ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় বিএসএফের গুলিতে আবারও দুই বাংলাদেশি যুবক আহত

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার সীমান্তবর্তী শ্যামপুর এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-এর গুলিতে দুই বাংলাদেশি নাগরিক আহত হয়েছেন। শনিবার (২৪ মে) দিবাগত রাত আনুমানিক ১টা ৩০ মিনিটে উপজেলার ১০ নম্বর বায়েক ইউনিয়নের শ্যামপুর দক্ষিণ পাড়ায় এই ঘটনা ঘটে।
আহতদের একজন হলেন—রবিউল ইসলাম রবি (৪৫), পিতা মৃত হাকিম মিয়া, পেশায় কৃষক; তিনি শ্যামপুর কোনাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। অপরজন হলেন—আজাদ মিয়া (৩৮), পিতা মৃত ছায়েদ আলী, পেশায় অটোরিকশা চালক; তিনি একই ইউনিয়নের শ্যামপুর সরদার বাড়ির বাসিন্দা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার সময় রবিউল ও আজাদ সালদা নদীর পাশের চরে ছিলেন। পরিবারের দাবি, তারা মাটি তুলছিলেন। এমন সময় হঠাৎ সীমান্তবর্তী ভারতের আগরতলা অংশে দায়িত্বরত বিএসএফ সদস্যরা লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। এতে রবিউল ও আজাদ গুলিবিদ্ধ হন।
আজাদ মিয়ার স্ত্রী জানান, “আমার স্বামী মাটি তুলতে গিয়েছিল। আমরা জানি না সেখানে কী হয়েছিল, তবে রাতের আঁধারে বিএসএফ গুলি ছুঁড়েছে, আর তাতেই সে আহত হয়।”
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ঘটনাস্থল ছিল বাংলাদেশের অভ্যন্তরে, সীমান্তের প্রায় ২০০ গজ ভেতরে। তারা দাবি করেছেন, বিএসএফ কোনো ধরনের পূর্ব সতর্কতা বা সংকেত না দিয়েই গুলি চালায়।
আহতদের প্রথমে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে আজাদ মিয়ার অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে দ্রুত ঢাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। রবিউল ইসলাম বর্তমানে কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন এবং তিনি আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনা ও স্থানীয়দের উদ্বেগ:
এ ঘটনার পর শ্যামপুর সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয় জনগণ ও জনপ্রতিনিধিরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, সীমান্তে বিএসএফের এমন আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তারা মনে করেন, সীমান্তবর্তী এলাকায় কিছু চোরাকারবারির তৎপরতার কারণে নিরীহ মানুষ বারবার ঝুঁকিতে পড়ছে।
একজন বয়স্ক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “সীমান্তে বিএসএফ প্রায়ই বিনা উসকানিতে গুলি চালায়। এভাবে সাধারণ কৃষক বা শ্রমজীবীরা নিরাপদ নয়। এর একটি স্থায়ী সমাধান দরকার।”
প্রশাসনিক অবস্থান:
ঘটনার খবর পাওয়ার পর কসবা থানা পুলিশের একটি দল রাতেই ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাথমিক তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে। এ বিষয়ে কসবা থানার একজন দায়িত্বরত কর্মকর্তা বলেন, “বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। আমরা আহতদের পরিবার ও স্থানীয়দের বক্তব্য নিচ্ছি এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।”
অন্যদিকে, এখন পর্যন্ত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বা ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে বিজিবির পক্ষ থেকে সীমান্তে পতাকা বৈঠকের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে।
স্থানীয়দের দাবি: সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার এবং বিএসএফের অতর্কিত গুলি চালানোর প্রবণতা বন্ধে সরকারের উচ্চপর্যায়ে কার্যকর কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। একইসাথে চোরাচালান প্রতিরোধে স্থানীয় প্রশাসনকে আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।