাকে কোন অভিজাত রূপবতী নারী অবৈধ সম্পর্কের উদ্দেশ্যে ডাকে, কিন্তু সে বলে, আমি আল্লাহকে ভয় করি। সেই ব্যক্তি যে গোপনে দান করে; তার ডান হাত যা দান করে, তা তার বাম হাতও জানতে পারে না। সেই ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে; ফলে তার উভয় চোখ অশ্রুতে ভেসে যায়। (সহিহ বুখারি ৬৮০৬, সহিহ মুসলিম ২৪২৭)

ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, পাঁচটি জিনিসকে পাঁচটির আগে মূল্যায়ন করো; বার্ধক্যের আগে তোমার যৌবনকে, অসুস্থতার আগে তোমার সুস্থতাকে, দারিদ্রের আগে তোমার স্বচ্ছলতাকে, ব্যস্ততার আগে তোমার অবসরকে এবং মৃত্যুর আগে তোমার জীবনকে। (মুসতাদরাকে হাকেম)

কোরআনে সুরা তীনে আল্লাহ বলেছেন,

لَقَدۡ خَلَقۡنَا الۡاِنۡسَانَ فِیۡۤ اَحۡسَنِ تَقۡوِیۡمٍ ثُمَّ رَدَدۡنٰهُ اَسۡفَلَ سٰفِلِیۡنَ اِلَّا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ فَلَهُمۡ اَجۡرٌ غَیۡرُ مَمۡنُوۡنٍ

অবশ্যই আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি সর্বোত্তম গঠনে। তারপর আমি তাকে ফিরিয়ে দিয়েছি হীনদের হীনতম রূপে। তবে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে, তাদের জন্য রয়েছে নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার।

এ আয়াতগুলোর ব্যাখ্যায় মুফাসরিরা লিখেছেন, এখানে আল্লাহ বা ‘তাকে ফিরিয়ে দিয়েছি হীনদের হীনতম রূপে’ বলে মানুষের ওই বয়সের দিকে ইঙ্গিত করেছেন, যখন মানুষ বয়সের ভারে ন্যুজ হয়ে পড়ে, স্বাভাবিক শক্তি হারিয়ে ফেলে, জ্ঞান-বুদ্ধি হারিয়ে ফেলে। সবার ক্ষেত্রে ওই বয়স হীনতম হলেও মুমিনদের ক্ষেত্রে নয় যারা তাদের যৌবন আল্লাহর ইবাদতে ব্যায় করেছে। কারণ তাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে রয়েছে নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার। বয়সের এ পর্যায়েও তারা ওই নেক কাজগুলোর সওয়াব পেতে থাকবে যা তারা যৌবনে করতো, বার্ধক্যের কারণে করতে পারছে না। (তাফসিরে তাবারী)

হাদিসেও এ রকম বক্তব্য পাওয়া যায়। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কোনো মুসলমান অসুস্থ হয়ে পড়লে অথবা মুসাফির হলে আল্লাহ তা’আলা আমল লেখক ফেরেশতাগণকে আদেশ দেন, সুস্থ অবস্থায় সে যেসব নেককাজ করত, সেগুলো তার আমলনামায় লিপিবদ্ধ করতে থাক। (সহিহ বুখারি)

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৩:৫১:৪১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৪
১৬
Translate »

যৌবনের ইবাদত যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ

আপডেট : ০৩:৫১:৪১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৪

যৌবন মানুষের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। এ সময় মানুষের শরীরে শক্তি-সামর্থ্য পূর্ণ মাত্রায় থাকে। প্রবৃত্তি পরিপূর্ণ সক্রিয় থাকে। কুপ্রবৃত্তি ও শয়তানের পক্ষ থেকে গুনাহের প্ররোচনা বা উস্কানিও বেশি থাকে। এ সময় যে নিজেকে গুনাহ থেকে রক্ষা করতে পারে, আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকতে পারে, আল্লাহর কাছে তার রয়েছে বিশেষ মর্যাদা।

হাদিসে রাসুল (সা.) যৌবনে ইবাদতকারীকে ওই সাত শ্রেণীর মানুষের অন্তর্ভুক্ত করেছেন, যারা কেয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের ছায়া পাবে। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যেদিন আরশের ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না, সেদিন আল্লাহ তাআলা সাত ব্যক্তিকে ছায়া দান করবেন। তারা হলো, ন্যায়পরায়ণ শাসক, সেই যুবক যার যৌবন আল্লাহ ইবাদতে অতিবাহিত হয়, সেই ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদের দিকে আকৃষ্ট থাকে। সেই দুই ব্যক্তি যারা আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা স্থাপন করে; তার জন্য মিলিত হয় এবং তার জন্যই বিচ্ছিন্ন হয়। সেই ব্যক্তি যাকে কোন অভিজাত রূপবতী নারী অবৈধ সম্পর্কের উদ্দেশ্যে ডাকে, কিন্তু সে বলে, আমি আল্লাহকে ভয় করি। সেই ব্যক্তি যে গোপনে দান করে; তার ডান হাত যা দান করে, তা তার বাম হাতও জানতে পারে না। সেই ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে; ফলে তার উভয় চোখ অশ্রুতে ভেসে যায়। (সহিহ বুখারি ৬৮০৬, সহিহ মুসলিম ২৪২৭)

ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, পাঁচটি জিনিসকে পাঁচটির আগে মূল্যায়ন করো; বার্ধক্যের আগে তোমার যৌবনকে, অসুস্থতার আগে তোমার সুস্থতাকে, দারিদ্রের আগে তোমার স্বচ্ছলতাকে, ব্যস্ততার আগে তোমার অবসরকে এবং মৃত্যুর আগে তোমার জীবনকে। (মুসতাদরাকে হাকেম)

কোরআনে সুরা তীনে আল্লাহ বলেছেন,

لَقَدۡ خَلَقۡنَا الۡاِنۡسَانَ فِیۡۤ اَحۡسَنِ تَقۡوِیۡمٍ ثُمَّ رَدَدۡنٰهُ اَسۡفَلَ سٰفِلِیۡنَ اِلَّا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ فَلَهُمۡ اَجۡرٌ غَیۡرُ مَمۡنُوۡنٍ

অবশ্যই আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি সর্বোত্তম গঠনে। তারপর আমি তাকে ফিরিয়ে দিয়েছি হীনদের হীনতম রূপে। তবে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে, তাদের জন্য রয়েছে নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার।

এ আয়াতগুলোর ব্যাখ্যায় মুফাসরিরা লিখেছেন, এখানে আল্লাহ বা ‘তাকে ফিরিয়ে দিয়েছি হীনদের হীনতম রূপে’ বলে মানুষের ওই বয়সের দিকে ইঙ্গিত করেছেন, যখন মানুষ বয়সের ভারে ন্যুজ হয়ে পড়ে, স্বাভাবিক শক্তি হারিয়ে ফেলে, জ্ঞান-বুদ্ধি হারিয়ে ফেলে। সবার ক্ষেত্রে ওই বয়স হীনতম হলেও মুমিনদের ক্ষেত্রে নয় যারা তাদের যৌবন আল্লাহর ইবাদতে ব্যায় করেছে। কারণ তাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে রয়েছে নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার। বয়সের এ পর্যায়েও তারা ওই নেক কাজগুলোর সওয়াব পেতে থাকবে যা তারা যৌবনে করতো, বার্ধক্যের কারণে করতে পারছে না। (তাফসিরে তাবারী)

হাদিসেও এ রকম বক্তব্য পাওয়া যায়। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কোনো মুসলমান অসুস্থ হয়ে পড়লে অথবা মুসাফির হলে আল্লাহ তা’আলা আমল লেখক ফেরেশতাগণকে আদেশ দেন, সুস্থ অবস্থায় সে যেসব নেককাজ করত, সেগুলো তার আমলনামায় লিপিবদ্ধ করতে থাক। (সহিহ বুখারি)