London ১২:২০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মনিারামপুর হাকোবার কুমড়া-বড়ি পল্লী কুমড়া-বড়ি পল্লীর কারিগররা ব্যস্ত সময় পার করছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক:

যশোরের মনিারামপুর কুমড়ো-বড়ি পল্লীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগর-রা। শীত মৌসুমকে কেন্দ্র করে অতিযতœ সহকারে এই খাদ্যপণ্যটি তৈরি করে থাকেন যশোরের মনিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের নারীরা। তবে উপজেলার হাকোবা গ্রামটি কুমড়ো-বড়ি পল্লী হিসেবে খ্যাত দীর্ঘদিন ধরে। এ গ্রামের নারী পুরুষ উভয়ই কুমড়ো-বড়ি তৈরী করে থাকেন। এটি বানিজ্যিকভাবে উৎপাদন করে থাকেন এ পল্লীর মানুষেরা ।এখানকার কুমড়ো-বড়ির কদর এলাকার গন্ডি পেরিয়ে দেশ বিদেশেও। তাই শীত মৌসুম এলে হাকোবা কুমড়ো-বড়ির কারিগরদের খাওয়া ঘুম থাকেনা ,ব্যস্ত সময় পার করেন তারা।
খোঁজ-খবর নিয়ে জানা যায়, শীত মৌসুমে বাজারে নানা ধরনের সবজির সমাহার দেখা যায়। এই সবজি আর মাছ রান্নাতে ভোজন রসিক খাবারে ব্যবহার হয় ঐতিহ্যবাহী কুমড়া-বড়ি। কুমড়া-বড়ির তৈরীর কারিগররা জানান, দেশিয় উপাদানে তৈরি করা হয় কুমড়ার-বড়ি। প্রথমে গাছপাকা সাদা বর্ণের চালকুমড়া কুচি কুচি করে কাটতে হয়। তারপরে কলাইয়ের ডাল ভিজিয়ে পাটায় বেটে/বর্তমানে চাল কুমড়া ও কলাই মোটর ইঞ্জিন মেশিনের সাহায্যে মিশিয়ে নিতে হয়। পরে চালকুমড়া আর কলাইয়ের ডাল একসঙ্গে অনেকক্ষণ ধরে ভালো করে মাখিয়ে বাঁশের চাটাইয়ের ওপরে ছোট ছোট করে বড়ি তৈরি করে বিছিয়ে দিতে হয়। দুই-তিন দিন ভালো করে রোদে শুকালেই খাওয়ার উপযোগী হয়ে ওঠে কুমড়ার বড়ি।
মনিরামপুর উপজেলার হাকোবা গ্রামের কুমড়া-বড়ি তৈরির প্রবীন কারিগর মধুসূদন কুন্ডু বলেন, ‘আমার বাপ-দাদা তৈরি করেছে, আমিও বড়ি তৈরি করছি। এখন আমার ছেলে-মেয়ে আর নাতিপুতি তৈরি করছে। এটি আমার বংশ পরম্পরার পেশা। ওই গ্রামের আরেক কারিগর বলাই কুন্ডু বলেন, জমি-ক্ষেত নেই, কুমড়া-বড়ি তৈরীর উপর ছয় জনের সংসার চালাতি অনেক কষ্ট হয়। সরকার যদি আমাগে দিরি একটু তাকাতো তা-হলি বাঁচে থাকতি পারতাম। কুমড়া বড়ি তৈরির শ্রমিক স্বামী পরিত্যক্তা মাজিদা খাতুন বলেন, কুমড়ো-বড়ি তৈরীর কাজ করে ৩জন মানষ্যির সংসার চালাই, শীতের কয় মাস কাজ হয়,অন্য সময় কষ্টে দিন যায়। শুক্লা রানী কুন্ডু নামে এক নারী শ্রমিক বলেন, আমি বড়ি তৈরীর কাজ করি ম্যালা দিন ধরে। আমি রড়ি তৈরীর শ্রমিক। এখানে কাজ করে স্বামীর সংসারে সহযোগিতা করি।ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখার খরচ যোগায়।
মনিরামপুর বাজারের কুমড়া বড়ি ব্যবসায়ী প্রসেনজিত কুন্ডু বলেন, কুমড়ো-বড়ি তৈরীর কাচাঁমাল মাষকলাইসহ সকল ডালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কুমড়ো-বড়ি তৈরীতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় আগের তুলনায় বেশি বিক্রি করতে হচ্ছে , বর্তমানে প্রতি কেজি কুমড়া-বড়ি বাজারে ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে ফলে ক্রেতাও দিন দিন কমছে।
কুমড়ো-বড়ি পল্লীর বাসিন্দা কলেজ শিক্ষক পিন্টু কুমার সাধুখাঁ বলেন, হাকোবা গ্রামের প্রায় সকল মানুষই কুমড়ো-যড়ি তৈরীর কাজ করে থাকেন। গ্রামটি ইতিমধ্যে, কুমড়ো-বড়ি পল্লী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প হিসেবে কুমড়ো বড়ি পল্লীকে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বড় পরিসরে বড়ি তৈরি করে রপ্তানি করা সম্ভব হবে।’
উপজেলা কৃষি অফিসার ঋতুরাজ সরকার বলেন,‘মাঁচা ও টিনের চালে কৃষকরা চাল কুমড়ার চাষ করে থাকেন। চাল কুমড়া থেকে বড়ি তৈরিতে ব্যবহার করায় এর চাহিদা বেড়েছে। তাই অনেক কৃষক চাল কুমড়াও বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করছেন। গ্রামের নারীরা কুমড়া বড়ি তৈরি করে বাড়তি আয় করছেন। তারা উপযুক্ত প্রশিক্ষণ পেলে নিজেদের ভাগ্য উন্নয়ন ও গ্রামীণ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবেন।’
মনিরামপুর উপজেলা র্নিবাহী অফিসার নিশাত তামান্না বলেন, ‘এই কুমড়া বড়ি গ্রাম বাংলার একটি ঐতিহ্যের অংশ। এই কাজের সঙ্গে বেশির ভাগ নারী শ্রমিক জড়িত। এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য বড়ি তৈরির কারিগরদের একটি তালিকা করে তাদের উন্নত প্রশিক্ষণসহ স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণসহ পৃষ্টপোষকতার মাধ্যমে নারী ক্ষুদ্র শিল্প উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা করা হবে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ১১:৫৭:১০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪
১৫
Translate »

মনিারামপুর হাকোবার কুমড়া-বড়ি পল্লী কুমড়া-বড়ি পল্লীর কারিগররা ব্যস্ত সময় পার করছেন

আপডেট : ১১:৫৭:১০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

যশোরের মনিারামপুর কুমড়ো-বড়ি পল্লীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগর-রা। শীত মৌসুমকে কেন্দ্র করে অতিযতœ সহকারে এই খাদ্যপণ্যটি তৈরি করে থাকেন যশোরের মনিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের নারীরা। তবে উপজেলার হাকোবা গ্রামটি কুমড়ো-বড়ি পল্লী হিসেবে খ্যাত দীর্ঘদিন ধরে। এ গ্রামের নারী পুরুষ উভয়ই কুমড়ো-বড়ি তৈরী করে থাকেন। এটি বানিজ্যিকভাবে উৎপাদন করে থাকেন এ পল্লীর মানুষেরা ।এখানকার কুমড়ো-বড়ির কদর এলাকার গন্ডি পেরিয়ে দেশ বিদেশেও। তাই শীত মৌসুম এলে হাকোবা কুমড়ো-বড়ির কারিগরদের খাওয়া ঘুম থাকেনা ,ব্যস্ত সময় পার করেন তারা।
খোঁজ-খবর নিয়ে জানা যায়, শীত মৌসুমে বাজারে নানা ধরনের সবজির সমাহার দেখা যায়। এই সবজি আর মাছ রান্নাতে ভোজন রসিক খাবারে ব্যবহার হয় ঐতিহ্যবাহী কুমড়া-বড়ি। কুমড়া-বড়ির তৈরীর কারিগররা জানান, দেশিয় উপাদানে তৈরি করা হয় কুমড়ার-বড়ি। প্রথমে গাছপাকা সাদা বর্ণের চালকুমড়া কুচি কুচি করে কাটতে হয়। তারপরে কলাইয়ের ডাল ভিজিয়ে পাটায় বেটে/বর্তমানে চাল কুমড়া ও কলাই মোটর ইঞ্জিন মেশিনের সাহায্যে মিশিয়ে নিতে হয়। পরে চালকুমড়া আর কলাইয়ের ডাল একসঙ্গে অনেকক্ষণ ধরে ভালো করে মাখিয়ে বাঁশের চাটাইয়ের ওপরে ছোট ছোট করে বড়ি তৈরি করে বিছিয়ে দিতে হয়। দুই-তিন দিন ভালো করে রোদে শুকালেই খাওয়ার উপযোগী হয়ে ওঠে কুমড়ার বড়ি।
মনিরামপুর উপজেলার হাকোবা গ্রামের কুমড়া-বড়ি তৈরির প্রবীন কারিগর মধুসূদন কুন্ডু বলেন, ‘আমার বাপ-দাদা তৈরি করেছে, আমিও বড়ি তৈরি করছি। এখন আমার ছেলে-মেয়ে আর নাতিপুতি তৈরি করছে। এটি আমার বংশ পরম্পরার পেশা। ওই গ্রামের আরেক কারিগর বলাই কুন্ডু বলেন, জমি-ক্ষেত নেই, কুমড়া-বড়ি তৈরীর উপর ছয় জনের সংসার চালাতি অনেক কষ্ট হয়। সরকার যদি আমাগে দিরি একটু তাকাতো তা-হলি বাঁচে থাকতি পারতাম। কুমড়া বড়ি তৈরির শ্রমিক স্বামী পরিত্যক্তা মাজিদা খাতুন বলেন, কুমড়ো-বড়ি তৈরীর কাজ করে ৩জন মানষ্যির সংসার চালাই, শীতের কয় মাস কাজ হয়,অন্য সময় কষ্টে দিন যায়। শুক্লা রানী কুন্ডু নামে এক নারী শ্রমিক বলেন, আমি বড়ি তৈরীর কাজ করি ম্যালা দিন ধরে। আমি রড়ি তৈরীর শ্রমিক। এখানে কাজ করে স্বামীর সংসারে সহযোগিতা করি।ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখার খরচ যোগায়।
মনিরামপুর বাজারের কুমড়া বড়ি ব্যবসায়ী প্রসেনজিত কুন্ডু বলেন, কুমড়ো-বড়ি তৈরীর কাচাঁমাল মাষকলাইসহ সকল ডালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কুমড়ো-বড়ি তৈরীতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় আগের তুলনায় বেশি বিক্রি করতে হচ্ছে , বর্তমানে প্রতি কেজি কুমড়া-বড়ি বাজারে ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে ফলে ক্রেতাও দিন দিন কমছে।
কুমড়ো-বড়ি পল্লীর বাসিন্দা কলেজ শিক্ষক পিন্টু কুমার সাধুখাঁ বলেন, হাকোবা গ্রামের প্রায় সকল মানুষই কুমড়ো-যড়ি তৈরীর কাজ করে থাকেন। গ্রামটি ইতিমধ্যে, কুমড়ো-বড়ি পল্লী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প হিসেবে কুমড়ো বড়ি পল্লীকে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বড় পরিসরে বড়ি তৈরি করে রপ্তানি করা সম্ভব হবে।’
উপজেলা কৃষি অফিসার ঋতুরাজ সরকার বলেন,‘মাঁচা ও টিনের চালে কৃষকরা চাল কুমড়ার চাষ করে থাকেন। চাল কুমড়া থেকে বড়ি তৈরিতে ব্যবহার করায় এর চাহিদা বেড়েছে। তাই অনেক কৃষক চাল কুমড়াও বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করছেন। গ্রামের নারীরা কুমড়া বড়ি তৈরি করে বাড়তি আয় করছেন। তারা উপযুক্ত প্রশিক্ষণ পেলে নিজেদের ভাগ্য উন্নয়ন ও গ্রামীণ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবেন।’
মনিরামপুর উপজেলা র্নিবাহী অফিসার নিশাত তামান্না বলেন, ‘এই কুমড়া বড়ি গ্রাম বাংলার একটি ঐতিহ্যের অংশ। এই কাজের সঙ্গে বেশির ভাগ নারী শ্রমিক জড়িত। এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য বড়ি তৈরির কারিগরদের একটি তালিকা করে তাদের উন্নত প্রশিক্ষণসহ স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণসহ পৃষ্টপোষকতার মাধ্যমে নারী ক্ষুদ্র শিল্প উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা করা হবে।