গর্জন অনেক, বর্ষণ সামান্যই। ভারত-পাকিস্তান লড়াইয়ের নিয়মিত চিত্র এখন এটি। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দেশের লড়াই তাদের সীমানা ছাড়িয়ে ক্রিকেট বিশ্বের নানা প্রান্ত স্পর্শ করে বটে। তবে অনেক বছর ধরেই মাঠের ক্রিকেটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তেমন একটা নেই। ভারতের উত্থান আর পাকিস্তানের পতনে লড়াইটি হয়ে উঠেছে একতরফা। পাকিস্তানের এখনকার দলের যে শক্তি, তাতে ভারতের ‘বি’ দলকে হারাতেও তাদের অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে বলে মনে করেন ভারতীয় কিংবদন্তি সুনিল গাভাস্কার।
দুই দলের বর্তমান অবস্থার প্রামাণ্য চিত্র মিলেছে এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। দুবাইয়ে রোবরার পাকিস্তানকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে ভারত। টানা দুই জয়ে রোহিত শার্মার দল পৌঁছে গেছে টুর্নামেন্টের সেমি-ফাইনালে। দুই ম্যাচ হেরে নিজ দেশের আসর থেকে ছিটকে গেছে মোহাম্মদ রিজওয়ানের দল।
রাজনেতিক বৈরিতায় এক যুগের বেশি সময় ধরে এই দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সিরিজ বন্ধ। দুই দল টেস্টে মুখোমুখি হয় না প্রায় ১৮ বছর ধরে। কেবল আইসিসি ও এসিসির আসরগুলোতেই মুখোমুখ হয় তারা। সেখানেও ফলাফল বলা যায় একচেটিয়া। নিষ্পত্তি হওয়া সবশেষ পাঁচ ম্যাচে জিতেছে ভারত। আরও পেছনে গেলে, গত ১২ বছরে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে সবশেষ ২০ ম্যাচের ১৬টিই জিতেছে ভারত।
এবারের ম্যাচের পর স্পোর্টস টুডেকে গাভাস্কার বললেন, দুই দলের শক্তি-সামর্থ্যে এখন ফারাক বিস্তর।
আমার মনে হয়, ভারতের ‘বি’ দল অবশ্যই (পাকিস্তানের ঘাম ছুটিয়ে ছেড়ে দেবে)… ‘সি’ দল পারবে কি না, খুব একটা নিশ্চিত নই। তবে পাকিস্তানের এই দলের এমন ফর্মে ভারতের ‘বি’ দলকে হারাতে খুব, খুবই কষ্ট হবে।
অথচ একসময় চিত্রটা ছিল ভিন্ন। মুখোমুখি লড়াইয়ের পরিসংখ্যানে যোজন যোজন এগিয়ে ছিল পাকিস্তান। নব্বইয়ের দশকের শেষ পর্যন্তও চমকপ্রদ সব সহজাত প্রতিভাবান ক্রিকেটার উপহার দিয়েছে দেশটি। যারা ভারতকে তো বটেই, তাক লাগিয়ে গিয়েছে ক্রিকেটবিশ্বকে।
যে দেশে ছিল প্রতিভার ছড়াছড়ি, সেই দেশে কেন এখন এত প্রতিভার সঙ্কট, ভেবে পাচ্ছেন না গাভাস্কার।
তাদের শক্তির গভীরতায় ঘাটতি হওয়াটা বিস্ময়কর। পাকিস্তানের সবসময়ই সহজাত প্রতিভা প্রচুর ছিল। সহজাত এই অর্থে যে, টেকনিক্যালি তারা হয়তো শুদ্ধ নয়, কিন্তু ব্যাট-বলের বোঝাপড়া তাদের স্বয়ংক্রিয়ভাবেই গড়ে উঠত। ইনজামাম-উল-হাকের কথাই ভাবুন। তার যে স্টান্স, তরুণ কাউকে এমন কিছুর পরামর্শ কেউ দেবে না। কিন্তু তার টেম্পারামেন্ট ছিল অসাধারণ। সেটি দিয়েই টেকনিক্যাল ঘাটতি ঘুষিয়ে দিত সে।
খুবই অবাক করার মতো ব্যাপার যে, পাকিস্তান থেকে এরকম প্রতিভা আর উঠে আসছে না। তাদের তো পাকিস্তান সুপার লিগ আছে! ভারত কীভাবে সাদা বলের ক্রিকেটে এত তরুণ তারকা তুলে আনছে? আইপিএল দিয়েই তো! এখান থেকে ক্রিকেটাররা রাঞ্জি ট্রফিতে গেছে এবং এক পর্যায়ে জাতীয় দলে এসেছে। পাকিস্তান ক্রিকেটের এই বিশ্লেষণ করতে হবে। তাদের বের করতে হবে, একসময় তাদের এত বিকল্প ক্রিকেটার ছিল, এখন কেন নেই।
এই দুই দল আবার মুখোমুখি হতে পারে সামনের এশিয়া কাপে।