London ০২:৫৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১৮ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম:
‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ কোন পথে’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠিত নেত্রকোনা সীমান্তে টংক আন্দোলনের নেত্রী রাশি মণি’র হাজংয়ের ৭৯তম প্রয়াণ দিবস পালিত ফরিদপুরে রিকশা ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে চালককে হত্যা বিয়ে করলেন সারজিস আলম টিকটকে আসক্ত মেয়েকে গুলি করে হত্যা উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ প্লে-অফেই রিয়াল-সিটি লড়াই, বাকি ম্যাচে কে কার প্রতিপক্ষ ছাত্রলীগ কোনো প্রোগ্রাম করার চেষ্টা করলে ব্যবস্থা নেবে পুলিশ কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ ট্রাম্পের মঞ্চে কোমর ধরে তরুণীকে কাছে টেনে ফ্লার্টিং শাহরুখের! ভিডিও ভাইরাল ১৪ সেকেন্ডের দুষ্টু ভঙ্গির ভিডিওতে ঝড় তুললেন পরীমণি!

মহানবী (সা.)-এর কাছে সাহাবিদের বায়াত

উবাদা ইবনু সামিত (রা.), যিনি বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ও আকাবার রাতের একজন নকিব (নেতা), তিনি বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর পাশে একজন সাহাবির উপস্থিতিতে তিনি বলেন, তোমরা আমার কাছে এই মর্মে বায়াত গ্রহণ করো যে আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছুকে অংশীদার সাব্যস্ত করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, তোমাদের সন্তানদের হত্যা করবে না, কারো প্রতি মিথ্যা অপবাদ আরোপ করবে না এবং সৎ কাজে নাফরমানি করবে না। তোমাদের মধ্যে যে তা পূর্ণ করবে, তার পুরস্কার আল্লাহর কাছে আছে। আর কেউ এর কোনো একটিতে লিপ্ত হলে এবং দুনিয়ায় তার শাস্তি পেয়ে গেলে তা হবে তার জন্য কাফফারা (প্রতিবিধান)। আর কেউ এর কোনো একটিতে লিপ্ত হয়ে পড়লে এবং আল্লাহ তা অপ্রকাশিত রাখলে, তবে তা আল্লাহর ইচ্ছাধীন।

তিনি যদি চান, তাকে মার্জনা করবেন আর যদি চান, তাকে শাস্তি প্রদান করবেন। আমরা এর ওপর বায়াত গ্রহণ করলাম। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৮)আলোচ্য হাদিসে সাহাবায়ে কিরাম (রহ.)-এর কাছ থেকে বায়াত গ্রহণ করেছেন মহানবী (সা.)। তিনি গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি বিষয়ে বায়াত বা অঙ্গীকার গ্রহণ করেছেন।

তাহলো— ১. শিরক না করা, ২. চুরি না করা, ৩. ব্যভিচার না করা, ৪. সন্তান হত্যা না করা, ৫. মিথ্যা অপবাদ না দেওয়া, ৬. সৎ কাজে নাফরমানি না করা। হাদিসে উল্লিখিত প্রথম পাঁচটি বিষয় স্পষ্ট হলেও শেষ বিষয়টি ব্যাখ্যাসাপেক্ষ। তাহলো, সৎ কাজে নাফরমানি না করা। হাদিসবিশারদরা এই বাক্যের চারটি ব্যাখ্যা করেছেন—

১. পুণ্যরূপী পাপ না করা : শরিয়তের বিধান হলো মা-বাবার আনুগত্য করতে হবে। এটা সওয়াবের কাজ। কিন্তু তারা যদি ঈমানের পরিপন্থী কাজ করার বা কবিরা গুনাহে লিপ্ত হওয়ার নির্দেশ দেয়, তবে তা পালন করা যাবে না। যেমন—শিরক করা, নামাজ ত্যাগ করা, বেপর্দা হওয়া ইত্যাদি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘পাপের ক্ষেত্রে কোনো আনুগত্য নেই, আনুগত্য কেবল নেক কাজে।’
(সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭২৫৭)

২. জেনে-বুঝে পাপ না করা : হাদিসে ব্যবহৃত ‘মারুফ’ শব্দের অর্থ পরিচিত। অর্থাৎ যেসব বিষয় পুণ্য ও নেকি হিসেবে পরিচিত তা তোমরা পরিহার কোরো না। যেমন—নামাজ, রোজা, সৎ কাজের আদেশ দেওয়া ইত্যাদি; আর যা পাপ হিসেবে স্বীকৃত তাতে লিপ্ত হয়ো না। যেমন—চুরি, ডাকাতি, প্রতারণা ইত্যাদি। ইরশাদ হয়েছে, ‘স্মরণ করো লুতের কথা। সে তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, তোমরা জেনেশুনে কেন অশ্লীল কাজ করছ?’
(সুরা : নামল, আয়াত : ৫৪)

৩. ঈমানের আহ্বান প্রত্যাখ্যান না করা : মারুফ দ্বারা উদ্দেশ্য ঈমান ও নেক কাজের আহ্বান। যখন কাউকে নেক কাজের আহ্বান জানানো হয়, তখন তা প্রত্যাখ্যান করা নিন্দনীয়। তখন আলোচ্য বাক্যের অর্থ হবে ‘তোমরা নেক কাজের আহ্বানের ব্যাপারে অবাধ্য হয়ো না।’ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তাদের বলা হয়, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তা তোমরা অনুসরণ করো। তারা বলে, না, বরং আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদের যাতে পেয়েছি তার অনুসরণ করব। এমনকি তাদের পিতৃপুরুষরা যদিও কিছুই বুঝত না এবং তারা সৎপথেও পরিচালিত ছিল না, তার পরও?’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৭০)

৪. বিদআত পরিহার করা : পরবর্তী যুগের আলেমরা বলেন, এর দ্বারা বিদআত উদ্দেশ্য নেওয়ারও সুযোগ আছে। কেননা তা পুণ্যরূপী পাপ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সাবধান! (দ্বিনের নামে) প্রতিটি নব-আবিষ্কার সম্পর্কে! কেননা প্রতিটি নব-আবিষ্কার বিদআত এবং প্রতিটি বিদআত হলো ভ্রষ্টতা।’ (সুনানু আবি দাউদ, হাদিস : ৪৬০৭)

আল্লাহ সবাইকে জেনে-বুঝে ইবাদত করার তাওফিক দিন। আমিন।


সূত্র : মিরকাতুল মাফাতিহ : ১/৯১; ফাতহুল বারি : ১/৮১ ও

মাউসুয়াতুল হাদিস

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ১১:৪০:১৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর ২০২৪
৫১
Translate »

মহানবী (সা.)-এর কাছে সাহাবিদের বায়াত

আপডেট : ১১:৪০:১৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর ২০২৪

উবাদা ইবনু সামিত (রা.), যিনি বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ও আকাবার রাতের একজন নকিব (নেতা), তিনি বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর পাশে একজন সাহাবির উপস্থিতিতে তিনি বলেন, তোমরা আমার কাছে এই মর্মে বায়াত গ্রহণ করো যে আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছুকে অংশীদার সাব্যস্ত করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, তোমাদের সন্তানদের হত্যা করবে না, কারো প্রতি মিথ্যা অপবাদ আরোপ করবে না এবং সৎ কাজে নাফরমানি করবে না। তোমাদের মধ্যে যে তা পূর্ণ করবে, তার পুরস্কার আল্লাহর কাছে আছে। আর কেউ এর কোনো একটিতে লিপ্ত হলে এবং দুনিয়ায় তার শাস্তি পেয়ে গেলে তা হবে তার জন্য কাফফারা (প্রতিবিধান)। আর কেউ এর কোনো একটিতে লিপ্ত হয়ে পড়লে এবং আল্লাহ তা অপ্রকাশিত রাখলে, তবে তা আল্লাহর ইচ্ছাধীন।

তিনি যদি চান, তাকে মার্জনা করবেন আর যদি চান, তাকে শাস্তি প্রদান করবেন। আমরা এর ওপর বায়াত গ্রহণ করলাম। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৮)আলোচ্য হাদিসে সাহাবায়ে কিরাম (রহ.)-এর কাছ থেকে বায়াত গ্রহণ করেছেন মহানবী (সা.)। তিনি গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি বিষয়ে বায়াত বা অঙ্গীকার গ্রহণ করেছেন।

তাহলো— ১. শিরক না করা, ২. চুরি না করা, ৩. ব্যভিচার না করা, ৪. সন্তান হত্যা না করা, ৫. মিথ্যা অপবাদ না দেওয়া, ৬. সৎ কাজে নাফরমানি না করা। হাদিসে উল্লিখিত প্রথম পাঁচটি বিষয় স্পষ্ট হলেও শেষ বিষয়টি ব্যাখ্যাসাপেক্ষ। তাহলো, সৎ কাজে নাফরমানি না করা। হাদিসবিশারদরা এই বাক্যের চারটি ব্যাখ্যা করেছেন—

১. পুণ্যরূপী পাপ না করা : শরিয়তের বিধান হলো মা-বাবার আনুগত্য করতে হবে। এটা সওয়াবের কাজ। কিন্তু তারা যদি ঈমানের পরিপন্থী কাজ করার বা কবিরা গুনাহে লিপ্ত হওয়ার নির্দেশ দেয়, তবে তা পালন করা যাবে না। যেমন—শিরক করা, নামাজ ত্যাগ করা, বেপর্দা হওয়া ইত্যাদি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘পাপের ক্ষেত্রে কোনো আনুগত্য নেই, আনুগত্য কেবল নেক কাজে।’
(সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭২৫৭)

২. জেনে-বুঝে পাপ না করা : হাদিসে ব্যবহৃত ‘মারুফ’ শব্দের অর্থ পরিচিত। অর্থাৎ যেসব বিষয় পুণ্য ও নেকি হিসেবে পরিচিত তা তোমরা পরিহার কোরো না। যেমন—নামাজ, রোজা, সৎ কাজের আদেশ দেওয়া ইত্যাদি; আর যা পাপ হিসেবে স্বীকৃত তাতে লিপ্ত হয়ো না। যেমন—চুরি, ডাকাতি, প্রতারণা ইত্যাদি। ইরশাদ হয়েছে, ‘স্মরণ করো লুতের কথা। সে তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, তোমরা জেনেশুনে কেন অশ্লীল কাজ করছ?’
(সুরা : নামল, আয়াত : ৫৪)

৩. ঈমানের আহ্বান প্রত্যাখ্যান না করা : মারুফ দ্বারা উদ্দেশ্য ঈমান ও নেক কাজের আহ্বান। যখন কাউকে নেক কাজের আহ্বান জানানো হয়, তখন তা প্রত্যাখ্যান করা নিন্দনীয়। তখন আলোচ্য বাক্যের অর্থ হবে ‘তোমরা নেক কাজের আহ্বানের ব্যাপারে অবাধ্য হয়ো না।’ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তাদের বলা হয়, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তা তোমরা অনুসরণ করো। তারা বলে, না, বরং আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদের যাতে পেয়েছি তার অনুসরণ করব। এমনকি তাদের পিতৃপুরুষরা যদিও কিছুই বুঝত না এবং তারা সৎপথেও পরিচালিত ছিল না, তার পরও?’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৭০)

৪. বিদআত পরিহার করা : পরবর্তী যুগের আলেমরা বলেন, এর দ্বারা বিদআত উদ্দেশ্য নেওয়ারও সুযোগ আছে। কেননা তা পুণ্যরূপী পাপ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সাবধান! (দ্বিনের নামে) প্রতিটি নব-আবিষ্কার সম্পর্কে! কেননা প্রতিটি নব-আবিষ্কার বিদআত এবং প্রতিটি বিদআত হলো ভ্রষ্টতা।’ (সুনানু আবি দাউদ, হাদিস : ৪৬০৭)

আল্লাহ সবাইকে জেনে-বুঝে ইবাদত করার তাওফিক দিন। আমিন।


সূত্র : মিরকাতুল মাফাতিহ : ১/৯১; ফাতহুল বারি : ১/৮১ ও

মাউসুয়াতুল হাদিস