London ০১:০৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৪ জুন ২০২৫, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম:

বেগম জিয়াকে উপহার দিতে পটুয়াখালীর সোহাগের ‘কালো মানিক’ যাচ্ছে ঢাকায়

মুহাম্মাদ রাকিব, পটুয়াখালী

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার উত্তর ঝাটিবুনিয়া গ্রামের এক তরুণ কৃষক সোহাগ মৃধা ছয় বছর ধরে একটি ষাঁড় লালন-পালন করে গড়ে তুলেছেন ভালোবাসা আর অধ্যবসায়ের প্রতীক হিসেবে। কুচকুচে কালো রঙের এই বিশালদেহী ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়টির নাম রেখেছেন ‘কালো মানিক’। এবার পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে সোহাগ চমকপ্রদ এক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন—তিনি এই ষাঁড়টি বিক্রি না করে উপহার দিতে চান বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে।
সোহাগ জানান, ২০১৮ সালের শেষ দিকে স্থানীয় চৈতা বাজার থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার টাকায় একটি গাভি কিনেছিলেন। কিনে আনার এক সপ্তাহের মধ্যেই সেই গাভি একটি বাছুর জন্ম দেয়। পরবর্তীতে গাভিটি বিক্রি করে তিনি সন্তানতুল্য সেই বাছুর ‘কালো মানিক’-এর যত্ন নিতে শুরু করেন। ছয় বছরের যত্ন-আত্তিতে বর্তমানে ষাঁড়টির ওজন প্রায় ১ হাজার ৪০০ কেজি, দৈর্ঘ্য ১০ ফুট এবং উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি।
ষাঁড়টিকে দেখতে প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছেন স্থানীয় ও দূরদূরান্ত থেকে আসা মানুষজন। ষাঁড়টির পরিচর্যা ও সাজসজ্জায় ব্যস্ত সোহাগের পরিবারও। ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। এর জন্য ৬০ হাজার টাকায় দুটি মিনি ট্রাক ভাড়া করা হয়েছে, তৈরি করা হয়েছে খাস ব্র্যান্ডের গেঞ্জি, বড় ব্যানার ও দলের প্রতীক ধানের শীষ সম্বলিত প্রচারণা সামগ্রী।
সোহাগ বলেন, “আমি ভাইরাল হওয়ার জন্য কিছু করছি না। আবেগ থেকেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই ষাঁড় বিক্রি করে বড় অঙ্কের টাকা পেতে পারতাম, কিন্তু আমার স্বপ্ন ছিল প্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে এটি উপহার দেওয়ার।”
তিনি জানান, তাঁর বাবা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং ছোটবেলা থেকেই তিনি নিজেও দলটির প্রতি ভালোবাসা অনুভব করেন। সেই আবেগ থেকেই খালেদা জিয়ার প্রতি নিজের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার নিদর্শনস্বরূপ ‘কালো মানিক’ উপহার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আমড়াগাছিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, “সোহাগ একজন নিঃস্বার্থ কর্মী। প্রথমে অনেকে বিষয়টি বিশ্বাস করতে চাননি। কিন্তু এখন তাঁর প্রস্তুতি দেখে সবার ধারণা বদলেছে। এটা নিঃসন্দেহে একটি ব্যতিক্রমী ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।”
তবে মির্জাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, “এ বিষয়ে সোহাগ আমার সঙ্গে কোনো আলোচনা করেননি। গণমাধ্যমের মাধ্যমেই বিষয়টি প্রথম জানতে পারলাম।”
সোহাগের মা হাজেরা বেগম জানান, “সংসারের অবস্থা খুব একটা ভালো না হলেও ছেলেটা নিজের স্বপ্নের পেছনে ছুটেছে। বিএনপির প্রতি তার ভালোবাসা অনেক পুরোনো। ষাঁড়টিকে নিজের সন্তানের মতো যত্ন করেছে, এখন সেটাকে নেত্রীকে দিতে পারলে তার জীবনের অনেক বড় অর্জন হবে।”
ঈদুল আজহার আগেই ঢাকায় ‘কালো মানিক’ পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন সোহাগ। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এটি এক অনন্য ঘটনার জন্ম দিতে যাচ্ছে—যেখানে একটি পশু কোরবানির দৃষ্টিভঙ্গি ছাড়িয়ে হয়ে উঠেছে একজন কর্মীর দলনেত্রীর প্রতি নিঃস্বার্থ ভালোবাসার প্রতীক।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৫:২৫:৩৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৮ মে ২০২৫
১০
Translate »

বেগম জিয়াকে উপহার দিতে পটুয়াখালীর সোহাগের ‘কালো মানিক’ যাচ্ছে ঢাকায়

আপডেট : ০৫:২৫:৩৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৮ মে ২০২৫

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার উত্তর ঝাটিবুনিয়া গ্রামের এক তরুণ কৃষক সোহাগ মৃধা ছয় বছর ধরে একটি ষাঁড় লালন-পালন করে গড়ে তুলেছেন ভালোবাসা আর অধ্যবসায়ের প্রতীক হিসেবে। কুচকুচে কালো রঙের এই বিশালদেহী ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়টির নাম রেখেছেন ‘কালো মানিক’। এবার পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে সোহাগ চমকপ্রদ এক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন—তিনি এই ষাঁড়টি বিক্রি না করে উপহার দিতে চান বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে।
সোহাগ জানান, ২০১৮ সালের শেষ দিকে স্থানীয় চৈতা বাজার থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার টাকায় একটি গাভি কিনেছিলেন। কিনে আনার এক সপ্তাহের মধ্যেই সেই গাভি একটি বাছুর জন্ম দেয়। পরবর্তীতে গাভিটি বিক্রি করে তিনি সন্তানতুল্য সেই বাছুর ‘কালো মানিক’-এর যত্ন নিতে শুরু করেন। ছয় বছরের যত্ন-আত্তিতে বর্তমানে ষাঁড়টির ওজন প্রায় ১ হাজার ৪০০ কেজি, দৈর্ঘ্য ১০ ফুট এবং উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি।
ষাঁড়টিকে দেখতে প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছেন স্থানীয় ও দূরদূরান্ত থেকে আসা মানুষজন। ষাঁড়টির পরিচর্যা ও সাজসজ্জায় ব্যস্ত সোহাগের পরিবারও। ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। এর জন্য ৬০ হাজার টাকায় দুটি মিনি ট্রাক ভাড়া করা হয়েছে, তৈরি করা হয়েছে খাস ব্র্যান্ডের গেঞ্জি, বড় ব্যানার ও দলের প্রতীক ধানের শীষ সম্বলিত প্রচারণা সামগ্রী।
সোহাগ বলেন, “আমি ভাইরাল হওয়ার জন্য কিছু করছি না। আবেগ থেকেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই ষাঁড় বিক্রি করে বড় অঙ্কের টাকা পেতে পারতাম, কিন্তু আমার স্বপ্ন ছিল প্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে এটি উপহার দেওয়ার।”
তিনি জানান, তাঁর বাবা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং ছোটবেলা থেকেই তিনি নিজেও দলটির প্রতি ভালোবাসা অনুভব করেন। সেই আবেগ থেকেই খালেদা জিয়ার প্রতি নিজের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার নিদর্শনস্বরূপ ‘কালো মানিক’ উপহার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আমড়াগাছিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, “সোহাগ একজন নিঃস্বার্থ কর্মী। প্রথমে অনেকে বিষয়টি বিশ্বাস করতে চাননি। কিন্তু এখন তাঁর প্রস্তুতি দেখে সবার ধারণা বদলেছে। এটা নিঃসন্দেহে একটি ব্যতিক্রমী ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।”
তবে মির্জাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, “এ বিষয়ে সোহাগ আমার সঙ্গে কোনো আলোচনা করেননি। গণমাধ্যমের মাধ্যমেই বিষয়টি প্রথম জানতে পারলাম।”
সোহাগের মা হাজেরা বেগম জানান, “সংসারের অবস্থা খুব একটা ভালো না হলেও ছেলেটা নিজের স্বপ্নের পেছনে ছুটেছে। বিএনপির প্রতি তার ভালোবাসা অনেক পুরোনো। ষাঁড়টিকে নিজের সন্তানের মতো যত্ন করেছে, এখন সেটাকে নেত্রীকে দিতে পারলে তার জীবনের অনেক বড় অর্জন হবে।”
ঈদুল আজহার আগেই ঢাকায় ‘কালো মানিক’ পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন সোহাগ। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এটি এক অনন্য ঘটনার জন্ম দিতে যাচ্ছে—যেখানে একটি পশু কোরবানির দৃষ্টিভঙ্গি ছাড়িয়ে হয়ে উঠেছে একজন কর্মীর দলনেত্রীর প্রতি নিঃস্বার্থ ভালোবাসার প্রতীক।