London ১০:১১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন: বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ার প্রস্তাবও এসেছে

বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলা, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা ও জুলাই-আগস্টের গণ–অভ্যুত্থানের চেতনা রক্ষাসহ বিভিন্ন দাবি ও প্রস্তাব এসেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আয়োজিত জেলা পর্যায়ের মতবিনিময় সভাগুলোয়। এসব দাবি ও প্রস্তাব এক জায়গায় এনে এখন একটি প্রতিবেদন তৈরির কাজ চলছে। এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা আলোচনা করে এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করবেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা গত ৮-১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মুন্সিগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, সিলেট, বরিশাল, খুলনা, রাজশাহীসহ দেশের ৪৪টি জেলা সফর করেছেন। এসব জেলায় ‘গণ-অভ্যুত্থানের প্রেরণায় শহীদ পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ছাত্র-নাগরিক মতবিনিময় সভা’ শিরোনামে সভা হয়। প্রতিটি সভায় শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। সভায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও সহসমন্বয়কদের কাছে রাষ্ট্র সংস্কারের বিভিন্ন দিক নিয়ে নিজেদের নানা প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন।

সবাই চাইছে পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলোর বাইরে নতুন কিছু তৈরি হোক। দ্বিতীয় স্বাধীনতার অংশীজনদের সবাই চাইছেন দেশে আবার যেন আর কোনো ফ্যাসিবাদী শক্তি জন্ম নিতে না পারে।

নুসরাত তাবাসসুম, কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

জেলা পর্যায়ের মতবিনিময় সভা শেষে ২০ সেপ্টেম্বর দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ক ও সহসমন্বয়কদের নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আরেকটি মতবিনিময় সভা করেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কেরা। এই সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কীভাবে আরও সংগঠিত করা যায়, তা নিয়ে কথা হয়।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত ১ জুলাই আত্মপ্রকাশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, যা মূলত সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি প্ল্যাটফর্ম। তবে এই প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরাও সক্রিয় ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও সহসমন্বয়ক ১৫৮ জন। যাঁদের মধ্যে নেতৃস্থানীয়রা গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি নামের একটি সংগঠনের সদস্য। অবশ্য ১৪ সেপ্টেম্বর ছাত্রশক্তির সব কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়।

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতন যে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে হয়, তার নেতৃত্বে ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে দুজন—নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক। তাঁরা দুজন গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তিরও নেতা ছিলেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা গত ৮-১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মুন্সিগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, সিলেট, বরিশাল, খুলনা, রাজশাহীসহ দেশের ৪৪টি জেলা সফর করেছেন।

৪৪ জেলায় মতবিনিময়

৮ সেপ্টেম্বর থেকে পালাক্রমে দেশের আটটি বিভাগ সফর করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা। সফরের শুরু হয় মুন্সিগঞ্জে মতবিনিময় সভার মাধ্যমে। সফর শেষ হয় ১৮ সেপ্টেম্বর শরীয়তপুরে। এর মধ্যে খাগড়াছড়ি, কুমিল্লা, বরগুনা, নাটোর, ঝিনাইদহ ও চাঁদপুর—এই ছয় জেলায় মতবিনিময় সভায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতি ও হট্টগোল হয়।

সমন্বয়কদের দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে নরসিংদীতে সভা স্থগিত করা হয়। হবিগঞ্জ ও বগুড়া জেলায় একটি রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনের বাধায় সভা পণ্ড হয়ে যায়। স্থানীয় সমন্বয়কদের দ্বন্দ্বে শেরপুরে সভা পণ্ড হয়। এ ছাড়া ময়মনসিংহে স্থানীয় সমন্বয়কদের বিরোধিতার কারণে সভায় যোগ দিতে পারেননি ঢাকা থেকে যাওয়া কেন্দ্রীয় সমন্বয়কেরা। বিচ্ছিন্ন এসব ঘটনার বাইরে প্রতিটি সভায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ রাষ্ট্র সংস্কারের পাশাপাশি নিজ এলাকার নানা সমস্যা ও সংকটের কথা তুলে ধরেন।

জেলা পর্যায়ে মতবিনিময় সভায় অংশ নেওয়া পাঁচজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কের সঙ্গে কথা বলেছে । তাঁরা বলেন, প্রায় প্রতিটি সভায় স্থানীয় সমস্যা হিসেবে চাঁদাবাজির বিষয়টি উঠে এসেছে। একইভাবে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার পরামর্শ এসেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের নিয়ে যাতে নতুন রাজনৈতিক শক্তি গড়ে ওঠে, সেই প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন বহু মানুষ।

কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম সফর করেছেন খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলায়। তিনি বলেন, সবাই চাইছে পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলোর বাইরে নতুন কিছু তৈরি হোক। দ্বিতীয় স্বাধীনতার অংশীজনদের সবাই চাইছেন দেশে আবার যেন আর কোনো ফ্যাসিবাদী শক্তি জন্ম নিতে না পারে।

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতন যে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে হয়, তার নেতৃত্বে ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে দুজন—নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক। তাঁরা দুজন গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তিরও নেতা ছিলেন।

নানা ধরনের প্রত্যাশা

বিভিন্ন মতবিনিময় সভায় সংবিধান সংশোধন-পরিবর্তনের প্রস্তাব এসেছে। একইভাবে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা,

জুলাই-আগস্টের গণ–অভ্যুত্থানের চেতনা রক্ষা করা, আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের যথাযথ চিকিৎসা, পুনর্বাসনসহ তাঁদের নিয়ে ব্যাপক ভিত্তিতে কাজ করার পরামর্শ এসেছে মতবিনিময় সভাগুলোয়। এ ছাড়া চাঁদাবাজি বন্ধ, টেন্ডারবাজির রাজনীতির অবসান, শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কারসহ স্থানীয় বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়গুলো এসেছে।

বিভিন্ন জেলায় গিয়ে কথা শুনে আমাদের মনে হয়েছে, মানুষ একটা বিকল্প শক্তি চাইছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক তারিকুল ইসলাম

মতবিনিময় সভাগুলো থেকে সবাই নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মের দিকে যাওয়ার বিষয়ে উৎসাহ দিয়েছে বলে জানান সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলায় মতবিনিময় সভা করে আসা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলাম।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম সারির দুজন সমন্বয়ক প্রথম আলোকে বলেন, জেলা পর্যায় থেকে উঠে আসা বক্তব্য ও প্রত্যাশাগুলো লিপিবদ্ধ করে প্রতিবেদন তৈরির কাজ চলছে এখন। জেলা সফর করে আসা সমন্বয়কদের আটটি দলের সদস্যরা শিগগিরই একসঙ্গে বসবেন। সেখানে আলোচনা করে মানুষের প্রত্যাশার বিষয়ে করণীয় ঠিক করা হবে।

সফরে রংপুর বিভাগীয় প্রতিনিধিদলে ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক তারিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন জেলায় গিয়ে কথা শুনে আমাদের মনে হয়েছে, মানুষ একটা বিকল্প শক্তি চাইছে।’

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৪:১০:১৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর ২০২৪
৫০
Translate »

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন: বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ার প্রস্তাবও এসেছে

আপডেট : ০৪:১০:১৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর ২০২৪

বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলা, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা ও জুলাই-আগস্টের গণ–অভ্যুত্থানের চেতনা রক্ষাসহ বিভিন্ন দাবি ও প্রস্তাব এসেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আয়োজিত জেলা পর্যায়ের মতবিনিময় সভাগুলোয়। এসব দাবি ও প্রস্তাব এক জায়গায় এনে এখন একটি প্রতিবেদন তৈরির কাজ চলছে। এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা আলোচনা করে এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করবেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা গত ৮-১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মুন্সিগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, সিলেট, বরিশাল, খুলনা, রাজশাহীসহ দেশের ৪৪টি জেলা সফর করেছেন। এসব জেলায় ‘গণ-অভ্যুত্থানের প্রেরণায় শহীদ পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ছাত্র-নাগরিক মতবিনিময় সভা’ শিরোনামে সভা হয়। প্রতিটি সভায় শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। সভায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও সহসমন্বয়কদের কাছে রাষ্ট্র সংস্কারের বিভিন্ন দিক নিয়ে নিজেদের নানা প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন।

সবাই চাইছে পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলোর বাইরে নতুন কিছু তৈরি হোক। দ্বিতীয় স্বাধীনতার অংশীজনদের সবাই চাইছেন দেশে আবার যেন আর কোনো ফ্যাসিবাদী শক্তি জন্ম নিতে না পারে।

নুসরাত তাবাসসুম, কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

জেলা পর্যায়ের মতবিনিময় সভা শেষে ২০ সেপ্টেম্বর দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ক ও সহসমন্বয়কদের নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আরেকটি মতবিনিময় সভা করেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কেরা। এই সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কীভাবে আরও সংগঠিত করা যায়, তা নিয়ে কথা হয়।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত ১ জুলাই আত্মপ্রকাশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, যা মূলত সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি প্ল্যাটফর্ম। তবে এই প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরাও সক্রিয় ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও সহসমন্বয়ক ১৫৮ জন। যাঁদের মধ্যে নেতৃস্থানীয়রা গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি নামের একটি সংগঠনের সদস্য। অবশ্য ১৪ সেপ্টেম্বর ছাত্রশক্তির সব কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়।

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতন যে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে হয়, তার নেতৃত্বে ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে দুজন—নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক। তাঁরা দুজন গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তিরও নেতা ছিলেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা গত ৮-১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মুন্সিগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, সিলেট, বরিশাল, খুলনা, রাজশাহীসহ দেশের ৪৪টি জেলা সফর করেছেন।

৪৪ জেলায় মতবিনিময়

৮ সেপ্টেম্বর থেকে পালাক্রমে দেশের আটটি বিভাগ সফর করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা। সফরের শুরু হয় মুন্সিগঞ্জে মতবিনিময় সভার মাধ্যমে। সফর শেষ হয় ১৮ সেপ্টেম্বর শরীয়তপুরে। এর মধ্যে খাগড়াছড়ি, কুমিল্লা, বরগুনা, নাটোর, ঝিনাইদহ ও চাঁদপুর—এই ছয় জেলায় মতবিনিময় সভায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতি ও হট্টগোল হয়।

সমন্বয়কদের দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে নরসিংদীতে সভা স্থগিত করা হয়। হবিগঞ্জ ও বগুড়া জেলায় একটি রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনের বাধায় সভা পণ্ড হয়ে যায়। স্থানীয় সমন্বয়কদের দ্বন্দ্বে শেরপুরে সভা পণ্ড হয়। এ ছাড়া ময়মনসিংহে স্থানীয় সমন্বয়কদের বিরোধিতার কারণে সভায় যোগ দিতে পারেননি ঢাকা থেকে যাওয়া কেন্দ্রীয় সমন্বয়কেরা। বিচ্ছিন্ন এসব ঘটনার বাইরে প্রতিটি সভায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ রাষ্ট্র সংস্কারের পাশাপাশি নিজ এলাকার নানা সমস্যা ও সংকটের কথা তুলে ধরেন।

জেলা পর্যায়ে মতবিনিময় সভায় অংশ নেওয়া পাঁচজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কের সঙ্গে কথা বলেছে । তাঁরা বলেন, প্রায় প্রতিটি সভায় স্থানীয় সমস্যা হিসেবে চাঁদাবাজির বিষয়টি উঠে এসেছে। একইভাবে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার পরামর্শ এসেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের নিয়ে যাতে নতুন রাজনৈতিক শক্তি গড়ে ওঠে, সেই প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন বহু মানুষ।

কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম সফর করেছেন খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলায়। তিনি বলেন, সবাই চাইছে পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলোর বাইরে নতুন কিছু তৈরি হোক। দ্বিতীয় স্বাধীনতার অংশীজনদের সবাই চাইছেন দেশে আবার যেন আর কোনো ফ্যাসিবাদী শক্তি জন্ম নিতে না পারে।

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতন যে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে হয়, তার নেতৃত্বে ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে দুজন—নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক। তাঁরা দুজন গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তিরও নেতা ছিলেন।

নানা ধরনের প্রত্যাশা

বিভিন্ন মতবিনিময় সভায় সংবিধান সংশোধন-পরিবর্তনের প্রস্তাব এসেছে। একইভাবে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা,

জুলাই-আগস্টের গণ–অভ্যুত্থানের চেতনা রক্ষা করা, আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের যথাযথ চিকিৎসা, পুনর্বাসনসহ তাঁদের নিয়ে ব্যাপক ভিত্তিতে কাজ করার পরামর্শ এসেছে মতবিনিময় সভাগুলোয়। এ ছাড়া চাঁদাবাজি বন্ধ, টেন্ডারবাজির রাজনীতির অবসান, শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কারসহ স্থানীয় বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়গুলো এসেছে।

বিভিন্ন জেলায় গিয়ে কথা শুনে আমাদের মনে হয়েছে, মানুষ একটা বিকল্প শক্তি চাইছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক তারিকুল ইসলাম

মতবিনিময় সভাগুলো থেকে সবাই নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মের দিকে যাওয়ার বিষয়ে উৎসাহ দিয়েছে বলে জানান সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলায় মতবিনিময় সভা করে আসা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলাম।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম সারির দুজন সমন্বয়ক প্রথম আলোকে বলেন, জেলা পর্যায় থেকে উঠে আসা বক্তব্য ও প্রত্যাশাগুলো লিপিবদ্ধ করে প্রতিবেদন তৈরির কাজ চলছে এখন। জেলা সফর করে আসা সমন্বয়কদের আটটি দলের সদস্যরা শিগগিরই একসঙ্গে বসবেন। সেখানে আলোচনা করে মানুষের প্রত্যাশার বিষয়ে করণীয় ঠিক করা হবে।

সফরে রংপুর বিভাগীয় প্রতিনিধিদলে ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক তারিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন জেলায় গিয়ে কথা শুনে আমাদের মনে হয়েছে, মানুষ একটা বিকল্প শক্তি চাইছে।’