London ০৩:০১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান: শিক্ষক-কর্মচারীরা অবসর সুবিধার টাকা পাচ্ছেন না

বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস)ফাইল ছবি

দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার ভবানীপুর ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক শাহ মোহা. সাদীদুল ইসলাম অবসরে গেছেন গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে। ৮ অক্টোবর তিনি এসেছিলেন রাজধানীর পলাশী-নীলক্ষেত এলাকায় বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) ভবনে। এই ভবনে অবস্থিত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট এবং অবসর সুবিধা বোর্ড। অবসরের প্রায় দেড় বছরেও অবসর সুবিধার টাকা তিনি পাননি।

ব্যানবেইস ভবনের নিচতলায় সাদীদুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয়। গত বছর এপ্রিলে অবসর সুবিধা পাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু এখনো নিজের পাওনা টাকা পাচ্ছেন না। স্ট্রোক করে এখন তিনি বেশ অসুস্থ। এরপর চিকিৎসার কাগজপত্রও জমা দিয়েছেন। তারপরও টাকা পাচ্ছেন না। এ সময় সঙ্গে থাকা তাঁর স্ত্রী বলেন, ‘চিকিৎসার খরচ জোগাতে ফকির হয়ে গেছি।’

শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরের পরপরই যেন তাঁদের প্রাপ্য সুবিধা পেতে পারেন, সে জন্য সরকারকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।

মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান, সভাপতি বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদ

শুধু শাহ মোহা. সাদীদুল ইসলাম নন। আবেদন করে বেসরকারি বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসার হাজারো শিক্ষক-কর্মচারী অবসর ও কল্যাণ সুবিধার টাকা পাচ্ছেন না। কর্মজীবনের শেষে নিজের প্রাপ্য টাকা না পাওয়ায় নিদারুণ কষ্টে ভুগছেন মানুষ গড়ার এসব কারিগর।

আর্থিক সংকটের কারণে এমনিতেই বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর ও কল্যাণ সুবিধার টাকা পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। এখন সরকার পরিবর্তনের পর অবসর সুবিধা বোর্ড পুনর্গঠন না করায় এই সমস্যা প্রকট হয়েছে। কারণ, বিগত সরকারের আমলে গঠিত বোর্ডের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিরা অফিস করছেন না। দিন যত যাচ্ছে, শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর সুবিধার টাকা পেতেও অপেক্ষার সঙ্গে কষ্ট ও ভোগান্তি বাড়ছে।

সারা দেশে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী আছেন পাঁচ লাখের বেশি। এসব শিক্ষক-কর্মচারীর অবসর ও কল্যাণ সুবিধা দেওয়া হয় দুটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। এর মধ্যে কল্যাণ সুবিধার টাকা দেওয়া হয় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে। আর অবসর সুবিধার টাকা দেওয়া হয় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডের মাধ্যমে।

৬৮ হাজার আবেদন, দেওয়ার মতো টাকা নেই

নিয়মানুযায়ী, অবসরের পরপরই অবসর ও কল্যাণ সুবিধা পাওয়ার কথা থাকলেও শিক্ষক-কর্মচারীদের চার বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।

অবসর সুবিধা বোর্ডের সূত্রমতে, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের ৩১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩৭ হাজার বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী আবেদন করে অবসর ভাতা পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। এর মধ্যে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত জমা দেওয়া আবেদনগুলোর নিরীক্ষা (অডিট) নিষ্পত্তি করা হয়েছে। কিন্তু তহবিলের অভাবে টাকা দেওয়া যাচ্ছে না। সর্বশেষ ২০২০ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত জমা হওয়া আবেদনগুলোর বিপরীতে অবসর সুবিধার টাকা দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে কল্যাণ ট্রাস্ট সূত্রে জানা গেছে, কল্যাণ সুবিধার জন্য প্রায় ৩১ হাজার আবেদন জমা আছে। এর মধ্যে এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত আবেদন জমা পড়েছে ১০ হাজার ২৪২টি।

কত টাকা দরকার

অবসর ও কল্যাণ সুবিধার টাকার বড় একটি অংশ নেওয়া হয় শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকেই। এ জন্য চাকরিকালীন তাঁদের মূল বেতনের ৬ শতাংশ টাকা মাসে কেটে রাখা হয়। কল্যাণ সুবিধার জন্য কাটা হয় মূল বেতনের ৪ শতাংশ। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বছরে ১০০ টাকা (৭০ টাকা অবসরের জন্য ও ৩০ টাকা কল্যাণের জন্য) নেওয়া হচ্ছে। বাকি টাকা সরকার ও চাঁদা জমার সুদ থেকে সমন্বয় করে দেওয়া হয়। উল্লেখ্য, নিয়মতিভাবে এই তহবিলে কোনো বাজেট দেয়নি সরকার। মাঝেমধ্যে থোক বরাদ্দ হিসেবে সহায়তা দেওয়া হয়।

অবসর সুবিধা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ৬ শতাংশ হারে টাকা কাটার মাধ্যমে প্রতি মাসে প্রায় ৭০ কোটি টাকা আদায় হয়। এফডিআরের লভ্যাংশ হয় প্রতি মাসে ৩ কোটি টাকা। কিন্তু প্রতি মাসে গড়ে অবসর সুবিধার জন্য আবেদন জমা পড়ে ১ হাজার, যা নিষ্পত্তি করতে প্রতি মাসে দরকার ১১৫ কোটি টাকা। এর মানে হলো প্রতি মাসে ৪২ কোটি টাকা ঘাটতি থাকে; বছরে যা ৫০৪ কোটি টাকা। বর্তমানে জমা হওয়া ৩৭ হাজার আবেদন নিষ্পত্তি করতে প্রয়োজন প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা।

অবসর সুবিধা বাবদ শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে যে টাকা কেটে রাখা হয়, তা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (পদ অনুযায়ী) নামে খোলা ব্যাংক হিসাবে জমা হয়। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর বর্তমানে নিয়মিত মহাপরিচালক নেই। আরেকজন রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এর ফলে জমা হওয়া সেই টাকা অবসর সুবিধা দেওয়ার কাজে লাগানো যাচ্ছে না।

অবসর সুবিধার চেয়ে তুলনামূলকভাবে কল্যাণ সুবিধার টাকা কম। বর্তমানে এই ট্রাস্টে সচিবের রুটিন দায়িত্বে আছেন ট্রাস্টের কর্মকর্তা মো. আবুল বাশার। তিনি বলেন, শিক্ষকদের কল্যাণ সুবিধার জন্য যত আবেদন জমা আছে, তা সমাধানের জন্য এখন ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা প্রয়োজন। এরপর প্রতিবছর বাজেটে ২০০ কোটি টাকা দিলে কল্যাণ সুবিধা নিয়মিতভাবে দেওয়া সম্ভব।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান বলেন, এখানে দুই ধরনের সমস্যা আছে। একটি হলো তহবিলগত সমস্যা, আরেকটি হলো ব্যবস্থাপনাগত সমস্যা। এই দুটি সমস্যার সমাধান করতে হবে। এ জন্য প্রতিবছর সরকারকে নির্ধারিত পরিমাণ টাকা দিতে হবে, যেটি মূলধন হিসেবে থাকবে। এই টাকার সুদ থেকে এবং শিক্ষকদের কাছ থেকে কাটা চাঁদা মিলিয়ে অবসর ও কল্যাণ সুবিধাসংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরের পরপরই যেন তাঁদের প্রাপ্য সুবিধা পেতে পারেন, সে জন্য সরকারকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৬:৪৮:৪৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪
৩৮
Translate »

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান: শিক্ষক-কর্মচারীরা অবসর সুবিধার টাকা পাচ্ছেন না

আপডেট : ০৬:৪৮:৪৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪

বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস)ফাইল ছবি

দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার ভবানীপুর ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক শাহ মোহা. সাদীদুল ইসলাম অবসরে গেছেন গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে। ৮ অক্টোবর তিনি এসেছিলেন রাজধানীর পলাশী-নীলক্ষেত এলাকায় বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) ভবনে। এই ভবনে অবস্থিত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট এবং অবসর সুবিধা বোর্ড। অবসরের প্রায় দেড় বছরেও অবসর সুবিধার টাকা তিনি পাননি।

ব্যানবেইস ভবনের নিচতলায় সাদীদুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয়। গত বছর এপ্রিলে অবসর সুবিধা পাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু এখনো নিজের পাওনা টাকা পাচ্ছেন না। স্ট্রোক করে এখন তিনি বেশ অসুস্থ। এরপর চিকিৎসার কাগজপত্রও জমা দিয়েছেন। তারপরও টাকা পাচ্ছেন না। এ সময় সঙ্গে থাকা তাঁর স্ত্রী বলেন, ‘চিকিৎসার খরচ জোগাতে ফকির হয়ে গেছি।’

শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরের পরপরই যেন তাঁদের প্রাপ্য সুবিধা পেতে পারেন, সে জন্য সরকারকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।

মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান, সভাপতি বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদ

শুধু শাহ মোহা. সাদীদুল ইসলাম নন। আবেদন করে বেসরকারি বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসার হাজারো শিক্ষক-কর্মচারী অবসর ও কল্যাণ সুবিধার টাকা পাচ্ছেন না। কর্মজীবনের শেষে নিজের প্রাপ্য টাকা না পাওয়ায় নিদারুণ কষ্টে ভুগছেন মানুষ গড়ার এসব কারিগর।

আর্থিক সংকটের কারণে এমনিতেই বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর ও কল্যাণ সুবিধার টাকা পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। এখন সরকার পরিবর্তনের পর অবসর সুবিধা বোর্ড পুনর্গঠন না করায় এই সমস্যা প্রকট হয়েছে। কারণ, বিগত সরকারের আমলে গঠিত বোর্ডের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিরা অফিস করছেন না। দিন যত যাচ্ছে, শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর সুবিধার টাকা পেতেও অপেক্ষার সঙ্গে কষ্ট ও ভোগান্তি বাড়ছে।

সারা দেশে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী আছেন পাঁচ লাখের বেশি। এসব শিক্ষক-কর্মচারীর অবসর ও কল্যাণ সুবিধা দেওয়া হয় দুটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। এর মধ্যে কল্যাণ সুবিধার টাকা দেওয়া হয় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে। আর অবসর সুবিধার টাকা দেওয়া হয় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডের মাধ্যমে।

৬৮ হাজার আবেদন, দেওয়ার মতো টাকা নেই

নিয়মানুযায়ী, অবসরের পরপরই অবসর ও কল্যাণ সুবিধা পাওয়ার কথা থাকলেও শিক্ষক-কর্মচারীদের চার বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।

অবসর সুবিধা বোর্ডের সূত্রমতে, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের ৩১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩৭ হাজার বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী আবেদন করে অবসর ভাতা পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। এর মধ্যে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত জমা দেওয়া আবেদনগুলোর নিরীক্ষা (অডিট) নিষ্পত্তি করা হয়েছে। কিন্তু তহবিলের অভাবে টাকা দেওয়া যাচ্ছে না। সর্বশেষ ২০২০ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত জমা হওয়া আবেদনগুলোর বিপরীতে অবসর সুবিধার টাকা দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে কল্যাণ ট্রাস্ট সূত্রে জানা গেছে, কল্যাণ সুবিধার জন্য প্রায় ৩১ হাজার আবেদন জমা আছে। এর মধ্যে এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত আবেদন জমা পড়েছে ১০ হাজার ২৪২টি।

কত টাকা দরকার

অবসর ও কল্যাণ সুবিধার টাকার বড় একটি অংশ নেওয়া হয় শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকেই। এ জন্য চাকরিকালীন তাঁদের মূল বেতনের ৬ শতাংশ টাকা মাসে কেটে রাখা হয়। কল্যাণ সুবিধার জন্য কাটা হয় মূল বেতনের ৪ শতাংশ। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বছরে ১০০ টাকা (৭০ টাকা অবসরের জন্য ও ৩০ টাকা কল্যাণের জন্য) নেওয়া হচ্ছে। বাকি টাকা সরকার ও চাঁদা জমার সুদ থেকে সমন্বয় করে দেওয়া হয়। উল্লেখ্য, নিয়মতিভাবে এই তহবিলে কোনো বাজেট দেয়নি সরকার। মাঝেমধ্যে থোক বরাদ্দ হিসেবে সহায়তা দেওয়া হয়।

অবসর সুবিধা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ৬ শতাংশ হারে টাকা কাটার মাধ্যমে প্রতি মাসে প্রায় ৭০ কোটি টাকা আদায় হয়। এফডিআরের লভ্যাংশ হয় প্রতি মাসে ৩ কোটি টাকা। কিন্তু প্রতি মাসে গড়ে অবসর সুবিধার জন্য আবেদন জমা পড়ে ১ হাজার, যা নিষ্পত্তি করতে প্রতি মাসে দরকার ১১৫ কোটি টাকা। এর মানে হলো প্রতি মাসে ৪২ কোটি টাকা ঘাটতি থাকে; বছরে যা ৫০৪ কোটি টাকা। বর্তমানে জমা হওয়া ৩৭ হাজার আবেদন নিষ্পত্তি করতে প্রয়োজন প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা।

অবসর সুবিধা বাবদ শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে যে টাকা কেটে রাখা হয়, তা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (পদ অনুযায়ী) নামে খোলা ব্যাংক হিসাবে জমা হয়। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর বর্তমানে নিয়মিত মহাপরিচালক নেই। আরেকজন রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এর ফলে জমা হওয়া সেই টাকা অবসর সুবিধা দেওয়ার কাজে লাগানো যাচ্ছে না।

অবসর সুবিধার চেয়ে তুলনামূলকভাবে কল্যাণ সুবিধার টাকা কম। বর্তমানে এই ট্রাস্টে সচিবের রুটিন দায়িত্বে আছেন ট্রাস্টের কর্মকর্তা মো. আবুল বাশার। তিনি বলেন, শিক্ষকদের কল্যাণ সুবিধার জন্য যত আবেদন জমা আছে, তা সমাধানের জন্য এখন ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা প্রয়োজন। এরপর প্রতিবছর বাজেটে ২০০ কোটি টাকা দিলে কল্যাণ সুবিধা নিয়মিতভাবে দেওয়া সম্ভব।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান বলেন, এখানে দুই ধরনের সমস্যা আছে। একটি হলো তহবিলগত সমস্যা, আরেকটি হলো ব্যবস্থাপনাগত সমস্যা। এই দুটি সমস্যার সমাধান করতে হবে। এ জন্য প্রতিবছর সরকারকে নির্ধারিত পরিমাণ টাকা দিতে হবে, যেটি মূলধন হিসেবে থাকবে। এই টাকার সুদ থেকে এবং শিক্ষকদের কাছ থেকে কাটা চাঁদা মিলিয়ে অবসর ও কল্যাণ সুবিধাসংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরের পরপরই যেন তাঁদের প্রাপ্য সুবিধা পেতে পারেন, সে জন্য সরকারকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।