যেকোনো মূল্যে এনআইডি’র দুর্নীতি বন্ধ করা হবে: ডিজি এনআইডি
নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এএসএম হুমাযুন কবীর বলেন, দুর্নীতি বন্ধ করতে আমরা চেষ্টা করছি. তিন মাস পরে আশা করি ভোগান্তি থাকবে না।
রবিবার (২২ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য যাচাইয়ের চুক্তি বাতিল করার পর নির্বাচন কমিশন ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
তিনি বলেন, দুর্নীতি রোধ করতে বাই এনি কষ্ট আমরা চেষ্টা করছি তিন মাস পরে আশা করি ভোগান্তি থাকবে না৷ আপনারা আমাদের সজাগ রাখবেন, আমরা সজাগ থাকবো।
এএসএম হুমাযুন কবীর বলেন, ইসি থেকে আমরা আমাদের ডাটা সেন্টার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহারের সুযোগ দিয়ে থাকি। আমাদের কিছু নিয়ম কানুন আছে। আমরা ১৮৩টি প্রতিষ্ঠানকে চুক্তির ভিত্তিতে সেবা দিয়ে থাকি। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) সাথেও আমাদের একটা চুক্তি ছিল।
বিসিসি তৃতীয় পক্ষকে তথ্য দেওয়া প্রক্রিয়ায় ইসির কিছু কর্মকর্তা সস্পৃক্ত ছিল, ডিজিকনের হাতে তথ্য দেওয়া হয়েছে, সেই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেবেন কি-না। এছাড়া ডিজিকন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন বাংলাদেশ পুলিশসহ গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা রয়েছে, তারা আপনাদের এখনো পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে কিনা, যে সরকারি কাজ বা তাদের কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে?
এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চুক্তি বাতিল হয়েছে। এখন যারা এর সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের তো বাচবার আসলে কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচন কমিশন নিশ্চয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে কেউ অফিশিয়ালি সেবা বন্ধ হওয়ায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠাগুলোর কেউ কোনো অসুবিধার কথা জানায়নি৷
তিনি বলেন, অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ইসির চুক্তি ছিল। কিন্তু যখন বিসিসি পরিচয়ের সূত্রধরে তারা নিজেদের মতো করে একটি সেবা চালু করে যেখানে ইসির কোনো সমর্থন ছিল না৷ তা সত্ত্বেও তারা আমাদের সঙ্গে ছিল এমনও কিছু প্রতিষ্ঠান ওখানেও চুক্তি করে। এইটা আমাদের কাছে এখনো বোধগম্য নয়৷ কারণে যেখানে আমাদের সঙ্গে চুক্তি করলে স্বল্প পয়সায় সেবা পাওয়া যায়, সেখানে ওরা বেশি পয়সা ছিল বলে আমরা জানতে পেরেছি৷ তারপরও তারা ওখানে কেন করেছে সেটাও কিন্তু একটা বিশাল বিষয়। আমার ধারণা যে সম্ভবত এখনো যারা দুই বছর জায়গায় চুক্তি করেছে তাদের যেহেতু আমাদের এখান থেকে সেবা নিতে অসুবিধা নেই, তাই তারা সমস্যায় পড়ছে না৷
এছাড়া চুক্তি বাতিল করলেও তো তাদের কাছে এনআইডি সার্ভারের তথ্য থাকছে-এমন বিষয় সামনে আনলে তিনি বলেন, আমাদের যে সিস্টেমটা কাজ করে, এখানে অনেক তথ্য আছে। ভোটার তালিকায় বাইপ্রোডাক্ট হিসেবে এনআই তথ্য ভাণ্ডার। আর ওদের সব তথ্য প্রয়োজন হয় না। কাউকে তিনটা, কাউকে চারটা এরকমভাবে তথ্য দেয়া হয়। যার সাথে যে-রকম চুক্তি আছে, আমরা সে রকম তথ্য দিয়ে থাকি। বিসিসকেও চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট কিছু তথ্য দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে তারা তথ্যভাণ্ডার গড়ে তুলতে পেরেছেন কিনা সেটা আমরা নিশ্চিত নই।
চুক্তি আগে তারা নয় কোটি মানুষের তথ্য তারা নিয়েছে, এই ঘটনায় আপনারা কোনো মামলা করবেন কিনা, আর কত টাকা বকেয়া আছে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুই কোটি টাকা বকেয়া আছে। সেটা সরকারের কোষাগারে দেওয়ার কথা ছিল। ১৫ দিনের মধ্যে টাকা দিতে বলেছিলাম চিঠিতে।নয়কোটির বিষয়টি জানা নেই। ইসির কাছে এই তথ্যটা নেই। বিসিসি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। ইসিও সরকারি প্রতিষ্ঠান৷ যেহেতু চুক্তি বাতিল ও সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে, তার মানে ইনটেনশনটা বুঝতে পারছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,তারা তথ্যভাণ্ডার করে থাকলে নির্বাচন কমিশন নিশ্চয় যে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত সেটাই নেওয়া হবে।
তিনি বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) সঙ্গে চুক্তি বাতিলের কারণ উল্লেখ করে বলেন,গত ২০২২ সালের ৪ অক্টোবর নিবন্ধনের মাধ্যমে তথ্য উপাত্ত যাচাইয়ে ইসির সাথে বিসিসি’র দ্বিপাক্ষিক চুক্তি হয়। শর্ত অনুযায়ী, এনআইডি সার্ভারের তথ্য অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি, সত্তা বা পক্ষকে হস্তান্তর করতে পারবে না৷ অথবা বিনিময়, বিক্রয় কিংবা অন্য কোনো পন্থায় দিতে পারবে না৷ এই শর্ত ছিল৷ কিন্তু বিসিসি সেটা লঙ্ঘন করেছে। এইজন্য ইসি থেকে প্রথমে কারণ দর্শায়। দীর্ঘদিন তারা কোনো জবাব দেয়নি৷ নিরব ছিলেন।
পরবর্তীতে গত ৬ অক্টোবর তিন কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হলে বিসিসি একটা জবাব দেয়। তবে যা জানতে চাওয়া হয়েছিল সুনির্দিষ্টভাবে, তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল না। এজন্য ইসি জবাবটি গ্রহণ করেনি৷ যেহেতু তারা চুক্তি লঙ্ঘন করেছিল, এবং চুক্তিতে বলা ছিল, এই চুক্তি লঙ্ঘন করলে নির্বাচন কমিশন চুক্তি বাতিল করতে পারবে৷ তারই ধারাবাহিকতায় চুক্তিটি বাতিল করা হয়েছে৷
একই সঙ্গে তাদের যে এপিআই (এনআইডি যাচাইয়ের লিংক) সংযোগটি ছিল সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আরেকটা বিষয়টা ছিল বকেয়া থাকলেও চুক্তি বাতিল করার শর্ত ছিল। তারা বকেয়াও পরিশোধ করেননি পুরোপুরি৷ দ্বিতীয় চিঠি দেওয়ার পর তারা কিছু বকেয়া পরিশোধ করেছিল৷ কিন্তু এখনো একটা বিপুল অংকের টাকা বকেয়া আছে। এই দুই কারণে চুক্তি বাতিল হয়।