London ০৮:১১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৫ অগাস্ট ২০২৫, ২১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম:
জুলাই ঘোষণাপত্রে কী আছে, পড়ুন বিস্তারিত রাজশাহীতে নিষিদ্ধ কীটনাশক বিক্রির অভিযোগ মশার কোন উষধ দিচ্ছে না রাসিক পটুয়াখালীতে সংখ্যালঘুর ঘরে ডাকাতি জুলাই’২৪ গণঅভ্যুত্থান দিবসে শহীদদের স্মরণে সিরাজগঞ্জে বিএনপি’র পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি ও দোয়া মাহফিল বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে মহাসড়কে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের আন্দোলন কালিয়াকৈরে প্রকৌশলীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধা রাণীনগরে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত ২৪ জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের শহীদদের স্মরণে সিরাজগঞ্জে বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে হরিপুর তিস্তা সেতু উদ্বোধনের আগেই ঝুঁকিতে

মশার কোন উষধ দিচ্ছে না রাসিক

মো: গোলাম কিবরিয়া,রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি

মশা মারতে পারছে না রাজশাহী সিটি করপোরেশন। উন্নয়ন থমকে যাওয়ার পাশাপাশি নগরীর ড্রেন, নর্দমাগুলোও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ড্রেন-নর্দমাসহ ঝোপঁ-ঝাড়ে বাসা বেধেছে মশা। দিন-রাত মশার কামড়ে যেন অতিষ্ঠ নগরবাসী। দিনের বেলাতেও ঘুমাতে হচ্ছে মশারি টাঙ্গিয়ে বা কয়েল জালিয়ে অথবা মশা নাশক স্প্রে করে। এমনকি অফিস-আদালত থেকে শুরু করে ব্যবসা কেন্দ্রেও হানা দিচ্ছে মশা।

হোটেল-রেস্তোরাগুলোতে মশার জন্য বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবুও বাড়ছে ডেঙ্গু। মশার বৃদ্ধির ফলেই ডেঙ্গু রোগীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে দাবি করেছেন চিকিৎসকরা।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাজশাহী নগরীর অধিকাংশ ড্রেনগুলোতে ময়লা-আবর্জনা বা নোংরা পানিতে ভর্তি হয়ে আছে। এসব ড্রেনে বাসা বেধেছে মশা। নগরীর বর্ণালীর মোড় থেকে তেরোখাদিয়া হয়ে যাওয়া যাওয়া বড় আকারের ড্রেনটি অন্তত তিন মাস ধরে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়নি বলে দাবি করেন স্থানীয়রা। গতকাল সকালে এ ড্রেনের দিকে নজর দিতেই ভন ভন শব্দ করে যেন ঘিরে ধরে মশা। শত শত মশা নিমিষেই উড়া-উড়ি শুরু করতে দেখা যায়।

ড্রেনের পাশেই লন্ড্রি দোকানের মালিক ভুট্টু রহমান বলেন, ‘দোকানে দিনের বেলাতেও দাঁড়ায় থাকা যায় না মশার অত্যাচারে। সারাক্ষণ কয়েল জালায় রাখতে হয়। আমার এমনিকেই শাসকষ্ট । এর মধ্যে কয়েল দিলে আরও কষ্ট হয়। কিন্তু মশার হাত থেকে বাঁচতে কয়েল জালাতেই হয়।’

আরেক মুদি দোকানদার বলেন, ‘দোকানের ভিতর বসে থাকা দায় মশার অত্যাচারে। একটু বিকাল হলেও বাইরেও এক মিনিটও শান্তিতে ক্রেতারা দাঁড়ায় থাকতে পারেন না মশার দাপটে। এতো মশার জন্য যেন টেকায় দায়।’
উপশহর এলাকার বাসিন্দা মোন্তাজুর রহমান বলেন, সেই কবে মশার ওষুধ ছিটাইছে মনে নাই। অন্তত এক বছর তো হবেই। এ কারণে গত শীতের মধ্যে থেকেই এবার মশার আক্রমণ বেশি। ড্রেনগুলো বা বাসার আশে-পাশের অলি-গলিতে ময়লা-আবর্জনার কারণে মশার বংশবৃদ্ধি হচ্ছে বেশি। আবার পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমও স্থবির হয়ে আছে। ফলে মশার অত্যচার বেড়েছে।

নগরীর সাত্তার হোটেলের মালিক বলেন, ‘খাবার খেতে অ্যাসছে মানুষ। কিন্তু শান্তিতে বসে থাকতে পারছে না। বসলেই মশা ঘিরে ধরছে। বাধ্য হয়ে দিন-রাত কয়েল দিয়ে র‌্যাখছি। তাও মশার যেন কমতি নাই। এ কারণে ব্যবসাও কম হয় রাতের বেলা।’

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক ও মুখপাত্র শঙ্কর কে বিশ্বাস বলেন, ‘মশার বৃদ্ধির কারণে রাজশাহীতে ডেঙ্গু রোগীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি বছর ডেঙ্গু রোগে তিনজন মারা গেছেন এ হাসপাতালে। এখনো ভর্তি আছে ২৬ জন। করোনার চেয়েও ভয়ংকর ডেঙ্গু রোগ। কিন্তু এ রোগে সচেতনতা অনেক কম। ফলে এ সময়ে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে অনেক।’

জানতে চাইলে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা শেখ মো. মামুন ডলার বলেন, ‘মশা অনেকটায় বেড়েছে। এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নাই। ওয়ার্ড পর্যায়ে জনপ্রতিনিধি না থাকায় পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতাও কমেছে। তাছাড়া বাড়ির পাশের ঝোপঝাড় অনেকে পরিষ্কার রাখছেন না। ছাদবাগানের টবের পানি থেকেও বংশ বৃদ্ধি হচ্ছে মশার। এসব ব্যাপারে নগরবাসীকেও একটু সচেতন থাকতে হবে। তাহলে মশার সংখ্যা কমবে।’

তিনি আরও বলেন, এখন লার্ভিসাইড ওষুধ ও ফগার মেশিনের ওষুধ আমরা কিনছি না। এখন ড্রেন ও ঝোঁপঝাড় পরিস্কার করে মশা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আগামী অক্টোবরে মশক নিধনের ওষুধ ছিটানো হবে। তখন কেনা হবে ৬০-৭০ লাখ টাকার ওষুধ। ওষুধ কেনার বরাদ্দ পাওয়া যাবে আশা করি।’

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ১২:৩৪:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ অগাস্ট ২০২৫
Translate »

মশার কোন উষধ দিচ্ছে না রাসিক

আপডেট : ১২:৩৪:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ অগাস্ট ২০২৫

মশা মারতে পারছে না রাজশাহী সিটি করপোরেশন। উন্নয়ন থমকে যাওয়ার পাশাপাশি নগরীর ড্রেন, নর্দমাগুলোও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ড্রেন-নর্দমাসহ ঝোপঁ-ঝাড়ে বাসা বেধেছে মশা। দিন-রাত মশার কামড়ে যেন অতিষ্ঠ নগরবাসী। দিনের বেলাতেও ঘুমাতে হচ্ছে মশারি টাঙ্গিয়ে বা কয়েল জালিয়ে অথবা মশা নাশক স্প্রে করে। এমনকি অফিস-আদালত থেকে শুরু করে ব্যবসা কেন্দ্রেও হানা দিচ্ছে মশা।

হোটেল-রেস্তোরাগুলোতে মশার জন্য বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবুও বাড়ছে ডেঙ্গু। মশার বৃদ্ধির ফলেই ডেঙ্গু রোগীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে দাবি করেছেন চিকিৎসকরা।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাজশাহী নগরীর অধিকাংশ ড্রেনগুলোতে ময়লা-আবর্জনা বা নোংরা পানিতে ভর্তি হয়ে আছে। এসব ড্রেনে বাসা বেধেছে মশা। নগরীর বর্ণালীর মোড় থেকে তেরোখাদিয়া হয়ে যাওয়া যাওয়া বড় আকারের ড্রেনটি অন্তত তিন মাস ধরে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়নি বলে দাবি করেন স্থানীয়রা। গতকাল সকালে এ ড্রেনের দিকে নজর দিতেই ভন ভন শব্দ করে যেন ঘিরে ধরে মশা। শত শত মশা নিমিষেই উড়া-উড়ি শুরু করতে দেখা যায়।

ড্রেনের পাশেই লন্ড্রি দোকানের মালিক ভুট্টু রহমান বলেন, ‘দোকানে দিনের বেলাতেও দাঁড়ায় থাকা যায় না মশার অত্যাচারে। সারাক্ষণ কয়েল জালায় রাখতে হয়। আমার এমনিকেই শাসকষ্ট । এর মধ্যে কয়েল দিলে আরও কষ্ট হয়। কিন্তু মশার হাত থেকে বাঁচতে কয়েল জালাতেই হয়।’

আরেক মুদি দোকানদার বলেন, ‘দোকানের ভিতর বসে থাকা দায় মশার অত্যাচারে। একটু বিকাল হলেও বাইরেও এক মিনিটও শান্তিতে ক্রেতারা দাঁড়ায় থাকতে পারেন না মশার দাপটে। এতো মশার জন্য যেন টেকায় দায়।’
উপশহর এলাকার বাসিন্দা মোন্তাজুর রহমান বলেন, সেই কবে মশার ওষুধ ছিটাইছে মনে নাই। অন্তত এক বছর তো হবেই। এ কারণে গত শীতের মধ্যে থেকেই এবার মশার আক্রমণ বেশি। ড্রেনগুলো বা বাসার আশে-পাশের অলি-গলিতে ময়লা-আবর্জনার কারণে মশার বংশবৃদ্ধি হচ্ছে বেশি। আবার পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমও স্থবির হয়ে আছে। ফলে মশার অত্যচার বেড়েছে।

নগরীর সাত্তার হোটেলের মালিক বলেন, ‘খাবার খেতে অ্যাসছে মানুষ। কিন্তু শান্তিতে বসে থাকতে পারছে না। বসলেই মশা ঘিরে ধরছে। বাধ্য হয়ে দিন-রাত কয়েল দিয়ে র‌্যাখছি। তাও মশার যেন কমতি নাই। এ কারণে ব্যবসাও কম হয় রাতের বেলা।’

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক ও মুখপাত্র শঙ্কর কে বিশ্বাস বলেন, ‘মশার বৃদ্ধির কারণে রাজশাহীতে ডেঙ্গু রোগীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি বছর ডেঙ্গু রোগে তিনজন মারা গেছেন এ হাসপাতালে। এখনো ভর্তি আছে ২৬ জন। করোনার চেয়েও ভয়ংকর ডেঙ্গু রোগ। কিন্তু এ রোগে সচেতনতা অনেক কম। ফলে এ সময়ে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে অনেক।’

জানতে চাইলে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা শেখ মো. মামুন ডলার বলেন, ‘মশা অনেকটায় বেড়েছে। এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নাই। ওয়ার্ড পর্যায়ে জনপ্রতিনিধি না থাকায় পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতাও কমেছে। তাছাড়া বাড়ির পাশের ঝোপঝাড় অনেকে পরিষ্কার রাখছেন না। ছাদবাগানের টবের পানি থেকেও বংশ বৃদ্ধি হচ্ছে মশার। এসব ব্যাপারে নগরবাসীকেও একটু সচেতন থাকতে হবে। তাহলে মশার সংখ্যা কমবে।’

তিনি আরও বলেন, এখন লার্ভিসাইড ওষুধ ও ফগার মেশিনের ওষুধ আমরা কিনছি না। এখন ড্রেন ও ঝোঁপঝাড় পরিস্কার করে মশা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আগামী অক্টোবরে মশক নিধনের ওষুধ ছিটানো হবে। তখন কেনা হবে ৬০-৭০ লাখ টাকার ওষুধ। ওষুধ কেনার বরাদ্দ পাওয়া যাবে আশা করি।’