London ১১:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৫, ১৪ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মৃত্যুও বিচ্ছিন্ন করতে পারল না দুই বন্ধুকে

মিনহাজুর রহমান চৌধুরী ও শহীদুল ইসলাম

চট্টগ্রামের রাউজানে ট্রাকের ধাক্কায় আহত মোটরসাইকেল আরোহী শহীদুল ইসলামও (২৩) মৃত্যুর কাছে হার মানলেন। গতকাল শুক্রবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। এর আগে শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কের রাউজানের গহিরা এলাকায় শহীদুল ও তাঁর বন্ধু মিনহাজুর রহমান চৌধুরীকে (২৩) বহন করা মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয় একটি ট্রাক। ঘটনাস্থলে মারা যান মিনহাজুর রহমান। পরে রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শহীদুলেরও মৃত্যু হয়।

শহীদুল ও মিনহাজুরের বাড়ি রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ৮ নম্বর ওয়ার্ড সাতঘড়িয়া পাড়া গ্রামে। দুই বন্ধুর মৃত্যুতে এলাকায় শোকের পরিবেশ বিরাজ করছে। গ্রামবাসীর মুখে মুখে তাঁদের কথা। ছোটবেলা থেকে দুই তাঁদের একসঙ্গে বেড়ে ওঠা, চলাফেরা। এমনকি মৃত্যুও তাঁদের বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি।

পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাতে মিনহাজুর ও তাঁর বন্ধু শহীদুল মোটরসাইকেল নিয়ে ফটিকছড়ি উপজেলার মাইজভান্ডার দরবারে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে পরদিন ভোরে ফেরার পথে গহিরা এলাকায় উল্টো দিক থেকে আসা একটি ট্রাক তাঁদের মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। এ সময় দুই মোটরসাইকেল আরোহী সড়কে ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হন। তাঁদের উদ্ধার করে রাউজান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মিনহাজুরকে মৃত ঘোষণা করেন। রাত ১১টার দিকে আহত শহীদুল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

মিনহাজুরের বাবা মফিজুর রহমান চৌধুরী সংযুক্ত আরব আমিরাতপ্রবাসী। কয়েক মাস আগে ছুটিতে তিনি দেশে আসেন। আগামী ৬ অক্টোবর তাঁর আরব আমিরাতে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। পরিবারে এমন একটি বিপর্যয় তাঁর সবকিছু যেন এলোমেলো করে দিল। প্রবাসী বাবা কিছুতেই ছেলের মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না। তিনি বলেন, ‘মিনহাজুরের দেড় বছরের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। বাবাকে ঠিকমতো চেনার আগেই সে এতিম হয়ে গেল।’ গতকাল বেলা তিনটায় জানাজা শেষে মিনহাজুর রহমানের লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

মিনহাজুরের বন্ধু শহীদুল একটি খাদ্য পরিবেশক প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় কর্মী হিসেবে কাজ করতেন। তাঁর বাবা খোরশেদ আলম জানান, আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে শহীদুলের জানাজা শেষে লাশ দাফন করা হয়েছে।

রাউজান হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবাইদুল হক বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত দুজনের লাশ আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ১১:২৫:৫৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
৫৫
Translate »

মৃত্যুও বিচ্ছিন্ন করতে পারল না দুই বন্ধুকে

আপডেট : ১১:২৫:৫৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

মিনহাজুর রহমান চৌধুরী ও শহীদুল ইসলাম

চট্টগ্রামের রাউজানে ট্রাকের ধাক্কায় আহত মোটরসাইকেল আরোহী শহীদুল ইসলামও (২৩) মৃত্যুর কাছে হার মানলেন। গতকাল শুক্রবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। এর আগে শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কের রাউজানের গহিরা এলাকায় শহীদুল ও তাঁর বন্ধু মিনহাজুর রহমান চৌধুরীকে (২৩) বহন করা মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয় একটি ট্রাক। ঘটনাস্থলে মারা যান মিনহাজুর রহমান। পরে রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শহীদুলেরও মৃত্যু হয়।

শহীদুল ও মিনহাজুরের বাড়ি রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ৮ নম্বর ওয়ার্ড সাতঘড়িয়া পাড়া গ্রামে। দুই বন্ধুর মৃত্যুতে এলাকায় শোকের পরিবেশ বিরাজ করছে। গ্রামবাসীর মুখে মুখে তাঁদের কথা। ছোটবেলা থেকে দুই তাঁদের একসঙ্গে বেড়ে ওঠা, চলাফেরা। এমনকি মৃত্যুও তাঁদের বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি।

পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাতে মিনহাজুর ও তাঁর বন্ধু শহীদুল মোটরসাইকেল নিয়ে ফটিকছড়ি উপজেলার মাইজভান্ডার দরবারে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে পরদিন ভোরে ফেরার পথে গহিরা এলাকায় উল্টো দিক থেকে আসা একটি ট্রাক তাঁদের মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। এ সময় দুই মোটরসাইকেল আরোহী সড়কে ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হন। তাঁদের উদ্ধার করে রাউজান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মিনহাজুরকে মৃত ঘোষণা করেন। রাত ১১টার দিকে আহত শহীদুল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

মিনহাজুরের বাবা মফিজুর রহমান চৌধুরী সংযুক্ত আরব আমিরাতপ্রবাসী। কয়েক মাস আগে ছুটিতে তিনি দেশে আসেন। আগামী ৬ অক্টোবর তাঁর আরব আমিরাতে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। পরিবারে এমন একটি বিপর্যয় তাঁর সবকিছু যেন এলোমেলো করে দিল। প্রবাসী বাবা কিছুতেই ছেলের মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না। তিনি বলেন, ‘মিনহাজুরের দেড় বছরের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। বাবাকে ঠিকমতো চেনার আগেই সে এতিম হয়ে গেল।’ গতকাল বেলা তিনটায় জানাজা শেষে মিনহাজুর রহমানের লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

মিনহাজুরের বন্ধু শহীদুল একটি খাদ্য পরিবেশক প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় কর্মী হিসেবে কাজ করতেন। তাঁর বাবা খোরশেদ আলম জানান, আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে শহীদুলের জানাজা শেষে লাশ দাফন করা হয়েছে।

রাউজান হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবাইদুল হক বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত দুজনের লাশ আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।