London ০৫:৪৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১৮ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম:
‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ কোন পথে’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠিত নেত্রকোনা সীমান্তে টংক আন্দোলনের নেত্রী রাশি মণি’র হাজংয়ের ৭৯তম প্রয়াণ দিবস পালিত ফরিদপুরে রিকশা ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে চালককে হত্যা বিয়ে করলেন সারজিস আলম টিকটকে আসক্ত মেয়েকে গুলি করে হত্যা উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ প্লে-অফেই রিয়াল-সিটি লড়াই, বাকি ম্যাচে কে কার প্রতিপক্ষ ছাত্রলীগ কোনো প্রোগ্রাম করার চেষ্টা করলে ব্যবস্থা নেবে পুলিশ কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ ট্রাম্পের মঞ্চে কোমর ধরে তরুণীকে কাছে টেনে ফ্লার্টিং শাহরুখের! ভিডিও ভাইরাল ১৪ সেকেন্ডের দুষ্টু ভঙ্গির ভিডিওতে ঝড় তুললেন পরীমণি!

ময়মনসিংহের তিন উপজেলায় ধীরগতিতে কমছে বন্যার পানি, বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট

ময়মনসিংহের ফুলপুরে উপজেলায় পানি ধীরগতিতে কমছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা। আজ সকালে সিংহেশ্বর ইউনিয়নের ভাটপাড়ার সড়কে ছবি

ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া ও ফুলপুর উপজেলায় বন্যার পানি ধীরগতিতে নামছে। আজ বুধবার সকাল পর্যন্ত নতুন করে কোনো এলাকা প্লাবিত হয়নি। তবে কিছু এলাকায় অপরিবর্তিত আছে বন্যা পরিস্থিতি।

বন্যাকবলিত এলাকায় খাবারের পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে পানিবাহিত রোগ ছাড়ানোর আশঙ্কা করা হচ্ছে। তিন উপজেলাতেই প্রশাসনের পাশাপাশি ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে সেনাবাহিনী-র‍্যাবসহ স্বেচ্ছাসেবীরা।

ফুলপুর

টানা বৃষ্টি ও ঢলের কারণে ফুলপুর উপজেলায় গত রোববার থেকেই পানি বাড়তে শুরু করে। শেরপুর জেলার মালিঝি ও কংশ নদী দিয়ে পানি ছনধরা ইউনিয়ন দিয়ে উপজেলাটিতে প্রবেশ করে অনেক এলাকা প্লাবিত হয়। আজ সব পর্যন্ত উপজেলাটির ছনধরা, সিংহেশ্বর ও ফুলপুর সদরে পানি কমতে শুরু করেছে। তবে বালিয়া ও রূপসী ইউনিয়নে পানির অবস্থা স্থিতিশীল আছে। ৩৫টি গ্রামের অন্তত ২৪ হাজার মানুষ পানিবন্দী আছে।

আজ দুপুরে ভাইটকান্দি থেকে ধুরাইল বাজার সড়কের ভাটপাড়া এলাকায় কথা হয় আবদুল হকিম (৬৫) নামের এক বাসিন্দার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এমন পানি আর হয় নাই। সাপ্তাহানি ধইরা পানি। গেছে কাইল থাইকা পানি একটু কমতাছে। এই বন্যায় সবার ক্ষতি কইরা গেল।’

পোগাপুটিয়া গ্রামের চাষি সমশের আলী (৭০) বলেন, ‘পানি কমতাছে অল্প অল্প। এইরম বন্যা ছোডু বালা দেখছিলাম। আর অহন দেখলাম। ১৪ কাডা জমিত ধান করছিলাম, হেউনো মাথা উড়া পানি অহন। আল্লায় যে কিবায় দিন নিব হেই চিন্তা করতাছি।’

উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ত্রাণের জন্য কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে বলে জানান ফুলপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এ.বি.এম. আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রশাসনের স্থাপন করা কন্ট্রোল রুমে ত্রাণের জন্য মানুষ ফোন করছে। আমরা বন্যাদুর্গত বাসিন্দাদের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি।

হালুয়াঘাটে বন্যা দুর্গতদের জন্য মেডিকেল ক্যাম্প করেছে সেনাবাহিনী। আজ সকালে বিকেকে হাইস্কুলে

হালুয়াঘাটে বন্যা দুর্গতদের জন্য মেডিকেল ক্যাম্প করেছে সেনাবাহিনী। আজ সকালে বিকেকে হাইস্কুলে ছবি

হালুয়াঘাট

অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বোরাঘাট নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে হালুয়াঘাট উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। গত শুক্রবার থেকে পানিবন্দী হয়ে আছেন ৬ হাজার পরিবার। উপজেলার নড়াইল, বিলডোরা ও শাকুয়াই ইউনিয়নে আজ বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। তবে উপজেলাটির ৯টি ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। পানিবন্দী মানুষের খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

এদিকে হালুয়াঘাটের নড়াইল ইউনিয়নের বিকেকে হাইস্কুলে আজ সকাল ৯টায় মেডিকেল ক্যাম্পেইন শুরু করেছে সেনাবাহিনী।

হালুয়াঘাটে তিনটি ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. এরশাদুল আহমেদ। তিনি বলেন, ৯টি ইউনিয়নের পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে।  

ধোবাউড়া

গত শুক্রবার দুপুরের পর অতিবৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল ও নেতাই নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় ধোবাউড়া উপজেলা। তবে দক্ষিণ মাইজপাড়া, গামারীতলা ও ঘোষগাঁও ইউনিয়নে গত রোববার বিকেল থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। গত সোমবার রাত থেকে পোড়াকান্দুলিয়া ইউনিয়নের পানি কমলেও গোয়াতলা ও ধোবাউড়া সদরে আজ পরিস্থিতি অপরিবর্তিত আছে। এসব এলাকায় পানিবন্দী হয়ে আছেন ৫৮ হাজার মানুষ। পুরো এলাকাজুড়ে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকটে পড়েছেন বাসিন্দারা।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নিশাত শারমিন জানান, পানিবন্দী এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট চলছে। বন্যা পরবর্তী সময়ে এর প্রভাব আরও বাড়তে পারে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত আছে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ১০:১২:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ অক্টোবর ২০২৪
৪১
Translate »

ময়মনসিংহের তিন উপজেলায় ধীরগতিতে কমছে বন্যার পানি, বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট

আপডেট : ১০:১২:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ অক্টোবর ২০২৪

ময়মনসিংহের ফুলপুরে উপজেলায় পানি ধীরগতিতে কমছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা। আজ সকালে সিংহেশ্বর ইউনিয়নের ভাটপাড়ার সড়কে ছবি

ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া ও ফুলপুর উপজেলায় বন্যার পানি ধীরগতিতে নামছে। আজ বুধবার সকাল পর্যন্ত নতুন করে কোনো এলাকা প্লাবিত হয়নি। তবে কিছু এলাকায় অপরিবর্তিত আছে বন্যা পরিস্থিতি।

বন্যাকবলিত এলাকায় খাবারের পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে পানিবাহিত রোগ ছাড়ানোর আশঙ্কা করা হচ্ছে। তিন উপজেলাতেই প্রশাসনের পাশাপাশি ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে সেনাবাহিনী-র‍্যাবসহ স্বেচ্ছাসেবীরা।

ফুলপুর

টানা বৃষ্টি ও ঢলের কারণে ফুলপুর উপজেলায় গত রোববার থেকেই পানি বাড়তে শুরু করে। শেরপুর জেলার মালিঝি ও কংশ নদী দিয়ে পানি ছনধরা ইউনিয়ন দিয়ে উপজেলাটিতে প্রবেশ করে অনেক এলাকা প্লাবিত হয়। আজ সব পর্যন্ত উপজেলাটির ছনধরা, সিংহেশ্বর ও ফুলপুর সদরে পানি কমতে শুরু করেছে। তবে বালিয়া ও রূপসী ইউনিয়নে পানির অবস্থা স্থিতিশীল আছে। ৩৫টি গ্রামের অন্তত ২৪ হাজার মানুষ পানিবন্দী আছে।

আজ দুপুরে ভাইটকান্দি থেকে ধুরাইল বাজার সড়কের ভাটপাড়া এলাকায় কথা হয় আবদুল হকিম (৬৫) নামের এক বাসিন্দার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এমন পানি আর হয় নাই। সাপ্তাহানি ধইরা পানি। গেছে কাইল থাইকা পানি একটু কমতাছে। এই বন্যায় সবার ক্ষতি কইরা গেল।’

পোগাপুটিয়া গ্রামের চাষি সমশের আলী (৭০) বলেন, ‘পানি কমতাছে অল্প অল্প। এইরম বন্যা ছোডু বালা দেখছিলাম। আর অহন দেখলাম। ১৪ কাডা জমিত ধান করছিলাম, হেউনো মাথা উড়া পানি অহন। আল্লায় যে কিবায় দিন নিব হেই চিন্তা করতাছি।’

উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ত্রাণের জন্য কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে বলে জানান ফুলপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এ.বি.এম. আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রশাসনের স্থাপন করা কন্ট্রোল রুমে ত্রাণের জন্য মানুষ ফোন করছে। আমরা বন্যাদুর্গত বাসিন্দাদের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি।

হালুয়াঘাটে বন্যা দুর্গতদের জন্য মেডিকেল ক্যাম্প করেছে সেনাবাহিনী। আজ সকালে বিকেকে হাইস্কুলে

হালুয়াঘাটে বন্যা দুর্গতদের জন্য মেডিকেল ক্যাম্প করেছে সেনাবাহিনী। আজ সকালে বিকেকে হাইস্কুলে ছবি

হালুয়াঘাট

অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বোরাঘাট নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে হালুয়াঘাট উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। গত শুক্রবার থেকে পানিবন্দী হয়ে আছেন ৬ হাজার পরিবার। উপজেলার নড়াইল, বিলডোরা ও শাকুয়াই ইউনিয়নে আজ বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। তবে উপজেলাটির ৯টি ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। পানিবন্দী মানুষের খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

এদিকে হালুয়াঘাটের নড়াইল ইউনিয়নের বিকেকে হাইস্কুলে আজ সকাল ৯টায় মেডিকেল ক্যাম্পেইন শুরু করেছে সেনাবাহিনী।

হালুয়াঘাটে তিনটি ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. এরশাদুল আহমেদ। তিনি বলেন, ৯টি ইউনিয়নের পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে।  

ধোবাউড়া

গত শুক্রবার দুপুরের পর অতিবৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল ও নেতাই নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় ধোবাউড়া উপজেলা। তবে দক্ষিণ মাইজপাড়া, গামারীতলা ও ঘোষগাঁও ইউনিয়নে গত রোববার বিকেল থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। গত সোমবার রাত থেকে পোড়াকান্দুলিয়া ইউনিয়নের পানি কমলেও গোয়াতলা ও ধোবাউড়া সদরে আজ পরিস্থিতি অপরিবর্তিত আছে। এসব এলাকায় পানিবন্দী হয়ে আছেন ৫৮ হাজার মানুষ। পুরো এলাকাজুড়ে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকটে পড়েছেন বাসিন্দারা।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নিশাত শারমিন জানান, পানিবন্দী এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট চলছে। বন্যা পরবর্তী সময়ে এর প্রভাব আরও বাড়তে পারে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত আছে।