অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে বাধা দেওয়ায় লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় ইউপি সদস্যের হামলায় যুবদল-ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মী ও ভিডিও ধারণ করা এক সাংবাদিকের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। হামলায় আহত চারজন আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ ঘটনায় শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে চ্যানেল-২৪এর সাংবাদিক মাহফুজুল ইসলাম বকুল আদিতমারী থানায় স্থানীয় মহিষখোচা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য আবু তালেব আবুসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
বাকি আহতরা হলেন- মহিষখোচা ইউনিয়ন যুবলের সহ-সভাপতি সুমন মিয়া (৩৫), সিনিয়র সহ-সভাপতি নুরুন নবী জুয়েল (৩৭), মহিষখোচা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মমিন (২৬), যুবদল সদস্য নুর আলম (৩২)। এছাড়াও যুবদল সভাপতি ওয়াহেদুজ্জামান আবির প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে মহিষখোচা ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি ওয়াহেদুজ্জামান আবিরসহ যুবদলের বেশ কয়েকজন নেতা বালু বিক্রির খবর পেয়ে চন্ডিমারী গ্রামে যান। এ খবর জানতে পেরে সাংবাদিক মাহফুজুল ইসলাম বকুলও ওই চন্ডিমারী গ্রামে যান। সেখানে তিনি দেখতে পান রাতের আঁধারে তিস্তা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে ট্রাকে করে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।সাংবাদিক বকুল ঘটনাটি ভিডিও ধারণ করার সময় ইউপি সদস্য আবু তালেব আবু ও তার লোকজন তাকে বাঁধা দেয়। এক পর্যায়ে তারা তাকে গালিগালাজ করে ক্যামেরা ছিনিয়ে নেন এবং মারধরের চেষ্টা করে। এ সময় হামলাকারীরা তার মোটরসাইকেলও ভাঙচুর করে।
সাংবাদিক মাহফুজুল ইসলাম বকুল বলেন, ‘মহিষখোচা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি দুলাল মিয়ার প্রত্যক্ষ মদদে তিস্তা নদী থেকে প্রতিদিন রাতের আঁধারে ট্রাকে করে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছেন ইউপি সদস্য আবু তালেব ও তার লোকজন। স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। প্রশাসনও অভিযান চালাচ্ছে না। ভিডিও ধারণের সময় তারা হামলা চালায় এবং আমার ক্যামেরা, মোটরসাইকেল ও ব্যাগে থাকা অন্য সরঞ্জাম নিয়ে যায়। আমি থানায় অভিযোগ দিয়েছি পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছে।’
মহিষখোচা ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবু বলেন, ‘ভালো কাজে বাঁধা দিতে গিয়ে দলের নেতাকর্মীসহ সাংবাদিকের ওপর যাদের প্রত্যক্ষ মদদে এই হামলা হয়েছে তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহিষখোচা এলাকার একাধিক মানুষ অভিযোগ করে বলেন, ‘এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তিস্তার বালু উত্তোলন করে একাধিক মানুষ যেমন রাতারাতি আঙুল ফুলে কলা গাছ হয়েছেন। তেমনি আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আরেকটি দলের নেতারাও ঠিক একই কাজ করে যাচ্ছে।’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য আবু তালেব আবু বলেন, ‘আমার জমি নদীতে ভেঙে চর হয়েছে, সেই বালু আমি বিক্রি করছি। সাংবাদিক কেন মাঝরাতে সেখানে গেলেন তা আমি জানি না। তার মোটরসাইকেল বা ক্যামেরা আমি নিইনি। ট্রাকের চালকদের সঙ্গে তার হাতাহাতি হয়েছে বলে শুনেছি।’
অভিযোগ অস্বীকার করেন মহিষখোচা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি দুলাল মিয়াও।
মহিষখোচা ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি ও মহিষখোচা ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল মজিত হোচত বলেন, ‘আমাদের দলের সভাপতি দুলালসহ দলের কতিপয় নেতারা এই বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত। আমি বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্যারকে অবগত করেছি।’
আদিতমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আকবর বলেন, ‘সাংবাদিকের ওপর এমন আচরণ মেনে নেওয়া যায় না। আমরা অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত করে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’