কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে মায়ের সামনে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে ইমরান হোসেন নামে এক যুবককে নির্যাতন করা হয়েছে। এ ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
এ ঘটনায় শনিবার (২৫ জানুয়ারি) রাতে ইমরানের মা আফরোজা বেগম বাদী হয়ে অভিযুক্ত শহিদুর রেজা রতন মিয়াজীসহ ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত নামা আরও ৫ জনকে আসামি করে চৌদ্দগ্রাম থানায় একটি মামলা করেছেন।
শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) রাতে উপজেলার কনকাপৈত ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের মসজিদের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
নির্যাতনের শিকার ইমরান হোসেন উপজেলার কনকাপৈত ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের শাহ আলমের ছেলে। তিনি পেশায় একজন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। বর্তমানে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
পুলিশ সুত্র জানায়, শুক্রবার রাতে স্থানীয় তারাশাইল বাজারের বিকাশের দোকান থেকে ইমরান ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে স্থানীয় সন্ত্রাসী শহিদুর রেজা রতন মিয়াজীর নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী অস্ত্রের মুখে তাকে জিম্মি করে মারধর শুরু করে।
এ সময়ে তার চিৎকার শুনে মা আফরোজা বেগম এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা তাকেও অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ফেলে। পরে ইমরানকে মসজিদের সামনে একটি বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে বেঁধে মায়ের সামনে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন শুরু করে।
সন্ধ্যা ৬টা থেকে প্রায় রাত ৯টা পর্যন্ত এই নির্যাতন চলতে থাকে। একপর্যায়ে ইমরান অচেতন হয়ে পড়লে মৃত ভেবে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।
পরে স্বজনরা এগিয়ে এসে ইমরানকে উদ্ধার করে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে কুমিল্লায় পাঠানো হয়।
এদিকে নির্যাতনের একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সন্ত্রাসীরা এলাকা ছেড়ে গা-ঢাকা দেয়।
এ বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক জাবেদ হোসেন বলেন, রাত ১২টা ২০ মিনিটে মুমূর্ষু অবস্থায় ইমরান হোসেনকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তার পুরো শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আমরা তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছি।
ইমরানের মা আফরোজা বেগম বলেন, শহিদুর রেজা রতন মিয়াজী চিহ্নিত সন্ত্রাসী। এলাকায় তার নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী রয়েছে। তার সামাজিক অপকর্মের বিরুদ্ধে আমার ছেলে প্রায় সময়ই প্রতিবাদ করতো। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আমার ছেলেকে হুমকি দিয়ে আসছিল। শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে ইমরান তারাশাইল বাজারে দোকান থেকে টাকা উত্তলন করে ফেরার পথে তাকে একা পেয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মারধর শুরু করে। আমার ছেলের চিৎকার শুনে আমি এগিয়ে গেলে তারা আমাকেও অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ফেলে। এ সময়ে তারা মসজিদের সামনের একটি বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় প্রায় ৩ ঘণ্টা নির্যাতন করে মৃতভেবে ফেলে রেখে যায়।
চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, এ ঘটনায় শনিবার রাতে ইমরানের মা আফরোজা বেগম বাদী হয়ে অভিযুক্ত শহিদুর রেজা রতন মিয়াজীসহ ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত নামা আরও ৫ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেছেন। নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে যুক্ত সব আসামিকে গ্রেফতার করতে পুলিশ অভিযানে নেমেছে।